#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_১০
মেয়েটির কথা শুনে সে বুঝতে পারে তার নাম আদ্রিজা। সে কিছু না বলে এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে থাকে,,,,,
অন্যদিকে ইকরার সাথে কথা বলতে বলতে আদ্রিজা সামনের দিকে খেয়াল করে না। সে আভিয়ানের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নিলে আভিয়ান তাকে ধরে ফেলে।হঠাৎ এমন কিছু হবে তা আদ্রিজা বুঝতে পারে নি।সে ভয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। আদ্রিজাকে এভাবে ভয় পেতে দেখে আভিয়ান ঘোরের মাঝে চলে যায়। কাউকে চোখ বন্ধ অবস্থায় ভয় পেতে দেখেও যে এতটা সুন্দর লাগে তা যেন সে আদ্রিজাকে না দেখে বুঝতেই পারতো না। আদ্রিজা পিটপিট করে চোখ খোলতেই দেখে একটি ছেলে তাকে ধরে রেখেছে। সে দ্রুত ছেলেটির হাত ছাড়িয়ে বলা শুরু করে,,,, আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে স্পর্শ করার।আসলে আপনাদের মতো ছেলেদের স্বভাবই হচ্ছে কি করে মেয়েদের স্পর্শ করা যায় তার সুযোগ খোঁজা। আদ্রিজা আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই আভিয়ান তাকে থামিয়ে বলা শুরু করে,,,,
আপনার কি নিজেকে বিশ্ব সুন্দরী বলে মনে হয় যে আপনাকে ছোঁয়ার জন্য আমি সুযোগ খোঁজবো। আজকাল দেখছি কারো সাহায্য করাটাও ঠিক না। কই আমি আপনাকে পরা থেকে বাঁচিয়েছি আপনি আমাকে ধন্যবাদ দিবেন আর উল্টো আপনি আমাকে বাজে কথা বলছেন। আমাকে যা নয় তা বলছেন।আমারই ভুল হয়েছে আপনাকে পরতে দেওয়াই উচিত ছিল। আর কিছু না বলে আভিয়ান রাগে সেখান থেকে চলে যায়।
আদ্রিজা অবাক হয়ে ছেলেটির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
তুই কাজটা ঠিক করিস্ নি। দোষ তো তোরই ছিল। সামনের দিকে না তাকিয়েই হাঁটছিলি তাই ধাক্কা লেগে পরে যাচ্ছিলি, ভাগ্যিস্ ছেলেটি ধরলো তা না হলে তো আজ তোর কুমোরটা ভাঙতো।
ইকরার কথায় আদ্রিজা বুঝতে পারে তার কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি। সে ভাবে ছেলেটিকে সে সরি বলবে কিন্তু ততক্ষনে ছেলেটিকে সে আর দেখতে পায়নি।
সেই ঘটনার পরে এক সপ্তাহ আভিয়ান আর আদ্রিজার সামনে আসে নি। আর আদ্রিজাও বিষয়টা প্রায় ভুলে যায়।
আজ ইকরার জন্মদিন। ইকরা তার সব বন্ধুদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করে। আর যেহেতু আদ্রিজা তার বেস্ট ফ্রেন্ড তাকে তো আসতেই হবে।
রাত প্রায় ৮ টা বাজে,,,,,,
ভাইয়া আজ আমার ফ্রেন্ডের জন্মদিন। তার জন্য পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। তুই প্লিজ মা – বাবাকে বল যাতে আমাকে যেতে দেয়।
আয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,,, দেখ আদ্রিজা এত রাতে মা – বাবা কিছুতেই তোকে যেতে দিবে না। আর অনেক রাত হয়ে গেছে তোর যাওয়াও ঠিক হবে না। তুই ফোন করে বলে দে যেতে পারবি না।
আদ্রিজা মন খারাপ করে বলে,,, প্লিজ ভাইয়া। দেখ্ আমি কত সুন্দর করে রেডি হয়ে আছি। এখন যেতে না পারলে আমার মন খারাপ হয়ে যাবে। তুই তো আমার ভালো ভাইয়া। আমার জন্য এইটুকু করতে পারবি না।
হইছে আর পাম দিতে হবে না। বাইরে গিয়ে দাঁড়া আমিও রেডি হয়ে আসছি। তোকে তো আর একা যেতে দিতে পারি না।
আদ্রিজা তার ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে আমার সুইট ভাইয়া।
কিছুক্ষন পরে আয়ান রেডি হয়ে এসে তার মা – বাবা থেকে পারমিশন নিয়ে ইকরার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যায়।
পার্টিতে ঢুকতেই ইকরা রাগ করে বলে,,, এত লেট হলো কেন আসতে?জানিস্ শুধু তোর জন্য সেই কখন থেকে ওয়েট করছি। কোন প্রোগ্রামই শুরু হয়নি।
আদ্রিজা একটু মন খারাপ করে বলে,,, আর বলিস্ না বাড়িতে অনেক বুঝিয়ে আসতে হয়েছে, সাথে ভাইয়াও এসেছে।
ইকরা আদ্রিজার মাথায় একটা টুকা দিয়ে বলে তুই বোকাই রয়ে গেলি। সাথে ভাইয়া এসেছে আগে বলিস্ নি কেন??? তোর ভাইয়া কোথায়??
এই যে পিছনে।পরে আদ্রিজা তাকে আয়ানের কাছে নিয়ে যায়। আয়ান ইকরাকে প্রথম দেখেই মুগ্ধ হয়ে যায়। পিংক কালারের ওয়েস্টান ড্রেস পরে আছে। চুল গুলো ছেড়ে একপাশে ফেলে রেখেছে। চোখে গাড় করে কাজল দেওয়া। ধবধবে সাদা গায়ের রং৷ যে কেউ দেখলেই হয়তো প্রেমে পরে যাবে। আয়ানও তার ব্যতিক্রম নয়।
কেমন আছেন ভাইয়া??
মেয়েটির মুখে ভাইয়া শুনে আয়ান ভ্রু কুঁচকে ফেললো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,, ভালো। আপনাকে তো চিনলাম না???
আমিই আদ্রিজার ফ্রেন্ড। যার জন্মদিনে আপনি এসেছেন। আচ্ছা ভাইয়া আপনি ইনজয় করেন আমি আদ্রিজাকে নিয়ে যাচ্ছি। ইকরা আর কিছু না বলে আদ্রিজাকে নিজের সাথে নিয়ে গেলো। আয়ান এক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রথম দেখায় সে মেয়েটিকে তার ভালো লেগে গেছে।
চল্,, আজ তোকে আমার ভাইয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
আদ্রিজা অবাক হয়ে বলে। তোর ভাই আছে আগে বলিস্ নি তো।
তুই ও তো আগে বলিস্ নি যে তোর এত হ্যান্ডসাম একটা ভাই আছে,,,,
আদ্রিজা মজা করে বলে,,,, কেন? আমার ভাবি হওয়ার ইচ্ছে হয়েছে নাকি??? বলে এক চোখ টিপ দেয়,,,,
ইকরা লজ্জা পেয়ে বলে,,, বয়েই গেছে আমার তোর হনুমানের মতো ভাইয়ের বউ হতে।
আরে তুই এত লজ্জা পাচ্ছিস্ কেন???
ইকরা রাগ দেখিয়ে বলে,,,, ভালো হচ্ছে না কিন্তু। থাক তুই আমি যাই,,, বলে সে চলে যেতে নেয়।
আদ্রিজা তার হাত ধরে বলে,,, থাক আর কিছু বলবো না।
ইকরা কিছু না বলে আদ্রিজাকে তার ভাইয়ের কাছে নিয়ে যায়। তার ভাই ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিল। ইকরা তাকে পিছন থেকে ডাক দেওয়ায় সে কিছুটা বিরক্ত হয়ে পিছনে তাকায়। সে পিছনের দিকে তাকাতেই ইকরা বলে,,,,ভাইয়া এই আমার বেস্টু আদ্রিজা। আর আদ্রিজা এই হলো আমার ভাই সাফিন,,,,,,
সাফিন আদ্রিজার দিকে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে যায়। সে তার দিক থেকে চোখই ফিরাতে পারে না। কিছু বলার ভাষাই যেন হারিয়ে ফেলেছে,,,,,
আদ্রিজা ব্লু কালারের একটা লং গ্রাউন পরেছে। তাতে তার পা পর্যন্ত ঢাকা।তার সাথে কানে স্টোনের ইয়াররিং। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। আর চোখে গাড় করে কাজল দেওয়া। চুলগুলো ছাড়া,,, তবে হালকা কুঁকড়ানো। মুখে কোন মেকাপ নেই। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং। তাকে দেখেই সে মনে মনে বলে উঠলো,,,, সো হট।
আদ্রিজা সাফিনের দিকে তাকিয়ে বলে,,, আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া,,, কেমন আছেন???
সাফিনের কানে আদ্রিজার কোন কথাই পৌঁছায় নি৷ সে এক দৃষ্টিতে আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে আছে। সাফিনকে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিজার অস্বস্তি হতে লাগলো। সে অন্য দিকে ফিরে তাকালো।
ইকরা সাফিনকে এভাবে আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মজা করে বললো,,,,এভাবে যদি তুমি আমার ফ্রেন্ডের দিকে তাকিয়ে থাকো তবে তো তার নজর লেগে যাবে বলে মুচকি হাসে।
সাফিন এখন নিজের মাঝে নেই,,, সে মুচকি হেসে বলে,,,, আকাশের চাঁদ যদি মাটিতে নেমে আসে তবে তো সবাই এভাবেই তাকাবে তাতে আমার কি দোষ।
সাফিনের মুখে এমন কথা শুনে আদ্রিজা আরো বেশি অস্বস্তিতে পরে যায়। সে এদিক – সেদিক তাকাতে থাকে। ইকরা আদ্রিজার অবস্থা বুঝতে পেরে বলে,,, কিছু মনে করিস্ না। ভাইয়া এরকমই,,, মুখে কিছু আটকায় না।
সাফিন আদ্রিজার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,,, নাইস্ টু মিট ইউ মিস আদ্রিজা। আদ্রিজা কি করবে বুঝতে পারছে না। সে বাধ্য হয়ে সাফিনের সাথে হাত মিলায়। সাফিন অদ্ভুত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। আদ্রিজা কোন ভাবে সাফিনের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে, ইকরাকে বলে চল্ যাওয়া যাক। সে আর কিছু না বলে এক প্রকার সেখান থেকে পালিয়ে আসে। কেন জানি সাফিনের আচরণ তার কাছে ভালো লাগে নি৷
সাফিন আদ্রিজার অবস্থা দেখে বাঁকা হেসে বলে, আমাকে পাগল করে এখন পালিয়ে গেলে হবে বেবি। তোমাকে তো এখন আমার চাই। এট এনি কস্ট,,,,,
…
..
.
চলবে,,,,