গোধূলির বেলায় তুমি’পর্ব-৯

0
512

#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_৯

আব্বু মাকে ফোন দিলে আমি মার সাথে কথা বলি। আমার আওয়াজ শুনেই মা কান্না করে। কিছুক্ষন কথা বলে পরে বললাম ,, তুমি নাকি ঠিক মতো খাচ্ছো না?? আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েছো?? এমন করলে কিন্তু আমি আর আসবো না।

আমার কথা শুনে মা আরোও কান্না করলো। আমি মাকে থামিয়ে বললাম,,, আমি ঠিক আছি। তোমরা আমার চিন্তা করো না। আমি খুব দ্রুতই তোমাদের কাছে ফিরে আসবো। এখন ঠিক মতো নিজেদের যত্ন নিবে। আর একদম কান্নাকাটি করবে না। আরোও কিছুক্ষন কথা বলে পরে ফোন রেখে দিলাম।

কিছুক্ষন পরে পিছনে তাকিয়ে দেখি আভিয়ান আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে আমি ফোন লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে তাকে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে চাই। কিন্তু সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,,, ফোনটা দাও একটু দরকার আছে আর চিন্তা করো না কালকেই আমি তোমাকে তোমার পরিবারের কাছে নিয়ে যাবো।

আভিয়ানের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে বলে,,, কি হলো। ফোনটা একটু দাও??

আমি কিছু না বলে ফোনটা দিয়ে বেলকনি থেকে রুমে চলে আসি।

আভিয়ান অনেকক্ষন আগেই ঘুম থেকে উঠে যায়। আদ্রিজাকে ফোনে কথা বলতে দেখে সে আর কিছু বলে নি। আদ্রিজাকে তার বাবার সাথে আয়ানের বিষয়ে কথা বলার সময় তার খেয়াল হয় আয়ান এখনো তার লোকের কাছে বন্দী। এতকিছুর মধ্যে সে এই বিষয়টার কথা ভুলে গেছিল। তাই এখন ফোন করে তার লোকদের বলে আয়ানকে ছেড়ে দিতে। তার কথা মতো তারা আয়ানকে ছেড়ে দেয়।

আভিয়ান কথা বলা শেষ করে পিছনে তাকাতেই দেখে আদ্রিজা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিচে চলে যায়। কাল থেকে না খাওয়া। সে গিয়ে আগে খেয়ে নেয়।

,,,,,,,,,,,,,

রাত প্রায় ১২ টা বাজে। কারো গোঙানির আওয়াজে আদ্রিজার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ঘুম চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে আভিয়ান থরথর করে কাঁপছে। আভিয়ানকে এই অবস্থায় দেখে তার খারাপ লাগছে। সে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থেকে পরে তার সামনে যায়। সে ইতস্তত করে আভিয়ানের কপালে হাত দিয়ে থমকে যায়। পরে তার গলায় হাত দিয়ে বুঝতে পারে তার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে তার মাথায় জলপট্টি দেয়। মাথায় ঠান্ডা কিছু অনুভব হওয়ার আভিয়ান পিটপিট করে চোখ খোলে। সে জ্বরের ঘোরে বলতে থাকে,,,, আমি জানি তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসো। বিশ্বাস করো আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি চরিত্রহীন নই। আমি তোমাকে ঠকাই নি। আমি তোমার এই ঘৃণা আর মেনে নিতে পারছি না। তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি। প্লিজ তুমি আমাকে একটা সুযোগ দাও। আমাকে কয়েকটা দিন সময় দাও আমি সব কিছু ঠিক করে দিবো।

আদ্রিজা চুপ করে আভিয়ানের সব কথা শুনে যাচ্ছে। সে কিছুই বলছে না।এক দৃষ্টিতে শুধু তার দিকে তাকিয়ে আছে।

আদ্রিজাকে এভাবে তাকাতে দেখে আভিয়ান তার হাত ধরে এক টান দেয়। হঠাৎ করে আভিয়ান এমন কিছু করবে তা আদ্রিজা বুঝতে পারে নি। সে নিজেকে সামলাতে না পেরে আভিয়ানের বুকের উপরে গিয়ে পরে। আভিয়ানের শরীরের উষ্ণতায় সে সব কিছু ভুলে যায়। তার মনের ভিতরে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে। অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। সে চোখ বুজে তা অনুভব করছে। আদ্রিজার চুপ করে থাকায় আভিয়ান আরো ঘোরের মাঝে চলে যায়। সে আদ্রিজার চুলের মাঝে নিজের মুখ ঢুবিয়ে দেয়। মুহুর্তেই একরাশ লজ্জা ঘেরে ধরে আদ্রিজাকে। তার হার্ট দ্রুত বিট করতে থাকে। সে ভালো করেই বুঝতে পারছে আভিয়ান তাকে নিজের করে চাইছে। সেও চাইছে সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করতে কিন্তু আভিয়ানের করা বিশ্বাস ঘাটকতার কথা মনে হতেই সে এক ঝটকায় তার থেকে দূরে সরে আসে।

এতক্ষনে আভিয়ানের খেয়াল হয় সে কি করতে যাচ্ছিল। এতে করে তার নিজের উপরই রাগ উঠে যায়। কি করে এমনটা করতে পারলো সে?? এখন তো আদ্রিজা আরোও বেশি ঘৃণা করবে তাকে। সে অনুনয়ের স্বরে বলে,,,, বন্যা আমাকে ক্ষমা করে দাও। আসলে আমি এমটা করতে চাই নি। কি করে যে নিজের উপর থেকে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছি বুঝতে পারছি না। তুমি প্লিজ,,,,

আভিয়ান আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদ্রিজা তাকে থামিয়ে বলা শুরু করে,,, আপনি অসুস্থ ছিলেন তাই মনুষ্যত্বের জন্য শুধু আপনার একটু সেবা করেছি। আমি আপনার মতো অমানুষ নই যে একটা মানুষকে নিজের সামনে কষ্ট পেতে দেখে চুপ করে থাকবো। কিন্তু এতে আপনি যদি এটা ভেবে থাকেন যে সব কিছু ভুলে আমি আপনাকে মেনে নিয়েছি তবে ভুল ভাবছেন৷ একটা মানুষ যদি অসুস্থ থাকে তবে এটা আমার দ্বায়িত্ব তাকে সুস্থ করা। ভুলেও কখনো আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।আপনার ছোঁয়ায় আমার সারা শরীর ঘৃণায় রি-রি করছে। আই জাস্ট হেইট ইউ,,,,,আর কিছু না বলে আদ্রিজা কাঁদতে কাঁদতে বেলকনিতে চলে যায়।

আদ্রিজার কথায় আভিয়ানের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে। সে আগের কথা ভাবতে থাকে,,,,,

অতীত,,,,,,

আদ্রিজাকে দেখার পর ঐ রাতে আর আভিয়ানের ঘুম হয় না। সারাটা রাত শুধু ছটছট করতে থাকে।

পরের দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে বাহিরে চলে আসে। খাবারের টেবিলে বসে তার মামনিকে বলে খাবার দিতে। ছেলের কন্ঠ শুনে সে অবাক হয়ে যায়। যে ছেলের ৯ টার আগে ঘুমই ভাঙে না, সেই ছেলে আটটা সময় রেডি হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসে আছে। তার মামনি এসে বলে,,, এত তাড়াহুড়ো করছিস্ কেন?? আর এত সকাল সকাল কোথায় যাবি??

সে চেয়ে দেখে তার মামনি সন্দেহের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

আরে মামনি এভাবে তাকিয়ে আছো মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি উঠে আমি কোন অপরাধ করে ফেলেছি।দ্রুত খাবার দাও তো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

তার মামনি আর কিছু না বলে তাকে খাবার দিয়ে যায়। সে দ্রুত খেয়ে কলেজ চলে যায়। কলেজ গ্রেটের সামনে দাঁড়িয়ে সে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করার পরেও মেয়েটি আসছে না দেখে তার মন খারাপ হয়ে যায়। সে চলে আসতে নেয় এমন সময় একটি কণ্ঠস্বর শুনে সে পিছনে ফিরে তাকায়।

মেয়েটি একটু রেগে রেগে কারো সাথে কথা বলছে,,,

ইকরা আজ তোর জন্য দেরি হলো। এত ঘুম কিভাবে আসে তোর। এরপরে থেকে যদি আরোও দেরি করিস্ তবে তোকে রেখে আমি চলে আসবো,,,,

সরি আদ্রিজা। রাতে ঘুম হয়নি তাই দেরি হয়ে গেছে। আর হবে না।

মেয়েটির কথা শুনে সে বুঝতে পারে তার নাম আদ্রিজা। সে কিছু না বলে এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে থাকে,,,,,


..
.
চলবে,,,,

( আমি অসুস্থ ছিলাম তাই গল্পটি দিতে দেরি হলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here