খুনশুটি_ভালোবাসার পর্ব ১৪

0
2812

#খুনশুটি_ভালোবাসার💞❤️💞
#Nishi_khatun (Angel_Frozen)
#part:_14

আরিয়ান অনুকে বলে,”হ্যা দাও মনের সুখে গালি দাও।এই অখাদ্য কূখাদ্য গালি ছাড়া জীবনে আর কোনো কিছু দিয়েছো আমাকে?”

অনু বলে,”আমি আপনাকে কতো সম্মান করি তা আপনি খুব ভালো করে জানেন।”

আরিয়ান :-আমাকে এতো বেশি সম্মান করো যে আমার কোনো কথায় তুমি শোনো না।

অনু :- আপনার কথা শুনলে তো আজো কুমারী থাকতে হতো।তাহলে আর বাচ্চাদের মা হাওয়া লাগতো না।

আরিয়ান :-বাচ্চাদের মা হয় কি বা করেছো তুমি?

তখন আরিয়ানা নিচে নেমে এসে সবার সামনে চিৎকার করে বলে,”মাম্মা পাপা তোমরা ঝগড়া-ঝগড়ি বন্ধ করো।এসব ছাড়া আর কিছু জানো না?

সবাই আরিয়ানার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।

ইরাদ আরিয়ানাকে বলে,”তোমার মাম্মা কে? ”

আরিয়ানা সামনে অনুকে দেখিয়ে বলে,”এই যে উনি আমার মাম্মা।উফফচ্ এদের নিয়ে আমি পারি না।চার বছর বয়স আমার না তাদের।”

তাসনিয়া বলে,”চারবছর বয়সের বাচ্চা মেয়ে এতো পাকনা কথা বলে?”

আরিয়ানা বলে,”আমাকে পাকনা বলবেন না।আমার মাম্মা পাপার মতো আপনার ফ্যামিলি হলে আপনিও সব বুঝতেন।”

আবির আরিয়ানের সামনে গিয়ে বলে,”তুই না বলেছিস তোর বউ বাচ্চাটা হবার সময় মারা গেছে।তাহলে আরি অনুকে মা বলছে কেনো?”

আরিয়ান :-অনু আরিয়ানার মাম্মা তাই মা বলছে।অন্য কাউকে কেনো বলতে যাবে?আমার কিউটি মিষ্টি চঞ্চল বউটা মা হবার সময় খুব ম্যাচুর হয়ে যায়।আর বাচ্চাদের মতো করে না।তাই সে হিসাবে আমার প্রথম বউটা মারা গেছে।

ইরাদ বলে,”অনুর সাথে তোর সম্পর্ক কি ভাবে হলো আর দুইটা বাচ্চাও হয়ে গেছে?”

আরিয়ান বলে,”হ্যা অবশ্যই ঐ পুচকে ছেলেটার একমাএ বাবা আমি।”

আনিসা এসে বলে,”স্নেহা কি জানতো অনু তোমার বউ?”

আরিয়ান :-আগে জানতো না আজ এক বছর হলো সে জানে।সে আমাদের সাথে থাকছে তাই।

স্নেহা বলে,”দুই বছর আগে রাজ তার পরিবার কে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।কিন্তু রাজকে তারা পছন্দ করে না দেখে আমার বিয়ে দিবে না বলে সোজা তাদের অপমান করে বাড়ি থেকে বাহির করে দেয়।কিন্তু আমি সেই পিচ্চি কাল থেকে রাজ কে ভালোবাসি।তাকে ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবতেই পারি না।তাই নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাবার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি দুজনে।কিন্তু বিপত্তি বাধে রাজের বাড়ির মানুষদের নিয়ে।আমার বাড়ির মানুষেরা তাদের অপমান করেছিল বলে তারা আমাকে মেনে নেয়ননি।রাজ আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তো বিয়ে করে নাই?তা সে আর আমি আলাদাভাবে ছোট একটা সংসার শুরু করি।এইভাবে একবছর আমরা টুনাটুনি সংসার করি।তারপর রাজ বাহিরে যাবার সুযোগ পাই।তখন সে চলে যায়।কিন্তু রাজের অনুপস্থিতিতে আমি কার কাছে থাকবো?তখন রাজ আরিয়ান ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছে রেখে যায়।রাজ চলে যাবার পর আমি আরিয়ান ভাইয়ার বাড়িতে গিয়ে আকাশ থেকে পড়ি।যে আমার হিরো ছিলো সে এখন আমার আপন দুলাভাই ভাবা যায়।তাদের কাছে গিয়ে জানতে পারি তারা কতো সুন্দর সুখে শান্তিতে সংসার করছে।এরপর থেকে আমি তাদের সাথে থাকি।আমি আর আরিয়ানা একসাথে থাকি সবসময় সে আমাকে ছোট মাম্মা বলে ডাকে।

আবির বলে,”বাহ আমার ছোট বোনটিও জানে তার।বড় বোনের স্বামী আমার বন্ধু।আমরা কেউ জানি না।”

আনিসা বলে,”তারমানে সেদিন যখন আমাদের কথা কাটাকাটি হয় তখন তুই সেখানে থেকে চলে যাবার পর আরিয়ানের সাথে দেখা হয় তোর?”

আরিয়ান বলে,”সেদিন অনু একা বাড়ি থেকে চলে গেলে আমিও অনুর পেছনে পেছনে ছুটে যায়।যতোই হোক বন্ধুর বোনকে তো বিপদে একলা ছেড়ে দিতে পারি না।রাতের বেলা রাস্তার পাশে চুপচাপ বসে ছিলো অনু।আমি সেখান থেকে অনুর হাত ধরে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।বাড়িতে অনুকে এভাবে নিয়ে যাওয়া দেখে বাড়ির মানুষেরা ভাবে আমি অনুকে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে নিয়ে এসেছি।সে রাতেই বাড়ির মানুষেরা জোর করে আমাদের বিয়ে দিয়ে দেয়।কেনো জানি অনু তখন আর তাদের নিষেধ করে না।দ্রুত কবুল বলে আমাকে স্বামিনী রুপে গ্রহণ করে।কিছুদিন পর আমার চিটাগাং একটা বড় কোম্পানিতে চাকুরী হয়ে যায়।আমি অনুকে সাথে করে সেখানে নিয়ে যায়।তারপর অনু সেখানে তার বাকি লেখাপড়া কমপ্লিট করে।এবং এখন সে আবার আমাদের এই শহরে ফিরে আসে। আমাদের পুরাতন ভার্সিটিতে লেকচারার হিসাবে আজকেই সে জায়েনিং করেছে।আর আমি অনুর প্লানিং জানতে পেরে ইচ্ছা করেই তোদের সবার সাথে যোগাযোগ শুরু করি।আর ভাগ্য কতো ভালো দেখ আমরা সবাই আজ একসাথে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি।

ইরাদ বলে,”সব বুঝলাম তবে একটা বেপার বুঝলাম না।অনু এতো লেখাপড়ার মাঝে দুইটা বাচ্চার মা হলো কেমনে?”

আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে,”প্রতিটা বিবাহিত মেয়ে যেভাবে মা হয় সেভাবে তাতে তোর কোনো সন্দেহ আছে?”

ইরাদ :- না মানে! দুই বাচ্চার দেখাশোনা করে এতোকিছু কি ভাবে করছে?

আরিয়ান :আমার দাদাভাই-দাদীমা আমাদের সাথে থাকতো।তারাই আমাদের বেবিদের দেখাশোনা করতো।আর তাছাড়া কাজে সাহায্যদান করার জন্য আমাদের একজন সহোযোগী আপু আছে।

অনু বলে,”তা দুলাভাই আপনি আর আনিসা একসাথে হলেন কি ভাবে?আর বাচ্চার বাবা মাও হয়ে গেছেন ভাবা যায়!”

ইরাদ মাথা চুলকিয়ে বলে,”ঐ যে মানে!তুমি রিজেক্ট করার পরে আমার সাথে আনিসার ফেসবুক রেগুলার কথা হতো।কথা বলতে বলতে কখন যে আমাদের সম্পর্কটা এতোটা গভীর হয়েছে তা বুঝতেই পারি নাই।তারপর আমরা যখন বুঝতে পেরেছি পরিবারের সবাইকে জানিয়েছি তারা আমাদের চার হাত এক করে দিয়েছে।”

আনিসা বলে,”এই ফেসবুকের জন্য আমাকে পেয়েছিলে নয়তো তোমার মতো রিজেক্ট করা পোলারে কেউ বিয়ে করতো না।”

ইরাদ বত্রিশটা দাঁত বাহির করে বলে,”তোমার স্বামী হওয়াটা কপালে ছিলো আমি চাইলে কি আর অন্যের বা-পাজরের হাড় কে বিয়ে করতে পারি?”

আনিসা :-তোমার এই সব ঢং দেখে বাঁচিনা।যাও সব বাচ্চাদের নিচে নিয়ে আসো।

ইরাদ সব বাচ্চাদের নিচে এনে অনুষ্ঠান কমপ্লিট করে।

এরপরে সবাই একটু গল্প গুজব করে যে যার বাড়িতে ফিরে যায়।তবে অনু আর স্নেহার সাথে আবির কোনো কথা বলে না।আবির একটি বারের জন্য ওদের বলে না বাবার বাড়িতে যাবার কথা।

অনুর পিচ্চিটা কে দেখে আবিরের খুব ইচ্ছা করছিল কোলেকাঁখে নিয়ে আদর করতে কিন্তু নিজের আত্মসম্মান কম হবে দেখে নিজের ইচ্ছা কে মাটি চাঁপা দিয়েছে।

আরিয়ান ভেবেছিল আবির হয়তো বাচ্চাদের আদর করবে কিন্তু না সে এমন কোনো কিছুই করে নাই।আসলে মানুষ যখন বদলে যায় তখন তার কাছে কোনে কিছু আশা করাটা এমন,”দিনের বেলা সূর্যের তাপ থাকবে রাতের চাঁদের মতো শীতল। ”

অনুস্নেহা বাচ্চাদের সাথে নিয়ে আরিয়ানদের বাড়ির দিকে রওনা দেয়।



চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here