খুনশুটি_ভালোবাসার পর্ব ১৫

0
3561

#খুনশুটি_ভালোবাসার💞❤️💞
#Nishi_khatun (Angel_Frozen)
#part:_15

আজকে বহুবছর পর অনু তার শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছে।
হ্যা এতোবছর অনু এই শহরে আসে নাই।মনের মধ্যে একরাশ অভিমান নিয়ে সে আরিয়ানের সাথে সংসার করতে বহু দূরে গিয়েছিল।

আজ এতোবছর পর সে তার সংসারের ফিরে আসছে।তার স্বামীর বাবার বাড়িতে আজ দুই বাচ্চাকে সাথে নিয়ে প্রবেশ করবে।

তবে এতোটা ভালো ছিলো না ওদের ভাগ্যটা।

বাড়িতে যাবার পথে ওদের গাড়িটা রাস্তার সাইডে থামিয়ে রেখে আরিয়ান আর স্নেহ কিছু কেনাকাটা করতে যায়।

ঠিক তখন পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে ওদের গাড়িতে ধাক্কা দেয়।গাড়িতে অনু দুই বিচ্ছু কে নিয়ে বসে ছিলো।সামনের সিটে অনুর কোলে ছেলে বাবুটা ছিলো আর পিছনের সিটে আরিয়ানা বসে ছিল।গাড়িটা এক্সিডেন্ট করাতে বাচ্চাদের অবস্থা খুব খারাপ হয়।অনুর কোলো পিচ্চিটা ছিলো ওর পুচকে খুব গুরুতর আঘাত পায়।মেয়েটার ও আঘাত লেগেছে সে জ্ঞান হারিয়েছে।

আরিয়ান আশেপাশের মানুষদের সাহায্য নিয়ে দ্রুত ওদের বাহির করে হসপিটালের নিয়ে চলে আসে।

অনু অসুস্থ অবস্থায় খুব চিৎকার করে কান্না করছে।
যদি ওর পুচকের কিছু হয় তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।

আরিয়ান বার বার বলেছিল এভাবে গাড়িতে তোমাদের রেখে যেতে ইচ্ছা করছে না।চলো আমরা সবাই একসাথে বাড়িতে চলে যায়।তোমাদের আমি বাড়িতে রেখে তারপর না হয় মার্কেটে আসবো।এখুনি কেনাকাটা করতে হবে এমনটা কিন্তু নয়।

কিন্তু অনু বলে,”যাচ্ছি যখন তখন বার বার আসার কি দরকার।একটু অপেক্ষা করে সবাই একসাথে যাবো।”

অনু আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে ওর বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।আরিয়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না।তার দুই সন্তান খুব অসুস্থ এমন করুণ অবস্থায় সন্তানদের কোনো বাবা-মা দেখতে পারবে না।

আরিয়ান বাবুদের এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছিল না।কিন্তু ভাগ্যের উপর দিয়ে যেতে তো পারবে না।
চুপচাপ পাথরের মতো অসুস্থ অনুকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।

অতিরিক্ত টেনশনে আর আঘাতের ব্যাথায় অনু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।তারপর ও নিজের স্ত্রী কে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।

স্নেহা তার বাবা-মা কে ফোন দিয়ে তাদের এই দূর্ঘটনার খবর দেয়।

অনুর শ্বশুরবাড়ির সবাই এসে দেখে এখানে খুব খারাপ অবস্থা। সবাই মনে মনে দোয়া করছে যাতে বাচ্চাদের কিছু যেনো না হয়।

রাজ তো বহুদূরে স্নেহা রাজের কাছে কল দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।যদি বাচ্চাদের কিছু হয় তাহলে অনু আরিয়ানের জীবনটা একদম বদলে যাবে।রাজ বহুদূরে আছে তাই সে ইচ্ছা করলেও স্নেহাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলতে পারবে না তুমি চিন্তা করো না।আল্লাহ আছেন সব কিছু ঠিকঠাক করে দিবেন।

রাজের খুব খারাপ লাগছে আরিয়ানের পুচকের জন্য।পুচকে টা যে ওদের বাড়ির সবার জান।সেই জানটা আজ অসুস্থ এটা কি মেনে নেওয়া সম্ভব?আর বাচ্চাদের কোনো কিছু হলে সহ্য করা যায় না।

অনুর বাবা মা আজ এতোবছর পর মেয়ের এমন দূঃখের খবর শুনে ছুটে চলে এসেছে।যতো যাই হোক বাবা-মা সন্তানদের উপর বেশি দিন রাগ করে থাকতে পারে না।তার উপর যদি এমন খবর শোনা যায় তাহলে তো আরোই সম্ভব না।

অনুর বাবা বলে,”আমি যদি সেদিন বেশি জোর না করতাম তাহলে আমার মেয়েটা আমার কাছেই থাকতো।বেশি বাড়াবাড়ি করে মেয়েটার জীবনটা নষ্ট করতে গিয়েছিলা।আমার তখন অনুকে কিছুদিন সময় দেওয়ার দরকার ছিলো।মেয়ে তো সময় চেয়েছিল নিজের জন্য।কিন্তু অতিরিক্ত আবেগকেন্দ্রিক হয়ে সেদিনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এতো গুলো বছর মেয়েটা আমার দূরে ছিলো।আজ এতোবছর পর আমাদের কাছে আসলো তাও আবার এমন বিদ্ধস্ত অবস্থা।

ইরাদ আনিসাও তাদের দেখতে হসপিটালের ছুটে এসেছে।

অনেক সময় পর ডাক্তার এসে বলে,”আপনাদের বাচ্চাটা প্রাণে বেঁচে গেছে তবে পিচ্চিটার হাতের হাড্ডিতে আঘাত লাগার কারণে সমস্যা হয়েছে।চিন্তা কোনো কিছু নেই।আমারা হাতে প্লাস্টার করে দিয়েছি।কিছু দিন এভাবে রাখলে আর নিয়মিত মেডিসিন খাওয়ালে বাচ্চার সমস্যা সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ। ”

আরিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাচ্চাদের কাছে বসে থাকে।সারারাত আরিয়ান দুই বাচ্চার সাথে ছিলো।অনু অসুস্থ তাই তাকে আলাদা কেবিন রাখা হয়েছে।অনুর সাথে স্নেহা ছিলো।

আরিয়ান সারারাত বাচ্চাদের সাথে ছিলো একটি বারের জন্য অনুর কাছে যায়নি সে।তার মনের মাঝে খুব রাগ জমে আছে।কেনো অনু আরিয়ানের কথা শুনলো না।যদি অনু জোর না করতো তাহলে কখনো আরিয়ান ওদের একা রেখে যেতো না।আর না এমন ঘটনা ঘটতো?অনুর জিদের জন্য আজ বাচ্চাদের এমন অবস্থা। যদি বাচ্চাদের কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমি অনুকে কোনোদিন ও মাফ করতাম না।

সকালে অনুর জ্ঞান ফিরতেই সে বাচ্চাদের দেখতে ছুটে চলে আসে।আরিয়ান অনুকে দেখে একটা কথাও বলে না।অনুর এখন আরিয়ান কে খেয়াল করার মতো সময় নেই।কারণ তার দুই সন্তান আজ খুব অসুস্থ। যে মায়ের সন্তান বিপদে পড়ে সেই মা জানে তার কী অবস্থা হয়।

তারপর ও অনুর শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হবার কারণে স্নেহা অনুকে জোর করে সেখান থেকে নিয়ে যায়।

সকালে পিচ্চির ঘুম ভাঙ্গার পর শুরু হয় আরিয়ানের জীবনের নতুন যুদ্ধ। কারণ পিচ্চির হাতে প্লাস্টার করার জন্য অনেক ভারী হয়ে আছে।তার কাপালে বড় ব্যান্ডেজ করা।তার হাত সে ইচ্ছা মতো নাড়াচাড়া করতে পারছে না।তার মাথায় ব্যাথা।সে ঠিকমতো কেনো কিছু না করতে পারার জন্য কান্না করতে থাকে।সে এতোটা ছোট যে তাকে বোঝানো সম্ভব না।আর কোনো এতো ছোট বাচ্চাদের সাথে এমন কিছু হলে কিভাবে কি করতে হয় এমন ধারণা কারো নেই।

আরিয়ানাকে তাও কিছুটা বোঝাতে পেরেছে।কিন্তু ছেলেটা কে কি বোঝাবে?আর বাবা হয়ে বাচ্চাটার এমন অসহায় অবস্থা সে দেখতেও পারছে না।না পারছে সহ্য করতে।আরিয়ানের প্রচুর রাগ হচ্ছে অনুর উপর।

তারপর ও এভাবে দুইদিন হাসপাতালে পার করে দুই বাচ্চাকে নিয়ে ওরা বাড়িতে আসে।

আরিয়ান ভাবে বাড়িতে অনেক মানুষদের মাঝে থাকলে হয়তো পুচকের কষ্ট একটু কম হবে।তবে আমরা যেমনটা ভাবি সব সময় কি তেমন হয়?

আরিয়ান এই তিনদিনে একবারের জন্য অনুর সাথে একটু কথা বলে নাই।সে অনুকে সব কিছুর জন্য দ্বায়ী মনে করে।আসলে কি সব কিছুর জন্য অনু দায়ী?
আচ্ছা অনুর কি কষ্ট হচ্ছে না?অনু যে বাচ্চা গুলোর মা।আরিয়ান রাগের মাথায় কোনো ভুল সিন্ধান্ত না নেয়।
(দুঃখীত ব্যস্ততার জন্য পর্ব বড় করে দিতে পারছি না)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here