চলো ভিজি বৃষ্টিতে পর্ব-৬

0
1245

#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam


.
.
.
.
.
মিটিং চলছে, আরহামের একপাশে চিত্রা বসে আছে।
অন্যপাশে বসে আছে রিয়া, এক এক করে ফাইল এগিয়ে দিচ্ছে আরহামের দিকে।

আরহামকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি গতকাল সন্ধ্যায়! মিটিং শেষে একে একে সবাই বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
আরহাম বের হতে গিয়ে দেখল, রিয়া ফাইলের ঝাপ নিয়ে খুব একটা সামলাতে পারছেনা!

আরহাম স্মিত হেসে বলল, ” সবটা নিতে পারবেনা, আমাকে দাও।

রিয়া কিছু বলার আগেই আরহাম অর্ধেকের বেশি ফাইল নিয়ে নিল।
রিয়া অবাক হয়ে তাকালো আরহামের দিকে। আরহাম সেদিকে না তাকিয়েই ফাইল গুলো নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

আরহামকে ঠিক বুঝতে পারছেনা রিয়া। কখনও মনে হয় আরহাম খুব ভালো মনের মানুষ। আবার মনে হয় সবটাই তার শো অফ, নিজের কার্য হাসিলের জন্য।
রিয়া একটা ছোট্ট শ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে এল রুম থেকে।
.
.
.
.
.
সুমু পপকর্ন খাচ্ছে আর অসহায় চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
সেদিন সায়নের দেওয়া লোকেশন ছিল একটা লেকের পাড়!
মিষ্টি কালারের থ্রিপিস পরে মাথায় ম্যাচিং হিজাব পরে গেছিলো সুমু।
আর সায়ন পরেছিলো ব্লু কালারের শার্ট আর জিন্স।

সায়নকে দেখে সেই প্রথম দিনের মতোই আবার ক্রাশ খেলো সুমু।
সায়ন হেসে বলল, ” আপনিতো এমনিই মিষ্টি দেখতে, আবার মিষ্টি পরেছেন!!!

সুমু লজ্জা আড়াল করে বলল, ” হয়েছে! অত তেল দিতে হবে না, যা বলার জন্য ডেকেছেন তাই বলুন।

সায়ন দুহাত পকেটে ঢুকিয়ে বলল,” বেশ! আমি যে আপনাকে পছন্দ করি তা তো আগেই বলেছি। বাট আপনি কিছু বলেননি, তো ব্যাপারটা ক্লিয়ার হওয়ার জন্য আমরা তিনমাসের জন্য রিলেশনে থাকবো। তিনমাস পর ঠিক এই জায়গায় এসে নিজেদের মতামত জানাবো যে, আমার মনে আপনার জন্য কি ফিলিংস! আর আপনার মনে আমার জন্য কি ফিলিংস!! মোট কথা তিনমাস পর আমরা নিজেদের ওপিনিয়ন জানাবো।

সুমু ভ্রু উঁচিয়ে বলল, ” আপনার কি মনে হয়না, ব্যাপারটা বেশ উইয়ার্ড!!?

সায়ন থতমত খেয়ে বলল, ” কে’কেনো!?

সুমু হতাশ গলায় বলল, ” আমি বুঝতে পারছি, আপনি আমাকে পছন্দ করেন। বাট লাভ করেন কিনা ক্লিয়ার হওয়ার জন্য তিনমাসের একটা কন্ট্রাক্ট রিলেশনে থাকতে চাচ্ছেন!

সায়ন মাথা নাড়িয়ে সায় দিল, সুমু স্মিত হেসে বলল, ” আপনি আমাকে প্রোপোজ করলে যদি আমি এই কন্ট্রাক্ট রিলেশনের অফার করতাম তাহলে মানাতো। বা আমি আপনাকে প্রোপোজ করলে তখন যদি আপনি এই কন্ট্রাক্ট রিলেশনের অফার করতেন তাহলে মানাতো।

সায়ন কিছু বলছেনা, সুমু আবার বলল, ” আ’ম স্যরি মি. সায়ন, এই তিনমাসের রিলেশন আমার দ্বারা সম্ভব না।

বলেই চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাড়ালো সুমু। সায়ন ছুটে গিয়ে সুমুর সামনে দাড়িয়ে বলল, ” আর যদি বলি তিনমাস না, তিন শতাব্দী একসাথে থাকতে চাই!!!

সায়নের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সুমু। সায়ন মাথা চুলকে বলল, ” যদিও তিন শতাব্দী বেচে থাকা অসম্ভব, তবে যতদিন বাচবো আর কি।

সুমু এবার অবাকের শীর্ষে উঠে গেছে! এ কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব!! সায়ন কি তাকে প্রোপোজ করছে!!!

সুমুকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে সায়ন গলা খাকারি দিয়ে বলল, ” এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। আপনিও যে মনেমনে আমাকে পছন্দ করেন তা জানি। তফাত এটাই যে, আমি এক্সপ্রেস করেছি আর আপনি করেননি।

সুমু মুচকি হেসে বাম হাত বাড়িয়ে দিল সায়নের দিকে।
সায়ন ঠিক বুঝতে পারছেনা, সুমু কোনও রিপ্লাই না দিয়ে হটাৎ হাত বাড়িয়ে দিল কেন!? পরক্ষণেই ভাবল, হয়তো প্রোপোজাল একসেপ্ট করেছে!!!

সায়ন খুশিতে গদগদ হয়ে ডান হাত দিয়ে সুমুর বাম হাত ধরল।
সুমু সেদিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” আরে রিং কই!?

সায়ন হাবলার মতো তাকিয়ে বলল, ” মানে!!?

সুমু লজ্জা পেয়ে বলল,” প্রোপোজ করলেন, তা রিং কই!?

সায়ন এতক্ষণে বুঝল সুমু কোন রিং এর কথা বলছে।
কিন্ত সে তো কোনো রিং আনেনি! এমনকি সুমুকে প্রোপোজ করার প্রিপারেশনও নিয়ে আসেনি সে!!

সায়ন আমতাআমতা করে বলল, ” রিং! হ্যাঁ রিং!! চুজ করেছি, বাট কিনতেই ভুলে গেছি!!!
বলে ক্যাবলার মতো হাসতে লাগল।

সায়নের কথা শুনে সুমুর মেজাজ বিগড়ে গেছে! প্রোপোজ করতে এসেছে, অথচ রিং কিনতেই নাকি ভুলে গেছে!!

সুমু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ” হাদারাম!
বলেই গটগট করে সেখান থেকে চলে গেল, সায়ন মাথা চুলকে বলল, ” দূর শালা! এজন্যই এসব প্রেম পিরিতি করতে নেই!! শুধু প্যারা আর প্যারা!!!
.
.
.
.
.
বিকেলের মোলায়েম রোদ উঁকি দিচ্ছে পশ্চিমাকাশে।
সিএনজির জন্য অপেক্ষা করছে আফসানা। মাস খানেক আগে একটা বুটিক হাউজে জব পেয়েছে সে।
সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। এখন বিকেল প্রায় সাড়ে পাঁচটা বাজে, কিন্ত একটা সিএনজি পাচ্ছেনা!

হটাৎ একটা বাচ্চার চিৎকার শুনে চমকে উঠল আফসা।
এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল, একটা বাচ্চা মেয়ে রোডে উল্টে পড়ে আছে! হাতে পায়ে রক্তের মাখামাখি!!

আফসা ছুটে গেল মেয়েটার কাছে, ততক্ষণে আশপাশের অনেকেই এসে দাড়িয়েছে। বাচ্চাটার কার এক্সিডেন্ট হয়েছে! ব্লিডিং হচ্ছে, এখনই হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।

আফসা তার হ্যান্ডব্যাগ থেকে ছোট তোয়ালে বের করে মেয়েটার পায়ে পেচাতে পেচাতে বলল, ” আপনারা প্লিজ একটা সিএনজি ডেকে দিন। কাছাকাছি কোনো হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।

মুহুর্তেই সবাই মিলে একটা সিএনজি ঠিক করল, এরমধ্যে কোত্থেকে বাচ্চাটার মা কাদতে কাদতে ছুটে এলো।
বাচ্চাটাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে অঝোরে কাদতে লাগল মহিলা।
আফসা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে সিএনজিতে উঠে বসল।
সাথে সেখানে থাকা দুজন লোক আর বাচ্চাটার মা উঠে বসল।
.
.
.
কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা হসপিটালে এসে পৌছালো সিএনজি।
আফসা বাচ্চাটাকে নিয়ে একরকম ছুটে ভেতরে ঢুকল। পেছন পেছন বাচ্চাটার মাও ছুটল।

হসপিটালের করিডরে বসে কাদছে বাচ্চাটার মা, আফসা তাকে স্বান্তনা দিচ্ছে। সাথে আসা লোক দুইটা ট্রিটমেন্টের পেমেন্ট দিয়ে কিছুক্ষণ আগে চলে গেছে।

বেশকিছুক্ষণ পর একটা নার্স বের হতেই আফসা জিজ্ঞেস করল, ” কি অবস্থা!? বাচ্চাটা কেমন আছে!?

নার্স আশ্বাস দিয়ে বলল,” চিন্তা নেই, হাড়ে কিছু হয়নি। পায়ের কিছুটা মাংস কেটে গেছে আর হাতের চামড়া ছিলে গেছে। স্যার এই প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন। মেডিসিন গুলো রেগুলার খাওয়াবেন, আর এক সপ্তাহ পর আসবেন ব্যান্ডেজ খুলে দেবো।

এরমধ্যে সাদা এপ্রোন হাতে নিয়ে ডক্টর শোভন বেরিয়ে নার্সকে জিজ্ঞেস করল, ” বাচ্চাটার মা কোথায়!?

মহিলা কান্না থামিয়ে বলল, ” জ্বি আমি।
শোভন স্মিত হেসে বলল, ” চিন্তা করবেন না, ও ঠিক হয়ে যাবে। কিন্ত এবার থেকে বাচ্চাকে একটু সাবধানে রাখবেন। রাস্তাঘাটে কখনও একা ছাড়বেন না।

মহিলা মলিন হেসে বলল, ” ওর বাপে রিক্সা চালায়, বাচ্চাডারে নিয়া রাস্তায় ফুল বেচি। আজকে একজনরে ফুল বেইচা এদিক ওদিক তাকায় দেখি রিতা নাই!!! খুজতে গিয়ে দেখি রাস্তায় পইড়া আছে!!!

শোভন নার্সকে বলল,” এক সপ্তাহের মেডিসিন কিনে ওনাকে দাও।
এবার মহিলাকে বলল,” আর আপনি, এক সপ্তাহ পর রিতাকে নিয়ে আসবেন, ব্যান্ডেজ খুলতে হবে।

মহিলাটা শোভনের জন্য দোয়া করতে করতে কাদতে লাগল।
আফসা বিস্ময় মাখা চোখে তাকিয়ে আছে শোভনের দিকে।
ট্রিটমেন্ট করা শেষেও আবার এই অসহায় গরীব মানুষকে স্বান্তনা দিচ্ছে লোকটা!

শোভন আফসাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, ” আপনি পেশেন্ট এর কে হন!?
আফসা কিছু বলার আগেই মহিলা সব খুলে বলল।

শোভন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আফসার দিকে।
আজকাল মানুষের বিপদে মানুষ উপকার করা দূরে থাক, কেউ ফিরেও তাকায়না।
আর এই মেয়েটা! অচেনা অজানা বাচ্চাটাকে রাস্তা থেকে তুলে হসপিটালে নিয়ে এসেছে!!
.
.
.
.
.
সন্ধ্যা নামার বেশি দেরি নেই, রিয়া বাসায় ঢুকে সোজা রুমে গেল।
আজ রিজাইন দেবে ভেবেছিলো, অথচ দিব্যি জব করছে সে। আসলেই, মানুষ ভাবে এক ঘটে আরেক!

শাওয়ার নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বসল রিয়া, গতকাল ফাইয়াযের কল কেটে দেওয়ার পর আর ব্যাক করেনি সে।
কেন জানি মনের মধ্যে খুচখুচ করছে!

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কল দিল রিয়া, কয়েকবার রিং বাজতেই রিসিভ করল ফাইয়ায।
রিয়াকে খোচা দিয়ে বলল, ” ওরে! আজ কোনদিকে সূর্য ডুবল!? রিয়া কল দিয়েছে ফাইয়াযকে!?

রিয়ার সত্যি খুব খারাপ লাগছে, একটা মানুষ তাকে এতো ভালোবাসে।
এমনকি তার সাথে এনগেজমেন্টও হয়ে গেছে! তাকে কল দেওয়া তো দূরে থাক, সে কল দিলেও রিয়া কেটে দেয়!! এরকম বিহেভিয়ার তো ফাইয়ায ডিসার্ভ করেনা!!!

রিয়া শান্ত গলায় বলল, ” স্যরি ফাইয়ায, স্যরি ফর এভরিথিং! আমি আসলে পার্টিতে ছিলাম,

রিয়া আরও কিছু বলার আগেই ফাইয়ায হেসে বলল, ” আচ্ছা আচ্ছা ওকে রিয়া, আমি বুঝেছি তুমি বিজি ছিলা। এতো গিল্টি ফিল করার কিছু নাই, বাট বিয়ের পর কিন্ত এসব শুনবোনা।

রিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ” থ্যাংকস ফাইয়ায, আমাকে বোঝার জন্য।

ফাইয়ায স্মিত হেসে বলল, ” তোমাকে আমি বুঝবো না তো কে বুঝবে মিসেস!? বাই দ্যা ওয়ে এখন জব করছো ঠিকাছে, বাট এখানে আসার পর বাইরে জব করা চলবেনা। বাসায় বসে কিছু করতে চাইলে করতে পারবে, নো প্রব্লেম।

রিয়া হেসে বলল, ” যথাআজ্ঞা জনাব!
.
.
.
কথা বলতে বলতে খেয়াল করল আননোন নম্বর থেকে কেউ বারবার কল দিচ্ছে।
রিয়া ফাইয়াজকে বাই বলে কলটা রিসিভ করল, ওপাশ থেকে খুব পরিচিত কন্ঠঃ বলে উঠল, ” এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলে!? বয়ফ্রেন্ড নাকি!?

কন্ঠঃ শুনে রিয়ার বুঝতে বাকি নেই এটা আরহাম।
কিন্ত সে রিয়ার নম্বর পেলো কই!?
রিয়া মুচকি হেসে বলল, ” বস তার এমপ্লয়িকে কল দিয়েছে! নিশ্চয়ই কোনও ইম্পর্ট্যান্ট কাজে!?
.
.
.
আরহাম ব্যালকনিতে বসে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে।
সেদিন পার্টিতে তোলা ছবি গুলো দেখছে সে। রিয়ার সাথে নাচের কিছু ছবি আছে, যদিও বেশ দূর থেকে তোলা।

আরহাম কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল, ” হুম, কাল একটা প্রজেক্ট দেখতে যাবো। আমার সাথে তুমি যাবে, তাই কাল অফিসে আসার দরকার নেই। তোমাকে তোমার বাসার সামনে থেকে পিক করে নেবো।

রিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” আমি কেন!? চিত্রা ম্যাম যাবেনা!?

আরহাম মগটা রেখে সোফায় হেলান দিয়ে বলল, ” চিত্রার জ্বর এসেছে, তাই তুমি যাবে। আর নেক্সট টাইম থেকে অফিসের আরেকটা রুল মনে রাখবে, এমপ্লয়ি তার বস কে বেশি কুয়েশ্চন করতে পারবেনা।
.
.
.
কথাটা শোনা মাত্রই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল রিয়ার, রেগেমেগে কিছু বলতে যাবে। তার আগেই কল কেটে দিল আরহাম!

আরহামের নম্বরে বাসার অ্যাড্রেস টেক্সট করে নিচে লিখল,” আশা করি আপনিও বস হিসেবে এমপ্লয়ি থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখবেন।

টেক্সট সেন্ড করে একটা শয়তানি হাসি দিল রিয়া।
সামনের কাটা চুল গুলো ফু দিয়ে উড়িয়ে, হেলেদুলে হেটে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
.
.
.
রিয়ার টেক্সট দেখে কিছুটা অবাক হল আরহাম, এটাতো অন্য অ্যাড্রেস! সেদিন তাহলে কার বাসায় নামিয়ে দিলাম রিয়াকে!?
অ্যাড্রেসের নিচের টেক্সট দেখে আরহাম বাকা হেসে বলল, ” ডিস্টেন্স! দেখি আমার থেকে কত ডিস্টেন্সে থাকতে পারো তুমি রিয়া!!
.
.
.
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হতে লাগল রিয়া, গ্রিন কালারের লং ফ্রক পরেছে সে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল গুলো আচড়াচ্ছে, হটাৎ ফোনে টেক্সট এলো।

ফোন হাতে নিয়ে দেখল আরহাম টেক্সট করেছে,” তোমার বাসার সামনে আমার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, এখনই রেডি হয়ে নামো।

রিয়া মুখ ভেংচি কেটে বলল, ” এহ! এমনভাবে টেক্সট করছে যেন আমার হাসব্যান্ড!!

সাথেসাথেই হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরল রিয়া, মনেমনে বলল, ” আল্লাহ! এসব কি বলছি আমি!!? না না না, আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে আমার ফিয়ান্সে ফাইয়ায!!!

হটাৎ মনে পড়ল এনগেজমেন্ট রিং এর কথা, ফাইয়ায কানাডা যাওয়ার পর রিংটা খুলে রেখেছিলো রিয়া।
শুধু ফাইয়াযের আম্মুর সাথে দেখা করতে গেলে রিং পরতো।

কি মনে করে সেই রিং বের করে আঙুলে পরে নিল রিয়া। একবার আয়নায় নিজেকে দেখে বেরিয়ে গেল।
.
.
.
নিচে নেমে দেখল ব্ল্যাক কালারের একটা প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে আছে।
রিয়াকে দেখে আরহামের ড্রাইভার করিম দরজা খুলে দিল।

রিয়া মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকে দেখল, আরহাম বসে আছে।
ব্রাউন কালারের কোট প্যান্ট পরেছে সে আজ। ফর্সা গায়ে বেশ মানিয়েছে কালারটা।

আরহাম রিয়ার দিকে ল্যাপটপ এগিয়ে দিয়ে বলল,” এতে সব ইনফরমেশন দেওয়া আছে, ওখানে গিয়ে ম্যানেজারকে দেখাবে।

রিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে ল্যাপটপটা নিল, আরহামের বলা পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকে সব চেক করতে লাগল রিয়া।
আরহাম ধীরে ধীরে রিয়ার পাশে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্ত রিয়ার সেদিকে খেয়াল নেই, তার ছেড়ে রাখা চুল গুলো একসাইডে এসে পড়ায় আরহামকে ঠিক খেয়াল হচ্ছেনা।

হটাৎ অদ্ভুত সুঘ্রাণ নাকে পেয়ে চোখ বন্ধ করল রিয়া।
ধীরে ধীরে ঘ্রাণটা তীব্র হতে লাগল! সচকিত হয়ে এদিক ওদিক তাকালো রিয়া, আরহামকে নিজের এতটা কাছে দেখে থমকে গেল সে!!

পরিপাটি করে রাখা ঝাকড়া চুল গুলোর কিছুটা আরহামের চওড়া কপালে এসে পড়েছে! দুচোখে গভীর চাহনি!! আরহামের গালভর্তি খোচাখোচা দাড়িতে আঙুল ছুইয়ে দিতে মন চাচ্ছে রিয়ার!!!

আরহাম রিয়ার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, ” আমাকে দেখার জন্য অনেক সময় পাবে, এখন কাজে মন দাও।

আরহামের কথা শুনে রিয়া থতমত খেয়ে বলল, ” আমি তো কাজই করছি, আপনি আমার এতো কাছে এসে কি দেখছেন হ্যাঁ!!?

আরহাম গলা খাকারি দিয়ে বলল, ” কই কত কাছে গেলাম!! ঠিকমতো কাজ করছো কি না তাই দেখছিলাম, আরকি।

রিয়া চোখ ছোট ছোট করে আরহামের দিকে তাকিয়ে রইলো।

প্রায় ঘন্টা খানেক পর একটা রিসোর্টে এসে ঢুকল আরহামের গাড়ি।
করিম এসে আরহামের সাইডের দরজা খুলে দিল।
আরহাম নেমে রিয়ার সাইডের দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিল রিয়াকে নামানোর জন্য।

রিয়া মুচকি হেসে যেই হাত দিতে যাবে, আরহাম হাত সরিয়ে বলল, ” ওহহ স্যরি, আমি তো ভুলেই গেছিলাম। বস কে এমপ্লয়ির থেকে দূরে থাকতে হবে।

বলেই গটগট করে হেটে চলে গেল আরহাম, রিয়া দাতে দাত চেপে বলল, ” খাটাশ একটা! এতই যখন জানিস তো গাড়িতে অমন চিপকে ছিলি কেন আমার সাথে!!?

গাড়ি থেকে নেমে আরহামের পিছুপিছু হেটে চলল রিয়া।
কোম্পানির তৈরি নিউ ফেব্রিকস এর অ্যাড করতে ফটোশুট চলছে এখানে।

আরহামকে দেখেই ইকরা ছুটে এলো, আরহামকে হাগ করে বলল,” আমি তোমার জন্যই ওয়েট করছিলাম আরহাম।

আরহাম রিয়াকে দেখিয়ে দেখিয়ে ইকরাকে বলল,” আর ওয়েট করতে হবেনা, আমি চলে এসেছি। বাই দ্যা ওয়ে, শুটের কি অবস্থা!?

ইকরা আরহামের এক হাত জড়িয়ে ধরে বলল,” সেট রেডি, মডেল রেডি হয়ে এলেই ফটোশুট করবো।

রিয়া দূর থেকে আরহামকে অন্য মেয়ের সাথে দেখে মনেমনে বলল, ” ক্যারেক্টারলেস আরহাম! সবার সামনে কিভাবে ঢলাঢলি করছে দেখো!! তার চেয়ে ওটাকে রুমে নিয়ে যা না!!!

ইকরা রিয়াকে দেখে ভ্রু কুচকে বলল,” এই! তুমি এখানে কি করছ!?

আরহাম ইকরাকে শান্ত করে বলল, ” ও আমার এসিস্ট্যান্ট, আমাকে এসিস্ট করতে এসেছে।

রিয়াকে বলল, ” ইকরাকে ইনফরমেশন গুলো দেখাও।

রিয়া মনেমনে বলল, ” ওহ তো এই পেত্নীই ম্যানেজার!?
.
.
.
সেটের পাশে একটা রাউন্ড টেবিলের চেয়ার টেনে বসল রিয়া, আরহাম আর ইকরা।
রিয়া ল্যাপটপ অন করে ইনফরমেশন গুলো ইকরাকে দেখালো।
ইকরা ল্যাপটপ নিয়ে রিয়াকে বলল, ” ওয়েল, তুমি একটু ওদিকে যেতে পারো। এটা নিয়ে আমি আরহামের সাথে ডিসকাস করবো।

রিয়া রেগেমেগে আরহামের দিকে তাকালো। আরহামের মধ্যে খুব একটা ভাবান্তর ঘটল না দেখে, রিয়া জোর করে হেসে বলল, ” ওকে নো প্রবলেম! কিছু লাগলে জানাবেন ইকরা ম্যাম!!

ইকরা হেসে বলল, ” আমার মনে হয়না এখন আমাদের আর কিছু লাগবে, বাট লাগলে অবশ্যই ডাকবো।

রিয়া মাথা নাড়িয়ে গটগট করে সেখান থেকে চলে গেল, মনেমনে আরহাম আর ইকরার গুষ্টি উদ্ধার করছে সে।
ইচ্ছে করছে রিসোর্টের সুইমিংপুলে ইকরাকে চুবিয়ে মারতে, ডাইনি কোথাকার!!
.
.
.
.
.
(চলবে)

বিঃদ্রঃ এই দুইদিন গল্প দিতে না পারায় দুঃখিত। এবার থেকে রেগুলার দিবো🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here