গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ৯

গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ৯
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza

আমরা সবাই পিছে ঘুরে দেখি ফায়াজ ভাইয়ের সামনে ফুলদানি ভেঙ্গে পরে আছে।আমি একবার ফায়াজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবার ফুলদানির দিকে তাকালাম।রুপা আপু দৌড়ে ফায়াজ ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললো,
~তুমি ঠিক আছো?
ফায়াজ ভাই কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।খালামণি বললেন,
~ফায়াজ ফুলদানিটা কীভাবে ভাঙ্গলো?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~অসাবধানতায় পরে গেছে।
এতটুকু বলে সে একমুর্হূতও সেখানে দাড়ালেন না হনহন করে হেঁটে সে চলে গেলো।খালামণি পরিস্থিতি সামলাতে বললেন,
~এভাবে সবাই চুপ কেন হয়ে আছো?ফুলদানিই ভেঙ্গেছে কারো মাথা নয়
খালামণির কথায় সবাই আবার মসগুল হয়ে পরলো।
প্রিয়া ভাবি আজ তার বাসায় যাবে তার সাথে ফাহাদ ভাইও এখনই তারা ওই বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হবে।আমি কোথাও ফায়াজ ভাইকে দেখতে পেলাম না সে যে কোথায় তা কেউই জানে না আমি তাদের বিদায় দিতে সবার সাথে বাড়ির গেটের সামনে গিয়ে দাড়ালাম তখনই দেখা হলো তাসিফের সাথে সে আমাকে স্বাভাবিকভাবে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে বসে পরলেন।
সবাই চলে যাওয়ার পর আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ভাবতে লাগলাম ফায়াজ ভাই এমন কেন করছেন?সে কি বুঝতে পারছে না বাসায় কেউ যদি এসব টের পায় আমাদের অবস্থা কী হবে?মানুষটি এমন পাগলের মতো কেন ব্যবহার করছেন?আজ সে রাগের বশে ফুলদানিটা ভেঙ্গেছেন তা আমি বুঝেছি কেন যে তার এতো রাগ আমি বুঝিনা সব জিনিসেরই একটা সঠিক সময় আছে কিন্তু তার সেই সময়ের জন্য ধৈর্য নেই।এসব ভাবছিলাম সেটার মাঝেই রুপা আপু এসে বললো,
~ফিহা তাসিফ কিন্তু ভালো ছেলে তুমি একটু ভেবে দেখতে পারো।
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
~আপু বিয়ের কথা এখন ভাবছিনা।
রুপা আপু বললো,
~দেখো ফিহা তাসিফের মতো একটা ছেলে তোমাকে নিজ থেকে বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছে তাই তুমিও একটু ভেবে দেখো।
আমি বললাম,
~আপু না আমার তাসিফের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট আছে না আমার বিয়ের প্রতি ইন্টারেস্ট আছে।
বলেই আমি বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালাম তখনই রুপা আপু বললো,
~তাহলে কী ফায়াজ ভাইয়ের প্রতি ইন্টারেস্ট আছে?

রুপা আপুর এহেন কথায় আমি অবাক হয়নি বরং সে যে এইসব কথাই বলতে এসেছে তা আমি বরাবর জানতাম।আমি কিছু না বলে সেভাবেই দাড়িয়ে আছি রুপা আপু আমার সামনে দাড়িয়ে বললো,
~প্রশ্নের জবাব টা দিলে না যে?
আমি বললাম,
~আপু এখন আমি হ্যাঁ বললে তুমি কী করবে?
রুপা আপু বললো,
~ফিহা তুমি এতদিনেও এটি বুঝতে পারোনি আমি ফায়াজ ভাইকে পছন্দ করি।
আমি ভ্রুকুচকে বললাম,
~তোমার তো বয়ফ্রেন্ড আছে আমি যতটুকু জানি।
রুপা আপু হেসে বললো,
~একজনকে ভুলতে আরেকজনের সহায়তা নিয়েছি তবুও সেই একজনকে ভুলতে পারিনি।
আমি বললাম,
~সেই একজনকে ভুলতে হবে যে তোমার সেই একজন কোনো দিন তোমায় ভালোবাসবেনা।
রুপা আপু বললো,
~মন চাইছে তোমায় গলা টিপে মেরে ফেলি কিন্তু ওইযে আমি এখন অসহায়।
আমি হেসে বললাম,
~রুপা আপু আমি এখন ক্লান্ত তোমার সাথে পরে কথা হবে।
রুপা আপু আমার কথা শুনে সেখান থেকে চলে গেলেন আমি তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে বললাম,
~ভালোবাসা সবাইকে অসহায় করে তুলে কারণ প্রিয় মানুষ ছাড়া কেউই মন খুলে বাঁচতে পারেনা।আর একতরফা ভালোবাসায় তো আরো কষ্ট।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমি বারান্দায় চলে গেলাম সন্ধ্যা নেমে এসেছে পাখিরা তার নীড়ে ফিরছে আশেপাশে এক নিরবতা ছেয়ে আছে তখনই দূর কোনো মসজিদ থেকে আযানের আওয়াজ কানে আসলো।আমি চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম ফায়াজ ভাইয়ের এই মানুষটির কোনো ব্যবহারে আদৌ বুঝিনি সে আমায় ভালোবাসে। এই কদিনে যেভাবে বুঝাতে চাচ্ছে সেভাবে আমি বুঝবো না মুখ ফুটে বলতে হবে চিৎকার করে তাকে সবার সামনে বলতে হবে
~ফিহা তোকে আমি ভালোবাসি বিয়ে করবো তোকে।তুই আমার পাশে বউ হয়ে থাকবি সারাজীবন কীরে পাগলী থাকবিনা?
এ কথাটি ভাবতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।চোখের কোণ বেয়ে পানি বেয়ে পরলো

রাতের বেলা আমরা সবাই বসে আছি সোফার রুমে যে যার কাজ করছে হঠাৎ খালামণি এসে চিন্তিত গলায় বললেন,
~আবীর,ফায়াজের কোনো খবর জানিস এই যে ফোন করছি কোনো খবর নেই
আমি চিন্তিত হয়ে পরলাম আসলেই সে যে বের হয়েছে আর তো ফিরেনি মানুষটি।তাহলে কী অভিমান করলেন আমার সাথে করেও লাভ নেই এই অভিমানের ভাষা আমি বুঝবোনা এখন আমি অবুঝ হয়েই থাকবো।তখনই বাড়ির দরজা করাঘাত করলো কেউ আমি উঠে দরজা খুলতেই দেখি ফায়াজ ভাই দাড়িয়ে আছে।আমি দরজা থেকে সরে এসে নিজের জায়গায় বসে পরলাম।খালামণি ফায়াজ ভাইকে দেখে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
~কোথায় ছিলি তুই?রাত বিরাতে কোথায় ঘুরছিস তুই?
শেষের কথাটা জোরেই বললেন খালামণি। মা খালামণিকে বললো,
~আহা আপা থাক না হয়তো বন্ধুদের সাথে কোথাও গিয়েছিল।
খালমণি বললেন,
~ফায়াজ তোর দুই ফুপি যাওয়ার সময় তোকে কত খুঁজেছে জানিস?আর তোর ৩চাচা চলে গেছে তোকে কত খুজেছে তোর বড় চাচী কান্না পর্যন্ত করলো।আর সাহেবের কোনো খবর নেই সায়মা সায়ন কতবার বললো তোর কথা।এই ছেলে কথা বল?
ফায়াজ ভাই সেখানেই মাথা নিচু করে রেখেছেন কোনো কথা বলছে না।আবীর ভাই ফায়াজ ভাইকে বললেন,
~ফায়াজ কী হয়েছে বল তো?
ফায়াজ ভাই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন,
~আমি ফিহাকে বিয়ে করবো কোনো। তাসিফ বাসিফকে ওকে দেওয়া যাবে না
ফায়াজ ভাইয়ের কথা শুনে আবীর ভাই স্তব্ধ শুধু আমি আর খালামণি ছাড়া সবাই স্তব্ধ আবীর ভাই নিজেকে ঠিক করে বললেন,
~ফায়াজ কী বলছো?পাগল হয়েছো তুমি?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~আমি কিছু জানিনা ফিহাকে আমি ভালোবাসি আর আমি ওকে বিয়ে করবো।

আবীর ভাই আমাকপ বললেন,
~ফিহা তুই রুমে যা।
আমি রুমে চলে আসলাম বাহিরে অনেক শোরগোলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে আবীর ভাই আর ফায়াজ ভাইয়ের কন্ঠ আর কেউ কথা বলছে না।রুপা আপু তো এখনও চুপ করপ দাড়িয়ে আছে।আমি ফ্লোরে বসে পরলাম হাঁটুতে মুখগুজে কান্না করতে লাগলাম ফায়াজ ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগছে তার চেহারাটা মলিন হয়ে গেছে।আমি উঠে দাড়ালান বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম কখন যে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরলাম বুঝতে পারলান না।
আমার ঘুম ভাঙ্গলো গভীর রাতে আমি পাশ ফিরে দেখি মা শুয়ে আছে আমি উঠে বসে পরলাম পানি পিপাসা লেগেছে আমি রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম তখনই কারো আওয়াজে আমার পা থেমে গেলো

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/384177139970731/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here