গোধূলির বেলায় তুমি’পর্ব-২৩

0
884

#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_২৩
.
.
প্রায় একমাস আগে আমার আবারও এক্সিডেন্ট হতে নেই। সময় মতো ব্রেক করার ফলে তেমন আঘাত পাই নি। মাথায় সামান্য আঘাত পাই। মাথায় আঘাত পাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে আমার চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হতে শুরু করে। আমি জ্ঞান হারাই। কয়েকজন মিলে আমাকে হসপিটালের নিয়ে যায়। জ্ঞান ফিরার পরে আমার আগের সব কথা মনে পরে যায়। আগের সব কথা মনে পরতেই রাগে আমার সারা শরীর রি রি করা শুরু করে। নিজের বাবা আর বোনের মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। সারা শরীরে আমার কাঁটা দিয়ে উঠে। তখন মনে হচ্ছিল সাফিনকে নিজের হাতে শেষ করে দেই। এমন ভয়ংকর মৃত্যু দেই তাকে যাতে দ্বিতীয় বার কেউ এই ভুল করার আগে হাজার বার ভাবে। কিন্তু আমি এইবার আর কোন তাড়াহুড়ো করতে চাই নি। কোন ভুল আমি করতে চাই নি। সব কিছুর জন্য পরিকল্পনা করতে থাকি। সব কিছুর জন্য সঠিক সময়ে অপেক্ষা করতে থাকি।

জ্ঞান ফিরার পরে আমি তোমাকে সব কিছু জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছিল। তুমি সাফিনকে বিশ্বাস করে ফেলছিলে।সাফিন তার কাজে সফল হয়ে গেছিল। তোমাদের বিয়েও ঠিক হয়ে গেছিল। আমি তখন বুঝতে পারি নি কি করবো। কি করে তোমাকে আমি আবার নিজের কাছে ফিরিয়ে আনবো? হাতে সময়ও তেমন ছিল না তোমাকে সব সত্যিটা জানানোর মতো আর তাছাড়া আমার মুখের কথা তুমি বিশ্বাস করতে না। তুমি প্রমান চাইতে কিন্তু তখন আমার হাতে কোন প্রমান ছিল না। তাই বাধ্য হয়েছিলাম তোমাকে কিডন্যাপ করতে। তোমাকে জোর করে বিয়ে করতে। আমি নিরুপায় ছিলাম তখন। এছাড়া যে আমার কোন উপায়ও ছিল না। বলো কি করে তোমাকে এমন একটা অমানুষের সাথে বিয়ে করতে দিতাম।আমার বোনের জীবন নষ্ট হয়েছে সেখানে তোমার জীবনটা আমি কি করে নষ্ট করতে দিতাম বলো?

আভিয়ান একটু থামে। তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ছেলেরা সহজে কাঁদে না। শত কষ্টের মাঝেও তারা নিজেদের ঠিক রাখতে পারে। সবার কাছে নিজেকে কঠিন করে রাখতে পারে।কিন্তু আজ আভিয়ান নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারছে না। পারছে না নিজের অনুভূতিকে দমিয়ে রাখতে।এত দিনের জমিয়ে রাখা কষ্টটা আজ আবারও মনে হয়ে তার খারাপ লাগা বেড়ে গেছে।

সে আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে অভিমানী স্বরে বলে,,,আচ্ছা তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে তবে আমাকে কেন একটু বিশ্বাস করতে পারলে না? কেন এতদিন আমার সাথে থেকেও আমাকে একটু চিনতে পারলে না? আমার সাথে এতদিন থেকেও তুমি কি করে ভাবতে পারলে আমি এমন কোন জগন্য কাজ করতে পারি। কি করে ভাবলে আমি তোমাকে ঠকাতে পারি। তোমার কি একবারের জন্যও মনে হয় নি আভিয়ান এমন না। সে কখনো আমার সাথে এমনটা করতে পারে না।তুমি যদি তখন আমাকে একটু বিশ্বাস করতে তবে হয়তো এমনটা হতো না। আভিয়ানের চোখ- মুখে হতাশা ঘিরে রেখেছে। সে আদ্রিজার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। তার চোখ থেকে এখনো অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে,,,,,,

আভিয়ানের কথা গুলো শুনে আদ্রিজা অনুশোচনার আগুনে জ্বলছে।তার খুব খারাপ লাগছে। আভিয়ান এতটা কষ্ট পেয়েছে শুনে সেও অনেক কষ্ট পাচ্ছে। নিজের ভালোবাসার মানুষের এমন বিধস্ত অবস্থা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তার চোখ দিয়েও অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। সে নিজের চোখের পানি মুছে আভিয়ানের চোখের পানি মুছে দেয়। পরে অনুনয়ের স্বরে বলে,,, তোমার অভিযোগ গুলো হয়তো ঠিক কিন্তু আমিই বা কি করতাম। পরিস্থিতির হাতে আমিও যে নিরুপাই ছিলাম। কোন ঠিক কোনটা ভুল আমার মাথায় তা আসছিল না। নিজেকে কেমন যেন পাগল পাগল মনে হচ্ছিল তখন।

সে একটু থেমে আবারও বলে,,,, আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আপনার যখন আমাকে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল তখন আমি তখন আপনার পাশে থাকতে পারি নি।তখন ভুল বুঝে আপনার থেকে দূরে সরে থেকেছি। কিন্তু এমন আর কখনো হবে না। জীবনে যত ঝড়ই আসুক না কেন আমি সব সময় আপনার পাশে থাকবো। আপনার ভালো- মন্দ সব কিছুকেই আমি ভালোবেসে নিজের করে নিবো। ভালোবাসা মানে এই নয় যে শুধু তার ভালো দিক গুলো বা তার সুখের সময় তার পাশে থাকা, ভালোবাসা মানে নিজের সবটা দিয়ে তার ভালোবাসার মানুষকে আগলে রাখা।তার ভালো-মন্দ সব কিছুই নিজের করে নেওয়া। আমি কথা দিচ্ছি,,, আপনাকে আর কখনো ভুল বুঝবো না। কখনো আপনাকে একা ছেড়ে যাবো না। ছায়ার মতোন আপনার পাশে থাকবো। অনেক ভালোবাসি আপনাকে। সারাজীবন আপনাকে এভাবেই ভালোবাসতে চাই। দিবেন কি আমাকে সেই অধিকার?

আদ্রিজার কথা গুলো শুনে আভিয়ানের চোখে পানি ছলছল করছে। খুশিতে তার মন ভরে গেছে। এটাই তো চেয়েছে সে। আজ তার চেয়ে সুখী মনে হয় আর কেউ নেই।সে এক দৃষ্টিতে আদ্রিজার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,

আভিয়ানকে চুপ করে থাকতে দেখে সে আবারও বলে,,, চুপ করে আছেন কেন? কিছু বলেন,,,,,

সে আদ্রিজাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,আমাকে ভালোবাসার অধিকার শুধুই তোমার। তোমাকে সারাজীবন এই আমাকেই সহ্য করতে হবে। একবার তুমি আমার থেকে দূরে সরে গেছিলে তখন আমার ঠিক কি অবস্থা হয়েছিল তা আমিই জানি। তখন অনেক কষ্টে আমি নিজেকে সামলিয়েছি। এবার এমন হলে আমি পারবো না বাঁচতে। তুমি যেতে চাইলেও আমি তোমাকে আটকে রাখবো।নিজের সুখের জন্য না হয় একটু স্বার্থপর হলাম তাতে ক্ষতির কিছু নেই।

আদ্রিজা কিছু না বলে পরম মমতায় নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আভিয়ানকে। আভিয়ানকে এই কথাগুলো বলেও সে শান্ত হতে পারছে না।তার এমন মনে হচ্ছে কোন বিষাক্ত তীর তার বুকে বিঁধে আছে। এতটা তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে তার। সে পারছে না এই যন্ত্রনা সহ্য করতে। রাগে তার সারা শরীর রি রি করছে। অপরাধ ভোগে ভুগছে সে। তার মনে হচ্ছে এইসব শুধু তার জন্যই হয়েছে। সে যদি আভিয়ানের জীবনে না আসতো তবে সাফিন কখনোই এমন করতো না। সবকিছুর জন্য মনে মনে সে নিজেকে দোষ দিচ্ছে। যাকে সে এতটা ভালোবাসে তার জীবনটা এলোমেলো হয়েছে শুধু তার জন্যই। তার জন্যই আভিয়ানকে এতটা কষ্ট পেতে হয়েছে। সব কিছু তার কাছে বিষাদময় লাগছে। আভিয়ান এতটা কষ্ট সহ্য করেছে তা কিছুতেই সে মানতে পারছে না।

এভাবেই কেটে গেছে কিছু সময়। কেউ মুখে কোন কথা বলছে না। পুরো রুম জুড়ে পিনপন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। শুধু দুইজন মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। নিরবতা তাদের মনের কথা একে অপরকে বলে দিচ্ছে। আভিয়ান অনেকটা শান্ত হয়ে গেছে। এতদিনের জমানো কষ্ট, রাগ, অভিমান সব যেন আদ্রিজাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে গলে পানি হয়ে গেছে। তার মনে প্রশান্তি অনুভব হচ্ছে। অদ্ভুত এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করছে তার মনের ভিতরে। এতদিনের অপেক্ষার পর সে কাছে পেয়েছে তার বন্যাকে। নিজের করে নিতে পেরেছে তার প্রেয়শীকে। আজ তাদের মাঝে কোন ভুল বুঝাবুঝি নেই। সব ভুল ধারণা ভেঙে দিয়ে একে অপরকে আপন করে নিয়েছে। এর থেকে পরম তৃপ্তির তার কাছে আর কিছু হয় না।

আদ্রিজাও চুপ থেকে সব কিছু অনুভব করছে। এতক্ষন যেই যন্ত্রণা তার বুকের মাঝে হচ্ছিল আভিয়ানকে এভাবে জড়িয়ে ধরে তা প্রশান্তিতে পরিনত হয়েছে। সিগ্ধ এক আবেশে তাদের দুই জনের শরীর ও মন সব কিছু জুড়িয়ে গেছে৷ কয়েক সেকেন্ডের জন্য তারা সব কিছু ভুলে গেছে। হারিয়ে গেছে দুইজন দুইজনেতে। বিভোর হয়ে আছে তারা একে অপরের মাঝে। আজকের এই মুহূর্তটা দুইজনের জন্যই অনেক প্রতিক্ষার। পূর্ণতা পেতে চলেছে একটা প্রবিত্র সম্পর্ক,,,,,,,
…..
..
.
চলবে,,,,,,,

( এতদিন গল্পটি না দেওয়ার জন্য দুঃখিত। আমি গল্প লেখার মতো অবস্থায় ছিলাম না।খুব তাড়াতাড়িই গল্পটি শেষ করে দিবো। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here