চন্দ্রকুঠি পর্ব-১১

0
3720

#চন্দ্রকুঠি
পর্ব (১১)
#নুশরাত জাহান মিষ্টি

রিয়াদ অনেকক্ষণ ধরে মুনের আসার অপেক্ষা করছে। মুনকে ডাকা হয়েছে বেশ অনেকটা সময় হলো। তবুও মুন আসছে না দেখে বেশ বিরক্ত হলো রিয়াদ। বিরক্তি নিয়ে রুম থেকে বের হবে এমন সময় মুন এলো। মুনকে দেখে কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বললো, ” তোমার ব্যপারটা কি আমাকে একটু বোঝাবে?”
মুন রিয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিয়াদ সেটা দেখে বললো, ” কি দেখছো? আমার নতুন রুপ বের হয়েছে?”
” নতুন নাকি পুরনো তা জানি না তবে…”
” তবে কি?”
” আপনি, তুমি, আপনি, তুমি এই ব্যপারটা আমাদের প্লানে ছিলো না।”
রিয়াদ এবার আরো বিরক্ত হলো। মানছে আপনি থেকে হুট করে তুমিতে যাওয়া ঠিক হয়নি তার। তাই বলে এভাবে বলবে। কই রাফির সাথে তুমিতে তো কোন সমস্যা হয় না। সে বলায় এত সমস্যা। রিয়াদ বললো, ” রাফিকে বলো আমরা এখন চন্দ্রকুঠির ভিতরটা ঘুরতে চাই। ওকে বলে এখন ম্যানেজ করো।”
” কেন? আমাদের তো এখন চন্দ্রকুঠি ঘোরার কথা নয়”।
” যা বললাম তাই করো”।
” কারনটা কি? সেটা তো বলবেন”?
” দিনের আলোতে চন্দ্রকুঠি ঘুরবো। সেখানে দিনের বেলা কেমন পরিস্থিতি থাকে সেটা দেখবো। কারনটা তো জানলে এবার যাও ব্যবস্থা করো”।

মুনের কারনটা ততটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো না। তবুও কিছু না বলে চলে গেলো। গিয়ে রাফিকে ‘চন্দ্রকুঠি’ যাওয়ার কথা বললো। প্রথমে রাফি রাজি হলো না। তবে মুন বোঝালো তারা এখন ভিতরটা ঘুরে দেখতে চায়, যেটা মঞ্চনাট্যের সময় সম্ভব নয়। শেষে রাফি রাজি হলো।

মুন, রিয়াদ ও রাফি মিলে ‘চন্দ্রকিঠি’ ডুকলো। রাফির বন্ধু বলাতেই তারা ডুকতে দিলো৷ প্রথমে ওরা নিচতলাটা ভালোভাবে দেখলো। পরে উপর তলায় উঠলো। উপর তলায় ওঠার পর রিয়াদ বললো, ” তোমরা ওদিকটা ঘোরো আমি এদিকটা দেখি”।
মুন কৌতূহল নিয়ে বললো, ” কেন? আপনি উল্টো দিকে যাবেন কেন”?
” আপনাদের আমার সাথে একসাথে ঘুরতে ততটা আনন্দ হবে না যতটা আলাদা ঘুরলে হবে”।
রিয়াদ যে মুনকে ব্যঙ্গ করলো সেটা মুন বুঝলো। তাই চুপচাপ রাফির হাত ধরে অন্যদিকে হাঁটা শুরু করলো। রিয়াদও উল্টোদিকে পা বাড়ালো। রিয়াদ কিছুটা দূরে গিয়ে দু’জন মহিলার সাথে কথা বলতে শুরু করলো। মুন আঁড়চোখে রিয়াদের কান্ডকারখানা দেখছিলো। হঠাৎ দেখলো রিয়াদ মহিলা দু’জনকে ফোনে কিছু একটা দেখাচ্ছে। দূর থেকে কথা বুঝতে না পারলেও এটুকু বুঝলো ফোনে এমন কিছু একটা ছিলো রিয়াদ যার খোঁজ করছে। কিন্তু কি খুঁজছে রিয়াদ? তারমানে মুন প্রথমে যেটা ভাবছিলো সেটাই ঠিক রিয়াদ এখানে শুধুমাত্র মাধুরির ব্যপারটার জন্য তার সঙ্গ দেয়নি, অন্যকিছুর জন্য এসেছি। কিন্তু সেটা কি!
রিয়াদ মহিলা দু’জনের সাথে কথা বলে পিছনে ঘুরতেই মহিলাদের প্রধানকে দেখতে পেলো। সে রিয়াদকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, ” এখন এখানে”?
” ঘুরতে এলাম”।
” যেখানে আপনার মতো মানুষদের এখানে রাতে আসার কথা সেখানে দিনের আলোতে ঘুরতে আসছেন বলছেন”।
মহিলাটি বেশ সন্দিহান চোখে বললো। রিয়াদ সন্দেহ কাটাতে বললো, ” পরিবারের জন্য এটুকু তো করতেই হয়”।
” মানে….”।
রিয়াদ আঙুল দিয়ে মুনের দিকে দেখিয়ে বললো, ” বউ। চন্দ্রকুঠি ঘুরতে চাইছিলো তাই নিয়ে আসা”।
” ওহ আচ্ছা”।
” তবে যাই বলেন, দিনের বেলায় এসেছি বলেই না বুঝলাম এখানে রাত আর দিন আকাশ-পাতাল ব্যবধান”।
দিনের বেলায় এখানে সবকিছু স্বাভাবিক দেখে রিয়াদ কথাটি বললো তা বুঝতে পেরে মহিলাটি বললেন, ” রাতের সুভাস আর পেলেন কই? আমাদের ব্যর্থতায় কষ্ট পেলেন”।
” সমস্যা নেই। আসা যাওয়া তো হবেই তখন না হওয়া রাতের সুভাস নিবো”।
” হ্যাঁ নিশ্চয়ই। বলেন তো আজই আসেন”।
” দেখছি। তা কালকের মেয়েটাকে পেয়েছেন”?
” না। তবে চিন্তা করবেন না পেয়ে যাবো”।
” আচ্ছা যাই। বউ মাইন্ড করবো”।
” আচ্ছা যান”।

রিয়াদ মহিলাটিকে বিদায় দিয়ে মুনের কাছে গেলো। রিয়াদকে দেখে রাফি বললো, ” কি ভাই আলাদা ঘোরার শখ মিটলো”?
” হ্যাঁ মিটলো।”
” তা আমাদের কাছে এলেন কেন”?
কথাটি শুনে মুনের দিকে তাকালো রিয়াদ। মুচকি হেঁসে বললো,” যেখানেই যাই না কেন দিনশেষে তো নিজ ঠিকানাই ফিরতে হবে”।
” মানে….”।
” কিছু না। চলো বাড়ি ফিরে যাই”।
মুন এবং রাফির জন্য রিয়াদের বাড়ির ফেরার কথাটি গ্রাহ্য হলো না। তাই আরো কিছুক্ষন ‘চন্দ্রকুঠি’ ঘুরতে হলো৷ ঘোরা শেষে তালুকদার বাড়ি ফিরে রিয়াদ বললো, ” আমার মায়ের শরীরটা হঠাৎ করে খারাপ করেছে, তাই আমাদের এখনি যেতে হবে”।
রাফির কাকা বললো, ” সেঁকি আজই চলে যাবে কিন্তু…. ”
কথাটি শেষ করতে না দিয়ে রিয়াদ বললো, ” আজ একেবারের জন্য চলে যাচ্ছি নাকি? আমরা তো আবার আসবো। আপনাদের মতো এত সুন্দর একটা পরিবারকে কি একেবারে ভোলা যায়, আমরা খুব শীঘ্রই আবার আসবো। কিন্তু আজ আমাদের যেতেই হবে”।

অবশেষে সবাই মেনে নিলো ওদের চলে যাওয়া। ওরা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময় রাফি বললো, ” তোমাদের সাথে আমিও যাবো। অনেকদিন ডিউটি অফ গেলো এবার নতুন করে আবার সব শুরু করতে চাচ্ছি”।
কথাটি শুনে মুন খুব খুশি খুশি ভাব নিয়ে বললো, ” আচ্ছা তাহলে চলুন একসাথেই যাওয়া যাক”।
” আদিক্ষেতা দেখলে বাঁচি না”। রিয়াদ মনেমনে

__________

শহরে ফিরে রাফি নিজ গন্তব্যে চলে গেলো। রিয়াদ মুনকে সাথে করে অন্যস্থানে নিয়ে গেলো। রিয়াদ ফ্লাটের সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজালো। সাথে সাথে রহিমা দরজা খুলে দিলো। রহিমা ওদের ভিতরে নিয়ে গেলো। মুন রহিমাকে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো, ” ও কোথায়”?
” পাশের রুমে ঘুমিয়ে আছে”।
” আচ্ছা। আমি দেখে আসছি”।
মুন পাশের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই রিয়াদ ওর হাতটি ধরে নিলো। মুন কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই রিয়াদ হাত টেনে অন্য আর একটি রুমে নিয়ে গেলো। রুমে নিয়ে গিয়ে হাত ছেড়ে দিলো। মুন জিজ্ঞেস করলো, ” কি হলো? এখানে কেন নিয়ে এসেছেন”?
” আগে আমাদের মধ্যে কিছু কথা পরিস্কার করে নেওয়া উচিত”।
” কি কথা”?
” তোমার বাবার সাথে কথা বলবে কখন”?
” আগে আপুর থেকে পুরো ঘটনা জানবো তারপর ভেবে দেখবো”।
” ভেবে দেখবো মানে”?
” আমি এখনো নিশ্চিত নই বাবার সাথে কথা বলবো কি বলবো না সেটা নিয়ে”।
” মানে তুমি কি বলতে চাইছো”?
” তোমার বাবার সাথে কথা না বললে তোমার মায়ের ব্যপারে জানবে কিভাবে? সেই সাথে চন্দ্রকুঠিতে এসব অনৈতিক কাজ কখন থেকে শুরু হয়েছে সেটাও তো জানতে হবে”?
” দেখুন আমার বাবা ছোটবেলা থেকে আমাদের খুব ভালোবেসে বড় করেছেন। আমি এভাবে হুট করে গিয়ে তাকে প্রশ্ন করতে পারবো না”।
” পারবো না বললে তো হবে না। আমাদের সবকিছু জানতে হবে। সেইসাথে এই অনৈতিক কাজকর্ম বন্ধ করতে হবে৷ এক্ষেত্রে তোমার বাবাকে প্রশ্ন করতেই হবে”।
” আমি আমার বাবাকে প্রশ্ন করতে যেতে পারি, তবে তারজন্য আমার একটা শর্ত আছে”।
” শর্ত মানে? কি শর্ত”?
” আগে আপনাকে বলতে হবে আপনার উদ্দেশ্য কি? আপনি কি শুধুমাত্র আমাদের সাহায্য করার জন্য এসব করছেন নাকি অন্যকিছু”?
” অন্যকিছু বলতে কি? আমরা আর কি উদ্দেশ্য থাকবে, আমি একজন পুলিশ অফিসার সে হিসাবে কেসের সমাধান করা আমার দায়িত্ব”।
” শুধু দায়িত্বের জন্যই আপনি আমার সাথে চন্দ্রকুঠি গেছিলেন”?
” তা নয়তো কি”?
” আপনি একটা মিথ্যাবাদী, আপনি আমাকে ধোঁকা দিচ্ছেন”।
” মুন”। চিৎকার করে

রিয়াদের চিৎকারে মুন কিছুটা কেঁপে উঠলো। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,” আপনি ধোঁকাবাজ নাহলে কেন লুকাচ্ছেন সত্যিটা? আপনি শুধুমাত্র আমার আপুর জন্য ওখানে যাননি সেটা আমি খুব ভালো করে জানি”।
রিয়াদ নিরবতা ভেঙে বললো,” কোন কথা না বলা আর মিথ্যে বলা এক নয়। আমি তোমাকে কোন ধোঁকা দেইনি। হ্যাঁ আমি শুধুমাত্র এই কেসটার জন্য ওখানে যাইনি। তারমানে এটা নয় আমি এই কেসটা নিয়ে সিরিয়াস নই”।
” আর কি কারনে চন্দ্রকুঠি গিয়েছেন আপনি”?
” তোমার মতো আমার আপুকে খুঁজতে”।
” মানে….”।
” সেটা অনেক কথা”।
” সেটাই শুনতে চাই”।
” আচ্ছা বলছি”।
রিয়াদ বলা শুরু করবে এমন সময় রহিমা ডাক দিলো।

রহিমার ডাক শুনে রিয়াা এবং মুন পাশের রুমে গেলো। মুন বেশ উত্তেজিত হয়ে বললো, ” কি হয়েছে”?
” বোন”।
মাধুরির ডাক শুনে মুন মাধুরির দিকে তাকালো। মাধুরির দিকে তাকিয়ে মুনের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। মুন গিয়ে মাধুরিকে জড়িয়ে ধরলো। অনেকদিন পর দু’বোন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো। মুন দু’বোনের দিকে তাকিয়ে কালকে রাতের কথা মনে করলো।

কালকে রাতে মাধুরি বলে ডাক দেওয়ার পর মাধুরি রিয়াদের দিকে তাকালো।
” আ আ আপনি”?
” আমি রিয়াদ। আমি আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি। শুধু আমি নই মুনেও এসেছে”।
কথাটি শুনে মাধুরির খুশি হওয়া উচিত ছিলো কিন্তু হয়নি। রিয়াদ মাধুরির চোখে স্পষ্ট ভয় দেখতে পেলো। রিয়াদ মাধুরির ভয় কাটাতে আরো কিছু বলতে নিবে তখনি মাধুরি বলে উঠলো, ” চুপ করুন”।
মাধুরির ভয় মিশ্রিত কন্ঠ শুনে রিয়াদ বেশ চমকালো। কিছুক্ষনের জন্য মনে হলো, ” এ কি মাধুরি নয়”?

চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here