গোধূলির বেলায় তুমি’পর্ব-১৭

0
443

#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_১৭
.
.
আভিয়ান দাঁতে দাঁত চেঁপে গম্ভীর স্বরে বলে,,, তুই আমার কাছের মানুষদের সাথে যা করেছিস্ আজ থেকে তার জন্য তুই ভয়ঙ্কর শাস্তি পাবি। তুই বারবার মৃত্যু ভিক্ষা চাইবি কিন্তু মরতে পারবি না। তিলে তিলে শেষ করবো আমি তোকে। এতদিনের জমিয়ে রাখা রাগ, ক্ষোভ, প্রতিশোধের আগুন তোকে তীব্র যন্ত্রণা দিয়ে মিটাবো।তুই প্রস্তুত হো,,,,,

এই বলে আভিয়ান বাঁকা হেসে তার লোককে হাতের ইশারায় কিছু নিয়ে আসতে বলে,,,,,,

কিছুক্ষন পরে লোকটি কড়াই ভর্তি গরম তেল নিয়ে আসে।

আভিয়ানের এমন হিংস্র রুপ সাফিন আগে কখনো দেখে নি। ভয়ে তার সারা শরীর কাঁপছে। মুখ দিয়ে তার কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না।আভিয়ানের এই রুপ দেখে সে অনেকটা ঘাবড়ে গেলো। আভিয়ান বাঁকা হেসে সাফিনের সামনে আসে৷ তার দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধীরে ধীরে তার হাত দুইটি কড়াইয়ের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। মুহুর্তেই পুরো হাত পুড়ে ফুসকা উঠে গেলো। সাফিন আর ঠিক থাকতে পারলো না।যন্ত্রণায় সে জোরে আর্তনাদ করে উঠে সাথে সাথেই জ্ঞান হারালো।

সাফিনকে এই অবস্থায় দেখে আভিয়ান তৃপ্তি পাচ্ছে। তার ঠোঁটের কোনায় হাসি ফোঁটে উঠে। সে মনে মনে বলে,,, এখনো তো কিছুই করি নি তাতেই এই অবস্থা এর পরে যা হবে তা কি করে সহ্য করবি। তোকে তীলে তীলে শেষ করবো আমি।

অজ্ঞান হতেই এক বালতি ঠান্ডা পানি সাফিনের গায়ে দিয়ে দিলো। সে ধরফরিয়ে চোখ খোলে আবারও জোরে চিৎকার করে উঠলো। তার চোখ মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। যন্ত্রণায় তার চোখ দিয়ে পানি পরছে।

আভিয়ান শান্ত স্বরে বললো,,, কি হলো?? এত জোরে জোরে চিৎকার করছিস্ কেন??

সাফিন অনুনয়ের স্বরে বললো আমাকে প্লিজ ছেড়ে দে্।আমার হাত ভীষণ জ্বালা করছে। আমি আর পারছি না সহ্য করতে।

সাফিনের কথাতে আভিয়ানের কোন হেলদুল নেই। সে শান্ত স্বরেই বললো,,,, এই সামান্যতেই জ্বলছে। আমি তো এখনো কিছু করিই নি।

সাফিন কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,,, আমাকে ক্ষমা করে দে্ প্লিজ। আমি মানছি আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আমার সব অপরাধ স্বীকার করবো। আমাকে পুলিশের কাছে দিয়ে দে্।

আভিয়ান বাঁকা হেসে বলে তোর শাস্তি পুলিশ নয় আমি নিজে দিবো। তোকে আমি মারবো না কিন্তু তোর বেঁচে থাকাই মৃত্যুর থেকে ভয়ানক হবে। প্রতিনিয়ত তুই মৃত্যুর জন্য ছটছট করবি। আভিয়ান পরে তার লোককে ডাক দিয়ে বলে,,,, আজ থেকে দুই দিন একে এক ফোঁটা পানিও দিবি না। খেয়াল রাখবি যাতে ঘুমাতে না পারে।

জ্বি স্যার,,,,

আভিয়ান আর কিছু না বলে চলে যায়।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

রাত প্রায় ২ টা বাজে। আভিয়ান রুমে ঢুকে দেখে আদ্রিজা বিছানার এক কোনায় শুয়ে আছে। সে আলমারি থেকে কাপড় এনে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে। ফ্রেস হয়ে এসে ড্রিম লাইট অন করে আদ্রিজাকে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে শুয়ে পরে। ঘুমের ঘোরে আদ্রিজা আভিয়ানকে আরোও জোরে জড়িয়ে ধরে। আভিয়ান মুচকি হেসে আদ্রিজার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। আদ্রিজাকে নিজের বুকের মাঝে নিয়েই সে ঘুমিয়ে যায়।

সকালে ফজরের আজানের শব্দ কানে আসতেই আদ্রিজা পিটপিট করে চোখ খোলে তাকায়। নিজেকে আভিয়ানের এত কাছে দেখে সে অবাক হয়ে যায়। রাতে কখন আভিয়ান বাড়িতে আসে আদ্রিজা বুঝতে পারে না। সে নিজেকে আভিয়ানের থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে তার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে কতটা নিষ্পাপ লাগছে। সে আলটু করে আভিয়ানের গালে হাত ছোঁয়ায়। নিজেকে আভিয়ানের এত কাছে দেখে তার রাগ হচ্ছে না বরং অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে। সে বুঝতে পারছে না তার এমন কেন লাগছে। তার তো রাগ হওয়ার কথা, তা না হয়ে সে মনে মনে লজ্জা পাচ্ছে।
আদ্রিজা আর কিছু না ভেবে আবারও আভিয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরে। আদ্রিজার এমন ছোটাছুটিতে আভিয়ান একটু নড়ে চড়ে উঠে অন্য পাশে ফিরে আবারও ঘুমিয়ে পরে। আদ্রিজা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। সে উঠে ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ পড়া শেষ হলে বিছানায় তাকিয়ে দেখে আভিয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। সে জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে আভিয়ানকে কয়েকবার ডাক দেয়। আভিয়ান একবার চোখ খোলে আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বলে,, প্লিজ ঘুমাতে দাও। কালকে অনেক রাত করে ঘুমিয়েছি।বলে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেলে৷ আদ্রিজা আভিয়ানের মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই সে ধরফরিয়ে উঠে বলে,,,, কি হয়েছে? তুমি ঠিক আছো তো। সকাল সকাল এমন করছো কেন?

আদ্রিজা বিরক্ত হয়ে বলে,,,, যান নামাজ পড়ে আসেন। এখন থেকে সকালে ঘুমাতে পারবেন না।

আদ্রিজার কথায় আভিয়ান মনে মনে অনেক খুশি হয়। সে তো এমন একজনকেই চেয়েছিল। আর কিছু না বলে সে ফ্রেস হয়ে মসজিদে চলে যায়। আদ্রিজা গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ায়। এখনো ঘোরে আলো ফোঁটে নি। চারিদিকে আবছা আলো আর অন্ধকার যেন খেলা করছে। সে মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে। সকালের হালকা বাতাশ। পাখির কিচিরমিচির শব্দে তার মনটা ভালো হয়ে গেছে।

আভিয়ান নামাজ পড়ে এসে রুমে ঢুকে। আদ্রিজাকে কোথায়ও দেখতে না পেয়ে সে বেলকনিতে চলে যায়। সে নিশ্চুপ হয়ে আদ্রিজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। মাঝে মাঝে বাতাশে আদ্রিজার চুল গুলো উড়ে আভিয়ানের মুখে পরছে। এতে আভিয়ান বিরক্ত হওয়ার বদলে আরোও মুগ্ধ হচ্ছে । সে আদ্রিজাকে দেখায় ব্যস্ত আর আদ্রিজা সেতো প্রকৃতির মাঝে বিভোর হয়ে আছে। তার পাশে যে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। এক ধ্যানে তাকে দেখছে সেদিকে তার কোন খেয়ালই নেই।
আভিয়ান আদ্রিজাকে একটান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তার মুখের উপর পরে থাকা চুলগুলো আস্তে করে কানের পিছে গুজে দেয়।পরে হালকা করে তার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। হঠাৎ করে কি থেকে কি হলো সব আদ্রিজার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আদ্রিজা কিছু বলার আগেই আভিয়ান দ্রুত বিছানায় চলে এসে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরে।

আদ্রিজা অবাক হয়ে এক দৃষ্টিতে আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কাছে আভিয়ানকে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় মানুষ বলে মনে হচ্ছে । তার সাথে এইসব কেন হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না৷ তার মনের ভিতরে হাজারো প্রশ্ন কিন্তু তার কোনটার উত্তরই তার কাছে নেই।

আদ্রিজা রুমে ঢুকতেই আভিয়ান বলে ,, আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে এসো। মাথাটা খুব ধরেছে।

আদ্রিজা কিছু বলতে যেয়েও থেমে যায়। সে গিয়ে আভিয়ানের জন্য কফি নিয়ে এসে তাকে ডাক দিয়ে বলে,, এই ধরেন আপনার কফি। আভিয়ান অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকায়।

আভিয়ানের তাকানো দেখেই আদ্রিজা বুঝতে পারে সে অবাক হচ্ছে। তাই সে বলে,,, এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি শুধু আমার দ্বায়িত্ব পালন করছি।

আভিয়ান মুচকি হেসে বলে,,, তুমি তো এই বিয়ে মানো না তবে কিসের দ্বায়িত্ব তোমার? নাকি এই বিয়েটা তুমি মেনে নিয়েছো? আমাকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছো?

আদ্রিজা কটাক্ষ করে বলে,,, কিসের স্বামী? যার আগের একটা বউ আছে সাথে বাচ্চাও আছে এমন একজন মানুষকে আমি কখনোই স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না।খুব তাড়াতাড়িই আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যাবো। আর কিছু না বলে আভিয়ানের হাতে কফির কাপটা ধরিয়ে দিয়ে সে বাহিরে চলে যায়।

আভিয়ান কফিতে এক চুমুক দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,, আর বেশি দিন নেই। সত্যিটা তোমার নিজের কাছেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন তুমি বুঝতে পারবে যা হয়েছে তাতে আমার কোন দোষ ছিল না। আমি পরিস্থিতির শিকার ছিলাম,,,,,,,,,

..
.
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here