চন্দ্রপুকুর’ পর্ব- ১৪

0
947

 

#চন্দ্রপুকুর
||১৪তম পর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
“বেগম চন্দ্রমল্লিকা, এই চন্দ্রপ্রভা রাত্রি যাপন করার জন্য আপনাকে কামরায় আগমনের নির্দেশ দিয়েছেন জমিদার নবাব শাহ।”

দাসীর কথা শুনে অদ্ভুৎ দৃষ্টিতে তাকালো যামিনী। ঠিক দাসী নয়, নারীটি মহাপরিচারিকার সহকারী মধ্যবয়সী মালিহা খাতুন।

“মালিহা খাতুন, আপনি খবর পাঠান আমি আসছি। তাঁর উদ্দেশ্যে তৈরি হবো, একটু সময়ের তো প্রয়োজন।”

“আপনার মর্জি বেগম। বিদায়।”

মালিহা খাতুন বেড়িয়ে যান। রমণীর মুখে ফুটে উঠে তীব্র ক্ষোভ ও ক্রোধ। ঠোঁট কামড়ে ধরে

“বেগম চন্দ্রমল্লিকা, কিছু ভাবছেন বুঝি আপনি? তবে আজ যা হলো না খুব ভালো হলো। ঐ শয়তান মেহনূর এবার বুঝবে আসল বেগম কে। তবে চিঠিটা কে পাঠালো?”

“চিঠি কে দিয়েছে সেটা মুখ্য বিষয় না। চিঠিতে থাকা তথ্য আমাদের কাজে এসেছে সেটাই মুখ্য।”

“বেগম, ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন। আপনাকে সমর্থন করে বা পছন্দ করে এমন কেউ নবাববাড়িতে নেই। অপছন্দ করে এমন অনেকেই আছে বটে। তবে আপনাকে সহায়তা করার উদ্দেশ্য কিছু একটা তো হবেই। কারণ এই নবাববাড়ি কিছুই কারণ ছাড়া হয় বা। তাই সেই মানুষটিকে চেনা এবং তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া আবশ্যক।”

“তা অবশ্য তুমি ঠিকই বলেছো দিলরুবা। চিঠির রহস্য তো আবিষ্কার করতে হবেই। মহাপরিচারিকার ও অন্দরমহলের অন্যান্য দাসী ও খাদিমদের থেকে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করো। কেউ দেখেছিল কি না চিঠিদাতা কে। তবে হ্যাঁ, সবটাই যেন আড়ালে হয়, সম্পূর্ণ গোপনে। আর সব কিছুর পূর্বে বর্তমানে অন্য কাজ সম্পন্ন করতে হবে।”

সচকিত হয়ে প্রশ্ন করলো দিলরুবা,
“অন্য কাজ?”

“আমাকে তৈরি হতে সহযোগিতা করো। দাসীদের ডেকে আনো। আমি আজ এমন মদ হতে চাই, যাকে দেখেই মাতাল হয়ে যায় বাবু মশাই। কারো হৃদয় ভাঙতে হবে, তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে চাই।”

রগরগে রাণী গোলাপি বর্ণের পোশাক, পুরোটা জুড়ে সোনালী সুতোর কাজ। দিলরুবা সহ প্রতিটি দাসীরই চোখজোড়া থমকে যায় এর সৌন্দর্যে।

“কী সুন্দর দেখতে! একদম নয়ন ধাঁধানো সুন্দর!”

যামিনীর অধরজোড়ায় বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। ইচ্ছাকৃত ভাবেই দাম্ভিকতার সহিত বলে উঠে,
“জমিদার মেহমাদ শাহ মানে আমার বাবু মশাই আমাকে উপহার দিয়েছেন। সুদূর কলকাতা থেকে আনা।”

উপস্থিত সকল নারী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ঈর্ষা এবং ভালোবাসার আনন্দ উভয়ই বোধ হয় সকলের।

মূল্যবান বস্ত্র, অলংকার, সুগন্ধি ও সজ্জায় নিজেকে রাঙিয়ে ফেলে রমণী। অতঃপর চুল, মুখশ্রী ও গায়ে বেগুনি বর্ণের রাজকীয় ওড়নাটি জড়িয়ে নেয়।

একদা ভেবেছিল এই নবাববাড়ির আভিজাত্য ও মর্যাদার প্রতীক ওড়নাটি সে সবার সমর্থন অর্জন করার পরই পরিধান করবে। পরিস্থিতির নিষ্ঠুরতা তার নীতি পরিবর্তন করেছে আজ বটে।

___

মেহমাদ শাহ তার খাঁস ভৃত্য মিনারের নিজ কামরায় বসে আছে বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে। এমন গম্ভীরতর পরিস্থিতিতেও এই জমিদারির দায়িত্ব পালন হতে মুক্তি নেই।

মিনার খেয়াল করে তার মনিব কাজের মাঝেই হুটহাট মিটমিট হাসছে। আশ্চর্য বোধ হয় তার, এই পুরুষটিকে কাজের সময়ে হাসতে তো দূরে থাক, গম্ভীরতা ব্যতীত চেহারাতে কোনো কিছুই অবস্থান করে না।

“জমিদার নবাব শাহ, আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি জানি সামান্য দাস হয়ে আপনাকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা আমায় মানায় না। তবুও আমার শাহের এতো দিন থাকা মলিন মুখশ্রীতে এই সুন্দর হাসির কারণ জানতে প্রচণ্ড মন টানছে।”

যুবক কাগজপত্র থেকে চোখ উঠিয়ে মিনারের নত মুখ খানার দিকে নজর দেয়। তার মুখমণ্ডলে তখনও মুচকি হাসি লেগে আছে।

“মিনার, তোমাকে আমি আমার ছোটো ভাইয়ের ন্যায় ভাবি। আর এর সম্পর্কে তুমিও জ্ঞাত। আর মুখের হাসি, তা হলো ক্ষণিকের মোহের ন্যায়। এই থাকে, এই যায়। তবে আসে কারো কর্মেই, হয় নিজের, না হয় অন্যের। আমার মুখশ্রীর এই হাসির সাক্ষাৎ কোনো মুগ্ধতার দরুনই। আর তা একটু ভাবলে তুমিও বুঝে যাবে।”

আলতো হাসে মিনার। মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানায়।

“তোমাকে কিছু একটা আনতে বলেছিলাম মিনার। এনেছো?”

“অবশ্যই হুজুর। আপনি বলবেন, আর আমি সে কাজ সমাপ্ত করবো না তা কি আর হয়? একদম অনন্য পাথর ও হিরায় জড়ানো আংটিটি। আপনি যেমন আকারের চেয়েছিলেন তেমনই।”

নিজের হাতে থাকা ছোট্ট কাঠের বাক্সটি এগিয়ে দেয় সে। মেহমাদ শাহ তা হাতে নিতেই দ্বার খোলার শব্দ, প্রবেশ করে যামিনী। মিনার তাকে দেখে বিদায় জানিয়ে মাথা নত করে বেড়িয়ে যায়।

মেহমাদ শাহ এগিয়ে যেয়ে বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে তার চন্দ্রমল্লিকাকে। তার চুলে মুখ ডুবিয়ে দীর্ঘ প্রশ্বাস নেয়, এতো ক্ষণে যেন তার তৃষ্ণা মিটলো। গায়ের ওড়না ফেলে দিল যামিনী।

দু’হাত ধরে আবেগ সিক্ত চুমু খেয়ে বললো,
“স্বাগতম আমার চন্দ্রমল্লিকা। আমার হৃদয় যেন থমকে ছিল তোমার জন্য। আমার আঁধারিয়া ঘরে চন্দ্রের প্রবেশ হলো। এটা উপহার তোমার জন্য।”

যামিনী গাঢ় দৃষ্টিতে তাকালো তার বাবু মশাইয়ের দিকে। বক্ষে মাথা ঠেকালো।

“আমার হৃদয়টাও থেমে গিয়েছিল আপনাকে হারানোর চিন্তায়। থেমে গিয়েছিল আমার সবকিছু। অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিলাম আমি, হারিয়ে যাচ্ছিলাম বাবু মশাই। আপনাকে ডেকেছিলাম বারবার আমার হস্ত খানা আঁকড়ে ধরে আমায় এই আঁধারিয়া নদ থেকে তুলে নিতে।

আফসোস আমার কণ্ঠ তো আপনার কর্ণে পৌঁছিয়েছে আপনি আসেননি। আপনি তো মোহে ডুবে ছিলেন কারো রূপের, বন্দী হয়ে গিয়েছিলেন কারো আয়না ঘরে। আমায় মনে পড়েনি আপনার। যেই আমি সেই আয়না ভেঙে চুরমার করলাম সেই আপনার নিকট আমার মূল্য হলো। কতো অদ্ভুৎ!”

তাচ্ছিল্যে মাখামাখি রমণীর কণ্ঠ ও হাসি। বুক থেকে সরে আসে সে। অত্যন্ত কাছে যেয়ে দাঁড়ায় মেহমাদ শাহের।

চোখে চোখ রেখে শুধায়,
“আপনার বিবাহের স্বপ্নে অগ্নি দিলাম। আপনি চন্দ্রপ্রভাকে কখনোই পাবেন না। আপনার আঙিনায়, বাগানে একমাত্র চন্দ্রমল্লিকার বাস হবে। যেখানে তাকাবেন, সেখানেই আমি থাকবো। তবে আমাকেও পাবেন না আপনি। আর এই উপহারটাও গ্রহণ করলাম, কারণ আপনার সবকিছুতেই শুধু আমার অধিকার।”

যামিনী কথাটা বলেই নৈশব্দে শয্যায় যেয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়। সে গমন করতেই মেহমাদ শাহের গম্ভীর মুখশ্রীতে এক গাল হাসি ফুটে উঠে।

কিশোরীর তেজস্বী, ক্রুব্ধ ও গর্বিত রূপ তার নিকট অপছন্দনীয় কি আদৌ? তবে তার মনে উদিত প্রশ্ন হলো, এই গোপনীয় তথ্য সম্পর্কে তো সে নিজেই জ্ঞাত নয়, তবে কে জানালো? যদিও প্রশ্নটির উত্তর নিয়ে এখন মাথা ঘামাতে ইচ্ছুক নয় সে।

ধীর পায়ে এগিয়ে শয্যার পাশের চৌপায়ায় রাখা কাঠের বাক্সটি থেকে আংটিটি পরিয়ে দেয় তার প্রেয়সীকে। ললাটে ভালোবাসা সিক্ত স্পর্শ এঁকে আপন মনে বিড়বিড়ায় সে,
“আমার বাচ্চা বাঘিনী।”

___

এসপি সাহেব এসেছেন বেগম লুৎফুন্নেসার সাথে সাক্ষাৎ করতে। অনুমতি পেয়ে কক্ষ প্রবেশ করে সে।

“আসসালামু আলাইকুম, বেগম লুৎফুন্নেসা। আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘায়ু দান করুক।”

“ঠিক আছে, ঠিক আছে। কিন্তু তুমি এখানে কী করছো? তোমাকে আমি শেরপুর ত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছিলাম আমি।”

“আপনার আদেশ আমার জন্য সর্বপ্রথম। তবে প্রথমে এই চিঠিটা পড়ে নিন।”

প্যান্টের পকেট হতে ছোট্টো কাঠের বাক্সটি বেড় করে। খুলে চিঠিটি বেড় করে এগিয়ে ধরে। বেগম লুৎফুন্নেসা ইশারা করে আয়েশা খাতুনকে। তিনি নিয়ে আসেন চিঠিটি।

তা পড়ে শক্ত দৃষ্টিতে তাকায়।
“তুমি যেতে পারো। শুধু এ বারের জন্য তোমার ত্রুটি ক্ষমা করলাম, পরের বার এমন হাজারটা চিঠিও কাজে আসবে না।”

এসপি মাথা ঝুঁকে মাথা উপর নিচ করে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। কক্ষের দ্বার হতে বাহিরে পা রাখতেই তার মুখশ্রীতে বিস্তীর্ণ হাসি ফুটে উঠে।

বিড়বিড়ায়,
“জাদুর বাক্স! জাদুর বাক্স! সব কাজই সমাপ্ত করে জাদুর বাক্স।”
১৫|
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=294337036027723&id=100063542867943
চলবে…
দুঃখিত, গতকাল না দিতে পারায়। পোস্ট দেওয়ার পর স্কুল থেকে টেক্সট আসে ভ্যাক্সিন দিব আজকে, প্যারেন্টস্ যাবে না, স্কুল থেকে কেন্দ্রে নিয়ে যাবে। আমার ইনজেকশন ফোবিয়া, ছোটোবেলায় টিকার সূচ ভেঙে রক্তারক্তি দশা হয়ে গিয়েছিল একবার এরপর থেকে। আম্মু থাকলেও সাহস থাকতো। আবার টিকা দেওয়ার পর আম্মু-আব্বুকে অসুস্থও দেখেছিলাম। আমি টেনশনে আর একটা শব্দও লিখতে পারি নাই আর, সারা রাত ঘুমাইনি। আলহামদুলিল্লাহ, কাকলি স্কুল এন্ড কলেজের ডাক্তার আপুগুলো খুবই ফ্রেন্ডলি ছিল। তো হাত নাড়তে মানা করেছিল আধা ঘণ্টা আমি অসুস্থ হওয়ার ভয়ে বাসায় এসে নাপা খেয়ে ছয়টা অবধি ঘুম দিসি আর লিখা হয়নি তাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here