গল্পের_নাম_অনূভুতি পর্বঃ৫

গল্পের_নাম_অনূভুতি পর্বঃ৫
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza

আরফান আবরারের সামনে বসে আছে ।আবরারের শান্ত চেহারাটা আরফানের কাছে শান্ত মনে হচ্ছে না।আরফান আবরারের ভিতরের অশান্ত মনটাকে খুব ভালো করেই অনুভব করতে পারছে।আবরার খুবই শীতল কন্ঠে বলে উঠলো,
~আমি একবার আরফির সাথে কথা বলতে চাই।
আবরারের মুখ থেকে বের হওয়া প্রতিটি শব্দ আরফানের কানে গিয়ে বাঁধলো। লোকটার সাহস দেখে সে অবাক হচ্ছে যদি চাকরি যাওয়ার ভয় না থাকতো লোকটার নাক ফাটিয়ে দিতো সে।কিন্তু আফসোস সে এমন কিছুই করতে পারবে না নিজের রাগকে যথাসম্ভব কন্ট্রোল করে আরফান বললো,
~স্যার আরফি কোনো অচেনা ব্যক্তির সাথে কথা বলতে চায় না আর আমিও এসব পছন্দ করি না।
আবরার হাসে তার হাসি দেখে আরফানের রাগটা আরো বেড়ে যায় সে তো কোনো হাসির কথা বলিনি।
আবরার বললো,
~আরফান তোমার বোনকে আমি তুলে নিয়ে যাবো না যে তোমার বোনকে আমার সাথে দেখা করাতে পারবেনা।Trust me আমি এতোও অসভ্য নই।
শেষের লাইনটা যে আবরার মজা করে বলেছে তা আরফান বুঝতে পেরেছে কিন্তু সে তার কথায় অনড় থাকবে।আরফিকে কোনো মানসিক চাপ সে দিতে চায় না।আরফান বললো,
~আরফি দেখা করতে পারবে না ওর পরীক্ষা।
আবরার বললো,
~তুমি যদি রাজি না হও আমি অন্য রাস্তা দেখবো।আর আমার মনে হয় সে রাস্তাটা তোমার পছন্দ হবে না
আবরারের কথায় অবাক হয়ে আরফান তার দিকে তাকালো আবরারের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি।
আরফান এবার ভেবে-চিন্তে বললো,
~আপনি কবে দেখা করতে চান?
আবরার ফিচেল হেঁসে বললো,
~আজ বিকেলে তোমাদের বাসায় দেখা করবো।
আরফান বললো,
~ঠিক আছে।

আরফি ক্লাসে বসে আছে স্যার ক্লাস নিচ্ছে তার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে অন্য ধ্যানে বসে আছে তার বান্ধবী শ্রেয়া বললো,
~কী ভাবছিস?
শ্রেয়ার ডাকে আরফি ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে।আরফি মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,
~কিছু না ওই রাতে ঘুমটা ভালো হয়নি।
শ্রেয়া বললো,
~ওহহ।
তাদের মাঝে আর কোনো কথা হলো না পড়ায় মনোযোগ দিলো তারা।সব ক্লাস শেষে আরফি ক্লাস থেকে বের হয়ে পরলো মুখের নিকাবটা লাগিয়ে শ্রেয়ার সাথে কথা বলতে বলতে কলেজ গেটের সামনে এসে দাড়ালো।আরফির এখনও ভয় করছে যদি আবরার এখানে চলে আসে কিন্তু তার এ ভয় বেশিক্ষণ থাকে না।কারণ সায়েদা খানম আরফির কলেজ গেটে দাড়িয়ে আছপ।আরফি মাকে দেখে যত না অবাক হলো তার চেয়ে খুশিটাই বেশি হলো।আরফি মায়ের কাছে চলে আসলো।সায়েদা বেগম আরফিকে দেখে বললেন,
~ক্লাস কেমন হলো?
আরফি বললো,
~ভালো কিন্তু মা তুমি এখানে?
সায়েদা খানম বললেন,
~এক জায়গায় যাবো তোকে নিয়ে তাই ভাবলাম কলেজ থেকে তোকে নিয়ে যাই।
আরফি বললো,
~কোথায় যাবো মা?
সায়েদা খানম বললেন,
~ওখানে গেলেই বুঝতে পারবি।
অতঃপর মায়ের কথা শুনে আরফি আর কোনো কথা বললো না।সায়েদা খানম আর আরফি রিক্সায় উঠে পড়লেন দুজন ভিতরেই নীরবতা কাজ করছে আরফি রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে আর সায়েদা খানম একটু পরপর মোবাইল দেখছেন।তাকে দেখে অনেকটাই চিন্তিত মনে হচ্ছে
কিছুক্ষণ পর রিক্সা একটা বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো।আরফি রিক্সা থেকে নেমে বাড়িটা কে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো এই বাসায় সে কোনোদিন আসে নি এটা কার বাসা?সায়েদা বেগম ভাড়া মিটিয়ে আরফিকে বললেন,
~ভিতরে চল।

বলেই সায়েদা বেগম ভিতরে চলে গেলেন আরফিও তার পিছে পিছে চলে গেলো ভিতরে।আরফি আর সায়েদা খানম এখন বসে আছেন জাবেদা বেগমের সামনে। আরফি কোনো দিন ভাবতে পারে নি তার মা এরকমটা করতে পারে।আরফি নিচের দিকে
তাকিয়ে আছে জাবেদা বেগম আর সায়েদা খানম কথায় ব্যস্ত তাদের কথার ধরন শুনে বুঝাই যাচ্ছে তারা আবরার আর আরফির বিয়ের কথাই বলছে।আরফি চুপচাপ বসে আছে তার অস্বস্তির পরিণাম বেড়েই চলছে।আরফি আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো আবরার যদি বাসায় থাকে তাহলে তাকে অনেক বড় লজ্জায় পরতে হবে।আরফির নীরবতা জাবেদা বেগম বুঝতে পারলেন জাবেদা বেগম আরফির পাশে বসে বললেন,
~আমি জানি তুমি অনেক কিছু ভাবছো।তাই বলছি এতো ভাবতে হবে না তোমাকে আর আপাকে এখানে আমি ডেকেছি।দেখো মা আমার ছেলে তোমাকে অনেক পছন্দ করেছে।আমি জানি কোনো কিছুতে জোর চলে না আর বিয়ে নামক সম্পর্কে তো জোর চলেই না তবুও বলছি আমার ছেলেটা অনেক ভালো তোমার পড়ালেখার কোনো ক্ষতি হবে না।বিয়ের পর তোমার কোনো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হবে না।এটা শুধু তুমি বলে না আমার মেয়ের স্বাধীনতায়ও আমি কোনো হস্তক্ষেপ করিনা আর তুমিও তো আমার মেয়েই হবে।
আরফি জাবেদা বেগমের সব কথা মনোযোগ সহকারে শুনলো।এতটুকু বুঝতে পারলো এ মানুষটা অনেক সুন্দর মনের অধিকারী।আরফি কিছুই বললো না সে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো।তারই মধ্যে সায়েদা খানম বলে উঠলেন,
~আপা আমরা আসি এবার খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।
সায়েদা বেগমের কথায় আরফি চমকে উঠলো আবার দেখা হবে এই কথাটির মানে ঠিক বুঝতে পারলো না।এর মানে কী তারা আবার এই বাসায় আসবে?
আরফি আর সায়েদা খানম আবরারের বাসা থেকে বের হলেন বাসার উদ্দেশ্যে। আরফি একধ্যানে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে

বিকেলে ৪টা
আরফান আর আবরার একসাথে রওনা দিয়েছে।আবরার অবশ্য জানে না তার মা যে সায়েদা খানমের সাথে দেখা করেছে।আরফান অনেকটাই চিন্তিত আরফি কীভাবে রিয়েক্ট করবে কে জানে?আরফি কী তাকে ভুল বুঝবে তাই ভাবছে সে?আরফান বললো,
~স্যার আপনি আরফির উপর কোনো রকমের জোর খাটানোর চেষ্টা করবেন না।তা আমি সহ্য করবো না।
আবরার ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
~আমার যদি এমন কিছু করার ইচ্ছা থাকতো তাহলে ৩ মাস আগেই করতে পারতাম।কিন্তু আমি তা করেনি কারণ আমি কোনো কলেজ পড়ুয়া প্রেমিক নই যে আরফির উপর জোর খাটাবো বা আমি রাস্তার বখাটে ছেলেও না।
আরফান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~আপনাকে অচেনা মনে হচ্ছে।
আবরার আরফানের দিকে তাকিয়ে বললো,
~ভালোবাসা জিনিসটা সবাইকে অচেনা বানিয়ে দেয়।
তুমিও নিশ্চই তোমার বউকে ভালোবেসে অচেনা হয়ে গিয়েছিলে।
আরফান আবরারের কথাটা ভাবলে এ কথাটি সত্য যখন সে প্রথম রুকাইয়াকে দেখেছিল নিজেকে অচেনা লাগা শুরু হয়ে গিয়েছিল অনেক কিছুতেই পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যে তাহলে কী আবরারও আরফিকে ভালোবাসে?

এ সকল ভাবনার মাঝে তারা আরফানের বাসার সামনে এসে পরলো।আবরার আর আরফান বাসার ভিতরে চলে গেলো কলিংবেল বাজাতেই রুকাইয়া হাসি হাসি মুখ করে দরজা খুলে দেয় আরফানকে দেখে সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবরারকে তার পাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রুকাইয়ার হাসি মুখটা চুপসে যায়।আবরার তা বুঝতে পেরে নিজে থেকেই রুকাইয়াকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
~কেমন আছেন?
রুকাইয়া হাসার চেষ্টা করে বললো,
~ভালো।আপনি ভিতরে আসেন
বলতে বলতে সে দরজা থেকে সরে দাড়ালো।রুকাইয়া আরফানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
~এই জন্যই আজ তাড়াতাড়ি এসে পরেছেন।
আরফান মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো রুকাইয়া রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।সায়েদা খানম রুম থেকে বের হয়ে আবরার দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন
আবরারকে বললেন,
~কেমন আছো?বাবা
আবরার বললো,
~ভালো।আপনি কেমন আছেন?
সায়েদা খানম বললেন,
~এই তো আছি বাবা।
সায়েদা খানমের সাথে অনেক কথায় বললো আবরার।আরফান ফ্রেশ হয়ে এসে আবরার সাথে বসে পরলো
আবরার নিজ থেকেই বলে উঠলো,
~আরফি কোথায়?
রুকাইয়া হাতের ট্রে টেবিলে রেখে বললো,
~ও তে ছাদে ঘরে ভালো লাগছিল না তাই ছাদে চলে গেলো।
আবরার বললো,
~তাহলে আমি ছাদে যাচ্ছি।
বলেই সে উঠে পরলো রুকাইয়া কিছু বলতে নিবে সায়েদা খানম হাত দিয়ে ইশারায় মানা করে।
আবরার দরজা পেরিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।

আরফি ছাদে দাড়িয়ে বিকেলের সতেজ হাওয়া লাগাচ্ছে শরীরে।ঘরে বসে থাকতে তার দম বন্ধ হয়ল আসছিল তাই সে ছাদে উঠে দাড়িয়েছে।আশেপাশের হাওয়াটা খুব ভালো লাগছে।সচারআচার ছাদে উঠা হয় না আজ অনেক দিন পর ছাদে উঠে ভালোই লাগছে।সব ধরনেক চিন্তা থেকে সে এখন একটু দূরে আছে আচ্ছা এই মনোরম পরিবেশটা যদি তার জীবনে বজায় থাকতো তাহলে কী খুব খারাপ হতো।আরফি আর এসব ভাবলো না ভালো লাগা পরিবেশটাকে সে উপভোগ করতে লাগলো।
কিন্তু এই ভালো লাগা কিছুক্ষণ পরই বিলীন হয়ে গেলো পিছন থেকে কেউ অতি শীতল গলায় আরফিকে ডেকে উঠলো,
~আরফি।
আরফি নিজের নাম কারো মুখে শুনে পিছন ফিরে তাকালো আর দেখলো আবরার দাড়িয়ে আছে।আরফি তার ওড়নার আঁচলটা হাতে দিয়ে শক্ত করে ধরে ফেললো।আবরার আরফির কাছে চলে এসে বললো,
~ভয় পাচ্ছো?আমি কিন্তু আরফানের পারমিশন নিয়েই এসেছি।
আরফি অবাকই হলো কিন্তু কিছু বললোনা।ধীর পায়ে আবরার পাশ কাটিয়ে যেই না চলে যেতে নিবে তখনই আবরার খপ করে তার হাত ধরে বললো,
~প্রিয় আরফি,পালিয়ে যাচ্ছো কোথায়?তোমার জন্যই তো এই অধমের এতোটা পথ চলা।একা রেখে চলে যেও না

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here