📚গল্পটা আমাদের
আপনিতেই আমরা
পর্ব-৭(বোনাস)
#লেখনীতে-মারজানা দীনা
আপনার পিঠের সেই আঘাতের চিহ্নগুলো বুঝি সেই সময়েরই তাই না। (নিচুস্বরে)
হু….(কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে)
এতটা গভীর ছিলো যে তার চিহ্ন এখনো…. বলেই আরো দৃঢ় করলেন হাতের বন্ধন। তার উষ্ণ শ্বাস আর অশ্রুকণা সবটাই সিক্ত করেছে আমাকে।
আপনি বলেছিলেন সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার সবটা গোছালো হলেও আপনার সবটা অগোছালো হয়ে গিয়েছে সেদিনের পর থেকে তাই না একআনা।আপনার পাশে দাড়ানোর সুযোগ তো দূরে থাক আপনার বিষাদের কথাগুলোও জানতে পারলাম না। এতটাই অভাগা আমি।কোন মুখে ক্ষমা চাইবো আমি?? আপনার দৃষ্টিতে দৃষ্টি রাখার শক্তিই তো নেই আমার একআনা?কিভাবে পারলেন এই আমাকেই বিয়ে করে নিজেকে বিলিয়ে দিতে? রাগ হলো না? কোনো প্রকার অভিযোগ ছাড়াই দিন পার করছেন অথচ আমি….
কিভাবে পারলেন আপনি বলেন না কিভাবে পারলেন?? আপনার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে হয়তো এতক্ষণে…
আপনার তো কোনো অপরাধ ছিলো না।যে আপনাকে দায়ী করব।হুম অভিযোগ আছে রাগও আছে তবে আপনার প্রতি না পরিস্থিতিগুলোর প্রতি।কেনো ছোট থেকে ছোট পরিস্থিতিগুলো বিরাট আকার ধারণ করে সবর্দা আমার প্রতিকূলেই যায়?ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই আজ পর্যন্ত কেনো আমিই…
একআনা… আ-আপনি কি আমাকে ক্ষমা করতে পারবেন?পারবেন আমাকে মানিয়ে নিতে যেখানে আমি নিজেই আপনার প্রতি হওয়া সবচেয়ে বড় অবিচারের কারণ??আচ্ছা বিয়ের পর থেকে বছর হতে চললো তাও আমাকে কিছু জানতে না দিয়ে নিরবেই সয়ে যাচ্ছিলেন কিভাবে?আপনার ধৈর্য্য শক্তি এতোটা…হাহ্।আজ যদি না জানতে চাইতাম তাহলে হয়ত জানতেই পারতাম না।কিভাবে পারলেন আপনি একআনা?আমি যে নিজের চোখেই নিজে নিচু হয়ে গেলাম!!একটু থেমে…
আচ্ছা একআনা আপনি আমাকে চানতো?ভালো আছেন আপনি আমার সাথে?আমার মতো এরকম একজনের সাথে? শুধু থাকার জন্যেই থাকছেন নাকি…. ভালো আছেন আপনি??
নিজেকে তার বন্ধন থেকে ছাড়াতেই লক্ষ করলাম তিনি মাথা নিচু করেই আছেন।হয়ত মনে করছেন আমি তাকে চাই না বা মানবো না এমন কিছু।অসহায়তা হারানোর ভয়টা যেনো আরো বেশি ফুটে উঠেছিলো তার চেহারায়।তবে আমি তেমন কিছু করলাম না।তার বরাবর হাঁটু মুড়ে বসে, প্রথমবারের মত তার কপোলে হাত গলিয়ে নিজের বন্ধনে নিয়েছিলাম।টুপ করে গড়িয়ে পড়া অশ্রু কণাগুলো আমার ভিতরে ঝর তৈরী করে।তার অশ্রুপাতে অভ্যস্ত নয় আমি আর নাই মানতে পারছিলাম।সে নিরবেই চেয়ে ছিলো আমার দিকে।বিবাহিত জীবনের নয় টা মাস পার করে যদি কেউ জানতে চায় ভালো আছি কি না বিষয়টা সত্যিই অস্বাভাবিক। কিন্তু আমার কাছে না।কারণ আমরা দুজন ছিলামই তেমন। একই শয্যায় রাত্রী যাপন করে গভীর হলেও একে অপরের থেকে না বলা না দেখা এক দূরত্বে ছিলাম।কারণ ঐ যে জড়তা!! গল্পটার নাম বুঝি জড়তা হলে বেশি মানাতো।
পুনরায় তারদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলেছিলাম_
ভালো থাকাটা তো আপনার কাছেই শিখেছি আমি দুআনা।তাহলে ভালো কেনো থাকব না বলতে পারেন? থাকার জন্য তো থাকছি না মন থেকে চেয়েছি বলেই আপনি আমার জীবনের একমাত্র পুরুষ দুআনা।আর অপরাধ তো করেন নি যে ক্ষমা চাইতে হবে।আর নাই আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ আছে। পরিস্থিতির শিকার হয়েছি দুজনেই কিছু করার ছিল না। বিশ্বাস করুন ঠিক যে মুহূর্তেও আমার বিয়ে হবে জানতে পারলাম ঠিক তখনও বলে বুঝাতে পারব না কি পরিমাণ ভয় পেয়েছিলাম আমি আমার ভবিষ্যৎ কেমন হবে ভেবে।কিন্তু এখন আমি বেশ ভালো আছি। ভালো থাকার সংজ্ঞাটা আপনার কাছ থেকেই শিখেছি দুআনা।মন থেকেই চেয়েছি আপনাকে দুআনা।
কিন্তু…
কোনো কিন্তু না দুআনা। এখানে কোনো কিন্তু নেই।
ভালোবাসেন আমাকে একআনা?
সে তো আপনিও বাসেন দুআনা।
কেনো বাসেন…
কোনো কারণের প্রয়োজন আছে বুঝি।বিয়ে নামক সবচেয়ে পবিত্র এবং অবশ্যই হালাল একটি বন্ধনে আবদ্ধ আমরা।যেখানে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আমাদের একে অপরের অন্তরে মহব্বত সৃষ্টি করে দেন সেখানে কারো মায়ায় জড়াতে বুঝি কোনো কারণ আবশ্যক।জ্বী অবশ্যই আমি মায়ায় বলছি।কারণ প্রণয়ের শুরু কিন্তু মায়া থেকেই। আর আপনার মতো একজনের মায়ায় না জড়িয়ে কিভাবে থাকি বলেন তো।যেখানে আপনিই আমার জন্য হালাল এবং একমাত্র পুরুষ, আমার পরিপূরক,আপনাতেই আমার প্রাপ্তি,আমার অর্ধাঙ্গ।
আপনি কি চাইলে পারতেন না প্রথম রাতেই নিজের হক আদায় করতে যেখানে আমার উপর আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।আমিও হয়ত বাধা দিতে পারতাম না কিন্তু এতে আপনার প্রতি হয়ত এতটা শ্রদ্ধা আর সম্মান সৃষ্টি হতো না।আপনি নিজে থেকেই আমাদের জীবনের ভিন্ন মোড়ে দেখা হয়ে তৈরী হওয়া সম্পর্কটাকে সময় দিয়েছেন। আপনার সঙ্গীর মনোভাবকে সম্মান জানিয়েছেন।সম্পূর্ণ সম্মতি নিয়েই আলিঙ্গন করছিলেন, প্রেমালিঙ্গনে আবদ্ধ করেছেন।প্রতিবার কাছে এসে খুবই নিম্নস্বরে যখন “may I” বলে আমার সম্মতির অপেক্ষা করতেন বিশ্বাস করুন আমার কাছে সেই সময়টাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম একটি মুহূর্ত মনে হতো, এখনো হয়।এত আনন্দ সুখ বুঝি তখনও পেতাম না যখন আপনি বলতেন চলো আজ রিকশায় ঘুরি।কেনো জানেন? রিকশায় করে শহরে অলিগলি ঘোরা,সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত সঙ্গী কে নিয়ে সময় কাটানো,পছন্দের খাবার খাওয়া, বৃষ্টিবিলাস করা,প্রণয় বাক্য পাঠ করা,এক কাপ চায়ে আড্ডা জমানো এমন অনেক কাজই আছে যা প্রণয়ের সবচেয়ে সুন্দরতম বহিঃপ্রকাশ হলেও সঙ্গীর সম্মতি উপেক্ষা করে নিজের চাহিদা মেটানো অন্তত আমি মনে করি সবচেয়ে জঘন্যতম বহিঃপ্রকাশ। সারাদিন যে পুরুষ একটা নারী কে ঐ যে ইংরেজিতে বলে না প্যাম্পার করলে হয়ত সে নারীটি নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করতে পারে। কিন্তু দিনশেষে রাতের গভীরতায় যখন অনুমতি ব্যতিত নিজ অনুমানেই স্পর্শের গভীরতা বাড়ায় তখন সে নারীটিই হয়ত সুখের আড়ালে দুঃখ প্রকাশ করে।
কজন আছে বলুন যে সঙ্গীর সম্মানের দিকটি খেয়ালে রাখে, অত্যন্ত যত্নের সহিত যত্ন করে।কিন্তু আপনি করেন।তাই আমি আপনাকে বাসি ভালো।নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করি আপনাকে পেয়ে।প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত আপনি আমার খেয়াল রেখেছেন, সম্মান করেছেন,যত্ন করছেন।আমার হারিয়ে ফেলা আত্মসম্মান যা সময়ের সাথে অবহেলার স্রোতে মৃত্যু বরণ করেছে সেটাতেও আপনি প্রাণের সঞ্চার করেছেন।যখন রাতের গভীরতায় আমরা গভীর হতাম ঠিক তখনও আমাকে যত্নে রাখতেন।
মৃদুস্বরে যখন জানতে চাইতেন আমি ঠিক আছি কি না,ভোরের শুরুতে যখন বেদনানাশক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন ঠিক তখন তখন নিজের প্রতি নিজেই ঈর্ষান্বিত হয়ে যাই আমি সে খবর কি রাখেন।না বলা সত্বেও যখন মাসের প্রোয়জনীয় জিনিসটা বাজেরর ব্যাগে ঠাই পায় ঠিক তখনও নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে হয়।
একআনা…( বলেই আমাকে জড়িয়ে নিলেন তার বন্ধনে।উন্মাদের মত আমার সম্পূর্ণ মুখশ্রীতে অধর ছোঁয়াতে লাগলেন।)
সত্যিই আপনি অনন্য আনায়া আনান।আমার একমাত্র একআনা, আমার তিল। ভালোবাসি…
হু….বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে।
এতো কেনো বোঝেন আমাকে একআনা?
দুআনাকে গড়ে নেওয়া একআনা নিজেই তার দুআনাকে বোঝবে না তো কে বোঝবে শুনি?
কেউ না আপনি ব্যতীত।আমার একআনা যে আপনি।
হু… অগোছালো হয়ে যাওয়া আমিটার অবিন্যস্ত শাড়ীর একমাত্র সৃষ্টিকারক যে আপনি!!
বলেই তার মাঝেই নিজেকে লুকিয়ে নিলাম।সেও আমাকে পরম আবেশে জড়িয়ে নিলো।প্রথমবারের মত আজকে এতটা গভীরভাবে তৃপ্ত হতে দেখেছি,প্রাপ্তির উজ্জ্বলতা দেখেছি তার কায়াতে।প্রার্থনা এটাই সবসময় যেনো তিনি এমনই থাকেন।
আমার একমাত্র অধিকারিণীর একমাত্র অধিকারী হয়েই থাকতে চায় একআনা।আপনার দুআনা তার…..
হু….
#চলবে
বোনাস দিয়ে দিলাম। বলে যাবেন কিন্তু কেমন হয়েছে।
আর অবশ্যই ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।