গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ৫

গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ৫
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza

চিঠিটা পরে মাথা পুরো নষ্ট হয়ে গেলো আমি চিঠিটা ভালো করে দেখলাম অনেক চালাক ব্যক্তি টাইপিং করে চিঠিটা লিখেছে।যাতে তার রাইটিংটা আমি চিনতে না পারি এরমানে কী আমার চেনা জানা কেউই আমার সাথে এমন মজা করছে একবার হাতে পেলে আস্তো রাখবো না।কেমন ধরনের মানুষ এগুলো হচ্ছে চোর মানুষ নিজের মনের কথা তো সামনাসামনি বলতে পারে না তাই এভাবে বলতে শিখেছে।আমি চিঠিটা আমার ব্যাগে তুলে রাখলাম প্রমাণ হিসেবে মাকে কিছুই বলবো না এখন মা এভাবেই অনেক প্যারায় আছে। আমি ড্রেস চেঞ্জ করে ওড়না সুন্দর করে শরীরে জড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম আমার মাথায় এখনও সেইসবই ঘুরপাক খাচ্ছে।আমি সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখি সবাই সোফার ঘরে জড়ো হয়ে বসে আছে।আমি আবীর ভাইয়ের পাশে গিয়ে বসে পরলাম ফায়াজ ভাই ছাড়া সবাই কথায় ব্যস্ত সে মোবাইলে আছে।আমরা সবাই আড্ডা দিচ্ছি তখনই খালামণি আমাদের সবার জন্য নুডুলসের পাকোরা আনলেন আমরা তা দেখে সেটার উপর ঝাপিয়ে পরলাম।বাহিরে তুমুল আকারে বৃষ্টি হচ্ছে তাই এই বৃষ্টির দিনে পাকোরা খাওয়ার মজাই আলাদা আর সাথে চা।আমরা সবাই পাকোরা খাচ্ছি আর আড্ডা মারছি হঠাৎ বাসার কারেন্ট চলে গেলো আমি একটু ভয় পেয়ে আবীর ভাইয়ের হাত ধরে ফেললাম পুরো বাড়ি অন্ধকার খালামণি ফায়াজ ভাইকে বললেন,
~দেখতো ফায়াজ জেনেটারের কী হলো?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~দেখছি মা কারেন্টও যাওয়ার সময় পেলো না।
ফায়াজ ভাই উঠতে যাবে তার আগে আবীর ভাই বললেন,
~ফায়াজ তুই বস আমি দরজার সামনে বসে আছি তাই আমিই যাচ্ছি।
আমি ভাইয়ের হাত ধরে বললাম,
~তুমি গেলে আমার কী হবে?
আবীর ভাই বললেন,
~রুপা পাশেই আছে কিছু হবে না।
রুপা আপু আমার হাত ধরে বললো,
~আরে আমি তো আছি।
আমি আর কিছু বললাম না আবীর ভাই দরজা খুলে চলে গেলেন আমি দরজা আটকে রুপা আপুর পাশেই বসে পরলাম।

রাসেল ভাই বললেন,
~ভুতের একটা গল্প শোনাই।
একথা শুনে আমার বুকের সব পানি শুকিয়ে গেলো।অন্ধকারের মধ্যে ভুতের গল্প আবীর ভাই তাড়াতাড়ি জেনেটার ঠিক করো হঠাৎ আমার বাম পাশ থেকে ফায়াজ ভাই বললেন,
~তোর যদি বলতে ইচ্ছে করে মনে মনে বল কাউকে শুনাতে হবে না এভাবেই গরমে মরে যাচ্ছি উপর দিয়ে সাহেবের ভুতের গল্প।
আমি অবাক হয়ে ভাবলাম ফায়াজ ভাই আমার পাশে এসে বসলেন কখন টেরই তো পেলাম না।ফায়াজ ভাই তার কথা শেষ করে আমার হাত ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
~ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি আছি এখানে।
ফায়াজ ভাইয়ের এমন ফিসফিস কথা শুনে আমার কেমন জেনো লাগছে তার গরম নিশ্বাস আমার ঘাড়ে লাগছিল পুরো শরীরে আলাদা শিহরণ তৈরি করছিল।তার শরীরে ঘ্রাণ আমাকে মুগ্ধ করছিল এসব আমি কী ভাবছি এমন আচরণ আমার দ্বারা কীভাবে হয়ে গেলো।নিজেকে সামলে আমি চুপ করে বসে রইলাম একটু পর পুরো বাড়িতে আলো জ্বলে উঠলো ফায়াজ ভাই আমার হাত ছেড়ে দিয়ে তার জায়গায় বসে পরলো। আবীর ভাই চলে আসলে আবার আড্ডা দেওয়া শুরু হয়ে যায় আমি চুপ করে বসে সবার কথা শুনে যাচ্ছি।
রাতে খাওয়া-দাওয়া করে উপরে এসে একদম বিছানায় গা এলিয়ে দেই আমি, মা,খালামণি একই রুমে ঘুমাবো।মা আর খালামণিও এসে পরলো আমি মাকে জড়িয়ে ধরতে সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর খালামণির সাথে কথা বলছে।এক পর্যায় আমার চোখে ঘুম নেমে আসে সারাদিন নানান ধরনের প্যাঁচালের কারণে আমার শরীরে ক্লান্তী ভর করছে তাই হয়তো ঘুম বাবু আমার কাছে চলে এসেছে।

সকালের মাধূর্যতা সবাইকে ঘুম থেকে উঠতে সাহায্য করে। পাখিরা তার নীড় ছেড়ে ছুটে চলে এই বিশাল আকাশে। এই রোদের ঝিলিক যেন সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে এখন সবাই ব্যস্ত হয়ে পরবে যার যার কর্মে কেউ অফিসে তো কেউ তার ব্যবসায়।ঠিক তেমনি ব্যস্ততা পার করছে এ বাড়ির মানুষজন আজ থেকে বাসায় বিয়ের তোরজোর শুরু হলো আর হবেই বা না কেন এ বাসার ছেলের গায়ে হলুদ আজ। সব কিছু সেন্টারে হলেও বাসায় যে মেহমানরা আছে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে তাইতো সবাই রান্নাঘরে ব্যস্ত।
আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসে আছি আশেপাশে সবাই কথা বলছে কিন্তু আমার একবিন্দুও কথা বলতে মন চাইছেনা আরো ঘুম দিতে পারলে ভালো হতো মাথা ভার ভার হয়ে আছে।নাস্তায় সবার জন্য গরুর মাংসের তরকারি রুটি আর চা আমি এক কাপ চা নিয়ে যেই বসতে যাবো তখনই ফায়াজ ভাই এসে বললেন,
~ফিহা আমার ঘরে এককাপ চা নিয়ে আয়তো।
আমি আমার হাতের চায়ের কাপ তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
~এই যে নেন।
ফায়াজ ভাই ভ্রুকুচকে বললেন,
~তোর জুঠাটা আমায় দিলি?
আমি বললাম,
~মুখ পর্যন্ত লাগায়নি খেয়ে নেন।
ফায়াজ ভাই বললেন,
~চায়ের কাপটা নিয়ে রুমে চলে আয়।
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
~এখানেই তো দিচ্ছি আবার রুমে নিয়ে আসবো কেন?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~তর্ক করিস না নিয়ে আয় চা টা।
আমি আর না পেরে চায়ের কাপ নিয়ে তার পিছে পিছে রুমে চলে আসলাম সেখানে গিয়ে চায়ের কাপ তার স্টাডি টেবিলের উপর রেখে চলে আসতে নিবো সে আমার হাত ধরে বললেন,
~আমার কাছে থাকলে কী বড্ড বেশি সমস্যা?
আমি ফায়াজ ভাইয়ের কথা শুনে তার দিকে তাকালাম চোখে চোখ পরতেই আমার বুক ধুকপুক ধুকপুক করা শুরু করলো।

আমি আমতা আমতা করে বললাম,
~হাত ছাড়েন ফায়াজ ভাই।ইদানিং আপনি বড্ড করছেন।
ফায়াজ ভাই আমার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললেন,
~কী করছি?
আমি বললাম,
~ছাড়েন আমাকে কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
ফায়াজ ভাই আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
~যা তোর সর্বনাশ হতে হতে রয়ে গেলো।
আমি ছাড়া পেয়ে ফায়াজ ভাইয়ের রুম থেকে একপ্রকার দৌড়ে বের হয়ে আসলাম এই মানুষটার বড্ড বার বেড়েছে দূরে দূরে থাকাই ভালো হবে আমার জন্য।
সন্ধ্যা বেলায় আমরা সব মেয়েরা একই সাথে রেডি হচ্ছি ভাবি আর ভাইয়ের গায়ে হলুদ একই সাথে হবে।
খালামণি বারবার তাড়া দিচ্ছে আমাদের কমিউনিটি সেন্টারে পৌছাতে হবে। আমি এখনও শাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছি রুপা আপু আমাকে দেখে বললো,
~আমি পরিয়ে দিবো?
আমি বললাম,
~একটু ভালোভাবে পরিয়ে দিয়ো যাতে শরীরের কোনো অংশ না দেখা যায় আর শাড়ি যাতে না খোলে।
আমার কথা শুনে রুপা আপু মুচকি হেসে বললো,
~ঠিক আছে।
মেয়েরা সবাই আজ বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি পরবে।রুপা আপু আমাকপ সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিলেন আর বললেন,
~সবাই তো এখন চলে যাবে তুমি আমার জন্য ওয়েট করো কমিউনিটি সেন্টার তো কাছেই।
আমি বললাম,
~ঠিক আছে।
রুপা আপু তার শাড়ি ঠিক করতে শুরু করলেন বাসার সবাই হয়তো চলে গেছে আমি মাকে বলেদিয়েছি যে আমি রুপা আপুর সাথে যাবো পাক্কা ৩০মিনিট পর রুপা আপু এসে বললেন,
~চলো রেডি আমি।
রুপা আপু আর আমি সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে বাড়ির গেইট দিয়ে বের হয়ে দেখি ফায়াজ ভাই আর সায়ন ভাই দাড়িয়ে আছে আমাকে দেখে সায়ন ভাই বললেন,
~হয়েছে আপনাদের? এখন চলুন আপনারা
ফায়াজ ভাই একবার আমার দিকে তাকিয়ে সায়ন ভাইকে বললেন,
~তুই আর রুপা এই রিক্সায় যা।
সায়ন ভাই বললেন,
~যথা আজ্ঞে মহারাজ।
রুপা আপু বললো,
~আমি ফায়াজ ভাইয়ের সাথে যাবো।
ফায়াজ ভাই বললেন,
~ঠাটিয়ে চড় দিবো চুপচাপ সায়নের সাথে যা।
রুপা আপু আর কোনো কথা না বলে সায়ন ভাইয়ের সাথে রিক্সায় উঠে বসে।আমি আর ফায়াজ ভাইও রিক্সায় উঠে বসলাম রিক্সা চলতে শুরু করলো আমি অন্যদিকে মুখ করে বসে আছি।হঠাৎ আমার ঘাড়ের কাছে ফায়াজ ভাইয়ের গরম নিশ্বাস পরলো আমি তার দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম সে একদম আমার কাছে চলে এসেছে।তাকে এ অবস্থায় দেখে আমি বললাম,
~কী হয়েছে ভাই?
ফায়াজ ভাই আমার সামনে আসা চুল গুলো কানের কাছে গুজে বললেন,
~কিছু না।
বলেই আমার থেকে একটু দূরে সরে গেলেন।

কমিউনিটি সেন্টারে পৌছে আমরা ভিতরে ঢুকে দেখলাম সব আত্মীয় স্বজনরা চলে এসেছে।ভাই আর ভাবিকে স্টেজে বসিয়ে দিয়েছে একএক করে সবাই তাদের হলুদ ছুয়িয়ে দিচ্ছেন।আমি,রুপা আপু,সায়মা, কাজল একসাথে দাড়িয়ে গল্প করছি আর ছবি তুলছি। একেকজন একেক পোস দিতে ব্যস্ত তখনই কেউ পিছন থেকে পুরুষালি কন্ঠে কেউ বলে উঠলো,
~আপনারা একটু সাইডে দাড়িয়ে ছবি তুলেন কারণ এখান থেকে আসা যাওয়া করতে কষ্ট হচ্ছে।
রুপা আপু আর আমি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি একজন যুবক দাড়ানো রুপা আপু তাকে দেখে বললেন,
~আরে তাসিফ ভাইয়া যে কেমন আছেন?
আমি রুপা আপুর দিকে তাকাতেই সে বললো,
~তাসিফ ভাই…. প্রিয়া আপুর ভাই।
আমি তাসিফ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
~ভালো আছেন ভাইয়া?
তাসিফ ভাইয়া হেসে বললেন,
~ভালো আছি।তোমরা একটু সাইডে দাড়াও তাহলে কোনো অসুবিধা হবে না
কথা শেষ করে সে চলে যায় তার হাতে একটা বড় বক্স ছিল হয়তো কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস।

সবার হলুদ দেওয়া শেষে আমিও ভাই ভাবিকে হলুদ লাগাতে গেলাম তখনই ফায়াজ ভাই এসে আমার সাথে দাড়িয়ে বললেন,
~একসাথে হলুদটা দিলে ভালো হয় না কারণ ভাবি টার্য়াড হয়ে গেছে।
আমি আর কোনো কথা না বলে ফায়াজ ভাইয়ের সাথে হলুদ লাগালাম তাদের।হলুদ ছুয়িয়ে আমি হাত টিস্যু দিয়ে মুছে এক কিনারে গিয়ে দাড়িয়ে পরলাম।
তাসিফ ভাই আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বললেন,

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/381432770245168/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here