খুনশুটি_ভালোবাসার শেষ পর্ব

0
4617

#খুনশুটি_ভালোবাসার💞❤️💞
#Nishi_khatun (Angel_Frozen)
#part:_16(last part)

আচ্ছা তোমার বাবা মা যখন তোমাকে বিয়ে দিতে চাইলো তখন এতো কাহিনী করলে আর আমার বাড়িতে এসে চুপচাপ আমাকে বিয়ে করলে যে?

আরিয়ানের এমন কথা শুনে অনু মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”আপনার সাথে বিয়েটা ভাগ্যে ছিলো তাই হয়েছে।যদি ইরাদের সাথে বিয়েটা লেখা থাকতো তাহলে অবশ্যই ইরাদের সাথে আমার বিয়েটা হয়ে যেতো।”

আরিয়ান :-তাহলে তুমি কি এই বিয়েটা মেনে নিচ্ছ?

অনু :-এখানে বিয়েটা না মানার কোনো কারণ তো দেখতে পাচ্ছি না।বিয়ে তো হয়ে গেছে।এটা কোনো খেলাঘর নয় যে যখন ইচ্ছা ভেঙ্গে দিবো।

আরিয়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না।যে মেয়ে বিয়ে করবে না বলে এতো কাহিনী করলো সে আজ আমাকে স্বামী রুপে মেনে নিতে চাইছে।

অনু বলে,”দেখুন এতো চিন্তা করার দরকার নেই।আপনি যদি আমাকে স্ত্রী রুপে মেনে নিতে না পারেন তাহলে সমস্যা নেই। আমি জোর করে আপনার কাছে থেকে স্বামীর অধিকার চাইবো না।ছেড়ে দিবো আমার সব অধিকার।”

আরিয়ান বলে,”আমাকে এতোটা বিশ্বাস করছো কেনো?”

অনু :-কারণ আপনি আমাকে বোঝেন।আমি কোনো খারাপ পরিস্থিতিতে থাকলে আপনি আমাকে সুন্দর করে বোঝাতে পারেন।আপনাকে ছোট থেকে বিশ্বাস করি!আপনাকে অনেক সম্মান করি।আর যেখানে সম্মান আর বিশ্বাস থাকে সেখানে সারাজীবন একসাথে থাকা যেতেই পারে।

আরিয়ান বুঝতে পারে অনুর মনের কোনো এক গোপন কুঠিরে আরিয়ানের জন্য সুপ্ত ভালোবাসা আছে।যেহেতু বিয়েটা হয়েছে আর দুজনের সমস্যা নেই।তাহলে সংসার করাই যেতে পারে।

এরপর শুরু হয় দুজনের টুকটাক খুনশুটি নিয়ে সংসার জীবনের সূচনা।

আরিয়ান বিয়ের কিছুদিন পর চাকুরী পায়।তখন অনুকে সাথে করে ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়।অনু সেখানে লেখাপড়া করে আর আরিয়ান কে না জানিয়ে চুপচাপ বাচ্চার প্লানিং ও করে।

আরিয়ান যেদিন প্রথম জানতে পারে অনু প্রেগন্যান্ট সেদিন একটু রাগ করেছিল।বলে বিয়ের কয়েকটা মাস পাড় হলো মাত্র।তুমি নিজের লেখাপড়াটা কমপ্লিট করতে পারতে তারপর না হয় বাচ্চাদের প্লানিং করতে।

অনু বলে,”বাচ্চার দরকার আমার।আমি মা হবো তাতে আপনার কি?এক দুই বছর আগেই আমার পুচকি বড় হয়ে যাবে।তখন আরেকটা বাচ্চা নিবো।”

আরিয়ান :-এই তুমি কি বাচ্চা দিয়ে ফুটবল খেলার দল বানাবে?

অনু :-হু দরকার হলে তাই করবো।

আরিয়ান :-আর লেখাপড়ার কি হবে?

অনু :-লেখাপড়ার সাথে বাচ্চার সম্পর্ক কোথায়?আমি দুই কাজ একসাথে করবো।

এরপর আরিয়ান অনুর সাথে আর কোনো তর্ক করে না। কারণ বাচ্চাটা কে তো আর মেরে ফেলা সম্ভব না।তাদের সম্পর্কের সুতা শক্র করতে তার আগমণ।

অনুর বাচ্চা হবার কথা শুনে আরিয়ানের দাদাভাই আর দাদীমা চলে আসে তাদের বাসায়।দাদীমা সব কাজ কাজের মানুষের সাহায্য নিয়ে করতো।
অনুকে কোনো কাজ তারা করতে দিতো না।
অনু সময় মতো খাওয়া-দাওয়া করতো আর কলেজে লেখাপড়া করত।এইভাবে বেশ সুখে দিন কাটছিল।
অনুর বাবার বাড়ির কেউ জানতো না অনু কোথায় গেছে কি করছে।সেই বিয়ে ভাঙ্গার দিন থেকে আবির আর কখনো আরিয়ানের সাথে যোগাযোগ করে নাই।

তারপর আরিয়ানের ঘর আলো করে একটি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে।আরিয়ানা আরিয়ান আর অনুর চোখের মণি হয়ে থাকে সব সময়।তার তিন বছর পর অনু আবারো বাচ্চা নেয়।এবার তাদের ঘর আলো করে একটি রাজকুমার আসে।

দুই বাচ্চা অনুর প্রাণ। তারা একটু অসুস্থ হলে অনু সারারাত জেগে কাটিয়ে দিতো।
তাহলে আজ কেনো অনুকে ভুল বুঝছি আমি?

অতীতের স্মৃতির পাতা থেকে বেড়িয়ে এসে আরিয়ান নিজেকে বলে,”আমি কি বদলে গেছি?পাঁচ বছর আগে অনুকে এতো বুঝতাম আজ কেনো তাকে ভুল বুঝছি?এই এক্সিডেন্ট তো আমি গাড়ি ড্রাইভ করার সময় ও হতে পারতো।অনু তো মাএ একটা উছিলা ছিলো তবে এক্সিডেন্ট টা তো হওয়ারি ছিলো। আমি কেনো রাগের মাথায় আমাদের সম্পর্কটা বিষিয়ে তুলছি?আমি কি করে ভুলে যাচ্ছি যে অনু ওদের মা।আমি ওদের বাবা।আমার থেকে বেশি কষ্ট পরিশ্রম অনু করে ওদের লালনপালন করার জন্য।আমি তো অনেক সময় অনেক কিছু জানতেও পারি না।তারপর ও দু ভাই বোনের দেখাশোনার কোনো এুটি রাখে না।তাহলে সেই বাচ্চার মায়ের উপর আমি কি ভাবে এতো বেশি রাগ করতে পারি।আমি ভুলে যাচ্ছি কেনো বাচ্চাদের এই অবস্থা দেখে আমি যতোটা কষ্ট পাচ্ছি তার থেকেও বেশি কষ্ট অনু পাচ্ছে।

আরিয়ান অনুর কাছে গিয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমাকে মাফ করে দাও!আমি রাগের মাথায় শুধু বাচ্চাদের কথা চিন্তা করেছি তোমার দিকটা একটু ভেবে দেখি নাই।”

অনু :-আমি কাউকে মাফ করতে পারবো না।আপনার শাস্তি হচ্ছে বাচ্চারা যতোদিন না সুস্থ হচ্ছে ততোদিন আমাকে যতোটা সম্ভব সব কাজে সাহায্য করতে হবে।যদি সাহায্য না করছেন তাহলে আমাকে আরো একটা বেবি গিফট করতে হবে।

আরিয়ান বলে,”এই একদম না!”

অনু ভ্রু কুঁচকে বলে,”না মানে?”

আরিয়ান :-আমি তোমাাকে সব কাজে সাহায্যদান করতে রাজি।আমার পোলাপান এখনো পিচ্চি তুমি ওদের সঠিকভাবে দেখানো করো। ওরা বড় হলে আমি তোমাকে একটা এতিমখানা গিফট করবো।তখন সেই সব বাচ্চাদের মা হয়ে শখ মিটিয়ে নিও।

অনু দাঁত বাহির করে হাসতে থাকে।

এভাবে চলছিল বেশ কিছুদিন।
তারপর অনুর বাবার বাড়ির সবাই আরিয়ানদের বাড়িতে এসে অনু আরিয়ান কে তাদের বাড়িতে যাবার জন্য দাওয়াত দেয়।
অনু আরিয়ান কে তারা মেনে নিয়েছে।

তখন আরিয়ান বলে,”দুঃখিত আমি আপনাদের বাড়িতে যেতে পারবো না।”

আরিয়ানের কথা শুনে বাড়ির সবাই অবাক হয়ে যায়।
আবির বলে,”কেনো যেতে পারবি না?তোর সমস্যা কী?””

আরিয়ান বলে,”কারণ স্নেহা ও আপনাদের বাড়ির মেয়ে আর আমাদের বাড়ির বউ।আমাদের মেনে নিলে স্নেহা আর রাজকে মেনে নিতে হবে।আমরা দুই ভাই একসাথে যাবো আপনাদের বাড়িতে নয়তো যাবো না।”

অনুর বাবা বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে স্নেহা আর রাজকে ও আমরা মেনে নিবো।কিন্তু তার আগে রাজকে তো দেশে আসতে হবে।”

আবির বলে,”দেখ আরিয়ান রাজের দেশে আসা দেড়ি আছে।সেই জন্য স্নেহা আপাতত একাই যাবে রাজ আসলে তখন রাজকে এসে জামাই আদর করে নিয়ে যাবো।”

এরপর ও অনু যেতে চাই না।

আরিয়ান অনুকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বলে,”দেখো অনু সেদিন যা হয়েছিল সবটা একটা খারাপ স্বপ্ন মনে করে ভুলে যায়।আমরা যদি মনের মধ্যে পুরাতন কথার গ্লানি রেখে দেয় তাহলে আমাদের বাচ্চারা তাদের নানা বাড়ির আদর থেকে বঞ্চিত হবে।আশা করি তুমি এটা কখনো চাইবে না যে বাচ্চারা এই আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হোক।দেখো প্রতিটা পরিবারে কিছু না কিছু সমস্যা থাকে।তাই বলে যদি আমরা সব সম্পর্ক গুলো নষ্ট করি তাহলে তো হবে না।আর তারা তোমার বাবা-মা। তাদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করার কোনো প্রশ্ন আসে না।তুমি এমন কাজ করতে পারো না।আমরা কিছুটা ভুল করেছি তার শান্তি পেয়েছি। এবার তুমি আর কোনো কথা বলবে না।”

অনু বলে,”দেখো আমি চাই না ঐ বাড়িতে যেতে।তারা পাঁচ বছর আমার খোঁজ খবর নেই নি।আজ হঠাৎ এসে বলবে আর আমি তাদের সাথে চলে যাবো?”

আরিয়ান বলে,”আচ্ছা নিজেকে একটি বার তোমার বাবা-মা’র স্থানে রেখে চিন্তা করো তো যদি আজ আরিয়ানার জন্য আমাদের এতোটা অপমানিত হতে হয় তখন তোমার কি রাগ লাগবে না?তুমি কি আরিয়ানার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না?”

অনু আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে বলে,”উঁহু আমি কিছুই জানতে বুঝতে চাইছি না।”

আরিয়ান অনুর কপালে চুমো দিয়ে বলে,”একদম পাগলামি করবে না।তোমার বাবা মার সাথে তাদের বাড়িতে গিয়ে কিছুদিন থেকে আসো।দাদীমার শরীর টা কিছুদিন যাবৎ খারাপ যাচ্ছে। মা তার পেছনে সময় দিচ্ছে। তোমার একা একা সব কিছু করতে কষ্ট হচ্ছে তা আমি জানি।তোমাদের বাড়িতে অনেক মানুষ আছে সবাই মিলে সাহায্য করবে।আর ঐ বাড়িতে বাচ্চারা আছে ওদের সাথে থাকলে এদের ও ভালো লাগবে।”

অনু আরিয়ান কে আর কিছু বলে না!জানে আরিয়ান ভুল কিছু বলছে না।আসলে এমন জীবনসাথী পাওয়াটা ভাগ্যের বেপার।

অনু বাচ্চাদের নিয়ে বেশ কিছুদিন তার বাবার বাড়িতে এসেছে।এখন আরিয়ানা মোটামুটি সুস্থ তবে বাবুর হাত টা এখনো ব্যান্ডস করা।তার হাত ঠিক হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।

তাসনিয়া আরিয়ানা আর পুচকের অনেক খেয়াল রাখে।আবির রাতে বাড়িতে ফিরে আসার সময় রোজ বাচ্চাদের পছন্দমত চকলেট নিয়ে আসে।

অনুর বাবা মা তো পুচকে কে কোলে কোরে সারাদিন ঘুরাঘুরিতে ব্যস্ত একটু পুচকে কে কান্না করার চান্স দেয় না।

স্নেহা বাবার বাড়িতে।রাজ বেচারা শুধু আফসোস করে।আহারে আজ যদি দেশে থাকতাম তাহলে শ্বশুরের বাড়িতে বউ সাথে নিয়ে জামাই আদর খেতে পাড়তাম।

স্নেহা রাজ কে বলে,”সমস্যা নাই।আপাতত আমি তোমার ভাগের আদর গুলো খেতে থাকি।”

আরিয়ান শ্বশুর বাড়িতে এসে আরিয়ানার দায়িত্ব স্নেহা কে দিয়েছে আর।পুচকে নানা নানির কাছে।আরিয়ান নিজের বউ নিয়ে রাতের বেলা ঘুরাঘুরি করতে বেড়িয়ে পড়ে।

এভাবে চলতে থাকে।যখনি ওদের ঘোরাঘুরি করার শখ হয় তখন বাচ্চাদের দায়িত্ব বাড়ির মানুষদের ভাগাভাগি করে দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
এবাবে দুষ্টু মিষ্টি খুনশুটি ভালোবাসার চলতে থাকে।

আসলে প্রতিটা সম্পর্কের মাঝে ঠুকঠাক খুনশুটি লেগে থাকে।তবে এই খুনশুটি গুলো ভালোবাসার তবে এই #ভালোবাসার_খুনশুটি গুলোকে কখনো সম্পর্ক নষ্ট হবার কারণ হতে দিতে নেই।নিজেদের মানুষিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব নিজেদের। তাই পরিবারের সব দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজের সম্পর্কটা কে সব সময় নতুন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন।সম্পর্কের মাঝে কখনো একঘেয়েমি আসতে দিবেন না।আর সব সময় সম্পর্কের মাঝে একটু দুষ্টু মিষ্টি #খুনশুটি_ভালোবাসার রাখবেন এটা ছাড়া সম্পর্ক কিন্তু নিরামিষ হয়ে যাবে।

(গল্পটা লেখার প্রতি কোনো আগ্রহ পাচ্ছিলাম না।তাই গল্পটা শেষ করে দিলাম।জানি গল্পটা সুন্দর হয়নি।তারপর ও সবার কাছে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো।)



“””””””””সমাপ্তি “””””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here