কোনো_এক_শ্রাবণে পর্ব-১০

কোনো_এক_শ্রাবণে

পর্ব-১০

-শাহাজাদী মাহাপারা (জোহুরা খাতুন)

হলুদের দিন চলেই এলো অবশেষে। আরম্বর পূর্ণ জাঁকজমক না হলেও যা হয়েছে তা যথেষ্ট। সকলেই দোলা আর জাদিদকে হলুদ দিয়ে যাচ্ছে। হলুদের আগের নাচ গানের এত প্ল্যান করে অবশেষে সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে বা পা মচকালো মাহাপারা। ভাগ্য ভালো নিচের দু সিড়ি থেকে পড়েছে। হাতে একটু ব্যথা পেয়েছে আর কি। এ নিয়ে বাড়ির আর কারো তেমন ভাবান্তর দেখা গেলো না। কিন্তুু বেয়াজিদ বেচারা চিন্তায় অস্থির কিছুক্ষণ পর পর এসে জিজ্ঞেস করছে মাহাপারার ব্যথা কমেছে কিনা। আর পাঁচ দিনের মতো রয়েছে তার ছুটির। এর আগেই মাহাপারার পায়ের এ অবস্থা। অথচ তার বাসার কেউ তেমন চিন্তিত না ব্যাপারটা নিয়ে এই ব্যাপারটাই বেয়াজিদকে বেশ অবাক করেছে। বেয়াজিদ নিজেই একবার হট ওয়াটার ব্যাগ তো একবার গরম পানি ভরতি বালতি নিয়ে ছোটাছুটি করছে। আর বারবার আহহারে জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করছে। ব্যথায় মাহাপারা মুখ কুচকাচ্ছে আর চিৎকার বেয়াজিদ দিচ্ছে। মাহাপারার এখন বেয়াজিদের জন্য মায়াই হচ্ছে। যেমন আজ হলুদ সন্ধ্যার জন্য যখন মাহাপারাকে নিচে নামানো হবে তখন বেচারী একপায়ে খুড়িয়ে হাঁটছিলো। হলুদের শাড়ীতে তেমন ভালো না লাগলেও সুন্দর সেজেছে মাহাপারা। শাড়ীর রং টা আরেকটু হালকা হলে আরো ভালো লাগতো তাকে। চুলগুলো হালকা খোপা করে ফুল লাগিয়েছে সাদা। আর হালকা সাজ, কানে ঝুমকো হাতে চুড়ি ব্যস। কিন্তু এই সাজে বেচারি খুড়িয়ে হাঁটবে এতে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হবার ভয়ে কোলে করেই তাকে নিচে নামালো বেয়াজিদ বাকি সবাই হা করে চেয়েছিলো। একদফা নাফি ভেবেছিলো সে নামাবে তারপর আবরারের বারন করার পর থেমে গেলো সে। মেয়েরা সবাই হলুদ রঙা শাড়ি আর ছেলেরা সাদা রঙা পাঞ্জাবীর উপর বেগুনি রঙা কোটী পরেছে। লীলাবালি গানে নাচছে নসীমা। বেচারী মাহাপারার আফসোসের শেষ নেই। ততক্ষণে সবার চিন্তা না করার কারণ জেনে গিয়েছে বেয়াজিদ। কারণটা হলো। বাড়িতে যেকোনো অনুষ্ঠানের আগে মাহাপারা মহা প্যারার সৃষ্টি করবেই। কিছুনা কিছু তার হবেই। যেমন -জ্বর ওঠা, হাত ভাঙা,পা ভাঙা, পড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এমনকি বেয়াজিদ দোলার মাধ্যমে এও জানতে পারে যে মাহাপারাকে মার দেয়া যেত না ছোট বেলায় সামান্য থাপ্পড় দিলেও তার জ্বর চলে আসতো।
বেয়াজিদ মাহাপারার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবে তাইতো ওত গুমোর তার। ঠিকাছে কোনো ব্যাপার না।
” বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান
একবার ফাঁদে পড়লে দিতে হবে প্রাণ”

বেয়াজিদ যখন দোলার গালে আর জাদিদের গালে হলুদ ছোঁয়াচ্ছিলো মাহাপারা বেয়াজিদের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়েছিলো। বেচারী লক্ষ্য করেনি তার অগোচরে তার পানেও কেউ চেয়ে আছে।বেয়াজিদ হঠাৎ মাহাপারার দিকে তাকাতেই দেখলো মাহাপারা মুগ্ধ হয়ে এদিকে চেয়ে আছে। মাহাপারা মনে মনে ভাবলো এমন হ্যান্ডসাম ছেলেকে প্রত্যাহার করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য বেপার। মনে হয়না শেষ অব্দি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারবো। ভস করে একবুক নিশ্বাস ছেড়ে মাহাপারা অসফুট স্বরে বলে উঠলো – উফফ আল্লাহ উফফ ! একে একটু কম হ্যান্ডসাম বানাইলে দোষের কি হতো?

রুবাবা গেস্টদের রিসিভ করতে দাঁড়িয়ে আছে গার্ডেনের সামনে। রুবাবার বান্ধবীরা এসেছে রুবাবা একেক জনের সাথে এমন ভাবে কোলাকোলি করছে মনে হচ্ছে একযুগ পর দেখা। যদিও গতমাসেও দেখা হয়েছিলো তাদের। সালেহা সামনে থেকে এসে নিজের মেয়ের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর বেয়াজিদকে ডেকে তাকেও পরিচয় করিয়ে দিলো। বিয়ে বাড়ি মানেই পাত্র পাত্রী খোজাখুজি। এই বিয়েও তার ব্যাতিক্রম কিছুনা অবশ্যই। বেয়াজিদকে নিয়েও রুবাবার বান্ধবীদের মাঝে ধুমধুমার লেগে গেলো। পাত্র কেউ হাতছাড়া করতেও চাইছেনা। বেয়াজিদ মাহাপারাকে একটু মজা দেখানোর জন্য রুবাবাকে বললো – আন্টি মাহাপারার সাথে দেখা করাবেন না সবার?

রুবাবার হঠাৎ মনে হলো তার মেয়েকেও দেখা করানো উচিৎ সবার সাথে আফটার অল মাহাপারাও ইউএস থেকে এসেছে চার বছর পর। রুবাবা তার বান্ধবীদের টানতে টানতে মাহাপারার কাছে নিয়ে গেলো। সবার সাথে মাহাপারার পরিচয় করানোর কিছুক্ষণের মাঝেই গুঞ্জন উঠলো বেয়াজিদের জন্য সুযোগ্য পাত্রী খোজার। মাহাপারার কানে কথা যাওয়া মাত্রই তার হৃদযন্ত্রটা ধক করে উঠলো।
বেয়াজিদের সব শুনেও নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা থেকে মাহাপারাও কিছুটা নিভলো। সমস্ত মনখারাপি এসে জড়ো হলো তার ভেতর। অভিমানে মাহাপারা উঠে দাড়ালো চেয়ার ছেড়ে।খুড়িয়ে খুড়িয়েই হাটা দিলো নিপার কাছে। সে থাকবেনা এখানে। আজ তার মন ভালো নেই।

—————————————————————-
ঋতু চেয়ারে বসে আছে গার্ডেনের পাশে যেটুকু জায়গাজুড়ে স্টেজ সাজানো তার সামনের দিকের চেয়ারে।তার কোলে নির্ভান নিজের আঙুল নিজেই কামড়ে যাচ্ছে। নাফি দোলাকে হলুদ দিয়ে এসে ঋতুর কোল থেকে নির্ভান কে নিয়ে আদর করলো। রুবাবার বান্ধবীরা দোলা আর জাদিদকে হলুদ ছুয়িয়ে স্টেজ থেকে নিচে নামতেই দেখতে পেলো নাফিকে। নাফির কোলে বাচ্চা আর পাশে বসে থাকা ঋতুকে দেখেই তড়িৎবেগে ছুটে গেলো ওদের দিকে। ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলো রুবাবা। নাফিকে দেখা মাত্রই হই হই করে উঠলো তারা।

-রুবা তোর ছেলের কোলে বাচ্চা? তুই নাফিরে বিয়ে দিয়ে দাদী হয়ে গেছিস অথচ দাওয়াত ও দিলি না, জানাইলিও না। নাফি বেশ মজা পাচ্ছে তার মাকে এভাবে নাস্তানাবুদ হতে দেখে। আজ দুপুরের ব্যাপার নিয়েও সে তার মায়ের সাথে কিছুটা রুষ্ঠ ছিলেন।

– বাবা নাফি তুমি তো জানাতে পারতে এভাবে গোপনে গোপনে বিয়ে করে নিয়েছো। আবার বাচ্চাও দেখছি। ছেলে নাকি মেয়ে?
– ছেলে আন্টি। নির্ভান।
– বাহ! ভালো নাম রেখেছো। তা রুবা নাতীর খাতনার দাওয়াত দিতি নাকি একবারে। আরে দোলার বিয়ে না হলেতো জানতেই পারতাম না।

রুবাবার মুখটা অপমানে লাল হয়ে গিয়েছে। নাফি এগুলো ইচ্ছে করে করছে। কিসের শোধ নিচ্ছে সে? দুপুরের ঘটনার জন্য! রুবাবা রাগ সংবরন করে তার বান্ধবীদের নিয়ে গেলো আবরার আর নিপার সাথে পরিচয় করাতে। পরিস্তিতি বেগাতিক দেখে সালেহাও আর সূচনা- নাফির কথা তুললো না বান্ধবীদের সামনে। বেয়াজিদের আর মাহাপারার কথা বলবে ভেবেও বললো না। কারণ মাহাপারা চায় না বিয়েটা হোক। কি অদ্ভুত ! রুবাবার বাচ্চারা তার বাচ্চাদের এভাবে রিজেক্ট করছে আর সে তা চেয়ে চেয়ে দেখছে। আর সহ্য করবেনা সে। ঢেড় হয়েছে। সে তার পুত্রের জন্য রাজকন্যা আর কন্যার জন্য রাজকুমার খুজবে।
——————————————————-

দুপুরের দিকে নাফিকে নিজের রুমে ডেকেছিলো রুবাবা। গম্ভীর কন্ঠে বলেছিলো ঋতুর থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে। সেদিন যখন সে দোলার রুমের দিকে যাচ্ছিলেন নাফির রুমের দরজা হালকা খোলা দেখেই ভেতরে চলে গিয়েছিলো রুবাবা। নাফি তখন নির্ভানকে কোলে নিয়ে ঋতু কপালে আদরের স্পর্শ দিতে মশগুল।এমন কান্ড দেখে রুবাবার পায়ের রক্ত মাথায় চড়ে গিয়েছিলো। নেহাতি বাসায় মেহমান থাকায় সে নিজেকে শান্ত রেখেছে।
এই বিষয়ে নাফি বলতেই নাফি শান্ত স্বরে উত্তর দিয়েছিলো সে ঋতুকে ভালোবাসে। রুবাবা রাগ চরমে উঠলে সে ঋতুকে বিয়ের পরই চলে যেতে বলে। বাধ সাধে নাফি। সে ঠিক করেছে কোনো প্রকার আরম্বর ছাড়াই ঋতুকে বিয়ে করবে সে এবং তা দোলার বিয়ের পরের দিনই এবং আলাদা হয়ে যাওয়ার কথাও বলেছে। এই শুনেই রুবাবার পাগল প্রায় অবস্থা। ভয়ে তিনি সিটিয়ে গিয়েছেন। একমাত্র ছেলেকে নিজের থেকে দূর করতে চান না তিনি। কোনোভাবেই না।
——————————————————–
দোলাকে জাদিদের চাচী আর ফুফুরা হলুদ লাগানোর সময় ফোড়ন কাটলো।
– হলুদ লাগিয়ে যদি রংটা একটু উজ্জ্বল হয়।
দোলা বুঝেও না বুঝার ভান ধরলো। এসব কিছু সে বহুবার শুনেছে তবে খুব একটা আমলে নেয় না। দোলা আর জাদিদের কিছু কলিগরা এসেছে হলুদে। জাদিদ স্মিত হাসি দিয়ে তার চাচীর উদ্দেশ্যে বললো

– দয়া করে এখানে এসব কথা বলবেন না চাচী আম্মা। এটা অজপারা গাঁ না। এটা আমার হবু স্ত্রীর বাড়ি। এখানে অন্তত নিজেকে নিজে অপমানিত করবেন না।
——————————————————–

শফিক এতক্ষণ তার স্মরণের মায়ের সাথে বসে ছিলেন। স্মরণের মা এইরিনার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিলেন। এইরিনার এখানে আসাটা যদিও রুবাবা পছন্দ করেননি। তবুও তার হাতে কিছু নেই। স্মরণ বহুবার তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে তবে রুবাবা কৌশলে তা এড়িয়ে গিয়েছে।

মাহাপারাকে এক কোণায় চুপচাপ বসে থাকতে দেখেই এইরিনা তার কাছে গেলো। এইরিনা লক্ষ্য করলো একজন সুদর্শন যুবক মাহাপারার পাশে বসা কিন্তু দুজনেই চুপ। এইরিনা ছেলেটাকে চেনে। বিকেলের দিকেও তার সাথে একচোট তর্ক হয়েছে ছেলেটার। প্রচন্ড শান্ত চোখ দুটোর দিকে বেশিক্ষণ চেয়ে থেকে কথা বাড়াতে পারেনি এইরিনা। তবে ছেলেটাকে দেখলেই তার ভেতর অন্যরকম অনুভূতি হয়। কিন্তু কেনো হয় আর কি হয় তা তার জানা নেই।

—————————–

প্রায় দুপুর থেকে বাসা মানুষের জন্য গমগম করছিলো। যদিও বিকেল হতেই অধিকাংশ মেয়েরাই পার্লারের জন্য রওনা হয়েছে। বাসায় লোকজন খুবই কম। জাফর ঠিক করেছে সে এই সুযোগেই কোনো একভাবে বাসায় ঢুকে নির্ভান কে নিয়ে আসবে। যেহেতু রান্নার ইন্তেজাম পাশের বাসার খালি যায়গাটায় হয়েছে। তাই মুরুব্বিরা সবাই ওদিকেই। এ বাসায় তেমন লোকজন নেই বললেই চলে। পাশের বাসার মালিক শফিক সাহেবের বন্ধু। তার দুটো কন্যা সন্তানের বিয়ে আগেই হয়েছে। তাই এখন স্ত্রী,ছেলের বউ, ছেলে আর ৫ বছরের নাতি সহ এখানেই থাকেন। জাফর ডেকোরেটারের লোক সেজেই ভিতরে ঢুকেছে। আশা করা যায় তাকে কেউ চিনবে না। তবে ঋতু আর নির্ভান কোন রুমে থাকে তা সে জানে না। খুঁজতে হবে। যেহেতু লোক কম তাই কাজটা দ্রুত সারতে হবে। সিড়ি বেয়ে উপরে এসেই সকল রুম তন্ন তন্ন করে খুজলো সে এবং একদম কোনার রুমে নজর পরতেই দেখলো রুমে মাহাপারার কোলে নির্ভান আর ঋতু নির্ভানের জন্য কাপড় রেডি করছে। নির্ভানকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়াতে হবে। জাফর কিছুক্ষণ ওখানেই অপেক্ষা করলো। এরপর তার হাতে করে নিয়ে আসা ছোট্ট লাল কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে। পাশের রুমে গেলো। সে জানে এটা কনের রুম।একটু আগেও খুঁজতে খুঁজতে এ রুম দেখেছে সে। চট করে কয়েকটা গহনা তুলে নিলো বেগের ভেতর বের হতেই দেখলো মাহাপারা বের হয়ে সামনে হাটা দিয়েছে আস্তে আস্তে। সে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেই ঋতুর রুমের দরজার নব ধীরে ঘুরিয়ে রুমে ঢুকে পড়লো। ঋতু ঘুমাচ্ছে পাশে নির্ভান
ক্লোরোফোমের বোতলটা ঋতুর মুখের সামনে স্প্রে করলো। ঘুমন্ত নির্ভানকে ধীরে কাপড়ে জড়িয়ে লাল ব্যাগে তুললো। রুম থেকে বের হতেই রুবার সামনে পড়লো। রুবাবার প্রশ্নের মুখে পরার আগেই ক্লোরোফোমের বোতলটা আবার স্প্রে করতেই রুবাবা বেহুশ হয়ে পরলেন। মুখটা মাস্ক দিয়ে ঢাকা ছিলো তা খুলে ফেললো। চারপাশ দেখে সিড়ি দিয়ে নিচে নামএ গেলো জাফর।

—————————————————————-
রঙ বেরঙের আলোকসজ্জা, পূর্ণ চন্দ্রিমার সন্ধ্যা, নানা পদের খাবারের সুগন্ধে আজ বাণিহাল মৌ মৌ করছে। মানুষের ভিড়ে দাঁড়াবার তিল পরিমাণ ঠাই নেই। সবাই বিয়ের শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত। ইতোমধ্যে বর এসে গিয়েছে। নিপা আর নসীমা গেইট ধরাধরি নিয়ে রীতিমতো মারামারি লাগিয়ে দিয়েছে পাত্রপক্ষদের সাথে। আবরার চেয়ে চেয়ে উচ্ছল নিপাকে দেখছে। এত প্রাণবন্ত নিপাকে আগে কি কখনো দেখেছে সে? উহুম মনে পড়ছে না। মেরুন রঙা রাজশাহী সিল্কে তাকে কি দারুন মানিয়েছে।

– দুলাভাই ৬ শ্যালীকা এবং সাড়ে ৪ শ্যালক এবং একজন সম্বন্ধী মিলিয়ে ২০,০০০ এর একটাকাও কম দিলে গেইট ছাড়বোনা।
– নিপা আপা আমি আর আবরার ভাই বাদ যাচ্ছি কেনো? আমাদেরও ধরুন।(বেয়াজিদ)
– না। তোমরাওতো এ বাড়ির হবু জামাতা। তোমরাও পারলে এখনি কিছু দাও।
সকলের মধ্যে হাসির রোম পরে গেলো।

-আরে ডাকাত মেয়েতো এটা। ফট করে বলে বসলেন জাদিদের চাচী।
– নিপা মিষ্টি হেসে বললো ডাকাত বৈ কি! এ টাকাতো আমাদের অধিকার।
– জাদিদের পক্ষ থেকে তার বন্ধুরা শুধু এসেছে। জাদিদের ভাই একটা কিন্তু সে এখানে থাকে না তাই দেশে না থাকায় জাদিদের পক্ষে শুধু তার মামাতো বোন এবং বন্ধুরা।

আবরার আর বেয়াজিদের হয়তো জাদিদ এর কষ্ট সহ্য হলো না কিংবা কে জানে নিপার কথা শুনেই হয়তো দুজনে মিলে আকাশী রঙের ফুল করা রিবনের অপর পাশে চলে গেলো রিবনের নিচ দিয়ে। নসীমা প্রশ্ন করলো
– ভাইজান এইডা কি হইলো? আপনেরা ওইদিগ কেন গেলেন?
– দোলা আপার তো এতগুলো দশ্যি বোন আর ভাইয়েরা আছে কিন্তু জাদিদ ভাইয়ের তো ভাই আসে নি। তাই আমরা এ পাশে।(বেয়াজিদ) -ছোট ভাইরা থাকতে বড় ভাইয়ের বিপদ দেখেও এগিয়ে যাবো না এটা কি হয়? (আবরার)
কে জানে কি হলো? পুরো জায়গাটা জুড়ে নিরবতা। জাদিদের হঠাৎ মন ভাড় হয়ে উঠলো। অদ্ভুত ভালো লাগায় ভরে উঠলো মনটা। সেও সবাইকে এখন থেকে বলতে পারবে তার আরো দুটো ছোট ভাই আছে। হোক না সে সম্পর্ক ভায়রার তাতে কি? ভাই তো!

আবরারের এমন যুক্তিতে নিপার চোখের কোণটাও চিকচিক করে উঠলো এক বিন্দু অশ্রু। হঠাৎ নিপার মনে হলো এই মানুষটা এতো সরল কেনো? এক জীবন কি ভালোবেসে এই মানুষটার ঋণ শোধ করা সম্ভব?

————– ————–

কোনোরকম দৌড়ে নিচে পালিয়ে এলো জাফর। যেভাবেই হোক এই গহনা আর বাচ্চাকে নিয়ে চম্পট দিবে সে আজ। ঋতু টাকা দিলেও সে এই বাচ্চা আর ওকে ফিরিয়ে দিবেনা। সে একটা দম্পতিকে ঠিক করেছে যারা নিঃসন্তান এবং বাচ্চা দত্তক নিতে আগ্রহী। বিনিময়ে সে এই দেশ থেকে অন্য দেশে স্যাটেল হবার পরকল্পনা করেছে। সে ঠিক করেছে নাফির কাছে বড় ধরনের আমাউন্ট চাইবে। আর এই গহনাগুলোতো বিক্রি করবেই। বেশ ভালো পরিকল্পনা করেছে। তবে ওস্তাদের মার শেষ রাতে।

সদর দরজার দিকে যাওয়ার আগেই আবরারের হাতে ধরা পড়লো জাফর। আবরারের করা জেরার মুখে পড়ে সে ক্লোরোফোম নীতি আবরারের উপরও ফলাতে চাইলো কিন্তু ব্যর্থ চেষ্টা। বেয়াজিদ পেছন থেকে তার এক হাত শক্ত করে ধরলো। আবরার অন্য হাতে থাকা ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়েই বুঝতে পারলো ভারী কিছু রয়েছে তাতে। সে দেরি না করে চট করে ব্যাগ কার্পেটের উপর নামিয়ে চেইন খুললো। ততক্ষণে বেয়াজিদ জাফরের দুহাত মুচড়ে আটকে দিলো একটির সাথে অন্যটি এবং পায়ের পেশিতে আঘাত করে তাকে মেঝেতে ফেলে দেয়। আবরার চিৎকার করে কামালকে ডাকে। দ্রুত কামাল সামনে এসে দেখে মেঝেতে কেউ একজন পরে আছে। আবরার কামালকে রশি আনতে বলে। কামাল রান্না ঘরের একটা কেবিনেট থেকে মোটা রশি নিয়ে আসে। বেয়াজিদ রশি দিয়ে জাফরের হাত এবং পা বেধে বসায় চেয়ারে। আবরারের কোলে নির্ভান।

সে উঠে দাঁড়িয়ে নির্ভানকে নিয়ে আর গহনা সহ ব্যাগ নিয়ে উপরে চলে যায়। ঋতুর ঘরের সামনে যাবার আগেই দেখে রুবাবা মাটিতে পরে আছে অচেতন অবস্থায়। আবরার বেয়াজিদকে ডাকতেই বেয়াজিদ উপরে যায় কামালের তত্বাবধানে জাফরকে রেখে।
“আম্মাকে রুমে নিতে হবে বেয়াজিদ। দ্রুত। ”
বেয়াজিদ রুবাবাকে কোলে তুলে দোলার রুমে বিছানায় রেখে আসে। কয়েকবার ডেকেও সারা না পেয়ে বুঝে যায় কিছুক্ষণ পরই হুশ ফিরবে। আবরার নির্ভানকে নিয়ে তার মায়ের পাশে শুয়িয়ে দেয়।

————————————————————–
বেয়াজিদ চেয়ারে বসে থাকা জাফরকে দশাসই একটা থাপ্পড় দেয়। এক থাপ্পড়ে সে কোকিয়ে ওঠে। তার মনে হতে থাকে এই বুঝি দাঁত গুলো সব খুলে পরবে। আবরার নিচে এসে দেখে জাফর কোকাচ্ছে ব্যাথায়।
” তুমি কে? আর এখানে কি চাই তোমার?” বেয়াজিদ প্রশ্ন ছুড়ে দিলো জাফরের উদ্দেশ্যে।
আবরার দ্রুত নাফিকে ডাকতে চলে গেলো।
ততক্ষণে বেয়াজিদ জাফরের থেকে সব উত্তর বের করার চেষ্টা করছে। ” সঠিক ভাবে বলো তুমি কে? আর বাচ্চাটাকে কেন নিয়ে যাচ্ছিলে? দ্রুত উত্তর দাও নয়তো উত্তর বের করার আরো পদ্ধতি আমার জানা আছে। তুমি জানোই না বাঘের গুহায় হাত দিয়েছো।”
বেয়াজিদের কথা শুনেই জাফর ঘাবড়ে গেলো সে বুঝতে পেরেছে । বেয়াজিদ এদের মতো সাধারণ কেউ না। জাফর রাঁ করার আগেই নাফি লিভিং রুমে ঢুকলো। জাফরকে দেখেই সে গর্জে উঠলো।
“এ বদমাশ টা আমার বাড়িতে কি করছে?ওরতো জেলে থাকা উচিৎ। ওর এত বড় দুঃসাহস ও আমার বাড়িতে বাচ্চা চুরি করতে ঢুকেছে? ওকে আমি চৌদ্দ শিকের ভাত খাওয়াবো ইতর, জালেম।ঋতুর ক্ষতি করার শখ ঘুচিয়ে দিবো আজ ওর।”
বেয়াজিদ অবাক হয়ে বললো “এটা কি তাহলে ঋতু আপার এক্স হাজবেন্ড? অসম্ভব এ লোকতো সাংঘাতিক ক্রিমিনাল।”

“আবরার ভাই কল দ্যা পুলিশ রাইট নাও। আই’ল মেইক শিউর হি’ল গেট পানিশড বাই দ্যা ভারডিক্ট অব ল।” গমগমে গলায় বলে উঠলো বেয়াজিদ। পুলিশ এসে কিছুক্ষণ জিজ্ঞেসাবাদ করে জাফরকে ধরে নিয়ে যায়।

————————————————————-
ঋতু জ্ঞান ফেরার পর দেখে নির্ভান নাফির কোলে। ” কিছু কি হয়েছে? আপনি এরকম গম্ভীরভাবে বসে আছেন যে?” নাফি চমৎকার একটা হাসি ফিরিয়ে দিলো ঋতুকে। ” তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো। তৈরি হয়ে নাও। আমি নিপাকে পাঠাচ্ছি তোমায় হেল্প করতে ওরা সবাইতো পার্লার থেকে সেজে চলে এসেছে।”
“কি বলছেন? এতো দেরি হয়ে গিয়েছে? আপনি আমায় ডাকেন নি কেনো?” বলতে বলতে ঋতু ব্যস্ত ভাবে বিছানা থেকে নেমে পড়লো। নাফি নির্ভানের জন্য আনা ড্রেস হাতে নিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা দিলো নির্ভানকে কোলে নিয়ে।

চলবে…!

Shahazadi Mahapara’s Inscription

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here