গল্পঃ প্রেমমোহ লেখিকাঃ ফারজানা আফরোজ পর্বঃ ১৫

গল্পঃ প্রেমমোহ
লেখিকাঃ ফারজানা আফরোজ
পর্বঃ ১৫

অন্তুর ধমক খেয়ে নীলু, আসু এবং শুভ্রতা দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে বলছে,

–” যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।”

অন্তু কড়া গলায় বলতে লাগলো,

–” আপনারা ক্লাস কেজি কিংবা ওয়ানে পড়েন না। আপনারা এখন ভার্সিটিতে পড়েন ভুলে গেছেন নাকি সেসব। ক্লাসে এসেই ফিসফিস। কেন ক্লাস শেষ হবার পর কথা বলা যায় না? এখন তো ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপ, ইমো সব আছে ঐখানে তো কথা বলতে পারেন তাহলে ক্লাসে বসে কি কথা? আর মাঝের জন আপনাকে বলছি। স্পন্দন বলেছিল আপনি শান্ত চুপচাপ থাকেন তাহলে এখন কথার রানী কি করে হলেন?”

শুভ্রতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অন্তু একের পর এক কথা বলে যাচ্ছে। ক্লাসের সবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে তার ভীষণ লজ্জা করছে। অন্তু তখন ওদের তিনজনের চুপ থাকা দেখে আরো রেগে গেলো।

–” আমার ক্লাস থেকে এক্ষুনি বের হন আপনারা। স্পন্দন বলেছিল আপনার দিকে যেন নজর রাখি । নজর রাখার ফলেই আপনাদের হাতে নাতে ধরতে পেরেছি। বের হোন।”

তিনজন বেরিয়ে পড়লো। ক্লাসের বাহিরে আসতেই আসু মুখখানা লাজুক ভাব করে বলতে লাগলো,

–” ওর কথাগুলো এত কিউট কেন? বকা দিলেও ভালো লাগে। ইসস কি কিউট ভাবে কথা বলে।”

শুভ্রতা আসুর কথা শোনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো । আসুকে এখন তার পাগল মনে হচ্ছে । নীলু এদিক ওদিক তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল ,

–” ভালোই হয়েছে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছে আমি এখন চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে সাকিবের কথা ভাবতে পারবো এমনিতেই অন্তু স্যারের ক্লাস আমার মোটেও ভালো লাগে না শুধুমাত্র আসুর কারনে পড়তে হয়। এখন চল আমরা গিয়ে কোথাও বসি।”

শুভ্রতা দুইজনের দিকে তাকালো। বুঝলো ক্লাসে থাকা না থাকা এদের কোনো সমস্যা না কিন্তু সমস্যা তো তার। অন্তু স্যার যদি স্পন্দনকে এইসব বলে দেয় তাহলে তো তাকে ভীষণভাবে অপমান করবে। স্পন্দনের কথা মনে হতেই তার কান্না পাচ্ছে ভীষণ।

নীলু শুভ্রতার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। আসুকে বললে সে বলে,

–” তোরা যা। আমার উনি মানে তোদের ভবিষ্যত্ দুলাভাই আমাকে আদেশ দিয়েছে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য সো আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতেই হবে।”

নীলু বিরক্তি নিয়ে শুভ্রতার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল ক্যান্টিনে। এইখানে বসে তারা প্ল্যান করবে কিভাবে কি করতে হবে।

———————-

মিসেস সাবিনা বেগম স্বামীর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। যেন সে এক্ষুনি আকাশ থেকে মাটিতে পড়েছেন। স্পন্দনের বাবার সেদিকে খেয়াল নেই। তিনি তার কথা বলেই যাচ্ছেন। হঠাৎ উনার কথার মাঝে কথা কেড়ে নিয়ে বলতে লাগলেন মিসেস সাবিনা বেগম,

–” শুভ্রতা রাজি হবে? তাছাড়া মেয়েটার বিয়ে হইছে এক মাসও হয়নি।”

বিরক্তি নিয়ে বললেন স্পন্দনের বাবা,

–” রাজি কেন হবে না? ও জানে না আমি ওর বড় আব্বু। আমার ছোট ভাইয়ের শেষ স্মৃতি এইভাবে শেষ হয়ে যাবে আমি কখনোই মেনে নিবো না তাছাড়া আমার ছোট ভাইয়ের শাস্তি কেন তার মেয়েকে দিবো? শুভ্রতার শরীরে আমার পরিবারের রক্ত বইছে। রক্তকে কষ্ট দেওয়া মানে আমাকে কষ্ট দেওয়া। তাছাড়া এখন শুভ্রতার হাজবেন্ড অর্থাৎ আকাশ বেঁচে নেই সো শুভ্রতার উপর সমস্ত অধিকার শুধু আমার।”

–” আচ্ছা মানলাম আমাদের কথা শুভ্রতা মানা করবে না কিন্তু সাকিব সেকি রাজি হবে এই বিয়েতে?”

–” সাকিবের ব্যাবহার তোমাকে কিছু বুঝাচ্ছে না? ওর কথা বার্তার মাধ্যমে তো ও বুঝিয়েই দিচ্ছে ও শুভ্রতাকে পছন্দ করে। আমি তোমাদের সাথে না চললেও আমার চোখ সবদিকে নজর রাখে আর তুমি সেখানে থেকেও কিছু বুঝছো না।তোমার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করা যায় না সাবু।”

মিসেস সাবিনা বেগম কিছুক্ষণ ভাবলেন। ভাবনা চিন্তা করার পর বললেন,

–” হুম আজকাল সাকিব শুভ্রতার দিকে একটু বেশিই কেয়ার করছে। শুভ্রতা যেখানে যেতে চায় সেই নিয়ে যেতে চায় কিন্তু স্পন্দন!”

–” এই হারামী ছেলের নাম আমার সামনে আনবে না। দিনে দিনে রোবট হয়ে গেছে। অফিসে গেলে সবাই ভয়ে থাকে কখন না কখন কি করে বসে।”

–” ও কিন্তু তোমার স্বভাব পেয়েছে।”

রাগী চোখে তাকাতেই মিসেস সাবিনা বেগম একটু ভয় পেলেন। পরিবেশ ঠিক করার জন্য মুখে হাসি নিয়ে বললেন,

–” শুভ্রতা আসলে আমার মতামত ওকে বলে দিও। যদি আমায় বড় আব্বু মেনে নেয় তাহলে এই বিয়েতে যেন সে রাজি হয়ে যায়। কারণ, আমি চাই না আমার ছোট ভাইয়ের মেয়ে কষ্ট পেয়ে নিজেকে তুচ্ছ ভাবুক।”

মিসেস সাবিনা বেগম মনে মনে খুব খুশি হলেন। এতদিন পর স্বামীর একটা কাজ তার ভীষণ ভালো লেগেছে। অন্যদিকে স্পন্দনের বাবা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কারণ, শুভ্রতা এখন ভার্সিটি পড়ে, যদি কোনো ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তো বিয়ে করবে, ভবিষতে সম্পত্তি ভাগ বণ্টন করতে হবে। এখন যদি সাকিবের সাথে বিয়ে হয় তাহলে ভবিষ্যতে সম্পত্তি তারই থাকবে সে কথা চিন্তা করেই শুভ্রতার সাথে সাকিবের বিয়ে ঠিক করলেন উনি।

_________________

অন্তু ক্লাস থেকে বের হয়ে দেখলো আসমানী দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো,

–” বাকি দুজন কই?”

–” হাঁটতে বের হয়েছে স্যার।”

–” আপনি কেন গেলেন না?”

–” আপনার জন্যই তো স্যার। আপনার কথা অমান্য করার সাহস আমার নেই।”

–” গুড গার্ল। তোমার বাকি দুজন ফ্রেন্ডকে তো পরে দেখে নিবো এখন তুমি আমার পিছু পিছু আসো।”

–” ওকে ভাইয়া।”

রাগী চোখে তাকাতেই আসমানী হাসি দিয়ে বলল,

–” আপনি তো তুমি করে বলেছেন তারমানে এখন আর আমরা স্টুডেন্ট স্যার এই পর্যায়ে নাই এখন তো আমি আপনার বন্ধুর বোনের পর্যায়ে আছি।”😑

অন্তু হাসলো। সেই হাসি দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলো আসমানী। অন্তুর পিছু পিছু যেতে লাগলো। রুমের ভিতরে আসলো দুজন। অন্তু হাতে কলম ঘুরিয়ে বলতে লাগলো,

–” আশিককে তোমার ব্যাপারে ভাবছি সবকিছু বলে দিবো। দিনদিন ভীষণ খারাপ হচ্ছো তুমি।”

–” কি করেছি আমি?”

–” বুঝে না বুঝার নাটক করবে না আসু। আমাকে তোমার অবুঝ মনে হয়? সব সময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকো। তোমার হাবভাব কি আমি বুঝি না?”

–” কি বুঝেন আপনি?”

–” স্পন্দনের মত দুইটা থাপ্পড় মেরে বুঝাবো কি বুঝি আমি।”

অন্তু রাগে গর্জে উঠলো। ইচ্ছে করতে তার আসমানীকে মাথার উপরে তুলে ফ্লোরে আছাড় মারতে। এই না যে সে আসমানীকে পছন্দ করে না। আসমানী তাকে পছন্দ করার আগেই সেই আসমানীকে পছন্দ করতে শুরু করে। কিন্তু আসু কি করলো স্পন্দনকে প্রপোজ করল। সেখানে ঠাঁই না পেয়ে এখন তার পিছু আসলো। এই কারণেই সে আসুকে পাত্তা দেয় না।

–” আমি ভাইয়াকে বলে দিবো।”

–” তোমার ভাই সত্যিটা জানলে তোমাকে খুন করবে জানো তুমি?”

–” হুহহ ভাইয়াকে বলব অন্তু ভাইয়া আমার সাথে প্রেমের নাটক করেছে এখন আমি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি কিন্তু এখন অন্তু ভাইয়া আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না।”

–” মিথ্যা কথা বললে বত্রিশ পাটি দাঁত এক থাপ্পড়ে ফেলে দিবো।”

–” আমার ত্রিশটা দাঁত উঠছে বাকি দুইটা কোথা থেকে পাবেন? নাকি আপনার দাঁত থেকে দুইটা ফেলবেন ভাইয়া।”

–” ইউ।”

–” লাভ মি।”

বলেই এক দৌড়ে চলে গেল আসু। আসুর এই বিহেভ দেখে প্রচুর হাসতে লাগলো অন্তু। এই বাচ্ছামো স্বভাবের কারণেই তো সে ভালোবেসে ফেলছিল কিন্তু কষ্ট একটাই আগে কেন স্পন্দনকে প্রপোজ করলো।

–” পাগলী একটা।”

________________

স্পন্দন সেই কখন থেকে গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতাকে সে বাসায় নিয়ে যাবে। সাকিব কখন না কখন চলে আসে। কিন্তু শুভ্রতার কোনো চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এতক্ষণে তো চলে আসার কথা। অপেক্ষা জিনিসটা প্রচুর ভয়াবহ। অপেক্ষা সহজে শেষ হয় না। শুভ্রতাকে নিয়ে তার প্রচুর চিন্তা। অবশেষে অপেক্ষা নামক শব্দটা সরিয়ে দিয়ে সেই ভার্সিটির ভিতরে চলে গেলো। দূর থেকে দেখলো, তিনজন মেয়ে ও একজন ছেলে মাঠে বসে আছে। কিছু একটা নিয়ে তারা প্রচুর হাসছে। সামনে যেতেই দেখলো তার বড় ভাই সাকিব সেখানে পাশে শুভ্রতা এবং দুই পাশে দুজন মেয়ে। একজনকে সে চিনে আশিকের বোন কিন্তু নীলুকে সে চিনে না। শুভ্রতা সাকিবের একটি হাত ধরে কিসব বলছে আর হাসছে। স্পন্দনের ইচ্ছা করছে এক্ষুনি গিয়ে শুভ্রতাকে খুন করে ফেলতে। রাগে গজগজ করতে করতে দ্রুত পা চালিয়ে সেখানে যেতেই শুনলো,

চলবে,..?

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

ফারজানা আফরোজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here