গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া লেখায়_ফারহানা_ছবি পর্ব_৪

#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
লেখায়_ফারহানা_ছবি
পর্ব_৪
.
.
🦋
” এবার আপনার স্যরি তোমার সম্পর্কে কিছু বলো?”

প্রাণো যে তার মন খারাপের কারণ লুকাতে সহজ হওয়ার অভিনয় করছে সেটা দেখে হাসি পাচ্ছে স্মরণের….

স্মরণকে চুপ থাকতে দেখে প্রাণো তার ব্রু জোড়া কুচকে বলল, ” কি বেপার মিস্টার স্মরণ এভাবে চুপ করে আছেন কেন? আপনার সম্পর্কে কিছু বলো?”

” একদিনে যদি সব বলে ফেলি তাহলে কাল কি বলবো?”

স্মরণের কথা শুনে প্রাণো কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো৷ প্রাণোর মুখে প্রাণোবন্তন হাসি দেখে স্মরণের ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে উঠলো ৷

” এভাবে সারা জীবন হাসি খুশি থেকো প্রাণ..” কথাটা একটু আস্তে করে বললো স্মরণ, প্রাণো পুরো কথাটা শুনতে না পেয়ে বলে, ” কিছু বললে স্মরণ?”

স্মরণ মাথা নেরে না সম্মতি জানালো৷

” প্রাণো এখন আমি কটেজে ফিরে যাচ্ছি রাতে ডিনারে দেখা হচ্ছে তাহলে?”

” ওকে ”

স্মরণ এক ঝলক প্রাণোর হাসি মাখা মুখটা দেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল৷ স্মরণ যেতে প্রাণো দরজা আটকে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় ৷ কিছুক্ষণের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল প্রাণো৷

নিজের রুমে এসে স্মরণ সিগারেট ফুকতে লাগলো৷ রাগে তার পুরো শরীর আগুনের মতো জ্বলছে৷ প্রাণোর কটেজ থেকে নিজের কটেজে ফিরে আসার সময় স্মরণের ফোনে একটা মেসেজ আসে ৷ মেসেজটা পড়ে স্মরণের চোখ মুখের রঙ পাল্টে গেল৷ রুমে এসে সিগারেট বের করে ফুকতে লাগলো৷ স্মরণ তার ফোনের যে নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে সেই নাম্বারে কল করে ৷ দুবার রিং হবার পর পর ওপাশ থেকে কল রিসিভ হয়৷ কল রিসিভ হতে স্মরণ রাগি গলায় বলল,” কি চাই তোর?”

” হা হা হা কি চাই আমার সেটা তুই ভালো করে জানিস স্মরণ”

” কাম টু দ্যা পয়েন্ট , কি চাই তোর ক্লিয়ার করে বল?”

” আমার তাকে চাই যাকে তুই চাস ৷ যার স্পর্শ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছিস তাকে আমার বিছানায় নিতে চাই৷ যার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এতো ছটপট করছিস তার সব ভালোবাসা আমি পেতে চাই৷ যাকে বিয়ে করার জন্য এতো আয়োজন করছিস তাকে বিয়ে করতে চাই এন্ড আই মিন ইট ”

ফোনের ওপাশ থেকে মানুষটার কথা শুনে স্মরণ বাঁকা হেসে বলে, ” ফাইন তাহলে করে দেখা ৷ আমার প্রাণ কে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দেখা ৷ কথা দিচ্ছি তোকে আমি সহজে মারবো না তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারবো৷”

স্মরণের কথা শুনে ফোনের ওপাশ থেকে অট্টহাসির শব্দ ভেষে আসলো৷ হাসতে হাসতে বললো,” পারবি না স্মরণ পারবি না কারণ ….” বলতে বলতে থেমে যায় লোকটি..

” কি হলো বল কারণটা কি?”

” কারণ টা আমি বলবো না স্মরণ সেটা তোকে খুজে বের করতে হবে৷ আর হ্যাঁ তোর প্রাণকে আমি আমার করে ছাড়বো আর তুই শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবি , তোর কিচ্ছু করার থাকবে না ৷”

” চ্যালেন্জ এক্সেপ্টেড ”

” গুড এটাই তো চাইছিলাম স্মরণ তুই আমার সাথে লড়তে থাক আর আমার কাজ গুলো অন্য কেউ করে দিক তুই সেটা জানতেও পারবি না হা হা হা” মনে মনে কথা গুলো বলে কল ডিসকানেক্ট করে দিলো লোকটি৷

স্মরণ ফোন কান থেকে নামিয়ে অন্য একটা নাম্বারে ডায়াল করে ৷

” হ্যালো কি খবর ওই দিকটার?”

” বস আপনার কথা মতো কাজ টা করেছি ৷ লোক গুলো বান্দরবান বাস স্ট্যান্ডে নামতে কিডন্যাপ করেছি৷”

” গুড লোক গুলোর দিকে নজর রাখবি আমি আসছি ”

” ওকে বস”

স্মরণ কাউকে কিছু না বলে রুম লক করে বেড়িয়ে গেল৷ অন্যদিকে বিয়ে বাড়িতে গেস্ট আসতে শুরু করে দিয়েছে ৷ প্রাণোর বাবা সব কিছু একা সামলাতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে৷ সাদমান কিছুক্ষণ পর পর কোথায় যেন উধাও হয়ে যাচ্ছে প্রাণোর বাবা বেশ বিরক্ত তার বড় ছেলের উপর, এই বয়সে এসে তাকে সবটা সামলাতে হচ্ছে আর তার বড় ছেলে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াচ্ছে৷

রুম লক করে বউ সেজে দাঁত দিয়ে নখ কেটে যাচ্ছে প্রিয়া৷ প্রথমে ভয় না লাগলেও এখন প্রচন্ড ভয় লাগছে প্রিয়ার , জেনে শুনে আগুনে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছে সে, এছাড়া যে আর কোন পথ খোলা নেই এটাও প্রিয়া খুব ভালো করে জানে৷ কিছুক্ষণ পর চেঁচামেচি শুনে বুঝতে পারলো বর এসেছে ৷ ভয়টা যেন আরো জেঁকে ধরলো প্রিয়াকে, কপালের ঘাম টিসু দিয়ে মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে প্রিয়া ৷ কিছুক্ষণ পর পাশের রুম থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ ভেষে আসতে প্রিয়া কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করছে কি নিয়ে এতো চেঁচামেচি ৷ পনেরো মিনিট পর সব কিছু শান্ত হয়ে গেল৷ দরজায় টোকা পড়তে প্রিয়া ধিরে সুস্থে গিয়ে দরজার লক খুলে দেয়; সাথে সাথে কয়েকজন মহিলা আর দুটো মেয়ে রুমে ঢুকে পড়ে৷

” এই তো নতুন বউ দরজা আটকে রেখেছিলে কেন?”

” আহা খালামনি এই সব কথা বাদ দেও তো , কাজী এসেছে ওনাকে ওনার কাজ করতে দেও৷

প্রিয়া বিছানায় বসে আছে ৷ মেয়েটার কথা কানে যেতে প্রিয়া অবাক হলো কারণ সত্যিটা হয়তো সাজিতের পুরো পরিবার জেনে গেছে কিন্তু তারপর ও কোন চেঁচামেচি নেই গোলমাল নেই সব কিছু এতো নির্বিঘ্নে কি হতে পারে এই কথাই ভাবতে লাগলো প্রিয়া৷

বিয়েটা কোন ঝামেলা ছাড়াই সুন্দর মতো হয়ে গেল৷ খাওয়া দাওয়া করে সব আত্মিয় স্বজন চলে গেল৷ প্রাণোর বাবা জুনাইদ কবির সাজিতের হাতে তার ছোট মেয়েকে তুলে দিয়ে কেঁদে ফেলেন৷

” বাবা আমার বড় মেয়ের ভুলের শাস্তি আমার ছোট্ট মেয়েকে দিও না দায়া করে ৷”

” আপনি চিন্তা করবেন না বাবা আমি এমন কিছু-ই করবো না কারণ আমি এর থেকে ভয়ানক কিছু ভেবে রেখেছি শশুর মশাই..” শেষের কথা গুলো জুনায়েদ কবির এর কানে না পৌছালেও প্রিয়া পাশে দাড়ানোয় পরিষ্কার শুনতে পেল ৷ প্রিয়া কাঁদো-কাঁদো চোখে সাজিতের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ সাজিত প্রিয়ার দিকে এক বারও না তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসে৷ প্রিয়াও কান্না কাটির পর্ব শেষ করে সাজিতের পাশে গিয়ে বসে৷ গাড়ি তার মতো চলতে লাগলো আর প্রিয়া সে মনে মনে নিজেকে যুদ্ধের জন্য তৈরি করতে ব্যস্ত ৷ সাজিত গম্ভির মুখ করে ফোন টিপায় ব্যস্ত সে সুযোগে প্রিয়া কোমড় থেকে তার ফোন টা বের করে কাউকে একটা মেসেজ করে দিয়ে ফোনটা আবার কোমড়ে গুজে রাখে৷

_______

” এই কারা তোরা? কেন আমাদের কিডন্যাপ করেছিস বল হারাম জাদা” লোকটার কথা শেষ হতে নাকের উপর এক ঘুশি মারলো ৷ সাথে সাথে চেয়ার নিয়ে উলটে পরে গেল লোকটা তা দেখে বাকি চার জন ভয়ে গুটিয়ে গেল৷

একটা লোক এসে চেয়ার সহ সেই লোকটাকে তুলে দেয়৷ তখনি পাশ থেকে আর একটা লোক বলে উঠলো , ” জাফর তুই ঠিক আছিস তো?”

” হ আমি ঠিক আছি ”

” কিন্তু কিছুক্ষণ পর তোরা ঠিক থাকবি না কু** বা*”

” কোন সালারে তুই আড়ালে থেকে আমাদের আঘাত করছিস? সাহস থাকলে সামনে আয় দেখি তোর বুকের পাটা” জাফরের পাশের লোকটা বলে ওঠে ৷

হুট করে সামনের আলো জ্বলে উঠতে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে জাফর সহ বাকিদের প্রান উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা ৷ ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগলো৷

সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা বাঁকা হেসে হাতে লোহার রড তুলে নেয়৷ তা দেখে প্রত্যেকের চোখে মুখে ভয় আর আতঙ্ক ৷ কিছু বুঝে ওঠার আগে লোকটা হাতের লোহার রড ধারা প্রত্যেককে মারতে লাগলো৷ শরীর ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে লোক গুলোর , আদমরা হয়ে জ্ঞান হারিয়েছে প্রত্যেককে, ..

” বস এবার কি করবো?” পাশে দাড়িয়ে থাকা প্রশ্ন করলো তার বস কে ..

” এদের কে পানি খাবার কিচ্ছু দিবি না ৷ এভাবে বাধা থাকবে৷ ”

” ওকে বস”

ছোট্ট কুঠির থেকে বের হতে ফোন টা বেজে ওঠে ৷ কল রিসিভ করে কানে ধরতে ওপাশ থেকে ভয়ার্থ কন্ঠে বলে ওঠে, ” আমাদের প্লান সাকসেস হয়েছে দোস্ত”

” গুড তারপর ও সব দিকে নজর রাখিস”

” একদম, কিন্তু তুই এখন কোথায়?”

” পাহাড়ী রাস্তায় হাটছি”

” দ্রুত রিসোর্টে ফিরে যা সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে”

” ফিরতে তো আমাকে হবে দোস্ত ; ওখানে যে আমার প্রান ভোমরা আছে তাকে ছাড়া আমি যে অস্তিত্বহীন ”

” আমি জানি আর তাই তো তোর সাথে হাত মিলিয়ে এতো বড় কান্ড করলাম”

” হুম , এর জন্য তোর ট্রিট পাওনা হয়ে রইল”

” শুধু ট্রিট! আমি চাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সব সত্যি তুই ওকে জানিয়ে দিবি ৷”

” সময় হলে সবটা জানিয়ে দিবো ৷ এখন রাখছি রিসোর্টে এসে পড়েছি”

” ওকে বাই নিজের খেয়াল রাখিস সাথে তোর প্রান ভোমরারও”

” বাই”

কল ডিসকানেক্ট করে রিসোর্টে ঢুকে নিজের কটেজে ফিরে যায় লোকটা…

রেস্টুরেন্টের টেরেসে দাড়িয়ে আছে প্রাণো ,সাফা ,ঐশী ,স্মিতা, আকাশ, সাগর, নিলয় ৷ স্মিতা আর সাগর একটু আলাদা দাড়িয়ে কথা বলছে নিজেদের ভিতর তা দেখে নিলয় আকাশ সাফা ঐশী একে অন্যের মুখে দিকে তাকিয়ে আছে৷ প্রাণো আকাশের দিকে তাকিয়ে অর্ধভাগ চাঁদ দেখছে ৷ কিছুক্ষণ পর পর লজ্জায় চাঁদ মেঘের বুকে মুখ লুকিয়ে মিটিমিটি তাকিয়ে আছে তার দিকে, প্রাণো এই মুহূর্তটাকে ভিষণ ভাবে ভালো লাগে ৷ বাড়িতে থাকা কালিন ঘুমানোর পূর্বে ছাঁদে এসে চন্দ্রবিলাস করা তার অভ্যাসে এসে দাড়িয়েছে ৷ আর যে সময়টা ঘন কালো অন্ধকারে পুরো শহরটাকে ঘিরে রাখতো তখনও সে সময় টা উপভোগ করার চেষ্টা করতো৷ প্রাণো চন্দ্রবিলাসে এতোটাই হারিয়ে গিয়েছে যে তার পাশে দাড়ানো মানুষটার অস্তিত্ব এখন অবধি উপলব্ধি করে উঠতে পারেনি ৷ আর সে মানুষ টা তার প্রাণ কে দেখতে ব্যস্ত৷ চাঁদের আলোয় প্রাণোর নীল আখিদ্বয় যেন চিক চিক করছে ৷ চাঁদের আলোয় প্রাণোকে আরো মহোনীয় লাগছে ৷ কৃষ্ণ কালো নায় দীর্ঘ চুল গুলো বাধাহীন ভাবে উড়ে চলেছে ৷ কখনো চুল গুলো প্রাণোর মুখ ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে তো কখনো ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে৷ রাতের শীতল হাওয়ায় প্রাণোর ওড়না উড়ছে ৷ সেটা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখছে স্মরণ৷ হঠাৎ বাতাসে প্রাণোর ওড়না গিয়ে স্মরণের মুখের উপর পড়তে স্মরণ আলতো করে ওড়না মুখ থেকে সরিয়ে চুমু দিয়ে হাতের মুঠোয় নিতে ওড়নায় টান পড়তে প্রাণোর ধ্যান ভেঙে যায় ৷ পাশ ঘুরে তাকিয়ে স্মরণ কে দেখে বেশ অবাক হয় প্রাণো৷ হুট করে স্মরণের হাত থেকে ওড়নার বাকি অংশ টেনে নিয়ে কপালের উড়ে বেড়ানোর এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুজে ধির গলায় বলে ওঠে ” স্যরি আপনাকে খেয়াল করিনি”

” আপনি!”

” ওহ স্যরি ভুলে গিয়েছিলাম আসলে হুট করে কাউকে তুমি বলতে পারি না তো অভ্যাস নেই”

” অভ্যাস করে নেও প্রান কারন সারা জীবন আমাকে তুমি করে ডাকতে হবে তোমায়” বিড়বিড় করে বলল স্মরণ…

” কিছু বললে?”

” না, আচ্ছা কাল কোথায় ঘুরতে যেতে চাও?”

” উমম নীলাচল যাবো ৷”

” ডান তাহলে কাল ভোর বেলায় রেডি হয়ে থাকবে ওকে”

” একদম ”

প্রাণোর কথা শেষ হতে পেছন থেকে আকাশ সাফা বলে উঠলো ,” প্রাণো রাত তো অনেক হলো চল ডিনার টা সেরে নেই ৷ আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে ৷”

” আমার ও ঘুম পাচ্ছে স্মরণ আর খিদেও পেয়েছে ৷ চল তো খেয়ে নেই আগে তার পর যা কথা বলার বলবি”

স্মরণ চেয়ে ছিলো প্রাণোর সাথে আরো কিছু সময় কাটাতে কিন্তু তার গুনধর বন্ধুর জন্য তা আর হলো কই? স্মরণ আকাশের দিকে চোখ পাকিয়ে রেস্টেরেন্টের ভিতর ঢুকে চেয়ারে বসে পড়লো৷ ধিরে সবাই সবার জায়গায় বসে পড়ে শেষ প্রাণো এসে দেখে স্মরণের পাশের চেয়ার টা খালি বাকি গুলো বুক ৷ অগ্যতা না চাইতেও স্মরণের পাশের চেয়ারে বসতে হলো৷

আজ সবাই চিকন চালের ভাত ইলিশ ভাপা , চিংড়ি মাছের মালাইকারি , সাথে দু’প্রকার ভর্তা অর্ডার করে৷ প্রাণো ইলিশ ভাপা বাদ দিয়ে বাকি আইটেম গুলো থেকে একটু একটু নিয়ে খেতে থাকে৷ ইলিশ ভাপা প্রাণোর প্রিয় হলেও সমস্যা একটা কাটা বাচঁতে পারে না তাই সব সময় সাদমান বা তার বাবা মাছের কাটা বেছে দিতো৷ মন খারাপ করে চিংড়ি মাছের মালাইকারি দিয়ে মুখে দিতে খেয়াল করে তার প্লেটে ইলিশ মাছ , হাত দিয়ে নেড়ে দেখে মাছ টা কাটা বেছে দিয়েছে৷ প্রাণো অবাক হয়ে তার দু’পাশে তাকিয়ে দেখে স্মরণ তার মতো খেয়ে যাচ্ছে আর পাশে ঐশী সে তার মতো খেয়ে যাচ্ছে ৷ তাহলে মাছের কাটা বেছে কে প্লেটে দিলো? এটা ভেবে প্রাণোর খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল৷

স্মরণ আড়চোখে প্রাণোর অবস্থা দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো ৷ সবাই যখন গল্প আর খাওয়ায় মশগুল আর প্রাণো তার ভাবনার জগতে ভেষে বেড়াচ্ছে তখনি স্মরণ মাছের কাটা বেছে প্রাণোর প্লেটে রাখে ৷ সবাই ব্যস্ত থাকায় বেপার টা কেউ খেয়াল করেনি৷ প্রাণো কে খেতে না দেখে স্মরণ ধমক দিয়ে ওঠে, ” কি বেপার প্রাণো খাচ্ছো না কেন? এভাবে মুরগির মতো টুক টুক করে খেলে হবে? দ্রুত খাওয়া শেষ করো৷”

প্রাণোকে এভাবে খাওয়ায় তাড়া দিতে দেখে আকাশ সাগর নিলয় অবাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ৷ বান্দরবান এসে তারা যেন অন্য এক স্মরণ কে দেখছে ৷ আগের স্মরণ আর এই স্মরণের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ কিছুতেই মেলাতে পারছে না৷ যে ছেলে মেয়েদের সহ্য করতে পারে না৷ এক কথায় মেয়েতে এলার্জি সে ছেলে কিনা অন্য একটা মেয়ের এতো কেয়ার নিচ্ছে! বিষয়টা তিনজনকে খুব ভাবাচ্ছে৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পর তিন বন্ধুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো ৷ তারা একে অন্যকে চোখ মেরে দিয়ে ফিস ফিস করে বলল,” দোস্ত আমি যা ভাবছি তোরাও কি তাই ভাবছিস?”

” একদম দোস্ত , আমাদের বন্ধু প্রেম রোগে আক্রান্ত হয়েছে সেটা বুঝতে আর আমাদের বাকি নেই৷”

” তাহলে আর কি মিশন এদের দু’জনকে এক করা রাইট?”

” রাইট দোস্ত , শোন বাকি প্লান ঘুমনোর সময় করবো ডান!”

” ডান”

প্রাণো তৃপ্তি সহকারে ইলিশ ভাপা দিয়ে ভাত খেয়ে উঠে পড়লো৷ সাথে সাথে স্মরণ ও উঠে পড়ে প্রাণোকে জিজ্ঞাসা করে,” রুমে যাবে তো?”

” হ্যাঁ তুমি?”

” আমিও যাবো, তাহলে চলো যাওয়া যাক”

” হুম চলো কিন্তু বাকিরা?” প্রাণোর কথা শেষ হতে আকাশ বলে উঠলো ,” তোমরা চলে যাও আমাদের হয়ে গেলে আমরা চলে আসবো৷”

স্মরণ মুচকি হেসে হাটতে লাগলো ৷ স্মরণ বুঝতে পারলো তার তিন মূর্তি মান বন্ধু তাদের একান্তে সময় কাটানোর জন্য কথা গুলো বললো৷

” স্মরণ এখনি রুমে যাবো না ৷ এখানে কিছুক্ষণ দাড়াবো ৷ ”

” কেন?”

” সামনে তাকিয়ে দেখুন একবার” প্রাণোর কথা শুনে স্মরণ প্রাণোর থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকায়ে তার দু’চোখ যেন আটকে যায়৷ সাদা কালো মেঘ গুলো ভেষে বেড়াচ্ছে ৷ স্মরণ বুঝতে পারছে তার চুল গুলো কেমন ভিজে গেছে ৷

” ও মাই গড! মেঘ আমাদের এতো কাছে?”

” ইয়েস মিস্টার মেঘ কে আজ আমরা ছুঁতে পারছি দেখুন মেঘ গুলো কিভাবে আমার হাত ভিজিয়ে দিচ্ছে যাস্ট সি …”

স্মরণ প্রাণোর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখছে সত্যি মেঘ ওরে হাত ছুঁয়ে দিচ্ছে৷

” জানেন স্মরণ আমি বড্ড প্রকৃতি প্রেমি ৷ আমি ঘুড়তে ভিষণ ভালোবাসি ইভেন এই রিসোর্টে আমি এর আগে কয়েকবার থেকেছি ৷ আর আজ ও থাকছি আমার সত্যি খুব আনন্দ হচ্ছে ৷ ” বলে কিটকিটিয়ে হাসতে লাগলো প্রাণো আর প্রাণো হাসতে তার গজ দাঁত দেখতে পেল স্মরণ ৷ আজকের প্রাণোর গজদাঁতের হাসিটা স্মরণের মনে গেঁথে গেল৷ উপচে পড়া চাঁদের আলোয় তার প্রাণের হাসিটা সে কখনো ভুলতে পারবে না অন্তত এই জন্মে না৷

______

নতুন বউকে বরন করে ঘরে তুলে মিসেস সাহারা বেগম ৷ অন্য দিকে জীবন মাহমুদ মুখ ভার করে ভিতরে ঢুকে গেলেন ৷ সাহারা বেগম প্রথমে তার স্বামীর মুখ ভার এর কারণ বুঝতে না পারলেও নতুন বউ এর মুখ দেখে বুঝতে পারলেন আসল কারন টা, সাজিত হুট করে প্রিয়ার হাত টানতে টানতে তার বেডরুমে নিয়ে এসে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে দরজা লক করে প্রিয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,
.
.
.
#চলবে……..
[ভুল ট্রুটি সুন্দর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here