গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ৩

গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ৩
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza

(গল্পের শুরুতে কিছু কথা বলছি অনেকেই বলেছেন ফায়াজের বড় ভাইয়ের নামটা চেঞ্জ করে দিতে আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হয় তাই এখন থেকে ফায়াজের বড় ভাইয়ের নাম ফাহাদ😊😊)
,,,,
,,,
ফায়াজ ভাইয়ের এমন কাটকাট কথা শুনে রুপা আপুর মুখটা নিমিষেই কালো মেঘে ঢেকে গেলো পরক্ষনেই সে নিজেকে ঠিক করে বললো,
~ফায়াজ ভাই কেমন আছো?
ফায়াজ ভাই নির্লিপ্ত ভাবে বললো,
~ভালো না থাকলে কী তোর সামনে দাড়িয়ে থাকতাম?
রুপা আপু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~ফায়াজ ভাই এভাবে কথা বলো কেন?কষ্ট হয় তো
ফায়াজ ভাই বললেন
~অতিরিক্ত কথা পছন্দ না।
রুপা আপু বললো,
~তুমি এভাবে কেন কথা বলো?সোজা ভাবেও তো কথা বলা যায়
ফায়াজ ভাই এবার রেগে গিয়ে বললেন,
~রুপা তুই এখন আমাকে বিরক্ত করছিস।
রুপা আপু একগাল হেসে বললেন,
~আচ্ছা তাহলে চলে যাচ্ছি।
রুপা আপু যেতে নিবে তখনই আমি তার হাত ধরে বললাম,
~আপু,তুমি এ মানুষটার কথায় কষ্ট পেওনা।
রুপা আপু বললো,
~ফিহা তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো তখন কথা হবে কেমন?
বলেই সে আমার হাত ছাড়িয়ে একবার ফায়াজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে নিচে নেমে গেলো।আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম,
~বেচারি কষ্ট পেয়েছে।
ফায়াজ ভাইয়ের কথায় আমি ভাবনার জগৎ থেকে বের হই সে আমাকে বলছে,
~ফিহা ফ্রেশ হয়ে নে আর শোন মা রান্না ঘরে আছে কিছু লাগলে মাকে বলিস আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি।
আমি তাকে কিছু না বলে খালামণির রুমে ডুকে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।খালামণির বাসাটা অনেক বড় তাই সবাই এখানে একসাথে থাকতে কোনো অসুবিধা হবে না।
আমি দক্ষিণা জানালার সামনে দাড়িয়ে কিছুক্ষন ঠান্ডা হাওয়া নিজের শরীরে লাগিয়ে নিলাম।বাসার ভিতরে বাগানও রয়েছে আমি জানালা দিয়ে তা দেখে নিলাম বেশ সুন্দর লাগছে আমি সেখান থেকে সরে আয়নার সামনে দাড়িয়ে ওড়নাটা ঠিক করে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। নিচে আসতেই দেখি ফায়াজ ভাইয়ের সব চাচা সোফার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছেন আমি তাদের দিকে একপলক তাকিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি খালামণি,কবিতা চাচী ফায়াজ ভাইয়ের বড়চাচী আর মুনমুন চাচী ফায়াজ ভাইয়ের ৫নাম্বার চাচী। রান্নার কাজ করছেন আমাকে দেখে খালামণি বললেন,
~ফিহা তুই এখানে? কিছু লাগবে মা?

আমি বললাম,
~না খালামণি।চাচীরা কেমন আছেন?
আমার কথা শুনে কবিতা চাচী বললেন,
~ভালো আছি মা।তুমি কেমন আছো?
আমি বললাম,
~ভালো।
মুনমুন চাচী বললেন,
~তা তোমার মা কবে আসছে?
আমি বললাম,
~কালকে চলে আসবে।
কবিতা চাচী বললেন,
~আগে কতো আড্ডা দিয়েছি এখন দেখাই হয়না।
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি।আমি বললাম,
~কবিতা চাচী,সায়মা কোথায় আর সায়ন ভাই?
সায়ন ভাই আর সায়মা কবিতা চাচীর ছেলে-মেয়ে।সায়ন ভাই ফায়াজ ভাইয়ের ৩মাসের ছোট আর সায়মা এইবার নবম শ্রেণিতে উঠেছে।
কবিতা চাচী বললো,
~রুপার সাথে ছাদে গিয়েছে।
মুনমুন চাচী বললেন,
~আর বলো না সব একসাথে হয়েছে তাই ওদের সুখ ধরে না।
তখনই রান্নাঘরে অহনা চাচী এসে পরলেন সে হচ্ছে মেঝো জন।অহনা চাচী এসেই আমাকে দেখে বললেন,
~ফিহা তুমি এখানে কী করছো যাও সবাই উপরে রুপাও তো উপরে।
অহনা চাচীর একমাত্র মেয়ে রুপা আপু তাই রুপা আপু এজন্য তাকে অনেক আদরে আদরে বড় করেছেন।
আমি খালামণিকে বলে ছাদে চলে আসলাম সেখানে গিয়ে দেখি ফায়াজ ভাইয়ের সব কাজিনরা বসে আছে সায়মা আমাকে দেখে বললো,
~আরে ফিহা আপু আসো বসো।
আমি মুচকি হেসে তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই সায়ন ভাই আমাকে বলে,
~ফিহা আচার খাবে আমের আচার।
আমি হাত বাড়িয়ে এক পিস আচার নিয়ে মুখে দিয়ে বললাম,
~ধন্যবাদ ভাইয়া।
সায়ন ভাই বললেন,
~তোমাকে কতোবার বলেছি ভাই বলতে মানা।
আমি বললাম,
~ভাইকে ভাই বলবো না তো কী বলবো?
সায়ন ভাই বললেন,
~থাক তোমার এতো ভাবতে হবে না তুমি আচার খাও।
রুপা আপু ছাদের একপাশে দাড়িয়ে আছে তার দৃষ্টি এখন আকাশপানে আমি তার পাশে দাড়িয়ে বললাম,।~আপু মন খারাপ।
রুপা আপু আলতো হেসে বললো,
~জানো ফিহা ফায়াজ ভাই যেভাবে আমার সাথে কথা বলে এরকম ব্যবহার অন্য কেউ করলে আমি তাকে আস্তো রাখবো না কিন্তু তাকে কিছু বলতে পারি না।
আমি বললাম,
~তার কথায় মনে কিছু করো না।
রুপা আপু বললো,
~আজ রাতে পার্টি হবে ছাদে তুমি কিন্তু আসবে।
আমি বললাম,
~অবশ্যই আসবো।
হঠাৎ ফায়াজ ভাই এসে আমাকে বললেন,
~তোকে মা ডাকছে।
সায়ন ভাই ফায়াজ ভাইয়ের কথা শুনে বললেন,
~তুই গিয়ে চাচীকে বলে দে ফিহা আমাদের সাথে
ফায়াজ ভাই বিরক্তি নিয়ে বললেন,
~আমি কাউকে কিছু বলতে পারবো না।
আমি বললাম,
~কাউকে কিছু বলতে হবে না আমি নিচে যাচ্ছি।
বলেই আমি সিড়ি বেয়ে নিচে নামলাম আমার পিছে পিছে ফায়াজ ভাই নামলেন।

হঠাৎ ফায়াজ ভাই আমার হাত ধরে তার রুমে নিয়ে গেলেন।আমি তার কাজে পুরো অবাক আমি নিজের হাত তার থেকে ছাড়িয়ে বললাম,
~কী হয়েছে ভাই এমন করছেন কেন?
ফায়াজ ভাই কিছু না বলে কার্বাড থেকে একটা শপিং ব্যাগ বের করে আমার হাতে দিয়ে বললো,
~এইটা তোর জন্য আমার পক্ষ থেকে।
আমি শপিং ব্যাগটা খুলে দেখলাম শাড়ি মেরুন কালারের শাড়িটা সুন্দর আমি শাড়িটা হাতে তুলে এদিক সেদিক দেখে বললাম,
~আপনি আমার জন্য শাড়ি আনলেন কেন?
ফায়াজ ভাই তার হাত ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপরে রেখে বললেন,
~আমার মন চেয়েছে তাই এনেছি।কোনো সমস্যা?
আমি বললাম,
~আপনি পছন্দ করেছেন?
ফায়াজ ভাই আমার দিকে ফিরে বললেন,
~নাহ আমার গার্লফ্রেন্ড পছন্দ করেছে।
তার এরকম ত্যাড়া কথা আমার পছন্দ না তাই আমি বললাম,
~এখন আমি যাই।
ফায়াজ ভাই বললো,
~মাথাটা ধরেছে এক কাপ চা দিতে বলিস তো?
আমি বললাম,
~আচ্ছা
বলেই রুম থেকে বের হয়ে খালামণিকে চায়ের কথা বলে আমি রুমে চলে গেলাম।শাড়িটা আমার ব্যাগে ভরে রাখলাম আজকাল ফায়াজ ভাইয়ের ব্যবহার একটু অন্যরকম লাগছে সে আশেপাশে থাকলে আমার কেমন জানি লাগে।ইদানিং সে আমার পাশেই থাকে না জানি এই মানুষটার কী হয়েছে আজব মানুষ।

সন্ধ্যায় আমি রেডি হয়ে ছাদে উঠতেই দেখি পুরো ছাদ একদম টিপটপ করে সাজানো।ফায়াজ ভাই,সায়ন ভাই,ফাহাদ ভাই,রাসেল ভাই আর সুজন সবাই ব্যস্ত।
রাসেল ভাই আর সুজন সেজো চাচীর ছেলে। আমি রুপা আপুর পাশে গিয়ে দাড়াতেই সে বললো,
~সব কাজ শেষ এখনই পার্টি শুরু হবে।
সুজন এসে বললো,
~আজকে রাতের খাওয়া দাওয়া এখানেই হবে।
রুপা আপু বললো,
~চল এখন পার্টি শুরু করি।
আমরা সবাই গোল হয়ে বসে আছি ফায়াজ ভাই আমার পাশে বসে পরলো।রুপা আপু তা দেখে আমার কানের কাছে এসে বললো,
~তুমি আমার জায়গায় এসে বসো।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ফায়াজ ভাই আমার হাত ধরে বললো,
~যদি এখান থেকে উঠেছিস তোর খবর আছে।
ফায়াজ ভাইয়ের এমন রাগী কথা শুনে আমি সেখানেই বসে রইলাম।হঠাৎ কাজল বললো,
~ট্রুথ অর ডেয়ার খেলা যাক
কাজল হচ্ছে মুনমুন চাচীর একমাত্র মেয়ে।সবাই কাজলের কথায় সহমত পোষণ করলো
সবার প্রথমে ফাহাদ ভাইয়ের পালা আসলো তাকে সবাই জিজ্ঞেস করলো সে ডেয়ার নিলো তাকে সবাই নাগীন গানে ড্যান্স করতে বললে ফাহাদ ভাই বলে,
~আমার বিয়েতে আমিই নাচবো এটা কোনো কথা।
সায়ন ভাই বললো,
~এটাই তো কথা তাড়াতাড়ি শুরু করো।
অবশেষে ফাহাদ ভাই হার মেনে ড্যান্স শুরু করলো তার নাচ দেখে সবার মাঝে হাসির রোল পরে গেলো।একে একে সবার পালা চলে আসলে কেউ ট্রুথ নিচ্ছে তো কেউ ডেয়ার এরই মধ্যে ফায়াজ ভাইয়ের পালা আসতেই সে ট্রুথ নিয়ে নেয় তখন সায়ন ভাই বলে
~আমি তোকে প্রশ্ন করবো ফায়াজ।
ফায়াজ ভাই বললেন,
~কর।
সায়ন ভাই বললো,
~তোর কী পছন্দের মানুষ আছে? আর থাকলেও কবে তাকে আমাদের সাথে দেখা করাবি?
ফায়াজ ভাই হালকা হেসে বললেন,
~আমার পছন্দের মানুষ না বরং ভালোবাসার মানুষই রয়েছে আর সময় হলে সব হবে।
বলেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললেন,
~এক খেলা খেলতেই রাত পার হয়েগেছে।তাই সবাই খাবার খেয়ে নে।
সবাই এখন হা হয়ে ফায়াজ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।ফায়াজ ভাই এতটুকু বলে ছাদের অন্যদিকে চলে গেলো
আমরা খাওয়া দাওয়া করে আরো অনেক মজা করলাম সবার সাথে আড্ডা দিয়ে রাত১২টায় আমরা ছাদ থেকে নেমে যে যার ঘরে চলে যায় আমিও আমার রুমের দিকে চলে যেতে নিবো তখনই কেউ আমাকে টান দিয়ে স্টোর রুমের ভিতরে নিয়ে যায় স্টোর রুমটা গুটগুটে অন্ধকার হওয়ায় আমি তার চেহারা দেখতে পারছিলাম না সেই ব্যক্তিটা আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে আমি তাকে সরানোর চেষ্টা করতেই সে আমার হাত আরো জোড়ে চেপে ধরে আমি চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলি হাত চেপে ধরায় আমি ব্যাথা পাচ্ছি তাই আমার চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি পরে যায়।

আমি মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি তখনই সেই ব্যক্তিটি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার গালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলো।
আমি চোখ পিট পিট করে খুলে দেখি

চলবে।।।

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/379289873792791/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here