#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_২১
.
.
আমার কথা শুনে অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করলো। কান্না করতে করতে তার ছেঁচকি উঠে গেছে। আমি তাকে শান্তনা দিয়ে বললাম,,, কান্না থামা কি হয়েছে আমাকে খোলে বল্? আমি সব ঠিক করে দিবো। তুই কোন চিন্তা করিস্ না। নিজের ভাইয়ের উপর একটু বিশ্বাস রাখ্,,,,,,
অবন্তী কান্না করতে করতে বলে,,,, আজ থেকে ছয়মাস আগে সাফিনের সাথে আমার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে ওর কথায়, খেয়াল করায় আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করি। সে আমাকে বলতো আমিই তার জীবনের সব৷ আমাকে ছাড়া সে বেঁচে থাকতে পারবে না। তার কথায় আলাদা একটা যাদু ছিল যা আমাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করতো। তার কথায় আমি মরতে পর্যন্ত প্রস্তুত ছিলাম। আমাদের সম্পর্ক দিন দিন গভীর থেকে আরোও গভীর হচ্ছিল। এক সময় আমি নিজের সবটা দিয়ে ওকে ভালোবাসতে শুরু করি। তাকে বিশ্বাস করে নিজের সবটা তাকে উজার করে দেই। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল৷ আমি তাকে চিনতে পারি নি।এটা বুঝতে পারি নি সে আমার সাথে ছলনা করছে। আমি এখন তার সন্তানের মা হতে চলেছি আর সে এখন আমাকে বলছে আমাকে সে কোন দিনই ভালোবাসে নি। আমার সাথে সে শুধু ভালোবাসার নাটক করেছে।সে কোন দিন এই সন্তানের স্বীকৃতি দিবে না। এখন আমি কি করবো বলো ভাইয়া? আমি বুঝতে পারি নি সে আমাকে নিয়ে এভাবে খেলবে??? আমাকে মাঝ পথে ফেলে চলে যাবে।আমাকে এভাবে ধোকা দিবে,,,,
অবন্তীর কথা শুনে আমার চোখ – মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো। আমি রাগে তার গালে একটা চর মেরে তাকে আবার জড়িয়ে ধরলাম। সে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কান্না করে দিল। কিছুক্ষন তাকে জড়িয়ে ধরে আমি তাকে ভরসা দিয়ে বললাম তুই থাক আমি সাফিনের সাথে কথা বলবো।সবটা আমি ঠিক করবো। তুই কোন চিন্তা করিস্ না। তোর ভাই তোর কোন ক্ষতি হতে দিবে না,,,,,
আমি আর কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে দ্রুত ড্রাইভ করে সাফিনের বাড়ি চলে যাই। কলিং বেল বাজাতেই সাফিন দরজা খোলে দেয়। আমাকে দেখেই শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,,,, আমি জানতাম তুই আসবি। জানিস্ সেই কখন থেকে শুধু তোর জন্য অপেক্ষা করে আছি? সবটা তো নিশ্চয়ই জানিস্ তুই। অবন্তী যা বলেছে তার সব সত্যি। তুই আমার কাছের মানুষকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিস্ আর আমি তোর সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় আঘাত করে তাকে আবার নিজের করে নিবো। আমি শুধু তোর বোনের সাথে ভালোবাসার নাটক করেছি,,,এটাই।এটুকু বলে সাফিন একটু বাঁকা হাসে পরে আবারও বলে,,,, এখন বল তুই কি বলতে চাস্,,,,,,
সাফিনের কথা গুলো শুনে আমার রাগ আরোও বেড়ে যায় কিন্তু আমি নিজেকে সামলিয়ে নেই। পরে তার দিকে তাকিয়ে অনুনয়ের স্বরে বলি,,,, অবন্তী তোকে অনেক ভালোবাসে। তুই তার সাথে এমনটা কেন করছিস্? তার গর্ভে যে আছে সে তোর তোরই অংশ। তোরই সন্তান। এখনো কিছু নষ্ট হয়নি। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই বিয়ে করে নে্ অবন্তীকে। কারো ভালোবাসা নিয়ে খেলা পৃথিবীর সবচেয়ে জগন্য পাপ।আমি অনুরোধ করছি তোকে প্লিজ তুই এমনটা করিস্ না,,,,,
আমার কথা শুনে সাফিন জোরে জোরে হাসতে লাগলো,,,,, পরে আমার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,,,, তোর কি মনে হয় এমন মেয়েকে আমি বিয়ে করবো যে বিয়ের আগেই নিজের সবটা দিয়ে দেয়। এমন চরিত্রহীনা মেয়েকে কখনোই আমি বিয়ে করবো না। আর কিসের সন্তান বলছিস্। ওটা যে আমার সন্তান তার কি প্রমান আছে? অন্য কারো সন্তানকে আমার নামে দিয়ে দিচ্ছিস্,,,,,
অবন্তী শুধু আমার তুরুপের দাস্,,,,
যদিও আমার প্রচুর রাগ হচ্ছিল তবুও যথা সম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে বলি,,,,, তুই কেন এমন করলি? কি চাস্ তুই?
সাফিন বাঁকা হেসে বলে তোর বোন থেকে তো তুই আরো বেশি বোকা দেখছি। এখনো বুঝিস্ নি আমি কি চাই? আমি আদ্রিজাকে ভালোবাসি আর তাকে আমি নিজের করে চাই। তা যে কোন ভাবে হউক। আদ্রিজাকে আমার চাই-ই চাই। তার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।এটা তো কিছুই না। আদ্রিজাকে পাওয়ার জন্য আমার যদি আরো জগন্য কিছু করতে হয় আমি তাও করবো। আমি তো এখন শুধু আদ্রিজাকে পাওয়ার জন্যই আমি তোর বোনকে ব্যবহার করেছি।এটা আর তেমন কি???
সাফিনের কথা গুলো শুনে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। তার কর্লার ধরে বললাম,,, তুই মানুষ না জানোয়ার। এমন কাজ তুই কি করে করতে পারলি। তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো,,,,
সাফিন আমার হাত থেকে শার্টের কর্লার ছাড়িয়ে বলে,,, ওয়েট, ওয়েট। আমাকে মারার আগে এটা দেখে নে্। আমি মরে গেলে এই ভিডিও সবার কাছে চলে যাবে।তোর বোন কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবে না। আগে ভালো করে দেখে নে্,পরে ভেবে দেখ্ কি করবি??
আমি ব্যস্ত হয়ে সাফিনের হাত থেকে ফোন নেই। ভিডিও আমি একটু দেখে আমি আর দেখতে পারি নি। আমার হাত – পা থরথর করে কাঁপতে লাগলো। আমার হাত থেকে ফোন পরে গেলো। আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কথা বলার ভাষাই যেন হারিয়ে ফেলছিলাম কয়েক মুহূর্তের জন্য। এটা দেখার পরে আমার রাগ বহু গুণে বেড়ে যায়। আমি সাফিনকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকি আর বলি,,,, তোর মতো জানোয়ারের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই৷ আজকে তোকে আমি মেরে ফেলবো। তোর মতো নিকৃষ্ট মানুষের এই পৃথিবীর আলো দেখার অধিকার নেই। তুই হলি দোযখের কীট। তোকে মেরে আমি সেখানে পাঠাবো,,,,,, চিৎকারের শব্দ শুনে গার্ড এসে আমাকে ছাড়িয়ে নেয়।
সাফিন নিজেকে একটু ঠিক করে সোফার উপর পায়ে পা তুলে বলে,,,, এটা তুই অনেক বড় ভুল করলি। আবার এমন ভুল করলে তোরে বোনের সম্মান আর রক্ষা করতে পারবি না৷ তখন কিন্তু আমাকে কোন দোষ দিতে পারবি না৷ হি হি হি,,,,,,,
আমি গম্ভীর স্বরে বলি,,,, তুই কি চাস্,,,,
আমার কথায় সাফিন বাঁকা হেসে বলে,,, এখনো বুঝলি না আমি কি চাই?
হেয়ালি না করে ক্লিয়ার করে বল্ তুই কি চাস্,,,,
সাফিন শয়তানি হেসে বলে,,,, আমি চাই তুই তোর বিয়েটা ভেঙে দে্। আমি যেমনটা বলবো তোকে সেমনটা করতে হবে। ভুলেও কোন চালাকি করা যাবে না। তবে আমি কি করবো তা তো ভালো করেই বুঝতে পারছিস্,,,,,
এমন করে তোর লাভ কি???
এমনটা করলে আদ্রিজা তোকে ঘৃণা করবে। ওই সময় সে অনেক ভেঙে পরবে।তখন আমি তার পাশে দাঁড়াবো। তোকে ভুলিয়ে দিবো আমি। সে আমাকে মন থেকে মেনে নিবে।ভালোবাসবে আমাকে,,,,,
তুই ভাবছিস্ আমি এমন একটা জগন্য নাটক করবো??
আমার কথায় সাফিন তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,,,তুই এটা করতে বাধ্য। এটা ছাড়া যে তোর হাতে আর কোন উপায় নেই। আমাকে যদি তুই এখন মেরেও ফেলিস্ তবুও নিজের বোনের সম্মান রক্ষা করতে পারবি না।এখন তুই ভেবে দেখ্ আদ্রিজা তোর কাছে বেশি ইমপোর্টেন্ট না তোর বোনের সম্মান। তাড়াতাড়ি ভেবে বল্? আমার হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই। এখন সব ডিসিশন তোর। আমি তোকে জোর করবো না নাটকটা করার জন্য। কিন্তু এটা না করার পরিণাম হবে তোর আদরের বোনের সম্মান নষ্ট হওয়া,,,,,হি হি হি,,,,,
আমি আর কিছু ভাবতে পারি নি।রাগে কটমট করে বলি,,, বল আমাকে কি করতে হবে।
আমার কথায় সাফিন হেসে বলে,,,, এই না হলে ভাইয়ের মতো ভাই। পরে সাফিন আমাকে সব বুঝিয়ে বলে। আমিও রাজি হয়ে যাই।
,,,,,,,
আভিয়ান আর নিজেকে সামলাতে পারে না। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। সে আদ্রিজার দিকে অশ্রু সিক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,,,, আমি কি করতাম বলো? এটা করা ছাড়া যে তখন আমার হাতে কোন উপায় ছিল না। কি করে নিজের বোনের সম্মান নষ্ট হতে দিতাম বলো?
…..
..
.
চলবে,,,,