চলো ভিজি বৃষ্টিতে পর্ব-২৪

0
803

বিঃদ্রঃ খুবই দুঃখিত এই কদিন গল্প দিতে পারিনি😐 হাতের তালুতে গরম তেল পড়েছিলো তাই লিখতে পারিনি😑
#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
২৪

আফসা চমকে উঠে জিজ্ঞেস বলল,” দশ লক্ষ টাকা! হটাৎ এতো টাকা কিসের জন্য লাগবে!!?

রিয়া বলল,” গতকাল অফিসে রিজাইন দিতে গেছিলাম। কিন্ত সেখানে নাকি এক বছরের আগে নিউ এমপ্লয়িরা রিজাইন দিতে গেলে নগদ দশ লক্ষ টাকা পে করতে হবে!

আফসা একটু ভেবে বলল, ” আংকেলকে বললেই তো টাকাটা তোকে দিয়ে দেবে।

রিয়া বলল, ” আব্বুকে বললে তো দেবে ঠিকাছে। বাট যখন জিজ্ঞেস করবে কিসের জন্য এতো টাকা লাগবে! তখন কি বলবো!!? রিজাইন দেবো বললেই নানান প্রশ্ন করতে থাকবে! কেন রিজাইন দেবো!! কি হয়েছে না হয়েছে!!!

আফসা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল,” আমিও তো বুঝতে পারছিনা, তুই হটাৎ রিজাইন দিচ্ছিস কেন!!?

রিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা, তার তো মেমোরি লস হয়ে গেছে অতএব আরহামের ব্যাপারে তার কিছুই মনে নেই। তাহলে কেন রিজাইন দেবে সে!?

আফসা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে। রিয়ার কি তাহলে সবকিছু মনে পড়ে গেছে!? কিন্ত মনে পড়লে তো আমাকে বলতো!!

রিয়া একটু ভেবে আমতা-আমতা করে বলল, ” আরে আমার তো নেক্সট মান্থে বিয়ে! ফাইয়াযের সাথে কানাডা চলে গেলে তখন কিভাবে জব করবো!?

আফসা মাথা নাড়িয়ে বলল, ” তা তো ঠিক, এক কাজ কর না। ফাইয়ায ভাইয়াকে বল টাকাটা দিতে, সে তো তোর ফিয়ন্সে। এছাড়াও কদিন পর তুই তো তার বউ হবি!!

রিয়া মাথা নাড়িয়ে না করে বলল, ” বউ হবো, এখনও তো হইনি! বিয়ের আগেই হবু বরের কাছ থেকে এমন মোটা অংকের টাকা নিয়েছি শুনলে লোকে কি বলবে বল তো !!! আর সাথে তো রিলেটিভসদের কটু কথা ফ্রি!!

আফসা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,” দ্যাখ, মানুষ টাকা দিয়ে চাকরিতে ঢোকে আর তুই কিনা ছাড়ার জন্য এতো টাকা দিবি! তার চেয়ে ভালো হবে তুই অফিসে যা, মন দিয়ে কাজ কর!! মাত্র তো পাঁচটা মাস, দেখবি দেখতে দেখতেই কেটে যাবে!!!

রিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বলল, ” হুম, ঠিকই বলেছিস।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ফোনের রিংটোন পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল ফাইয়াযের, আড়মোড়া ভেঙে ফোন হাতে নিয়ে দেখল মেসেঞ্জারে কল দিয়েছে আরশি!
ফোনে ওয়াই-ফাই অফ করতে ভুলে গেছিলো ফাইয়ায!!

কল রিসিভ করতেই আরশি মিষ্টি হেসে বলল, ” গুড মর্নিং!

আরশির কন্ঠ শুনে ফাইয়ায মুচকি হেসে বলল, ” গুড মর্নিং!!

আরশি ব্যালকনিতে এসে ফাইয়াযের সাথে কথা বলতে বলতে টবে লাগানো ফুল গাছ গুলোয় পানি দিচ্ছে। আজকাল সবকিছুই খুব ভালো লাগছে তার!

ওপরের নীল আকাশ! ভেসে চলা মেঘের ভেলা! তার নিচ দিয়ে ঝাকে ঝাকে উড়ে যাওয়া পাখির দল!
হালকা বাতাসে দুলতে থাকা গাছের পাতা গুলো!

সবকিছুই যেন খুব ডিপলি ফিল করছে আরশি, এর আগে কখনও এমন ফিল হয়নি তার!
.
.
.
.
.
হটাৎ ভাইয়ের ডাকে সম্বিত ফিরল আরশির তাড়াতাড়ি কল কেটে দরজা খুলল আরশি।
আরহাম ভেতরে ঢুকে বলল, ” কিরে! কার সাথে কথা বলছিলি!? কখন থেকে ডাকছি!!

আরশি জোর করে হেসে বলল, ” মম! মমের সাথে কথা বলছিলাম! তুই কি বের হচ্ছিস!?

আরহাম বলল,” হুম, অফিস যাচ্ছি! তুই যাবি না!?

আরশি বলল, ” হ্যাঁ যাবো তো! তুই যা, আমি রেডি হয়ে আসছি!! অফিসে দেখা হবে।

আরহাম আচ্ছা বলে বেরিয়ে গেল, আরশি রেডি হতে লাগল।

আরহাম সিড়ি বেয়ে নামতেই কেয়া ডেকে বলল, ” স্যার! আপনার সাথে কিছু কথা আছে!!

আরহাম হাতের ঘড়িতে তাকিয়ে বলল,” কেয়া সিরিয়াস কিছু হলে বলো, নাহলে বাসায় ফিরে শুনবো! আমাকে এখনই বের হতে হবে!!

কেয়া ভাবছে, আরশি ম্যামের ব্যাপারটা এমন তাড়াহুড়ায় বলা উচিৎ হবে না। তার চেয়ে স্যার বাসায় ফিরুক তখন বলবো।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
শোভনের ঘুম ভেঙে গেল মায়ের ডাক পেয়ে, আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল সে।
শোভনের মা মিসেস সানজিদা ছেলের রুমে ঢুকে সব গোছাতে গোছাতে বলল, ” কি অবস্থা করে রেখেছিস ঘরটার!? আর কটা বাজে খেয়াল আছে!!? আজ কি হসপিটাল যাবিনা!! নাকি!?

শোভন তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিয়ে দেখল সকাল সাড়ে দশটা বাজে!
বেড থেকে নেমেই এক ছুটে ওয়াশরুমে ঢুকল সে।

গতরাতে আফসার বাসায় গিয়ে যে বিপাকে পড়েছিলো!
তা মনে উঠলে এখনও গায়ে কাটা দিচ্ছে তার। তাও ভালো ওদের বাসা থেকে বেরিয়েই একটা সিএনজি পেয়েছিলো!

বাসায় ফিরে সেই যে ঘুম দিয়েছে আর এখন উঠল শোভন।
রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো শোভন, কিচেন থেকে খাবার এনে ডাইনিং টেবিলে সাজাচ্ছে শোভনের ভাবি ইশি।

শোভনকে বেরিয়ে যেতে দেখে ইশি ভ্রু নাচিয়ে বলল,” কি ব্যাপার দেবরজি! আজ উঠতে এতো দেরি হল যে!!

শোভন হেসে বলল, ” প্রতিদিন তো ভোরেই উঠি, আজ ভাবলাম একটু লেট এ উঠবো!

ইশি মুচকি হেসে বলল, ” ও ও ও! আচ্ছা এসো, খেয়ে নাও।

শোভন না করে বলল, ” অনেক লেট হয়ে গেছে ভাবি, বাইরে থেকে খেয়ে নেবো!
বলেই দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো শোভন, মিসেস সানজিদা ডাইনিং এ বসতে বসতে বলল,” শোভন চলে গেছে!?

ইশি প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল, ” হুম। বলছি মা, এবার তো ওর জন্য মেয়ে দেখতে হবে।

মিসেস সানজিদা হেসে বলল, ” অতো দেখাদেখির কি আছে!? হাতের কাছে মেয়ে থাকতে! খুজতে যাবো কেন!?

ইশি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” হাতের কাছে! আপনি কার কথা ভাবছেন বলুন তো!

মিসেস সানজিদা খেতে খেতে বলল, “লিলির বড় মেয়েকে না আমার বেশ পছন্দ। বেশ অমায়িক ব্যবহার মেয়েটার।

ইশি বাধা দিয়ে বলল, ” মা প্লিজ! শোভন শুনলেই না করে দেবে শিওর!! এমনিতেই লিলি ফুপুর বড় মেয়েটা কেমন যেন লাজলজ্জাহীন টাইপ!! আমাকেই তো বউভাতের দিন সবার সামনে কি লজ্জায় না ফেলেছিলো!!

মিসেস সানজিদা ইশিকে হালকা ধমক দিয়ে বলল,” লাজলজ্জাহীন কেন বলছো বউমা! মেয়েটা একটু দুষ্টু, এই যা!!

ইশি খেতে খেতে বলল, ” থাক বাবা, আমি কিছু বলবো না। শেষে যত দোষ আমার হবে! শোভন যদি রাজি হয়, আমার কিছু বলার নাই!!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
অফিসে ঢুকে নিজের কেবিনে যাওয়ার পথে থমকে গেল আরহাম।
খেয়াল করল রিয়া তার ডেস্কে বসে মন দিয়ে কাজ করছে!
আরহাম স্মিত হেসে দিল, মনেমনে বলল, ” আমি জানতাম তুমি আসবে রিয়া!

রিয়ার ডেস্কের সামনে গিয়ে দাড়ালো আরহাম, রিয়া বুঝতে পেরেছে তার সামনে এখন কে দাঁড়িয়ে আছে! উফফ কি একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি!!

রিয়া নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে উপরে তাকালো।
আরহাম শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, ” ওয়েলকাম রিয়া!

রিয়া বলদের মতো হেসে বলল, ” থ্যাথ্যাংক্স!

আরহাম নিজের কেবিনের দিকে যেতে যেতে বলল, ” এসব রেখে আমার জন্য কফি নিয়ে এসো।

রিয়া হালকা চেচিয়ে বলল, ” হ্যাঁ হ্যাঁ আনছি!

বলেই গটগট করে কিচেনের দিকে গেল রিয়া, কফি বানাতে বানাতে বলছে, ” সারাদিন এতো কফি কিভাবে খায় আল্লাহ মাবুদ জানে! তাও আবার উইদাউট সুগার!! সারাদিন উইদাউট সুগার কফি খেলে মুখ দিয়ে তো তেতো কথাই বের হবে!!!

এক মগ কফি বানিয়ে আরহামের কেবিনের দরজায় নক করল রিয়া।
ভেতরে ঢুকে গটগট করে গিয়ে কফির মগ রেখে চলে আসতে গেলে আরহাম ডেকে বলল, ” রিয়া! আজ লাঞ্চে বাইরে যাবো।

রিয়া বুঝল আরহাম তাকে নিয়ে লাঞ্চে যেতে চাচ্ছে, কিন্তু সে তো আরহামকে সুযোগ দেবে না!
রিয়া না বোঝার ভান ধরে বলল, ” ওকে আরহাম স্যার, তো আপনার জন্য কোন রেস্টুরেন্টে বুকিং দিবো!!?

আরহাম দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে বলল, ” অলরেডি বুকিং দেওয়া হয়ে গেছে রিয়া, তুমি রেডি থেকো কজ তুমিও যাবে।

রিয়া একটু ভাব দেখিয়ে বলল, ” স্যরি স্যার, আজ লাঞ্চে আমার ফিয়ন্সের সাথে যাবো। ওকে আগে থেকে বলে রেখেছি সো।

আরহাম দাতে দাত পিষে বলল, ” এটা বিজনেস মিটিং মিস রিয়া! সো কাইন্ডলি তোমার সো কল্ড ফিয়ন্সেকে বলে দিও যেন লাঞ্চ টাইমে বারবার কল করে তোমাকে ডিস্টার্ব না করে!!

রিয়া কিছুটা থতমত খেয়ে বলল, ” ও ও, আচ্ছা।
একটু ভেবে আবার বলল, ” তো, আমাকে কেন বলছেন! চিত্রা ম্যামকে নিয়ে যান!! উনিই তো আপনার এসিস্ট্যান্ট!!!

আরহাম রিয়ার দিকে এগিয়ে এসে দুহাত পকেটে ঢুকিয়ে বলল,” কোম্পানির বস আমি নাকি আপনি!? মিস রিয়া!!

আরহাম এতটা কাছে আসায় রিয়া বেশ নার্ভাস ফিল করছে, আমতা-আমতা করে বলল, ” অবশ্যই আপনি! আমি কেন হতে যাবো!!? আজব!!!

আরহাম রিয়ার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলল, ” সো, বস কে কুয়েশ্চন না করে কাজে মন দিন।

রিয়া আচ্ছা বলে একরকম ছুটে বেরিয়ে এলো আরহামের কেবিন থেকে।
আর একমুহূর্ত ওখানে থাকলে আরহাম নির্ঘাত কিছু একটা করে বসতো!!
.
.
.
আরহামের কেবিন থেকে বেরিয়েই চিত্রার সাথে ধাক্কা খেলো রিয়া, চিত্রা তো ভূত দেখার মতো চেচামেচি করতে লাগলো।

রিয়াও সেইসাথে চেচিয়ে উঠল, আশপাশের কয়েকজন স্টাফ এদের চেচামেচি শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠল।

চিত্রা কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলল, ” রিয়া! তুমি তো আমাকে ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলে!!

রিয়া বিরক্ত হয়ে নিজের ডেস্কে যেতে যেতে বলল, ” ভয় তো আমি পেয়েছি! উফফ কি ডেঞ্জারাস লোকটা!! খাটাশ কোথাকার!!!
বলেই মনেমনে আরহামের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগল রিয়া।
.
.
.
লাঞ্চ টাইমে অফিস থেকে বেরিয়ে এলো রিয়া, কিছুক্ষণ পর গাড়ি নিয়ে এসে দাড়ালো আরহাম। রিয়াকে উঠতে বলল সে, রিয়া উঠে বসতেই ড্রাইভ করতে লাগল আরহাম।

একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে রিয়া। না, এখানে অফিসের কেউই আসেনি আরহাম আর সে ছাড়া।

আরহাম বসতে বসতে বলল, ” কাউকে খুজছো!?

রিয়া থতমত খেয়ে বলল, ” না, মানে দেখছিলাম যে রেস্টুরেন্টটা খুব সুন্দর!

আরহাম হেসে বলল, ” হুম, তোমার পছন্দ হয়েছে!

রিয়া স্মিত হেসে মাথা নাড়ালো, আরহাম কাকে যেন কল দিচ্ছে।
রিয়া আড়চোখে আরহামকে দেখতে ব্যস্ত, আরহামের চোখের নিচে হালকা কালি পড়েছে!
আরহাম কি রাতে ঠিকমতো ঘুমায় না!! এতটা অগোছালো কেন ছেলেটা!!

দেখে মনে হচ্ছে যেন বহুদিন ধরে ঘুমায়না সে! চোখের নিচে জমা কালি গুলো তারই জানান দিচ্ছে!!
তবে মানতে হবে তাতে আরহামের সৌন্দর্য্য একফোঁটা কমেনি!!

আরহামের মাথাভর্তি ঝাকড়া চুল গুলোতে আঙুল ছোয়াতে মন চাচ্ছে রিয়ার।
ওর চোখের পাপড়ি গুলো খুব ঘন! ওগুলোই আরহামের চোখ জোড়াকে বেশি সুন্দর করে তুলেছে!

আরহাম ওয়েটার ডেকে খাবার অর্ডার করল, সব গুলোই রিয়ার ফেভারিট আইটেম!
আরহামের এখনও মনে আছে!! রিয়ার পছন্দের খাবার গুলো!!!

আরহাম শার্টের ওপরের কয়েকটা বোতাম খুলে দিয়ে রিল্যাক্স হয়ে বসল।
এদিকে রিয়ার অবস্থা খারাপ, শার্টের ওপর দিয়ে আরহামের বুকের পশম দেখে যেন নেশা ধরে গেছে তার!!

রিয়াকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরহাম ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” কি ব্যাপার! এভাবে কি দেখছো!!?

রিয়া নিজেকে সংযত করে বলল, ” না মানে, আমি আসলে!

আরহাম রিয়ার হাবভাব বোঝার চেষ্টা করছে, রিয়া হটাৎ করে বলল, ” বিজনেস মিটিং! হ্যাঁ বিজনেস মিটিং!! আমি মিটিংয়ের ব্যাপারে ভাবছিলাম, তো কি নিয়ে, আই মিন কি ব্যাপারে মিটিং হবে আরহাম স্যার!!!?

আরহাম কিছু বলার আগেই ইকরা এসে দাড়ালো, রিয়া জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরহামের দিকে। ইকরা আরহামের সাথে হ্যান্ডশেক করে রিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।

রিয়া না চাইতেও হ্যান্ডশেক করল, মনেমনে বলল, ” এই ডাইনীটা আবার এখানে কি করছে!?

ওয়েটার খাবার দিয়ে গেছে, আরহাম খেতে খেতে বলল, ” অফিসে অনেক কাজ বাকি সো বেশি সময় না নিয়ে মেইন কথায় আসি ইকরা!

ইকরা ঢং করে বলল, ” হ্যাঁ শিওর, বলো আরহাম।

রিয়া মুখ ভেংচি কেটে মনেমনে বলল, ” ঢং দেখো এর! ইচ্ছে করছে এর ঘোড়ার লেজের মতো চুলে এক ড্রাম এসিড মেরে দি!!!!

আরহাম বলল,” কোম্পানির যে বিশ পার্সেন্ট শেয়ার তুমি কিনেছিলে, সেটা ফেরত দিয়ে দাও।

ইকরা একবার রিয়ার দিকে তাকিয়ে আরহামকে বলল, ” কিন্ত কেন!?

আরহাম ভাবলেশহীনভাবে বলল,” আমি চাইনা কোম্পানিতে আরশি আর আমি ছাড়া অন্য কোনো পার্টনার থাকুক!

ইকরা একটু ভেবে বলল, ” দেখো আরহাম, তোমাদের সাথে কাজ করেছি প্রায় একবছর। তো একবছর আগে যত দিয়ে শেয়ার কিনেছিলাম, এবার তার ডাবল দাও আমি শেয়ার ফিরিয়ে দিবো।

আরহামের রাগে কপালের শিরা গুলো ফুলে উঠেছে, সে বুঝতে পারছে ইকরা শেয়ার ফিরিয়ে দিতে চায় না।

ইকরা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে খেতে লাগল, আরহামের সাথে পার্টনারশীপ শেষ হয়ে গেলে আরহামকে নিজের করে পাবেনা সে। তাই যেভাবেই হোক শেয়ার সে ফেরত দেবে না!

রিয়ার কাছে ব্যাপারটা খুব একটা সুবিধার লাগছে না। এই ইকরাটাকে প্রথম থেকেই সহ্য হয় না তার।
কিন্ত আরহাম কেন এমন করছে! ইকরার সাথে আরহামের কি তাহলে ব্রেকাপ হয়ে গেছে!!
ভাবতেই কেমন যেন খুশি খুশি লাগছে রিয়ার!!!

আরহাম কিছুক্ষণ চুপ থেকে চেকবই বের করে টাকার এমাউন্ট লিখে একরকম ছুড়ে মারল ইকরার দিকে!

রিয়া এমাউন্ট দেখতেই চমকে উঠল!!আশি লক্ষ টাকা! মানে চল্লিশ লক্ষ টাকা দিয়ে শেয়ার কিনেছিলো ইকরা, বছর না যেতেই ডবল চাইছে!! এতো দিনেদুপুরে ডাকাতি!!!

আরহাম চেকটা ছুড়ে মারায় বেশ অপমানিত হল ইকরা, চেকটা নিয়ে ছিড়েখুঁড়ে ফেলে বলল,” শেয়ার আমি ফেরত দেবোনা আরহাম, তোমার যা ইচ্ছা তাই করো!

বলেই গটগট করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল ইকরা, আরহাম নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।
রিয়া হতবাক হয়ে বলল, ” আরহাম! আপনি ঠিকাছেন!!?

আরহাম উত্তর না দিয়ে উঠে যেতে যেতে বলল, ” চলো রিয়া!
রিয়াও আর কিছু না বলে সেইসাথে ছুটল আরহামের পিছুপিছু।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুমু, কিছুক্ষণ আগে তার মা একটা গাড় বেগুনি রঙের শাড়ি দিয়ে গেছে পরতে।

সুমু শাড়ি পরে চুল গুলো মাঝখান থেকে সিথি কেটে আচড়ে নিল।
শাড়ির গাঢ় সোনালী পাড়ের সাথে মিলিয়ে কানে এয়ারিং পরেছে সুমু, হাতে অ্যান্টিকের চুড়ি আর ঠোটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক মেখে মাথায় হালকা ঘোমটা টেনে দিল সে। হুম পার্ফেক্ট!

ফোনের রিংটোন পেয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখল সায়ন কল দিয়েছে!
কিন্ত এখন কথা বলা যাবে না, নাহলে সব গুলিয়ে ফেলবে সে। আগে এই পলাশের একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

ফোনটা সাইলেন্ট করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো সুমু, বারান্দায় বসে আছে পলাশের বাবা, মা, বড় ভাই, ভাবি, তাদের এক মেয়ে আর পলাশ।

সুমুর বাবা গণি তাদের সাথে বসে খোশগল্পে মেতেছে। মিসেস সালেহা ট্রেতে করে নাস্তা দিচ্ছে তাদেরকে।
সুমু দরজার সামনে গিয়ে দাড়াতেই মিসেস সালেহা স্মিত হেসে বলল, ” আয় সুমু! এদিকে এসে বয়!!

সুমু সবাইকে সালাম দিয়ে একটা চেয়ারে গিয়ে বসল। পলাশের বাবা হেসে বলল, ” তা মা, কিসে পড় এখন!?

সুমু অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল, ” কেন! আমার আব্বু আম্মু আপনাদের বলেনি!?

সুমুর কথা শুনে বেশ ভড়কে গেল সবাই! মিসেস সালেহা দাতে দাত পিষে সুমুকে বলল,” সুমু! কি হচ্ছে টা কি!

সুমু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” কই কি হচ্ছে!!?

পলাশের বাবা থতমত খেয়ে বলল, ” না মানে, বলেছে

পলাশের বাবাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সুমু বলল, ” তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন!? আপনার টার্ম শেষ!!

পলাশের মায়ের দিকে তাকিয়ে সুমু বলল, ” এবার আপনার টার্ম!

পলাশের মা একটা ঢোক গিলে বলল,” আমি!
সুমু মুচকি হেসে বলল, ” জ্বি আপনি!

পলাশের মা একবার তার স্বামীর দিকে একবার তার ছেলের দিকে তাকাচ্ছে।

সুমু ধৈর্য্য হারিয়ে বলল, ” কি ব্যাপার! আপনার কিছু জানার নেই নাকি!!?

পলাশের মা আমতা-আমতা করে বলল, ” না আছে তো!

সুমু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” তাহলে বলছেন না কেন!!!?

পলাশের মা অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,” মা আমি প্রেশারের রোগী! এতোকিছু বলে আমাকে এক্সাইটেড করে দিও না!! আমার প্রেশার হাই হয়ে যায়!!!

সুমু চোখ বড়বড় করে বলল,” ওহ নো! আপনার হাই প্রেশার!! শিগগিরই উঠে দাড়ান!!!

পলাশের ভাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” কেন! মা উঠে দাঁড়াবে কেন!!?

সুমু পেয়ারার বাটি নিয়ে খেতে খেতে বলল, ” আরে বসে থাকলে তো ওনার প্রেশার বেড়ে যাবে, হাটাচলা করুক ঠিক হয়ে যাবে!!

পলাশের মা অগত্যা উঠে হাটাহাটি করতে লাগল। সুমুর কান্ডকারখানা দেখে মিসেস সালেহা আর গণি শুধু চাওয়াচাওয়ি করছে!

সুমু পেয়ারা শেষ করে মিষ্টির বাটি নিয়ে বলল,” আন্টি! এবার আপনি বসে পড়ুন!!

পলাশের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে সুমু বলল, ” তো এবার আপনার টার্ম ভাইয়া!

এদিকে পলাশ খুব নার্ভাস ফিল করছে, এই মেয়ে যেভাবে তার পরিবারকে নাচাচ্ছে! বিয়ের পর তো তাকে বাদর নাচ নাচাবে শিওর!!

পলাশের ভাইয়ার বেশ বিরক্ত লাগছে ব্যাপারটা, সে বেশ সিরিয়াস মুডে বলল,” পড়াশোনা কমপ্লিট করে জব করার ইচ্ছা আছে নাকি শুধুই হাউজওয়াইফ হয়ে সংসার সামলানোর ইচ্ছা!?

সুমু একটু ভেবে বলল, ” বরের টাকা ওড়াবো শুধু! শপিং করবো, ফ্রেন্ডসদের সাথে হ্যাংআউটে যাবো আর বরের সাথে ওয়ার্ল্ড ট্যুর দেবো!!

সুমুর কথা শুনে পলাশের মায়ের প্রেশার হাই হয়ে যাচ্ছে, পলাশের ভাই তো হতবাক হয়ে গেছে।
সুমু বলল, ” আপনার টার্ম শেষ ভাইয়া!

পলাশের ভাবির দিকে তাকিয়ে বলল, ” এবার আপনি!

পলাশের ভাবি দাত কেলিয়ে হেসে বলল,” রান্নাবান্না পারো বোন!?

সুমু মুখে প্রশস্ত একটা হাসি দিয়ে বলল, ” পারি না বোন!

পলাশের ভাবি আরও কিছু বলার আগেই পলাশের দিকে তাকালো সুমু! পলাশ সচকিত হয়ে বলল, ” এবার আমি তাই তো!

সুমু মিষ্টির বাটি রেখে নুডলস এর বাটি নিয়ে বলল, ” এক্স্যাক্টলি পশাল! আই মিন পলাশি!! ধুরো পলাশ!!!

পলাশ নিজের নামের এমন বারোটা বাজতে দেখে তার কান্না পাচ্ছে! তার দাদু কত শখ করে তার নামটা রেখেছিলো!!
পলাশ নিজেকে সামলে নিয়ে কাচুমাচু করে বলল, ” আমরা কি একটু আলাদা করে কথা বলতে পারি!?

সুমু তড়িৎ গতিতে বাটি রেখে উঠে বলল, ” হোয়াই নট!? লেটস গো!!
বলেই হনহন করে নিজের রুমে চলে গেল সুমু, পলাশও গেল তার পিছুপিছু।
.
.
.
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here