গল্পটা আমাদের আপনিতেই আমরা পর্ব-৫

📚গল্পটা আমাদের
আপনিতেই আমরা
পর্ব-৫
#লেখনীতে- মারজানা দীনা

তিল!!

জ্বী বলেন?

রেডি হয়ে নেন।আমরা বাড়ি যাচ্ছি।

কিন্তু.. না মানে এখনই? রাতও হয়েছে তারউপর আপনার এই অবস্থা কিভাবে..

বিশ্বাস করেন এই আমাকে? ভরসা আছে আমার এই হাতদুটোর প্রতি?
উত্তরে গাঢ় হয়েছিলো হাতের বন্ধন।উহু সে না আমি দৃঢ়তার সাথে আকড়ে ধরেছিলাম।হয়ত এতেই সে তার অতি কাঙ্ক্ষিত উত্তর পেয়েছিলো তাই তো অধরের স্পর্শ পেয়েছিলাম হস্ত জোড়ায়।

ব্যাগ গুছিয়ে নিচে নামতেই সবাই ঘিরে ধরলো আমাদের।উদ্দেশ্য ভাব বিনিময় করা।যতই হোক বাড়ীর একমাত্র জামাই বলে কথা।উনিও বেশ নম্রতার সাথে কুশল বিনিময় করলেন।

নাথ জামাই আমরা তো আর বুঝতে পারিনি তুমি আসবে তাই আরকি তোমাকে ছাড়াই খেতে হয়েছে কিছু মনে করো না বাবা।এখন একটু কষ্ট করে একাই খেয়ে নাও। জার্নি করে এসেছো নিশ্চয় ক্লান্ত।(দাদী- তারউপর কথা বলার সাহস তো কারো নেই তাই আরকি সবাই নিরবতা পালন করাটাই ভালো মনে করছে)

জ্বী সমস্যা নেই।আমার উচিত ছিলো জানিয়ে আসার আসলে সুযোগ করে উঠতে পারিনি তো তাই আরকি।

সে ঠিক আছে বাবা তোমাকে কিছু বলতে হবে না তুমি বরং খেয়ে বিশ্রাম নাও ভালো…

জ্বী মাফ করবেন দাদী।এখন খেতে পারছি না।বাড়িতে ফিরেই খাবো।

মানে?সে কি বাবা এত রাতে বাড়ি যাওয়ার কি দরকার? এখানে থেকে গেলে..(আমার বাবা)

আসলে বাবা কাজ ছিলো তাই অন্য শহরে যেতে হয়েছে এখন কাজ শেষ তাই নিজ বাড়িতে ফিরাটাই ভালো মনে করছি।

এ কেমন কথা নাথ জামাই এটাওতো তোমার বাড়ি।তাই নয়কি??

সত্যিই কি তাই? না মানে এটা আমার স্ত্রীর দাদীর বাড়ি আত্মীয় হন আমাদের তাই বেড়াতে আসা আর তাছাড়া চারদিন ছিলোই এখন নাহয় নিজের বাড়িতেই ফিরবে।

আজকে সত্যিই উনাকে বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে। কি হয়েছে উনিতো এভাবে কথা বলেন না বেশ মার্জিত উনার আচরণ। তাহলে আজ… মনে হচ্ছে ভীষণ রাগ জমে গেছে সেটারই নিরব বহিঃপ্রকাশ। হাহ্…

কি রে মাইয়া তুই কি জামাইকে কিছু বলছিস নাকি?আগেই বলেছিলাম মাইয়া তো গেছেই এখন জামাইয়েরও রূপ বের হচ্ছে।এ কেমন ব্যবহার? নির্ঘাত এই মাইয়া জামাইয়ের কান ভাঙছে।(দাদী)

মা আপনি এসব কি বলছেন একটু চুপ করুন শুনতে পাবে? জামাই মানুষ…(বাবা)

আমি ভুল কি বললাম….

জ্বী অবশ্যই। দাদী আপনি ভুল কিছু বলেন নি।(ওনার একটা ফোন আসায় একটু পিছিয়ে গিয়ে কথা বলছিলেন তখনই দাদী এই কথা বলেন আর তারপর এই যে…) তবে যেই অনুমান করেছেন সেটা ভুল।আমার স্ত্রীর কোনো প্রয়োজন নেই কান ভাঙার।রইল বাকি আমার কথা সে যেমন আমার স্ত্রী আমিও তেমন তার স্বামী তাই তার প্রতি যত্নশীল হওয়া ভালোলাগা খারাপ লাগার খেয়াল রাখা আমার ধর্ম।

বাবা তুমি কি কোনো ব্যাপারে…(আমার মা)

না না মা।তেমন কিছু না।তবে হ্যাঁ আপনাদের মেয়ে আনু কিন্তু এখন আর শুধু আনু না ও এখন এই মেহরাব আনান এর একমাত্র স্ত্রী আনায়া আনান।এখন কেউ যদি তাকে দূর্ভাগ্য বলে মনে করে তাহলে তো আমিও তার জন্য দূর্ভাগ্য।কেননা আমা হতেই আমার স্ত্রীর সৃষ্টি।আমারই পরিপূরক।তাই দুজনেই থেকে গিয়ে দূর্ভাগ্যের পরিমাণ বাড়াতে চাইনা।আর আত্মীয়দের বাড়িতে তো আর মানুষ দিনের পর দিন থাকে না এখন ওর নিজস্ব বাড়ি আছে সেখানে ফিরাটা সমীচিন মনে করছি আমি।

আসছি আমরা দোয়া করিয়েন।ও আরেকটা কথা বলে যাই কাজ বিষয়ে বাড়ির বাহিরে কিছু রাত্রী যাপন করা মানে এই না যে সে তার স্ত্রীর প্রতি বিমুখ।সব নারী যেমন এক হয়না তেমনি সব পুরুষও সমান হয় না।আর দাদী আপনি তো মনে হয় নিশ্চয় এটা জানেন যে আমরা সবাই এক সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সবাই সমান যেখানে আল্লাহ্ তায়ালাই মানুষকে না পাপকে বর্জন করতে বলেছেন খারাপ দিকগুলোকে বর্জন করতে বলেছেন সেখানে আমরা সামান্য মানুষ কোনো কারণ ছাড়াই একটা মানুষকে বর্জন করতে পারি কি!!!একটু থেমে..

“মাটি হতে হে মানব তোমার জন্ম,
আগুনের মত কেন হও হে গরম?
এত অহংকার তব সমুচিত নয়,
মাটি সম রও ঠান্ডা সকল সময়”
(শেখ সাদী)

তিল! আমি বাহিরে আছি একটু তাড়াতাড়ি আসলে… বাকি কথা চোখের ইশারায় বলেই বের হয়ে গেলেন।আর আমি বিস্ময়ে হতবাক।এই মানুষটা এত ভালো কেনো? এখন বুঝতে পারলাম বিকেল পর্যন্ত সিলেটে থাকা মানুষের আগমন কিছু ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকা কেনো তাও আবার অগোছালো।নিশ্চয় কাজের থেকেই এসেছেন সরাসরি ফ্রেশও হননি।তাহলে কি সেসময় ফোনটা কাটার আগেই দাদীর আগমন হয়েছিলো যার দরুন উনিও শুনেছিলেন..

বলেছিলাম না দাদী উনি এমন না। তারা সবাই আমাকে আপন করেই নিয়েছেন লোক দেখানো নয় সত্যিই।

বাবা মা আসছি।বলেই বেরিয়ে গেলাম।দাদী আর মা হয়ত বোঝেছেন তার এমন আচরণের কারণ তাই হয়ত চুপই ছিলেন।তবে মায়ের চোখে জলকণা দেখেছি হয়ত তার মেয়ে ভালো আছে জেনে আর হেয় হচ্ছে না যেনে খুশিতে.. বাকি সবাই যে কিছু বুঝে উঠতে পারে নাই তাও বুঝতে পেরেছি।তবে বোঝানোর কোনো ইচ্ছে বা কারণ কোনোটাই নেই।

নিস্তব্ধ রাতে, জনমানবশূন্য রাস্তায়, ল্যাম্পপোস্টের ঈষৎ হলেদেটে আলোয় দেখা পেলাম উনার।আমি জানি না আমি কতটুকু সৌন্দর্যের অধিকারী তার দৃষ্টিতে। তবে সে আমার দৃষ্টিতে দেখা সুদর্শন একজন পুরুষ। আমার একান্ত ব্যক্তিগত একজন আমার পুরোটা জুড়ে যার আধিপত্য।

আমাকে যদি পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে তাহলে আমরা কি সামনে এগোতে পারি মিসেস মেহরাব আনান?

হু…(আবারো থমকে গিয়েছি।নয় মাসের বিবাহিত জীবনে এই প্রথমবার তিনি আমাকে মিসেস মেহরাব আনান বললেন!!! মিসেস….)
…….
ও বাড়ী থেকে ফিরেছি অনেক আগেই।১২ টা বেজে গিয়েছিলো পৌঁছাতে।আর এখন রাত দুটা।বারান্দায় দাঁড়িয়ে আজ সারাদিনের কথাগুলোই ভাবছিলাম।কি অদ্ভুত না!! যেখানে একটা মেয়েকে সাধারণত শশুড় বাড়ীতে এধরনের পরিস্থিতিতে পরতে হয় সেখানে আমি নিজ বাড়িতেই হেয় হয়ে আসছি।এতদিন প্রতিবাদ করার কেউ ছিলো না।এমন না যে আমি নিজে আমার প্রতিবাদ করতে পারি না। পারতাম কিন্তু করার ইচ্ছে শক্তি ছিলো না।চুপ ছিলাম বলেই হাজারো কটুকথার ভিতর দিয়েই লেখাপড়াটা করতে পেরেছি।না হলেতো বুঝি সেটাও সম্ভব হত না।আর এই মানুষটা আজ যেভাবে আমার আত্মসম্মান ফিরিয়ে দিলেন তাতে আমি বাকরুদ্ধ। কখনো আশা করতে পারি নি সদা চুপ থাকা মানুষটা আমার সম্মানের পরোয়া করবে। সত্যিই তিনি অন্যরকম।

নিরব তো আপনিও ছিলেন তিল? তাহলে কি করে আমি সরব হতাম বলতে পারেন…

প্রতিবারের মত এবারও চুপ। কি আর বলব বলার মত কোনো ভাষা জানা নেই আমার।

তিল!!!

হু….

আপনার পরিবার এমন কেনো?না মানে আপনার প্রতি তাদের আচরণ….

একটু বেশিই অস্বাভাবিক তাই না।আসলে এর পিছনে কিছু কারণ ছিলো।

কারণগুলো কি বলা যায় না আমাকে?

বলা যাবে কিন্তু আপনি কিভাবে নিবেন সেটা আপনার উপর নির্ভর করে।

আমি শুনতে চাই। বলেই আমাদের মাঝের দূরত্ব কমিয়ে দিলেন।উহু গল্প উপন্যাসের মত রোমান্টিকতা ছিলো না। তবে তার চেয়েও বেশি।হয়ত গল্পের মতো না তবে সুন্দর সেই মুহূর্ত গুলো।বাস্তব জীবন তো আর কোনো লেখকের কৃত্রিমতা না তাই মুখরোচক তেমন কিছু ছিলো না।আর নাই আমরা টিনএজ বয়সের ছিলাম।সে একজন প্রাপ্ত পুরুষ আর আমি নারী।আবার জড়তাটাও তো ছিলো।
তবে হাঁ কখনো কখনো সে গল্পের সেসকল হিরোদের নায়কদের ছাড়িয়েও রোমান্টিকতা দেখিয়েছে।যদিও সেটা খুবই স্বল্প। যার ছিটেফোঁটা পেয়েছিলাম আমাদের প্রথম আলিঙ্গনে।যেই না সেদিনের স্মৃতিতে ডুবতে নিলাম ঠিক তখনই তিনি আবারো ডেকে উঠলেন।

আমি কি আজও কিছুই হয়ে উঠতে পারিনি তিল যে আমাকে ব….

আপনার আমার বিয়েরও একবছর আগে আমার অনার্স কমপ্লিট হয়েছিল তা কি জানেন?(তাকে বলতে না দিয়েই আমি বললাম)

হুম।সেকারণে আপনার মাস্টার্স এর আবেদনেও কিছু ঝামেলা হয়েছিলো তাই দেরি হয়েছে।কিন্তু…

কিন্তু টাই কথা বুঝলেন দুইআনা!!

দুইআনা….!! আজ এতবছর পর মনে পড়লো একআনা?

বলতে চেয়েও বলতে পারিনি।আপনিও তো বলেন নি দুইআনা!

সাহস করে উঠতে পারিনি একআনা।ভাবতাম আপনি যদি…

জড়তা তাই না দুইআনা… (ছোটবেলায় যখন উনার সাথে আমার পরিচয় হয় তখন ওনাকে আমি দুইআনা আর উনি আমাকে একআনা বলে ডাকতেন।আসলে আমার নাম আনায়া সবাই আনু বললেও স্কুলে আনায়াই বলতো আবার উনার নাম মেহরাব আনান।দুইজনের নামেই আনা ছিলো।যেহেতু তাকে আমি পড়াতাম তাই আমি এক আর সে দুই হয়ে গেলো একআনা দুইআনা।যদিও সেটা আমারই তৈরী ছিলো।কারণ তিনি সবসময় মন খারাপ করে থাকতেন তাই তাকে হাসানোর কিছু না পেতেই আমি নামগুলোর ষষ্ঠী নষ্ঠী করে এসব বের করেছিলাম)

হু…ম।

আমি যখন সবে অনার্স ২য় বর্ষে উঠলাম তখন বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া শুরু হলো।এসএসসির পর থেকেই সবাই বিশেষ করে দাদী চেয়েছিলেন কিন্তু কোনোরকম ছোট বলে আরো সময় দরকার এসব বলে এড়িয়ে এসেছি।এইচএসসি অনার্স ১ম বর্ষ পার করলেও ২য় বর্ষে গিয়ে আর পেরে উঠলাম না।বাধ্য হলাম তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে।উহু আমি মেয়ে সন্তান বলে যে এমন আচরণ করত এমন না।ঠিক তখনো সবাই কমবেশি ভালোবাসত তবে হেয় করত না।আসলে আমার জন্মের সময় আমার আম্মুর অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলো না। কোনোরকম প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলাম আমরা।তবে পরবর্তীতে মা হওয়ার ক্ষমতা হারান তিনি।দাদী তখন একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছিলেন।কারণ আমার আম্মু তার খুব পছন্দের ছিলেন।তাই হয়ত আমার ক্ষেত্রে তাকে কর্কশ হিসেবেই পেয়েছি আমি।তবে শুধু এটুকু না।আমি যখন ৫ কি ৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে ছিলাম ঠিক তখন আমার মেজো চাচীর মিসক্যারেজ হয়ে যায়।কারণটা নাকি আমি ছিলাম।রান্না ঘরে গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়ে একটু বেশি পড়ে গিয়েছিলো আর সেখানেই দূর্ঘটনা ঘটে।তাই আমার প্রতি তারা কিছুটা বিমুখ ছিলো।হয়ত যতটুকু আহ্লাদ পাওয়ার কথা তা পেতাম না। কিন্তু হেয় হতে হয়নি।

কিন্তু এতে আপনার অপরাধটা কোথায়? আপনি তো একসময় সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু তো আরকে সময় অবুঝ শিশু।যা হয়েছে সবটা পরিস্থিতির শিকার নয় কি।
বলেই আমাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করলেন।হয়ত বোঝতে পারলেন আমার সেই স্থানটা খু্ব প্রয়োজন।

সবাই কি আর আপনার মত ভাবে দুইআনা?তাছাড়া পরিস্থিতিও তেমনি ছিলো।তাও ভালো ছিলাম। কেনো জানেন কারণ আমাকে কখনো অপায়া অলক্ষ্মী শুনতে হয় নি।কারণ এতটুকু বুঝ তাদের ছিলো।তবে পরবর্তীতে এর চেয়েও বড় কিছু শুনতে হয়েছে।

মানে?

ঐ যে বললাম না অনার্স ২য় বর্ষে উঠতেই বিয়ের তোরজোর শুরু হয়ে গেলো।

বিয়ে কি হয়েছিলো?

না।হলে কি আর এখানে থাকতাম নিশ্চয় সেই…

হুসস… চুপ…চুপ থাক যেটা হয়নি সেটা ভাবতে হবে না।যেটা হয়েছে সেটা বললেই হবে।
বলেই আরো দৃঢ় করলেন বন্ধন।সত্যিই আমার কাছে তাকে আজকাল বড্ড অচেনা মনে হয়।হয়ত নিরব থাকা অনুভূতিগুলো সরবতা পাচ্ছে বলে।আচ্ছা উনার এই আচরণ থেকে আমি কি এটা ধরে নেব যে উনি অন্যকারো সাথে আমাকে মানতে পারবেন না।ঈর্ষান্বিত হবেন কি?
২৯ এর কোঠায় পা দেওয়া যুবকের এমন আচরণ সত্যিই অবিশ্বাস্য।
একআনা!!!!

হু….

তারপর…

তারপর পারিবারিকভাবে বিয়ের আয়োজন শুরু হতে লাগলো।সমন্ধ এলো বড় চাচার বন্ধুর বাড়ি থেকে।কোনো একদিন বিকেলে এলেন তারা আমাকে দেখতে।শাড়ী পড়ানো হলো আমাকে বড় করে ঘোমটা দিয়ে তাদের সামনে বসানো হলো।আর আমি ছিলাম যন্ত্রমানবের মত।সব ঠিক থাকলেও পরিচয়সূত্রে যখন জানা গেলো ছেলেটা আমাদের স্কুলেরই কলেজ শাখার সিনিয়র তখন আমি তাকে না চিনলেও সে আমাকে ঠিকই চিনে ফেললো।
সবার সামনেই বলা হলো এই বিয়ে কিছুতেই হবে না।সে নাকি চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না।

চরিত্রহীনননন!!!

হু….

# চলবে
ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here