গল্প গোধূলির বেলায় তুমি’পর্ব-২

0
1009

#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_২

৩.
প্রায় মাঝ রাত। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। পুরো রুমে শুধু দুইজন মানুষের নিশ্বাসের আওয়াজ ছাড়া অন্য কোন আওয়াজ নেই। বাহিরে শুধু ঝি ঝি পোকার শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রকৃতি একদম শান্ত হয়ে আছে। ঝড়ও থেমে গেছে অনেক আগেই। এখন বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।ধীরে ধীরে আমি চোখ খুলে তাকালাম।চোখ খোলতেই নিজেকে অন্ধকার একটি রুমে আবিষ্কার করি। চারপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি আমি কোথায় আছি। কিন্তু পুরো রুমে ঘুটঘুটে অন্ধকার বুঝার কোন উপায় নেই এটা কোন জায়গা। নিজেকে চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখে আমার আত্মা কেঁপে উঠলো।আমার ভিতরে এক অজানা ভয় বাসা বাঁধলো। আমার মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে,’ আমি এখন কোথায় আর এখানেই বা আমাকে কে আনলো?’

আজ তো আমার বিয়ে। এতক্ষনে হয়তো সবাই জেনে গেছে আমি বাড়িতে নেই। সবাই আমাকে খুঁজছে। আমার জন্য হয়তো চিন্তা করছে। আর সাফিন,,, সে হয়তো আমাকে না পেয়ে পাগলের মতোন হয়ে গেছে। এভাবে আমার বসে থাকলে হবে না। আমাকে যে কিছু করতে হবে। এখানে থেকে যে কোন ভাবে আমাকে পালাতে হবে। অনেক চেষ্টা করা সত্ত্বেও আমি নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না। কোন ভাবেই নিজের হাত-পায়ের বাঁধন খুলতে পারলাম না। অনেক চেষ্টা করার পরে কান্ত হয়ে বসে রইলাম। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। মনের ভিতরে নানা ভয় উঁকি দিলো। তবে কি আমি আর কখনো ছাড়া পাবো না। আর কি কখনো আমি আমার নিজের পরিবারের কাছে যেতে পারবো না।

৪.
অনেক খুঁজেও সাফিন আদ্রিজার কোন খুঁজ পেলো না। তার এত এত লোক লাগিয়েও কোন ক্লু পাচ্ছে না। এটা কি করে সম্ভব। একটা মেয়ে এত তাড়াতাড়ি কি করে নিখোঁজ হয়ে যেতে পারে। তার খুব রাগ হচ্ছে নিজের উপর। নিজের লক্ষ্যের এত কাছে এসে হেরে যেতে সে পারবে না। সে গাড়ি থেকে বের হয়। রাগে তার চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে আছে। কিছুতেই সে তার রাগ দমিয়ে রাখতে পারছে না। তাকে আর একটু সর্তক হওয়ার দরকার ছিল। রাগে সে নিজের গাড়িতেই পায়ে লাঠি মারলো। ফলসরূপ নিজের পায়েই ব্যাথা পেলো।

এই পাঁচ বছরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছে সে অাদ্রিজাকে নিজের কাছে রাখার জন্য। শেষে যখন সে তাতে সফল হতে যাবে তখন কি করে সে এটা মেনে নিবে।

সাফিনের বাবা- মা ছেলের এই আচরণে অনেকটা রেগে আছে। কিন্তু সাফিনকে কিছু বলতে পারছে না।

সাফিনের মাথায় নানা ধরনের চিন্তা ঘুরছে। সে আবার গাড়িতে দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে লাগলো। হঠাৎ করে তার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে ভেসে উঠা নাম দেখে সে দ্রুত ফোন রিসিভ করে উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আদ্রিজার কোন খবর পেয়েছিস্??? ‘

লোকটি ভয়ার্থ স্বরে বলে, ‘ এখনো তার কোন খবর পাই নি। কিন্তু একটা ক্লু পেয়েছি। ‘

কি ক্লু??তাড়াতাড়ি বল্,,,,,,

লোকটি ফোনে সাফিনকে সব খোলে বলে। সব কিছু শুনে সাফিন ফোন কেটে দেয়। রাগে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নেয়। তবুও সে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে না পেরে গাড়িতে কতগুলো ঘুষি দিয়ে বলে” ডেমেইট। “তোকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না। তিন বছর আগে ভাগ্য ভালো ছিল তাই বেঁচে গিয়েছিলি এবার আর বেঁচে থাকার কোন সুযোগ পাবি না।আদ্রিজাকে আমার থেকে কেড়ে নেওয়ার ফল শুধু তোর মৃত্যু হবে। তুই আবার ফিরে এসে অনেক বড় ভুল করে ফেললি আভিয়ান চৌধুরী। এই সাফিন তার পথের কাঁটা রাখে না। খুব ভয়ংকর পরিণতি করে তার। এইবার আদ্রিজা যদি আবার তোর কাছে যায় তবে আমার ভালোবাসা বলে আর রেহায় পাবে না বলে বাঁকা হাসে।

৫.
কারো বিদঘুটে হাসির শব্দে আমার ভিতরটা কেঁপে উঠলো। তবুও যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে বললাম, ‘কে আপনি??? ‘ কিন্তু আমার প্রশ্নের কোন উত্তর পেলাম না। কেউ কোন কথা বলছে না। আমি মনে সাহস এনে আবার জিজ্ঞেস করলাম,,,, কেউ কোন কথা বলছেন না কেন? আমাকে এখানে তুলে আনার কি মানে? আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আমার সাফিনের কাছে যাবো।

আদ্রিজার মুখে সাফিনের নাম শুনে আভিয়ানের রাগ উঠে যায়। সে আর চুপ থাকতে পারে না।সে রুক্ষ কন্ঠে বলে, ‘তোমার আর কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। এই মুহূর্ত থেকে তোমার শেষ ঠিকানা হলো আমি। এখন তুমি চাও বা না চাও তোমাকে এই আমার সাথেই থাকতে হবে। মৃত্যু ছাড়া আমার থেকে দূরে তুমি যেতে পারবে না।তুমি বাধ্য হবে আমার সাথে থাকার জন্য। এছাড়া যে তোমার হাতে অন্য কোন অপশন নেই।

কন্ঠটা শুনে আমার আত্না কেঁপে উঠলো। এত বছর পরে আবার এই মানুষটাকে দেখবো, তার কন্ঠ শুনবো তা আমি ভাবতেই কখনো কল্পনাই করতে পারি নি। তার কন্ঠ শুনেই ঘৃণায় আমার সারা শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেছে। এত বছর পরেও আমার চিনতে বিন্দু পরিমাণ অসুবিধা হয়নি লোকটি কে?? আমি আমতা আমতা করে বলি,’আ,,,, আপনি??

আভিয়ান বাঁকা হেসে রুমের লাইটটা জ্বালায়। ঠোঁটের কোনায় আবারও হাসি টেনে বলে, “হ্যাঁ আমি ”
এখনো দেখছি আমাকে মনে আছে। আমি ভাবছিলাম তুমি এতদিনে আমাকে ভুলে গেছো বন্যা।

আদ্রিজা কর্কশ স্বরে বলে, আপনাকে কি করে ভুলে যাবো বলেন। এই আপনার জন্য তিন বছর আগে আমার জীবনটা ধ্বংস হতে যাচ্ছিল।আমাকে ভিতর থেকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলেন। এত বছর পরে আপনি কেন আবার আমার জীবনে ফিরে এসেছেন।যখন আমি নতুন করে আমার জীবনটা গুছিয়ে নিয়েছি তখন আবার এসেছেন আমার থেকে সব কেড়ে নিতে। কেন করছেন আপনি আমার সাথে এমন??? কি চান আপনি আমার থেকে??

আদ্রিজার কথা শুনে আভিয়ান কিছু না বলে এক ধ্যানে শুধু তার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে মুখ দিয়ে কিছু না বললেও তার চোখ অনেক কিছু বলে দিচ্ছে কিন্তু এই মুহূর্তে তার চোখের ভাষা পড়ার ক্ষমতার আদ্রিজার নেই। আভিয়ানের চুপ করে থাকা তার রাগকে আরও বাড়িয়ে দেয়,,, সে চিৎকার করে বলে,,, এখন কোন কথা বলছেন না কেন?? আমার প্রশ্নের উত্তর দিন?? আন্সার মি,,,,

আভিয়ান বাঁকা হেসে বলে, রাগলেও তোমাকে সেই লাগে প্রিয়। তোমার লাল লাল গালগুলোকে দেখলে মনে হয় একটা কামড় বসিয়ে দেই। তোমার মাঝে যেই নেশা আছে তা অন্য সব নেশাকে হার মানাবে, নেশাক্ত কন্ঠে কথাগুলো বলে আভিয়ান।

আভিয়ানের কথা শুনে ঘৃণায় আদ্রিজা মুখ ফিরিয়ে নেয়। রাগে আবারও চিল্লিয়ে বলে,, ছিঃ কতটা নিকৃষ্ট আপনি?? আমার ভাবতেই ঘৃণা হয় কোন দিন আপনার মতো মানুষকে ভালোবেসেছিলাম।

আদ্রিজার কথার আভিয়ান শান্ত স্বরে বলে, ঘৃণা করলেও তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। এই নিকৃষ্ট মানুষের সাথেই সারাজীবন তোমাকে কাটাতে হবে। নিজেকে প্রস্তুত করো বন্যা। কথায় কথায় যদি এতটা রাগ করো তবে কি করে হবে প্রিয়,,,,,

আদ্রিজা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,আপনার এই নোংরা মুখে আমার নাম নিবেন না। আপনার সাথে এক মুহূর্তও থাকবো না সারাজীবন তো অনেক দূরের কথা। আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন? আমি কি ক্ষতি করেছিলাম আপনার বলতে পারেন?? আপনাকে ভালোবাসাই আমার ভুল ছিল আর তার শাস্থি তো আমি পেয়েছি। এখন আবার আপনি আমার থেকে কি কেড়ে নিতে এসেছেন?? এখন আমি আপনাকে আর ভালোবাসি না। আমি সাফিনকে ভালোবাসি। আমার মনে আপনার জন্য কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই শুধু ঘৃণা ছাড়া। শুনেছেন আপনি,,,,

আদ্রিজার মুখে আবারও সাফিনের নাম শুনে আভিয়ানের রাগ উঠে গেলো৷ সে ক্রোধের দৃষ্টিতে আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বললো,আর একবার যদি সাফিনের নাম মুখে আনো তবে কিন্তু অনেক খারাপ হবে,,,

আদ্রিজা তাচ্ছিল্য করে বলে, এর থেকে আর কি খারাপ হওয়ার আছে।আমি একবার নয় হাজার বার বলবো,,, সাফিন, সাফিন, সাফিন দেখি আপনি কি করতে পারেন।
.
.
.
চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here