চলো ভিজি বৃষ্টিতে পর্ব-৩২

0
861

#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
৩২
.
.
.
.
.
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে ব্যস্ত রিয়া, ফোনের রিংটোন পেয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল আরহাম কল দিয়েছে!
নিশ্চয়ই এসে গেছে!! আর সে এখনও চুলটাই ঠিক করতে পারেনি!!!

কল রিসিভ করতেই আরহাম বলে উঠল, ” রিয়া কই তুমি!

রিয়া আমতা আমতা করে বলল, ” এই তো রেডি হচ্ছি, তুমি কোথায়!?

আরহাম কার থেকে নেমে বলল,” শ্বশুরবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এখন তুমি তাড়াতাড়ি নামবে নাকি আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসবো!!?

রিয়া দ্রুত মাথা নাড়িয়ে না করে বলল, ” না না না, আমি এক্ষুনি চুলটা বেধেই চলে আসছি।

আরহাম রিয়ার কারে হেলান দিয়ে বলল, ” বাধার দরকার নেই, খোলা চুলেই নেমে এসো।

রিয়া আচ্ছা বলে কল কেটে দিল, চুল গুলো একসাইডে দিয়ে বেরিয়ে এলো।
মিসেস ইরা ডাইনিং এ প্লেট সাজাতে সাজাতে বলল,” আয় ব্রেকফাস্ট করে নে।

রিয়া বাসা থেকে বের হতে হতে বলল,” লেট হয়ে গেছি আম্মু! অফিসে আজকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে!!

মিসেস ইরা ভ্রু কুচকে বলল,” এই মেয়ের হাবভাব আজকাল বুঝিনা আমি। সারাক্ষণ অফিস আর মিটিং! এই সপ্তাহেই বিয়ে সেটাও বোধহয় ভুলে খেয়েছে!!
.
.
.
.
.
রিয়া গেট খুলে বেরিয়ে দেখল কারের সাথে হেলান দিয়ে দুহাত পকেটে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরহাম।
ডিপ ব্লু কালারের শার্ট আর ব্ল্যাক কালারের জিন্স পরেছে সে। মুখে সেই পাগলকরা হাসি!

রিয়ার যেন হুস নেই কোনোদিকে, হা করে আরহামকে দেখছে সে।
আরহাম রিয়ার সামনে একটা তুড়ি বাজাতেই সম্বিৎ ফিরল রিয়ার।
আরহাম এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিল কেউ তাদের দেখছে কিনা।

আস্তেধীরে রিয়ার কাছে গিয়ে নেশা জড়ানো কন্ঠে বলল,” আজ আমাকে পাগল করার প্ল্যান করেছো নাকি!

চমকে উঠল রিয়া, আরহামকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রিয়া বলে উঠল, ” আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে স্যার!

কারে ঢুকে বসতে বসতে বলল,” নিন চলুন!

আরহাম হেসে বলল, ” আচ্ছা, চলো।

ড্রাইভিং সীটে বসে ড্রাইভ করতে লাগল আরহাম, মাঝেমাঝে আড়চোখে রিয়াকে দেখছে সে।

রিয়া আজ ব্ল্যাক কালারের শর্ট গাউন পরেছে, ঠোঁটে দিয়েছে হালকা রেড লিপস্টিক।
যদিও আরহামের জন্যই নিজেকে একটু সাজিয়েছে সে, কিন্ত আরহাম যে তাকে দেখে পুরা ফিদা হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি রিয়া।
সবকিছু কেমন যেন তার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে! যদি ঘুম ভেঙে দেখে সব মিথ্যে!!

আতংকিত হয়ে মনেমনে বলল, ” আল্লাহ! আমাদের দুজনকে কখনও আলাদা হতে দিওনা!!

হটাৎ হাতে নরম স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠল রিয়া, আরহাম তার হাত নিয়ে চুমু খেয়ে বলল,” রিয়া আ’ম সো লাকি যে, লাইফে আমি তোমাকে পেয়েছি!

রিয়া সলজ্জ হেসে বলল, ” আমিও আরহাম!

আরহাম রিয়াকে টেনে নিয়ে এক হাতে জড়িয়ে অন্য হাত দিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলল,” আমাকে কখনও ছেড়ে যেওনা রিয়া!

রিয়া আরহামের বুকে গুটিশুটি মেরে বলল,” কখনও যাবোনা, আমরা কখনও আলাদা হবোনা আরহাম।

আরহাম প্রশান্তির হাসি দিয়ে গভীর চুমু খেলো রিয়ার কপালে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আফসা রেডি হয়ে সুমুর রুমের দরজায় নক করল, বেশ কয়েকবার নক করার পর জবাব এলো,” আজ কলেজ যাবো না তুই যা!

আফসাও আর জোর করল না, সায়নের সাথে ব্রেকাপ হওয়ার পর থেকে সুমু নিজেকে একেবারে ঘরকুনো করে রেখেছে।
এ ব্যাপারে রিয়ার সাথে কথা বলা দরকার, দরজা লক করে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো আফসা।

ঘড়িতে মাত্র নয়টা বাজে, বুটিক হাউজে যাওয়ার আগে একবার শোভনের চেম্বারে গেলে কেমন হয়!
যেই ভাবা সেই কাজ, একটা সিএনজি নিয়ে সোজা হসপিটালের দিকে রওয়ানা দিল আফসা।

শোভনকে ভালবাসতে শুরু করেছে আফসা, কিন্ত কাছে গেলেই শোভন যেসব অদ্ভুত আচরণ করে তাতে মনে হয় যেন শোভন তাকে চায় না।
আবার নিজেই আফসার আশেপাশে ছায়ার মতো ঘুরঘুর করে! আসলে কি চায় শোভন!!.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বেডে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে ফাইয়ায, সামনে রাখা তার বিয়ের শেরওয়ানি!
গতকাল রিয়ার আব্বু আম্মুর সাথে গিয়ে বিয়ের শপিং করে এসেছে সে!! এই সপ্তাহেই বিয়ের প্রোগ্রাম!!!

রিয়াকে বিয়ে করতে এসে আরশির প্রেমে পড়ে গেছে সে!
তাও আবার যেমন তেমন প্রেম না, একেবারে টিনেজ লেভেলের প্রেম!!
রিয়াকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে নিজেই বিয়ের ডেট এগিয়ে এনেছিলো, এখন দিন যত যাচ্ছে আরশির থেকে দূরে যাওয়ার ভয় পাচ্ছে সে!!!

আরশি তো এটাও জানেনা যে তার সাথে রিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, আরশি জানে রিয়ার আব্বুর বন্ধুর ছেলে ফাইয়ায!
একদিকে রিয়া অন্যদিকে আরশি, আরও তো আছে দুই ফ্যামিলি!!
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা ফাইয়ায!!!
.
.
.
.
.
ফোনের রিংটোন পেয়ে ভাবনায় ছেদ পড়ল তার, ফোনস্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল আরশি কল দিচ্ছে!
আজ বিকালে দেখা করবে জানানোর জন্য আরশিকে কল দিয়েছিলো ফাইয়ায।
আরশি তখন কল রিসিভ করেনি, হয়তো কোনো কাজে বিজি ছিলো।
এখন কল ব্যাক করেছে, ফাইয়ায কল রিসিভ করে বলল, ” আরশি!

আরশি মিষ্টি হেসে বলল, ” স্যরি ফাইয়ায! ফোন সাইলেন্ট করে কিছু ডকুমেন্টস চেক করছিলাম, তাই খেয়াল করিনি।

ফাইয়ায স্মিত হেসে বলল, ” ব্যাপার না। আচ্ছা, তুমি আজ বিকালে ফ্রি আছো!?

আরশি একটু ভেবে বলল,” হুম, কেন!?

ফাইয়ায হাতের তালুতে কপাল ঘষতে ঘষতে বলল,” দেখা করতাম, তোমার সাথে কিছু দরকারি কথা আছে!

আরশি অবাক হয়ে বলল,” ঠিকাছে। বাট তোমার কি কিছু হয়েছে!?

ফাইয়ায মলিন হেসে বলল, ” কই নাতো, আচ্ছা রাখি। লোকেশন টেক্সট করে দিবনি।

বলেই কল কেটে দিল ফাইয়ায, আর কথা বলতে পারছেনা সে।
গলাটা কেমন যেন ধরে আসছে!! অনেক না বলা কথা এসে জমাট বেধেছে একসাথে!!!
.
.
.
.
.
ফাইয়াযের আচরণে বেশ অবাক হয়েছে আরশি, হটাৎ কি হল তার!
কন্ঠঃ শুনে বেশ চিন্তিত মনে হল ফাইয়াযকে!! মায়ের গলা পেয়ে সম্বিৎ ফিরল আরশির।

মিসেস আয়েশা কেবিনে ঢুকে স্মিত হেসে বলল, ” কার সাথে কথা বলছিলি!? বয়ফ্রেন্ড!!?

আরশি সলজ্জ হেসে বলল, ” না, আসলে!

মিসেস আয়েশা একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল, ” আর আসল নকল করতে হবে না, এসব দিন আমিও পার করে এসেছি! এখন ঝটপট বলে ফেল তো ছেলেটা কে!!?

আরশি মুচকি হেসে বলল, ” তুমি চিনবেনা, রিয়ার আব্বুর বন্ধুর ছেলে।
মিসেস আয়েশা ভ্রু উঁচিয়ে বলল,” ওহ হো! তা আমার সাথে দেখা করাবি কবে!? হুম্!!

আরশি একটু মন খারাপ করে বলল,” উফফ মম! এখনও প্রোপোজই করেনি আমাকে, আর তুমি দেখা করতে চাচ্ছো!

মিসেস আয়েশা হেসে বলল,” করেনি করবে, হয়তো সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছে!

আরশি স্মিত হেসে বলল, ” তাই যেন হয়।

মিসেস আয়েশা কিছু একটা ভেবে বলল, ” বাই দ্যা ওয়ে ফাইয়াযকে তোর আর আয়ানের ব্যাপারে বলেছিস তো!?

আয়ানের কথা মনে পড়তেই বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল আরশির!
সে তো আয়ানের ব্যাপারে বা ডিভোর্সের ব্যাপারে ফাইয়াযকে কিছুই বলেনি!!
আর এখন জানালে ফাইয়ায কি করবে!? সে কি আরশিকে ছেড়ে দেবে!!?
আর ভাবতে পারছেনা আরশি, দম বন্ধ হয়ে আসছে তার!!!

মিসেস আয়েশা খেয়াল করল আরশিকে বেশ নার্ভাস দেখাচ্ছে! চিন্তিত হয়ে বলল,” আরশি! আর ইউ ওকে ডিয়ার!?

আরশি কাপা কাপা গলায় বলল,” পাপানি খাবো!

মিসেস আয়েশা দ্রুত উঠে এক গ্লাস পানি নিয়ে এগিয়ে দিল আরশিকে।
ভীষণ তেষ্টা পাচ্ছে আরশির, মাথাটাও কেমন ঝিমঝিম করছে!
গ্লাসটা ধরার আগেই চোখের সামনে সবকিছু উলটে গেল তার!!
সেন্সলেস হয়ে পড়ে যেতে নিলে মিসেস আয়েশা দ্রুত গিয়ে ধরে ফেলল মেয়েকে।
চিৎকার করে স্টাফদের ডাকতে লাগল সে। মুহুর্তেই সবাই এসে আরশিকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করল।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে সায়ন, সেদিনের পর থেকে সুমু আর কল রিসিভ করেনি তার।
সায়নও আর কল দেয়নি সুমুকে, তবে আফসার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত খোজ খবর নেয় সে।

হটাৎ ফোনের রিংটোন পেয়ে চমকে উঠল সায়ন, ফোনস্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল সুমু কল দিয়েছে!

সায়ন সাথেসাথে ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করতে গিয়ে থেমে গেল।

কেন রিসিভ করবে সে!? আরও কয়েকবার দিক তারপর রিসিভ করবে।

ফোনটা আস্তে করে সাইডে রেখে দিল সায়ন, স্ক্রিনে সুমুর নামটা দেখেও মনেমনে অদ্ভুত শান্তি লাগছে তার।

কলটা কেটে গেল, সায়ন চাতকের মতো তাকিয়ে আছে আবার কল আসার। কিন্ত কল আর এলোনা!

ফোন হাতে নিতেই সুমুর টেক্সট এলো, ” এটাই আমার লাস্ট কল ছিলো আর এটাই আমার তোমাকে দেওয়া লাস্ট টেক্সট। আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি, হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবেনা। আর না হওয়াই ভালো, নয়তো নিজেকে আটকে রাখতে পারবোনা। ভালো থেকো!

টেক্সটটা পড়ে থ হয়ে গেল সায়ন, সুমু বাড়ি চলে যাচ্ছে মানে কি একেবারের জন্য!
নাহ এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা যায়না, এতো অভিমান!!
.
.
.
.
.
আফসাকে ভেতরে আসতে দেখে অবাক হলেও মনেমনে বেশ খুশি হয়েছে শোভন।
আফসা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” বসতে পারি!?

শোভন হাসি চেপে রেখে বলল,” হোয়াই নট! প্লিজ!!

আফসা আর দেরি না করে ধপ করে বসে পড়ল চেয়ারে, শোভন জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকালো আফসার দিকে।

আফসা আমতা-আমতা করে বলল, ” আমার আজকাল কেমন জানি হয়! রাতে ঠিকমতো ঘুম আসেনা!! এমনকি দিনেও না!!!

শোভন মাথা দুলিয়ে বলল, ” হুম বুঝেছি! তো কতদিন ধরে হচ্ছে এমন!?

আফসা সাথেসাথেই বলল,” আপনার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে!

বলেই জিবে কামড় দিল আফসা, মনেমনে বলল, ” এই রে! কি বললি এটা!! উফফ আফসা তুই আসলেই একটা গাধী!!!

আফসার কাচুমাচু করা মুখ দেখে আর হাসি চেপে রাখতে পারছেনা শোভন।
আফসাকে আরেকটু লজ্জা দিতে শোভন বলল,” আচ্ছা আপনি কি জানেন, আপনার গাল দুটো না খুব কিউট! ইচ্ছে করে টেনে দিই!!

আফসা চোখ বড়বড় করে তাকালো শোভনের দিকে, শোভন এক চোখ টিপ দিয়ে বলল,” আর আপনার চোখ গুলো তো আরও জোস!! পুরাই

শোভন আর কিছু বলার আগেই আফসা কাদোকাদো হয়ে বলে উঠল, ” এসব কি বলভহেন আপনি! আর আমাকে যদি এতই ভাল্লাগে তো অন্য মেয়ের সাথে এতো ঢলে ঢলে কথা বলেন কেন!?

আফসার কাদোকাদো ফেইস দেখে শোভন দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠে এলো।
দু’হাতে আফসার হাত দুটো ধরে বলল,” জানো, তুমি রাগ করলে আরও কিউট লাগে! আমাকে তোমার এই কিউট কিউট এক্সপ্রেশন গুলো কি আজীবন দেখার অধিকার দেবে আফসানা!? আই প্রমিজ রাগাবোও আমি রাগ ভাঙাবোও আমি!!!

আফসা মুহুর্তেই থমকে গেল, শোভন তাকে প্রোপোজ করছে! তাও কিনা হসপিটালের চেম্বারে বসে!!
অবশ্য আনরোমান্টিক এই ডাক্তারবাবুর কাছে এর বেশি আর কিই বা এক্সপেক্ট করবে আফসা!!!

বিড়বিড় করে বলল, ” আনরোমান্টিক একটা!

শোভন ভ্রু কুচকে বলল, ” কি বললে! মানে ক্লিয়ারলি শুনতে পাইনি!!

আফসা লজ্জায় অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,” আগে আমার ঘুমের একটা ব্যবস্থা করুন ডাক্তারবাবু!

শোভন তআর উত্তর পেয়ে গেছে, স্মিত হেসে বলল, ” তোমাকে ঘুম পাড়ানোর দায়িত্ব আজ থেকে আমি নিলাম মিস আফসা!

আফসা লজ্জায় আর তাকাতে পারছেনা শোভনের দিকে।
.
.
.
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here