খুনশুটি_ভালোবাসার পর্ব ৯

0
1950

#খুনশুটি_ভালোবাসার💞❤️💞
#Nishi_khatun (Angel_Frozen)
#part:_09

স্নেহা রাজের সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছে। রাজ স্নেহাকে দেখে জিজ্ঞাস করে তা হঠাৎ তুমি এখানে আসলে কেনো?

স্নেহ আমাদের বাড়ির জামাইয়ের স্থানে বসাবো তেমাকে তাই।

রাজ:- ফাইজলামি না কি?

পেছন থেকে অনু এসে বলে,”মোটেই না!আমার সাথে আমার বাড়িতে যাবে।সেখানে গিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলবা তুমি আমাকে ভালোবাসো।আর আমাকে বিয়ে করতে চাইছো।”

রাজ :- ঐ মেয়ে তোমার মাথা ঠিক আছে তো?
অন্য কেউ জোটে নাই বলির পাঠা বানানোর জন্য?আমাকে যাইতাম না তোমার সাথে তোমার বাড়িতে মিথ্যা নাটক করতে।

অনু ;- আমি জানি না।আমার লগে আমার বাড়িতে গিয়ে যদি মিথ্যা নাটক না করো তোমার খবর আছে।

রাজ :- দেখো অনু পাগলামি করবা না।সব সময় তোমার পাগলামি ভালো লাগে না।যাও তো এখান থেকে অন্য কাউরে নিয়ে যাও তোমার পাগলামিতে শামিল করতে।

অনু :- আরে ভাই অন্য কেউ যদি জুটতো তাহলে আপনার কাছে জীবনেও আসতাম না।

রাজ :- তোমার ভাইয়ের কলিজার টুকরো বন্ধু আছে না।তারে ফাঁসিয়ে বিয়েটা ভাঙ্গতে পারো তো।

অনু :-আরে বদলে কি কয়?আমি এই গাঁজাখুরি গল্প আরিয়ান ভাইকে নিয়ে বললাম আর তারা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নিবে তাই না।আমি মরে গেলেও বাড়ির মানুষেরা কিছুতেই বিশ্বাস করবে না।

রাজ :- হ্যা, আরিয়ানের কথা বললে বিশ্বাস করবে না।আর আমি গেলে কাজ হবে কি দারুণ কথা।

অনু :- তুমি তো মিয়ে প্রেমিক পুরুষ।তোমারে লগে নিয়ে গেলে সবাই বিশ্বাস করবেই।

রাজ :- তোমাকে সাহায্য করে আমার কী লাভ?

অনু চব্বিশটা দাঁত কেলিয়ে বলে,”তুমি যে আমার ছোট বোন স্নেহার পেছনে লাইন মারো সে কথা কিন্তু আমি জানি।অনেক প্রমাণ ও আছে আমার কাছে।এখন তুমি যদি আমাকে সাহায্য না করো সমস্যা নেই।আমি সে সমস্ত প্রমাণ নিয়ে তোমার নামে ভাইয়া আর আরিয়ানের কাছে বিচার দিবো।এবার তুমি চিন্তাভাবনা করে আমাকে বলো।”

রাজ :-স্নেহার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে থাকে।

স্নেহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

অনু :- স্নেহার দিকে ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই।
সে নিজেও জানে না আমি কেমনে সব কিছু জানি।আর তোমার লজ্জা করে না আমার ছোট মাসুম বোনের সাথে প্রেম করতে আসছো?

রাজ বাধ্য ছেলের মতো বলে,”আমি তোমার সাথে তোমার বাড়ির মানুষের সামনে যেতে রাজী আছি।”

অনু রাজকে সাথে করে সোজা ইরাদের কাছে যায়।

রাজ অনুকে বলে,”তোমার বাড়িতে না গিয়ে ইরাদের কাছে কেনো আসছো?”

অনু :- ইরাদকে সবটা বলার পর যদি নিজেই বিয়েটা ভেঙ্গে দেয় তাহলে তো আর বাড়িতে কিছু না জানালেও চলবে।

রাজ :- বাহ তোমার মাথায় কতো শয়তানি বুদ্ধি।

অনু ইরাদের সামনে রাজের হাত ধরে দাঁড়িয়ে বলে,”মিস্টার ইরাদ এই যে দেখুন আমার সাথে করে কাকে আনছি।”

ইরাদ বলে,”রাজ কে সাথে করে এনে এতো ঢাক ডোল পিটানোর কি আছে?”

অনু চল্লিশটা দাঁত বাহির করে বলে,”রাজের আরেকটা পরিচয় আছে!”

ইরাদ ভ্রু নাচিয়ে বলে,” কী?”

অনু :-আমি রাজকে ভালোবাসি!আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।আপনি প্লিজ এই বিয়েটা ভেঙ্গে দিন।নয়তো আমাকে বাধ্য হয়ে রাজের সাথে পালিয়ে চলে যেতে হবে।

ইরাদ ভাব নিয়ে বলে,”যাবে তো যাও মানা করছে কে?আমি কি তোমাদের ধরে বেধে রাখছি?আর বিয়ে ভাঙ্গার কথা আমাকে বলে লাভ নেই।আমি বিয়েটা ভাঙ্গবো না।তোমার দরকার তুমি ভেঙ্গে দাও বিয়েটা।”

অনু :-আমি রাজকে ভালোবাসি এটা জানার পরেও আপনি বিয়েটা ভাঙ্গবেন না?

ইরাদ :-উঁহু মোটেই না!বিয়ের আগে সুন্দরি মেয়েরা এমন পাঁচ-দশটা প্রেম ভালোবাসা করতেই পারে।সে সব বাছ বিচার করতে গেলে শেষে তো বিয়ের জন্য সিঙ্গেল ভালো মেয়ে পাওয়া যাবে না।

অনু :- কি খারাপ মানুষ ভাবা যায়।হবু বউ প্রেমিক সাথে করে আনছে তবু সেই মেয়েকে বিয়ে করতে হবে যতোসব ফালতু মানুষ।

বলে সেখানে থেকে সোজা বাড়িতে চলে আসে।বাড়ির ভেতর প্রবেশ করার সময় রাজ বলে,”ইরাদ যেখানে বিয়েটা ভাঙ্গতে রাজী হলো না সেখানে তোমার বাড়ির মানুষেরা কি মানবে তোমার আমার এই কাহিনী? ”

অনু :- আমার বাড়ির মানুষদের বেপার আমি বুঝবো আপনি চুপচাপ থাকুন।

রাজকে সাথে করে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করার পর স্নেহা বাড়ির সবাই কে ডাক দিয়ে বাড়ির ড্রয়িংরুমে আসতে বলে।

সবাই আসার পর অনু মাথা নিচু করে বলে,”বাবা আমি ইরাদকে বিয়ে করতে পারবো না।”

অনুর বাবা :-বিয়েটা কি ফাইজলামি মনে হচ্ছে তোমার?যে তুমি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হবার পর না করতে আসছো?

অনু :-বাবা আমি রাজকে পছন্দ করি।রাজ ও আমাকে পছন্দ করে।আমরা ভেবেছিলাম লেখাপড়া কমপ্লিট হবার পর নিজেরা সেটেল্ট হবার পর আমাদের সম্পর্কে তোমাদের জানাবো।কিন্তু হঠাৎ করে যে এভাবে হুট করে আমার বিয়ের ডেট ফিক্সড হবে তা বুঝতে পারি নাই।

অনু বাবা:- রাজ কে পছন্দ করো সে কথা আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে তোমার লজ্জা করছে না?তুমি এতোটা নিলজ্জ্ব হয়ে গেছে ভাবতেই পারছি না।এটা না কি আমার মেয়ে ভাবতেই লজ্জায় মাথা কাটা যাবার উপক্রম।

আবির বলে,”বাবা আমার মোটেই অনুর কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।রাজকে পছন্দ করে এমনটা হতেই পারে না।রাজের সাথে অনুর সম্পর্ক তো দা কুমড়োর মতো।তাহলে সেখানে পছন্দ করার কথা তো আসতেই পারে না।

অনুর বাবা :-আরো পনেরো-ষোলোটা বন্ধু বানিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসো।আজ বড় বোন এমন কথা বলার সাহস করছে কাল ছোট মেয়ে আরেকটা ছেলের হাত ধরে চলে যাবে।

স্নেহা বাবার মুখে এমন কথা শুনে বলে ‘বাবা আমি এমন কাজ কখনো করবো না।”

ভুতের মুখে রামের নাম শুনে অনু ভ্রু কুঁচকে স্নেহা আর রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে।

এরপরে অনুর বাবা অনুর গালে থাপ্পড় দিয়ে ওর হাত ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে বন্ধ করে রাখে।আর বলে,”এই রুমে বন্দী থাকবে যতোদিন না বিয়ে হয়ে শ্বশুরের বাড়িতে যাচ্ছ। ঐ রাজের সাথে তো কোনোদিন ও তোমার বিয়ে আমি দিবো না।আর এসব প্রেমের ভুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ইরাদকে স্বামী রুপে গ্রহণ করার মন মানুষিকতা তৈরি করে নাও।

নিচে এসে রাজ কে অপমান করে বাড়ির বাহিরে বাহির করে দেয়।আবির পুরো ঘটনাতে অবাক হয়ে আছে।হঠাৎ করে আত্মসম্মানী বোনটা একি বাচ্চামি করে বসলো।নিজের সম্মান এভাবে সবার সামনে নষ্ট করে দিতে পারলো?

অনুর বাবা বাড়ির সবাই কে বলে,”কেউ অনুর সাথে আগলা আলাপ করতে যাবে না।আর স্নেহার রুম আজ থেকে আলাদা। আমি চাই না অনুর সাথে থেকে স্নেহা এমন কোনো কাজ করুক।আর হ্যা অনুর এই পাগলামির কথা যেনো এই বাড়ির চারদেওয়ারি বাহিরে না যায়।বুঝতে পারলে সবাই?”

সবাই সম্মতি প্রকাশ করে।

এদিকে বেচারা রাজ অনুর জন্য অযথা অপমানিত হলো।তবুও তো বেচারি অনু নিজের বিয়েটা ভাঙ্গতে পারলো না।আসলে সে কি আর করবে কপালে আছে ইরাদ চাইলে কী আর রাজ কে পেতে পারে?ভাগ্যের উপর কারো জোর চলে না।



চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here