#চন্দ্রকুঠি
পর্ব (৯)
#নুশরাত জাহান মিষ্টি
রাতের খাওয়া-দাওয়া করে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো। খাওয়ার টেবিলে রসিদ(রাফির দাদু) মুনের দিকে বেশ কয়েকবার তাকালেন। যদিও সবাই কম বেশি তাকিয়ে ছিলো। খাওয়া শেষে রাফির বাবা রাফির রুমে গেলেন। রাফি বাবাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, ” কিছু বলবে বাবা?”
” হুম। তোমার বন্ধুরা যা বললো তা কি সত্যি?”
” কি বললো?”
” নিজেদের সম্পর্কে যা বললো। এই যে মুনতাহার সার্জারীর ব্যপারটা।”
রাফি বুঝতে পারলো না তার বাবার কথা। তবুও সে বললো, ” নিজেদের ব্যপারে যখন বলেছে তখন তো সত্যিই হবে। শুধু শুধু মিথ্যে কেন বলবে?”
” হুম তাও ঠিক। বলছিলাম মুনের থেকে হাসপাতালের নামটি জেনে আমাকে একটু জানাও তো।”
এরমাঝে পিছন থেকে মুন বলে উঠলো, “… (হাসপাতালের নাম) এই হাসপাতাল কাকা।”
রাফি এবং তার বাবা পিছনে ঘুরে তাকালো। দেখতে পেলো মুন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাফির বাবা বললেন, ” ডাক্তারের নাম?”
” ডাক্তার রফিকুল ইসলাম।”
” ওহ আচ্ছা। তুমি বোধহয় রাফির সাথে কথা বলতে এসেছো, তোমরা কথা বলো আমি চলে যাচ্ছি।”
রাফির বাবা চলে গেলেন। রাফির বাবা চলে যেতেই রাফি বললো, ” হাসপাতাল, সার্জারী এসবের মানে কি? তোমরা কি বলেছো বাড়িতে?”
” তেমন কিছু নয়। আমার মনে হয়না কাকা এ ব্যপারে আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন। তাই বলছিলাম তুমিও এসব নিয়ে আর ভেবো না।”
” আচ্ছা। তুমি কি আমাকে কিছু বলতে এসেছো?”
” হ্যাঁ।”
” আচ্ছা বলো।”
” তোমার সত্যি মনে হয় আপু এমন করতে পারে?”
” ভিডিওটা তুমিও দেখেছো। এবার তুমিই ভাবো?”
” কি ভাববো? ভাববে তো তুমি। তোমার সাথে আপুর সম্পর্কটা কেমন ছিলো সেটা তো তুমি জানো। তোমার সাথে রিলেশন চলা-কালীন তোমার কখনো মনে হয়েছে আপু তোমার সাথে খুশি নয়।”
” না কখনো মনে হয়নি।”
” তাহলে একটা ভিডিওর জন্য সবকিছু মিথ্যে কেন ভাবছো তুমি?”
” কিন্তু ভিডিওটা….”
” চোখের দেখা কি সবসময় সত্যি হয় বলো?”
” তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো?”
” আমার মনে হয় আপু বিপদে আছে। আমাদের আপুকে খুঁজে বের করা উচিত।”
” কিন্তু আমরা কিভাবে খুজবো?”
” আমা…..”
মুন কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো। ভালোভাবে রাফির ঘরটি আরো একবার দেখলো। ঘরটি বেশ বড়। মুন ঘরটি দেখতে দেখতে হঠাৎ করে ঘরের সুইচ বাটনে টিপ দিলো। সাথে সাথে ঘরটি অন্ধকার হয়ে গেলো। অন্ধকারের মধ্যে মুন বিছানা খুঁজে সেখানে বসে পড়লো। রাফি মুনের কর্মকান্ড নির্ভীকভাবে দেখছিলো। রাফি গিয়ে ঘরের সুইচ অন করলো তারপর বললো, ” কি করছো তুমি এসব? কিছু একটা বলতে চাইছিলে তা না বলে এসব কি করছিলে?”
মুন শান্তভাবে বললো, ” রাফি ভাইয়া তোমাকে একটা কথা বলতে চাই?”
” হ্যাঁ বলো।”
” তোমার ঘরটি খুব সুন্দর, আমার খুব পছন্দ হয়েছে।”
রাফি মুনের কথায় বেশ অবাক হলো। এসব কি বলছে মুন! রাফি অবাক হয়েই বললো, ” মানে? এসব কি করছো, কি বলছো? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
” তোমাকেও আমার খুব ভালো লাগে।”
” মানে?”
” আপুকে তুমি কতটা ভালোবাসো রাফি ভাইয়া?”
” সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় মুন। তুমি জানো না মাধুরি আমার কতটা জুড়ে আছে!”
” যে তোমাকে ঠকালো তাকে কি তুমি এখনো ভালোবাসবে?”
” তুমি ঠিক কি বোঝাতে চাইছো মুন? আমি সত্যি তোমার কাজকর্ম কিছু বুঝতে পারছি না?”
” বড় বোনের প্রেমিককে ভালোলাগা খুব বেশি অপরাধের কি?”
কথাটি বলে মুন রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলো। রাফি কিছু না বুঝতে পেরে হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে।(লেখিকাও জানে না এখানে কি হলো?)
____________
রাফির দাদু ডাক্তার রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলো মুন সত্যি বলেছে। সত্যি ওর মুখে সার্জারী হয়েছিলো। যদিও ডাক্তার রফিকুল প্রথমে বলতে চাইনি। তবে জোরাজুরিতে বলতে বাধ্য হয়েছে। রসিদ সাহেবের মনে এখন আর দ্বিধা নেই। ডাক্তারের কথা সাথে আরো একটি কথা মনে করে রসিদ সাহেব দুই দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলেছেন।
অন্যদিকে রিয়াদ উঠানে পাইচারী করছিলো। এতরাতে রিয়াদকে এভাবে পাইচারী করতে দেখে রাতুল(রাফির ভাই) এগিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলো,” এতরাতে না ঘুমিয়ে কি এখানে কি করছেন?”
রিয়াদ রাতুলের দিকে তাকিয়ে মুখে কিছুটা দুঃখ রেখা ফুটিয়ে তুলে বললো, ” আসলে ঘুম আসছিলো না।”
” তা মুখে এত দুঃখ কেন?”
” না ভাই তেমন কিছু নয়।”
” আরে বলুন না।”
” বলাটা ঠিক হবে না।”
” সমস্যা নেই বলুন।”
” আচ্ছা আমরা কোথাও বসি আগে?”
” আচ্ছা চলুন। ঐদিকটায় পুকুরপাড় আছে, সেখানেই বসি চলুন।”
” আচ্ছা।”
দুজনে গিয়ে পুকুরপাড়ে বসলো৷ রাতুল বললো, ” এবার বলুন দুঃখী মুখ কেন?”
” আপনি বুঝবেন না ভাই। আপনি বিবাহিত মানুষ। বউ নিয়ে সুখেই আছেন। আমাদের দুঃখ কি বুঝবেন?”
” আরে কি হয়েছে সেটা বলুন তো?”
রিয়াদ একবার মনেমনে ভাবলো টোপটা কি দিবে নাকি একটু সময় নিবে। ভাবনা বাদ দিয়ে রিয়াদ টোপটা দিয়েই ফেললো।
” আসলে কাল মঞ্চনাট্য দেখতে গেছিলাম। চন্দ্রকুঠির এত এত সুন্দর রমনী দেখলাম যে আজ রাতের ঘুম উবে গেছে। একজন রমনীকে যদি একটু সময়ের জন্য কাছে পেতাম।”
কথাটি বলে চোখ বুঝলো রিয়াদ। উল্টোদিক থেকে কি রিয়েকশন আসবে সেটা বুঝতে পারলো না। রিয়াদের ধারনা ঠিক প্রমাণ করে রাতুল বললো, ” বেড পার্টনার হিসাবে চাইছো নাকি লাইফ পার্টনার?”
রিয়াদ চোখ খুলে ফেললো। মনেমনে খুব খুশি হলো, হয়তো তাদের ধারনা ঠিক। চন্দ্রকুঠির রহস্য তারা বুঝে গেছে, এবার শুধু ভিতরে ডোকার পালা। রিয়াদ বললো, ” না রে ভাই। লাইফ পার্টনার নামক ঝামেলাটা এত তাড়াতাড়ি নিতে চাইছি না। তাছাড়া ওসব রমনীদের বেডেই মানায় জীবনে নয়। কিন্তু বেডে তো পাইনা?”
” বেড অব্দি পেতে হলে তো কিছু ছাড়তে হবে ভাই।”
” মানে?”
” বলবো তবে একটা শর্ত আছে।”
” কি?”
” এখন আমি তোমাকে যা বলবো তা জীবনে কখনো কাউকে বলতে পারবে না।”
” আচ্ছা বলবো না।”
” তাহলে শোন চন্দ্রকুঠির ভিতরে রমনীদের বেড অব্দি তোমাকে আমি পৌঁছে দিতে পারি তার জন্য তোমাকে আগে পকেট ফাঁকা করতে হবে।”
” মানে টাকা দিতে হবে?”
” হ্যাঁ তা টাকা দেওয়ার মুরোদ আছে তোমার।”
” কত চাই?”
” এক ঘন্টা পাঁচ, দুই ঘন্টা দশ। আর সারারাত হলে পঞ্চাশ হাজার।”
” কালকের সারারাতের ব্যবস্থা করতে পারবে। চিন্তা নেই টাকা সকালে পেয়ে যাবে।”
” টাকা হলে ব্যবস্থাও হবে।”
” তারমানে বাইরে মঞ্চনাট্য ভিতরে এসব চলে চন্দ্রকুঠির।”
” হ্যাঁ।”
” আমি তো শুনেছিলাম ওটা জমিদার বাড়ি ছিলো। তোমার দাদু রসিদ তালুকদার ওখানে গরিব অসহয় মানুষদের থাকতে দেন। তারা মঞ্চনাট্য করে নিজেদের খাদ্য, বস্ত্রের যোগান দেন।”
” এটা তো সবাই জানে। কিন্তু ভিতরের কথা যারা জানে তারা সৌভাগ্য নিয়ে জন্ম নেয়। এই যে দেখছো এত সুন্দর গ্রাম, গ্রামের প্রবেশদ্বার এত সুন্দর, এগুলো কি এমনি এমনি নাকি?”
” এগুলো কিসের জন্য।”
” সবি উপরে ফিটফাট নিচে সদরঘাট এর মতো। বুঝলে না তো?”
” কিছুটা বুঝেছি।”
রিয়াদ ভাবনায় পড়ে গেলো। রিয়াদকে ভাবনায় পড়তে দেখে রাতুল বললো, ” কি ভাবছো? তোমাকে এত সহজে এতকিছু কেন বললাম?”
” হ্যাঁ। আমি তো এখন সবকিছু সবাইকে জানাতেই পারি। যদি জানিয়ে দি তো?”
” কিচ্ছু করতে পারবে না। কেন পারবে না সেটা অজানা থাক? আর শোন ভিতরের এই ব্যবসাকে চালাতে হলে কাস্টমার দরকার। তাই লোকদের তো জানাতেই হতো এই ব্যবসার কথা। যদি মুখ খুললেই ধরা পড়ে যেতো তাহলে গত আঠারো বছর ধরে এই ব্যবসা চলতো না।”
” কি বলছো আঠারো বছর ধরে এসব চলছে?”
রিয়াদ অবাক হয়ে বললো। রিয়াদকে অবাক হতে দেখে রাতুল হাসলো তারপর বললো, ” রাতটা চন্দ্রকুঠির ভিতরে থাকতে চাইলে সকালে টাকাটা রেডি রেখো।”
কথাটি বলে রাতুল উঠতে লাগলো। রাতুল চলে যাবে বুঝতে পেরে রিয়াদ বললো, ” এসব কথা মুনকে বলো না। আসলে আমি ওর খুব ভালো বন্ধু, পাশাপাশি ভালো মানুষও।”
রাতুল যেতে যেতে বললো, ” আমরা অকারনে কারো কথা ফাঁস করিনা। আর হ্যাঁ লোকেরা আমাদের কথা কেন গোপন রাখে সেটা তুমি কালকের রাতের পরই বুঝতে পারবে। খুব ভালো করে বুঝতে পারবে। এখন ফাঁস করার চিন্তা মাথায় এলেও পরে এসব চিন্তা থাকবে না।” ( বেড, টেড নিয়ে বেশ বাজে কথা বা ইঙ্গিত করা হয়েছে তার জন্য দুঃখিত। সবাই ক্ষমা করবেন)
রাতুল চলে গেলো। রাতুলের শেষ কথাগুলো শুনে রিয়াদ বেশ অবাক হলো। রিয়াদ কিছুই বুঝলো না।
_______
রাফি রুমে বসে বসে ভাবছিলো মুন ঠিক কি বোঝাতে চাইছে! এভাবে উল্টাপাল্টা কথা বলে কেন চলে গেলো! বারবার কানে ভেসে উঠছে, ” বড় বোনের প্রেমিককে ভালোলাগা খুব বেশি অপরাধের?”
” মানে কি এটার! কি বলতে চাইলো! প্রথমে বললো মাধুরি বিপদে আছে, এরপর বললো…। ঠিক কি বলতে চাইলো।”
রাফি ফোনটা হাতে নিয়ে মাধুরির ছবি দেখতে লাগলো। মাধুরির ছবি দিকে কয়েক মূহুর্ত তাকিয়ে রইলো। রাফির ভাবনাতে আসছে না ঠিক কি হচ্ছে!
অন্যদিকে মুন রুমে বসে ভাবছে, ” কি বলতে গেলাম! আর কি বলে এলাম! আমি কি ভুল পথে হাঁটছি নাকি! আমি সব ঠিক করছি তো। এরকম অদ্ভুত ব্যবহার কেন করলাম? কিসের আশায়?”
চলবে,
[ কি হচ্ছে মুন রাফির সাথে। দেখি কে ঠিক বলতে পারে। ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন। কিছু ভাষায় খারাপ ইঙ্গিত থাকায় আমি দুঃখিত। মুই কিন্তু অবুঝ মনুরা।]