কোনো_এক_শ্রাবণে পর্ব-০৩

কোনো_এক_শ্রাবণে

পর্ব-০৩

-শাহাজাদী মাহাপারা (জোহুরা খাতুন)

সকাল ৭টা থেকে নাফি গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গত সন্ধ্যার অপরিচিতার বাসার নিচে। ৮:১০ এ ঋতু অফিসের জন্য নিচে এলো। নাফিকে দেখেও না দেখার ভান করে হাটতে লাগল।নাফি দু তিনবার ঋতু বলে ডাকলো।ঋতু পিছন ফিরেই বললো – আমাকে ডাকছেন?
যা বাবা ! গতকালই তো দেখা হলো আজ বলছে তাকে ডাকছি কিনা? এক রাতেই ভুলে গেলো।কই আমিতো ভুলতে পারিনি।নাফি মনে মনেই বলে উঠলো।
– জনাব আমি আপনাকে চিনিনা।মাত্র এক সন্ধ্যার পরিচয়।তাছাড়া আমি বিবাহিতা।বাচ্চার মা হতে চলেছি।
-প্লিজ কিছু মনে করবেন না।আপনি তো এখানে একা থাকেন।সাথে একজন বৃদ্ধা থাকেন।উনি কে?
– খোঁজ খবর নেয়া শেষ এর মাঝেই? দেখুন আমি অতি ঘনিষ্ঠতা পছন্দ করিনা।আপনার কি কাজ আমায় দিয়ে? ঝটপট বলে কেটে পড়ুন।
– আমি আসলে ওদিকেই যাচ্ছিলাম।চলুন আপনাকে নামিয়ে দিচ্ছি।
– আমি গাড়িতে উঠতে পছন্দ করিনা।তাছাড়া আমি আজ অফিস যাচ্ছিনা।
– কোথায় যাচ্ছেন তাহলে?
– হাসপাতালে। আজ আলট্রাসোনোগ্রামের ডেইট দিয়েছে ডাক্তার।
– আচ্ছা চলুন আমিও যাচ্ছি।
-প্রয়োজন নেই। বলেই ঋতু সামনে এগুতে লাগলো।
নাফি গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

ঋতু মনে মনেই বলল,এসব পুরুষ মানুষদের আমার ভালোভাবেই চেনা আছে।শুরুতে ভালো ভাব নেয়।যখন দেখে পাত্তা দিচ্ছেনা আলগুস্তে কেটে পরে।হাহা।

এই খালি?
– যাবেন আদ-দ্বীন?
– চলেন।
-কত?
-৭০ টাকা।
-৫০ দিবো যাবেন?
-না।

-মামা চলেনতো ভাড়া আমি দিবো।
ঋতু অবাক চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো।আপনি না চলে গিয়েছিলেন? গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে? আচ্ছা আপনি এই রিক্সায় যান। আমি অন্যটা ডেকে নিবো।
– চুপচাপ রিক্সায় উঠে বসো।
– কেনো?
– আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি তাই। আর কথা নয় দেরি হয়ে যাচ্ছে।
– আপনি যান।
– তুমি উঠবে নাকি?
নাফির ওই ক্রুর দৃষ্টি দেখে একবারের জন্য ঘাব্রে গেলো ঋতু। রিকশায় চরে বসলো।

-মামা টানেন
– আপনি কেনো এলেন?
– এমনি। অনেকদিন রিক্সায় ওঠা হয়না তাই।
ঋতু চুপ করে রইলো।

——————————————————————

নিপা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। নিলয় এর জন্য অপেক্ষা করছে।

– কতক্ষণ হলো এসেছো?
– বেশিক্ষণ হয়নি। আপনি বলুন, কেমন আছেন?
-ভালো। তোমার কি খুবর?
– ভালই।শুনুন আপাকে যাদের দেখতে আসার কথা ছিলো তারা সামনের শুক্রবার আসবে।
– আচ্ছা। আমায় কি করতে হবে?
– এরপর আপনি বিয়ের কথা বলার জন্য ফ্যামলি সহ আমার বাসায় আসবেন।
– ও আচ্ছা।ঠিকাছে।
– হুম।এটা বলার জন্যই ডেকেছি।এবার খাবার অর্ডার করুন আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে।
– ওকে।

নিপা নিলয় রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।

– তোমার অফিস কেমন যাচ্ছে নিপা?
– ভালো।বাবা সব গাইড করেন।বাকিটা আমি সামলে নেই।ভুল হলেতো বাবা আছেই।
– হুম।হিসাব মতে কিন্তু তোমাদের ফ্যামিলি বিজনেস তোমার ভাই এর হাতে যাবার কথা।
– হ্যাঁ ।কিন্তু ভাইয়া যেহেতু ল’ নিয়ে পড়তে চেয়েছিলো তাই বাবা তাকে পড়তে দিয়েছেন। আর আমি বিজনেস নিয়ে।
– বিয়ের পরেও কি তুমিই তোমার বাবার বিজনেস সামলাবে?
– অফকোর্স।তাছাড়া আর কে করবে? আপাতো তার স্কুলের জব নিয়েই হ্যাপি। ভাইয়াও তার নিজের জবে হ্যাপি।ছোটো তো এখন ওয়াশিংটনে।সো আমিই করবো এগুলো।
– তাহলে সংসার?
– সামলে নিবো।তোমার চিন্তা করতে হবেনা।
-ঠিকাছে।তোমার অফিস পৌঁছে গিয়েছি।
– আসছি।
– হুম।

——————————————————————

হাসপাতালে এসেই ঋতু আলট্রাসোনোগ্রাফির জন্য সিরিয়ালে দাড়ালো।
যথা সময়ে ডাক্তারের ডাক পড়লো।সোনোগ্রাফির জন্য বেশ খানিকটা পানি খেয়েছিলো ঋতু। এখন খারাপ লাগছে।

– আপনি কি রোগীর গার্জেন?
– জ্বি।
– আপনারে মেডাম ডাকছে ভিত্রে যান।
-জ্বি আচ্ছা।

রুমের দরজা খুলে ভিতরে গেলো নাফি।
– আপনি পেশেন্টের হাজব্যান্ড?
-জ্বি?
– আসলে উনি অতিরিক্ত পানি খেয়েছেন তাই ভমিটিং হচ্ছে।এটাকি ইদানিং বেশি হচ্ছে?
– জ্বি বলতে পারছিনা।
– কি আশ্চর্য কথা আপনি হাজব্যান্ড আপনি বলতে পারছেন না?
– জ্বি আসলে…. আমিতো বাসায় থাকিনা।য়ার তাছাড়া আমাকে ও এ ব্যাপারে কিছু বলেও নি।
– আপনারা একসাথে থাকেন না? আর এতদিন আপনি কোথায় ছিলেন? ওনার সাথেতো কখনো দেখিনি।
– জ্বি আমি কাজের জন্য বাহিরে ছিলাম।
– আচ্ছা ঠিকাছে।এখন ওনার একটু বেশি যত্ন নিবেন।ভারী কাজ না করলেও হাটাহাটি করতে হবে। একটু বেয়ামেরও প্রয়োজন আছে। আর প্রপার মিল নিতে হবে।সাবধানতার মার নেই।
-জ্বি আচ্ছা আমি দেখবো।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ঋতু নাফিকে ভেতরে দেখে ভড়কে যায়।দ্রুত প্রশ্ন করে বসে।

-আপনি এখানে কি করছেন?
– নাফি চোখের ইশারায় ঋতুকে চুপ করে যেতে বললো।

আপনি বুঝি আপনার হাজব্যান্ড কে আপনি বলে ডাকেন?
– না আসলে আমাদের এরেঞ্জ ম্যারেজতো তাই আরকি তুমি ডাকতে লজ্জা পায়।হা হা
– ওকে।চলুন আপনার কাজটা সেরে ফেলি। স্যার আপনি আসুন।আপনার বেবির হার্টবিট শুনে যান।

চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ঋতুর হাত চেপে ধরলো নাফি।উত্তেজনায় কাপঁছে সে। ঋতু কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নাফি ঋতুকে বেডে বসিয়ে দিলো।ডাক্তার ঋতুকে শুয়ে পরতে বলে পেটে জেল দেয়া শুরু করলো।

– ওই যে দেখুন।দেখতে পাচ্ছেন? নড়ছে।
সাউন্ডটা শুনতে পাচ্ছেন? হার্টবিট নরমাল।বেবি ভালো আছে।

ঋতু একবার নাফির দিকে চাইলো কৌতূহল নিয়ে।নাফির চোখ টলমল করছে।কি আশ্চর্য ! এই লোকাটা এভাবে কাদঁছে কেনো? নাফির জন্য খুব মায়া হচ্ছে ঋতুর।

নাফি নিজেই নিজের কান্ডে অবাক।সে কেনো এত উত্তেজনা অনুভব করছে? কেনই বা তার এমন অনুভূতি হচ্ছে? এই মেয়েকেতো সে চেনেই না। আর বাচ্চাটাও তার না।তবুও এই স্বর্গীয় অনুভূতি তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

নাফিরা রিপোর্ট নিয়ে যখন বের হলো তখন বেলা ১১টা বাজে। নাফি ঋতুকে জিজ্ঞেস করলো সে কিছু খাবে কিনা? ঋতুর হাতে এই মুহূর্তে টাকা নেই।বাসায় যেতে অনেক সময় লাগবে।তাই সে চট করেই রাজি হয়ে গেলো।
নাফি একটা রেস্টুরেন্টে দিকে রিক্সা নিলো।
রেস্টুরেন্ট এ বসে খাবার অর্ডার দিলো নাফি। খাবার আসতেই ঋতু হামলে পরলো।ক্ষুধার মাত্রা চরমে পৌঁছেছে তার।
ওরা খাওয়া শেষ করতেই নাফি ঋতুকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে অফিসে গেলো।

__________________________

আজ বৃহস্পতিবার।ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।
দোলার আজ ৩টা ক্লাস ছিলো। ক্লাস শেষ করে আর বেশিক্ষণ রইলোনা দোলা। বেড়িয়ে পরলো কলেজ থেকে। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে করতে দোলা ড্রাইভারকে কল করলো।সে জানালো যে গাড়ি নিয়ে রুবাবা তার বান্ধবীর সাথে ঘুরতে বের হয়েছে।দোলা রেগে গেলেও প্রকাশ করলোনা। রিক্সাও পাচ্ছেনা। ভাবলো আবার কলেজে ঢুকে যাবে, যতক্ষণ বৃষ্টি না থামছে ওখানেই থাকবে। ব্যাংকের গেইটে ঢুকার আগেই দোলা খেয়াল করলো কেউ তার নাম ধরে উচ্চস্বরে ডাকছে।

-মিস.দোলা….! দোলা…!
দোলা দেখলো রিক্সা থেকে কেউ একজন তাকে ডাকছে। আরেকটু সামনে যেতেই দেখলো।সেদিনের লোকটা।ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যে এসেছিলো সেদিন সেই।
দোলা রিক্সার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
আপনি এখানে? এই অসময়ে?
-জ্বি আসলে….
দোলা তাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই হেসে উঠলো।ওর হাসি দেখে ভ্যাবলার মত চেয়ে রইলো জাদিদ।
-আপনি কি জ্বি আসলের পরে আর কিছুই বলতে পারেননা?
জাদিদ বিড়বিড় করে বললো বলতে দিলেতো।
– স্যরি আই ডিড’ন্ট গ্যাট ইউ।
-ওও নাথিং। আপনি কি এখন বাসায় যাচ্ছেন?
– হ্যাঁ।কিন্তু গাড়ি আজ আম্মা নিয়ে বের হয়েছেন আর এই মূহুর্তে আভ্যাইলেবল না। আর রিক্সাও পাচ্ছিনা।
– কিছু মনে না করলে আমার সাথে আসতে পারেন।
– আপনি কি ইস্কাটন যাচ্ছেন?
– জ্বি না আমি আসলে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাবো। আমার গাড়িটা আনিনি আজকে।বৃষ্টি তাই রিক্সা।
– আপনি বুঝি বৃষ্টির সময় রিক্সায় ঘুরেন?
– না। মাঝে মাঝে। আসলে আমি ঢাবি যাচ্ছিতো তাই।শান্তি নগর হয়ে ঘুরে যেতে পারতাম তবে বাংলামটরে একটু কাজ আছে।ওটা সেরেই যাবো।
– ও আচ্ছা। ঠিকাছে যান তবে।
– আপনি উঠে আসুন প্লিজ আপনাকে ইস্কাটন নামিয়ে দিয়েই যাবো আমি।

দোলা দেখলো বৃষ্টি থামার নামই নিচ্ছেনা।তার মাথায় চট করে একটা প্ল্যান এলো।এবং সে জাদিদ কে একটু অপেক্ষা করতে বলে হাতের ব্যাগটা নিয়ে ব্যাংকের গেইটের দারোয়ান কে দিয়ে এলো। আর বলে এলো ড্রাইভার কে পাঠাবে সেগুলো নিতে। দোলা এসেই একলাফে রিক্সায় উঠলো।
ছাতা বন্ধ করেই আবার সেই উচ্ছল কিশোরীর মত হাসলো সে।জাদিদ মন্ত্রমুগ্ধের মত কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো দোলার দিকে।
রিক্সাওয়ালা বলে উঠলো মামা আর কতক্ষণ?
জাদিদের ঘোর কাটলো।
দোলা রিক্সাওয়ালাকে বললো মামা টানেন। রিক্সা ওয়ালার রিক্সা চলতে লাগলো।
আর চলতে লাগলো দোলার কথা।জাদিদ মুগ্ধ শ্রোতার মত শুনতে লাগলো দোলার গল্প।

– আপনি যেভাবে চেয়ে চেয়ে আমার গল্প গিলছেন আমার স্টুডেন্ট গুলো যদি এভাবে পড়া গিলতো। আফসোসের সুরে বললো দোলা।
জাদিদ চমকে গেলো।বিব্রতও হলো।

ইস্কাটনের সামনে আসতেই জাদিদ রিক্সা থামাতে বললে দোলা বললো –
জাদিদ সাহেব আজ আমিও একটু ঘুরতে চাইছি। অনেকদিন নিজের ইউনিভার্সিটি যাওয়া হয়না।আপনার অসুবিধা হবে নাতো?
– না অবশ্যই না।চলুন তবে।মামা চলেন একটু বাংলামটরের মোড়ে রাখিয়েন।

রিক্সা বাংলামটরের মোড়ে থামতেই জাদিদ নেমে গেলো। দোলা বুঝতে পারলো জাদিদ কেনো এখানে নামলো আর গাড়ি কেনো আনেনি।জাদিদ গাড়ি সার্ভিসিং এর জন্য দিয়েছে।

একটু পরেই জাদিদ রিক্সায় এসে উঠলো।দোলা জিজ্ঞেস করলো –
গাড়ি ঠিক হয়েছে? আনলেন না যে?
– ড্রাইভার নিয়ে যাবে।বিকেলে বিল পে করে দিয়ে এলাম।
-ঠিকাছে।
রিক্সা আবার এগোনো শুরু করলো এবার গন্তব্য ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা।
রাস্তায় অনেক গল্প করলো ওরা। জানা গেলো জাদিদ বিবিএ ডিপার্টমেন্ট এ ছিলো এফবিএস এর।দোলার ৪ বছরের সিনিয়ির।
– আপনি এখনও অবিবাহিত কেনো?
– আপনার ভাইও তো বিয়ে করেন নি।
– ভাইয়ার বিয়ে না করার পিছনে একটা বিশেষ কারণ রয়েছে।
– আর কারণটা কি? আমি বিয়ে করিনি কারণ প্রতিষ্ঠিত হবার নেশায় পেয়েছিল। আমি জন্মগত ভাবেই সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাইনি।বাবা দর্জি ছিলেন।মা বাসায় বাসায় টিউশন করে আমাদের দু ভাই বোন কে বড় করেছেন। আজ যা আছে আমার এসব গড়তে বহু শ্রম আর সময় লেগেছে তাই আর হয়ে ওঠেনি। বিসিএস ৩ বার দেয়ার পরও যখন দেখলাম হচ্ছেনা কর্পোরেট জবের জন্য ট্রাই করলাম তারপর হয়েও গেলো। আমাদের অবস্থা ফিরলো। আর আমি আজ এখানে।
– জাদিদ সাহেব আপনি কি জানেন আমি ডিভোর্সী?
জাদিদ অবাক দৃষ্টি নিয়ে চাইলো দোলার দিকে।তার বিস্ময় জেনো কাটছেই না।
জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে।রিক্সা হাওয়ার বেগে চলছে আর বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে দোলা আর জাদিদ কে।নিরবতা ছেয়ে আছে ওদের মাঝে।
——————————————————————

রুবাবা বান্ধবীর সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছিলেন সকালে ৯টা নাগাদ। আজ তাদের শপিং যাবার কথা আর পুরোনো স্মৃতিচারণ করার কথা। রুবাবার বান্ধবী সালেহা এতদিন দেশের বাহিরে ছিলো। গত পরশু এসেছে। সালেহার এক ছেলে আর স্বামী।তার স্বামী বর্তমানে মরোক্কোর বাংলাদেশী দূতাবাসে রয়েছেন। এতদিন তিনিও ছিলেন সেখানে। তার ছেলে ইউএসএ তে থাকে। পেশায় আর্মি অফিসার স্কোয়াড লিডার।মিশনের জন্য গিয়েছে আমেরিকায়।

তিনি বাংলাদেশে এসেছেন কিছুদিনের জন্য বোনের মেয়ের বিয়ের দাওয়াতে।এখান থেকে আবার মরোক্কো যাবেন।১ মাস পর আবার ফিরবেন।তাই শপিং এর জন্য এত তাড়াহুড়ো। প্রাণের বান্ধবীর সাথে বহুদিন পর দেখা হওয়ার খুশিতে তারা আজকের দিনকে নিজেদের জন্য ধার্য করলেন।
আজ তারা ঘুরে বেড়াবেন।এই বৃষ্টির মাঝে গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে তিনশ ফিটের দিকে।এটা সালেহার প্ল্যান।তারা আগে ঘুরবেন এবং লাঞ্চ করে তারপর বিকেলে শপিং সেড়ে বাড়ি ফিরবেন। বৃষ্টির জন্য প্রথমে রুবাবার মেজাজ চরম খারাপ হলেও সালেহার সাথে পুরোনো দিনের কথা গুলো বলতে বলতে সে তাদের কিশোরী বয়সে হারিয়ে গেলেন।রুবাবা আর সালেহা তাদের কলেজ ভার্সিটির দিন গুলীতে ফিরে গেলেন। তিনশ ফিট পৌঁছেই রুবাবার মন অসম্ভব রকম ভালো হয়ে গেলো।ঝুম বৃষ্টির মাঝেই তিনি গাড়ি থেকে নামলেন।সাথে সালেহাও।ড্রাইভার কামাল কিছুক্ষণ তাদের দেখে বিড়বিড় করে বললেন
-খালাম্মার কি স্ক্রু ঢিলা হইয়াগেলোনি? আয়হায় এই ভরা বিস্টির মাঝেত এম্মে কেউ নাইমা যায় গাড়িত্থোন।
কামাল কিছুক্ষণ দেখার পরেই জানালার গ্লাস তুলে দিলো তারপর রেডিও ছাড়লো গান হচ্ছিলো সে গান যদিও খুব একটা পছন্দ করেনা তবুও এই গানটি তার ভালোই লাগলো।এই মুহূর্তে তার নসিমার কথা খুব মনে পরছে।ইস অহনা যদি নসিমায় থাকতো তাইলে ওরে লইয়া বিস্টিত নাহাইতাম। রেডিওর ভলিউম আরেকটু বাড়িয়ে দিলো কামাল। বাহিরেও শোনা যাচ্ছে এখন গানটি।

“যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো
চলে এসো
এক বরষায়……..”

——————————————————————
বোর্ড রুম থেকে বের হতেই নিপা দেখতে পেলো একটা জটলা মতন। সে এগিয়ে গেলো সেদিকে।সকলের উদ্দেশ্যে বললো মুভ এভ্রিওয়ান।
হোয়াট আর ইউ গাইজ ডুয়িং হিয়ার? ইজ দিস আ সিনেমা হল? গেট ব্যাক টু ওয়ার্ক এভ্রিবাডি।

ভীর সরিয়ে সামনে তাকাতেই নিপা দেখতে পেলো একটা ছেলে বয়স খুব বড়জোর ২৮-২৯ হবে। অফিসের পিয়ন হুদা একটা তাওয়াল আর এক গ্লাস পানি এনে দিলো তার দিকে।
ছেলেটা এক নিশ্বাসে পানিটা পান করেই বললো আমাকে একটু ওয়াশরুমের দিকে নিয়ে যাবেন প্লিজ? আমি আমার চশমাটা খুজেঁ পাচ্ছিনা।
ওটার ও দরকার। নিপা হুদাকে বললো ছেলেটাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যেতে।
কিছুক্ষণ পর যখন ছেলেটা এলো তখন তার চেহারা দেখে নিপা বললো আপনার কপালে তো অনেক খানি লেগেছে।আপনি রিসিপশনে বসুন। নিপা হুদাকে বললো তার ড্রোর এ একটা এন্টিসেপ্টিক ক্রিম রয়েছে আর বেন্ডেড রয়েছে নিয়ে আসতে আর দু কাপ কফি করতে। হুদা তাই করলো। নিপা হুদাকে বললো ছেলেটার ড্রেসিং করে দিতে।হুদা বললো
– ম্যাডাম আমার রক্ত দেখলে মাথা ঘুরায়।
নিপা নিজেই সেভলন দিয়ে যায়গাটা পরিষ্কার করে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে বেন্ডেজ করে দিলো।
কিন্তু সে কিছু দেখতে পাচ্ছেনা তার কারণ তার চশমাটা নেই।
হই হট্টগোল শুনে শফিক বের হয়ে এলেন নিজের রুম থেকে এসে দেখলেন একটা ছেলে বসে আছে।লম্বা, ফর্শা, চমৎকার দেখতে।এবার আর বন্ধুর ভাতিজাকে চিনতে ভুল করলেন না তিনি। ”আবরার”বলে ডাকতেই আবরার অন্ধের মত এদিক ওদিক খুজেঁ সালাম দিলো।নিপা আবরারের হাত ধরে সোজা করে দাড় করালো।হুদা উপস্থিতদের উদ্দেশ্য করে বললো আবরারের অবস্থা। এখানে আসার সময় তার কাঁদায় পরে যাবার ঘটনা এবং তার চশমা হারিয়ে যাবার কথা।

শফিক সাহেব নিপাকে বললেন আবরার কে তার কেবিনে নিয়ে আসতে।
নিপা আবরারের হাতটা শক্ত করে ধরে বাবার কেবিনের দিকে এগুলো।
আবরার এক মুহূর্তের জন্য তার হার্টবিট মিস করলো। আজকের পূর্বে কোনো মেয়েই তার হাত এভাবে যত্নের সাথে ধরেনি।কারো উপর নির্ভশীল কখনো হতে হয়নি তার। আজ প্রথম তার এমন অনুভূতি হলো।এবং এই অনূভুতি অবর্ণনীয়।

চলবে…!

©Shahazadi Mahapara’s Inscription

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here