#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_16
‘ আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন ডাক্তার সাহেব? ‘
ভোরের কথায় পেছন ঘুরে তাকায় রাদ। ফোনে কথা বলছিলো ওহ। কোনো মতে কথা শেষ করে। ভোরের মুখ টা ফ্যাকাসে। রাদ বলে
_মন মড়া কেন?
_ এক্সাম চলছে আমার।
_ওহহ হো একদম ই ভুলে গিয়েছিলাম। আচ্ছা সমস্যা নেই, দ্রুত কিছু অরনামেন্ট নিয়ে চলে যাবো।
_অরনামেন্ট কেন?
_আমার বন্ধু রনিত কে তো চিনোই। ওর আর ইনায়ার
বিয়ে তে যাবো আমরা।
বিয়ের কথা শুনেই ধক করে উঠে ভোরের হৃদপিন্ড। ফ্যাকাসে মুখে মুহুর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়। রাদ বলে
_কি হলো?
_বিয়ে তে যাবো কি করে?
_আমার সাথে যাবে।
_আপনার ফ্যামিলি, ফ্রেন্ড সার্কেল সবাই তো আমাকে নিয়ে প্রশ্ন করবে।
_কিছুই হবে না। আমি বলবো তুমি ইনায়ার কাজিন। আর বিয়ের অনুষ্ঠানে কেউ এতো শতো খোঁজ করবে ও না।
_আচ্ছা।
অরনামেন্ট এর মাপ দিয়ে যায় রাদ। ভোরের পরীক্ষা থাকায় বেশি সময় নেয় না। হোস্টেল এ নামিয়ে দেয়। কিছু একটা মনে হতেই আবারো ভেতরে যায়। ভোর মাত্র ফ্রেস হয়ে এসেছে। রাদ কে দেখে চমকে যায়। বুকে থু থু দেয়।হেসে ফেলে রাদ।মেয়েটা অদ্ভুত সব কার্যক্রম করে। বেডে তোয়ালে রেখে ভোর বলল
_আপনি এখানে?
_হুম আমি এখানে। তাঁর আগে এই তোয়ালে টা অন্য কোথাও রাখো। ভেজা তোয়ালে বেডে রাখবে না।
_হুম।
_শোনো যেটা বলার জন্য এসেছি।
_বলুন।
_সেই ছেলেটা বিরক্ত করেছিলো আর?
চমকে তাকায় ভোর। তেমন কোনো বাজে আচারন তো করে নি।এই সামান্য বিষয় টা কে বড় করে কি লাভ হবে? তাই বলে
_না না আর বিরক্ত করে নি।
_সত্যিই?
_হুম সত্যি।
বই নিয়ে বসে ভোর আর রাদ। কিছু পড়া দিয়ে যায়। ভোর বলে
_আপনি কি করে দেখবেন পড়লাম নাকি পড়লাম না?
_রাতে ভিডিও কলে সব পড়া আদায় করবো।
_মানে?
_মানে খুব ই সিম্পল। ফাঁকি বাজি চলবে না। যদি ও আমি জানি তুমি ফাঁকি বাজ নও। তবে কখন হয়ে যাও তাঁর ঠিক ঠিকানা নেই।
মুখ বাঁকায় ভোর। কেটলি থেকে গরম পানি বের করে তাঁতে কফি পাউডার মিক্স করতে করতে বলল
_অদ্ভুত।
পড়াশোনা করছিলো ভোর। তখনি দরজায় খট খট আওয়া হয়। শীতের সন্ধ্যায় কম্বল থেকে কার উঠতে মন চায়। পায়ে উইন্টার স্লিপার পরে নেয়। এতে পায়ের পাতায় কিছু টা আরাম বোধ হয়। কাঁপতে কাঁপতে দরজা খুলে। বেশ হাসি খুশি মনে দাঁড়িয়ে আছে তিন্নি। ভোর বলল
_আরে আপু রুমে আসুন।
_হুম। আসলাম একটু আড্ডা দিতে।
_আচ্ছা আসুন।
বই বন্ধ করে ভোর। তিন্নির সাথে লডু খেলায় মজে যায়। ম্যাসেজ করে জানিয়ে দেয় তিন্নি। রাদ ই ওকে পাঠিয়ে ছিলো। দুপুর থেকে টানা পড়াশোনা করছিলো ভোর। সেই কারনেই তিন্নি কে পাঠিয়েছে সঙ্গ দিতে।
.
শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম প্রয়োজন বটে তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীর কে ক্ষতি গ্রস্ত করতে পারে। সেই কারনে একটু রেস্ট টাইম নিচ্ছে রাদ। সারা দিন রাত গাঁধার খাটুনি খাটে ছেলেটা। ইফতিহার এর কথা মনে পরে। কতো টা স্ট্রং পার্সোনালিটি তাঁর। একা হাতে কতো কিছু সামলিয়েছেন।
_আসবো রাদ?
রামিসার কন্ঠ কর্নপাত হতেই হাসি ফুটে ওর অধরে। মৃদু অভিমান করে বলল
_কতো বার বলবো মম আমার রুমে আসার জন্য কোনো রকম পারমিশন নিতে হবে না।
_হুম তা বুঝলাম। তবে অভ্যাস করা ভালো বেটা। ধরো তুমি বিয়ে করেছো। পার্সোনাল বিষয় থাকবে তখন। আলাদা সময় কাটাবে। তখন নিশ্চয়ই মম ড্যাড এর কাছে লজ্জায় পরতে চাও না তুমি?
_উফ মম এখন যে লজ্জা দিচ্ছো।
হেসে ফেলেন রামিসা। ছেলে টা খাঁটি রত্ন। খুব যত্ন নিয়ে রাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন তিনি। চোখ দুটো কেমন ঘোলাটে। বোধ হয় তিনি কাঁদছেন। হৃদয়ে ব্যথা অনুভব করে রাদ এর। রামিসা কে জড়িয়ে ধরে বলে
_কাঁদছো কেন মম? এবার কিন্তু আমারো কান্না পাচ্ছে।
_কতো টা বড় হয়ে গেলে তুমি। আমার সেই ছোটো ছেলে টা আজ কতো বড় হয়ে গেল ভাবতেই পারছি না।
_মম।
রাদের চোখ ও ভিজে যায়। মা ছেলের অনুভূতি গুলো অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকে। ভালোবাসার প্রকার ভেদ গুনে শেষ করা যায় না। প্রতি টা ভালোবাসাই সুন্দর।
নাক টেনে রামিসা বলেন
_তোমার ড্যাড কে পিক করতে যাবে?
_ড্যাড আজ ই ফিরবে? আমাকে তো বলে নি।
_আমি ও জানতাম না। তোমার ড্যাড সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ই বলে নি।
_ওয়াও এতো দ্রুত কাজ শেষ হয়ে গেলো?
_হুম। দেখতে হবে না কোন ছেলের বাবা।
মৃদু হাসে রাদ। রামিসা কে জড়িয়ে ধরে বলে
_আমি ও ড্যাড কে সারপ্রাইজ দিবো। বলবে না আমি পিক করবো।
_আচ্ছা বলবো না।
_কয়টায় ফ্লাইট লেন্ড করবে?
_ সুইজারল্যান্ড থেকে ইন্ডিয়া হয়ে বি ডি তে আসবে। একটু আগে কল করেছিলো বললো ইন্ডিয়া তে আছে। 10 টার পর ইন্ডিয়া থেকে ফ্লাইট ছাড়বে।
_ওকে ওকে। তাহলে আমি এখনি যাচ্ছি। তুমি তোমার স্পেশাল ভাবা ইলিশ এর সারপ্রাইজ রেডি করো।
রামিসা কে বিদায় জানিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে রাদ। নিষ্পলক তাকিয়ে থাকেন রামিসা। কতো বড় হয়ে গেল ছেলেটা। বিয়ে করালে মন্দ হয় না।
অনলাইনে কোচিং করছিলো ভোর। তখনি কল আসে রাদের। ক্লাস টা জরুরি হলে ও রাদের ফোন রিসিভ করে।তড়ি ঘড়ি করে রাদ বলল
_ অসময়ে ফোন করার জন্য দুঃখিত। আসলে আমি আজ কে তোমার পড়া নিতে পারবো না। সমস্ত পড়া শেষ করে নিও। কাল সময় করে নিবো।
_আচ্ছা।
_রাখছি।
_আপনি ড্রাইভ করছেন?
_হুম।
_ড্রাইভ করা অবস্থায় কল করবেন না ডাক্তার সাহেব। ভয় হয় আমার। কতো শত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
_আচ্ছা করবো না।
_হুম।
ফোন রেখে শ্বাস ফেলে ভোর। রাদ এর সাথে কথা বলে স্বস্তি মিললে ও মনের ডিমান্ড পূরন হলো না। আরো কিছুক্ষন কথা বলতে পারলে ভালো হতো।
.
কনকনে শীতের মাঝে ছুটে চলেছে রাদ। হাতে এক গুচ্ছ অর্কিড। ইফতিহারের ফ্লাইট লেন্ড করে নিয়েছে। জ্যাম থাকায় বেশ অনেক টা লেট হয়ে গেল। হঠাৎ করেই কারো সাথে ধাক্কা লাগে ওর।হাতে থাকা ফুল পরে যায়। বিরক্তি তে কপালে ভাঁজ পরে। তবু ও নিজে কে শান্ত রেখে ফুল গুলো তুলতে যায়। তাঁর আগেই মেয়েটি ফুল তুলে দেয়। হাসি মুখে বলে
_স্যরি।
পূর্ন দৃষ্টি মেলে তাকায় রাদ। কন্ঠ টা কেমন পরিচিত মনে হয়। মুখ টা চোখের সামনে আসতেই শীতল চাহনি দেয়। বলে
_আরে মিস নীলাশা। গার্ড ছাড়া বের হয়েছেন কেন?
_গার্ড দিয়ে কি হবে বলুন তো। কজন চিনে আমায়?
_একটু ভুল বললেন। কজন নয় বরং অনেক জন ই চিনে আপনাকে। এভাবে মিনিস্টারের মেয়ে হয়ে রাস্তায় চলা মোটে ও ঠিক নয়।
মৃদু হাসে নীলাশা। হুডির টুপি টা তুলে নেয়। চোখে লাগায় সান গ্লাস। রাদের দিকে ফিরে বলে
_এবার চেনা যায়?
_একদম ই নয়। টেকনিক টা পছন্দ হয়েছে। এনি ওয়ে কথা বলে ভালো লাগলো। যাচ্ছি
_আরে কোথায় যাচ্ছেন? একটু কথা বলে যান। দু কাপ কফির সাথে আড্ডা হয়ে যাক?
_থ্যাংকস। অন্য একদিন আড্ডা হবে। ড্যাড কে পিক করতে হবে এখন।
_ওহহ। তাহলে কথা দিচ্ছেন তো অন্য একদিন আড্ডা হবে?
একটু ভেবে সম্মতি প্রদান করে রাদ। নীলাশা হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়। চলে যায় ছেলেটা। রাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে ওহ। অদ্ভুত নেশা রয়েছে এতে। এক অদ্ভুত টান, যা রেড ওয়াইন কে ও হার মানাবে।
এই মাঝ রাতে বসে গরম গরম ভাত আর ভাবা ইলিশের স্বাদ নিচ্ছে রামিসা, ইফতিহার আর রাদ। ছেলেকে কাঁটা বেছে দিচ্ছেন রামিসা। তা দেখে মুখ গোমড়া করে ফেলেন ইফতিহার। বেশ ধারালো ভঙ্গিমা করে বলেন
_জানো রাদ, যখন তোমার মম এর সাথে ঝমকালো প্রেম চলে আমার, তখন ইলিশ মাছ খেতে পারতাম না আমি। কারন প্রচুর কাঁটা। একদিন মংলায় গিয়েছিলাম দুজনে। হালকা ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি তখন। সেদিন তোমার মম কাঁটা বেছে দিয়েছিলো।
_জেলাসি ফিল করছো ড্যাড?
_অবশ্যই।
মুখ টিপে হাসেন রামিসা। ইশারায় বলে মাছের কাঁটা বেছে দিবেন। খুশি হয়ে যায় ইফতিহার। রাদ এর চোখ থেকে কোনো কিছুই এরায় নি। কোনো মতে খাওয়া শেষ করে বাবা মা কে সুন্দর অনুভূতি তে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করছিলো রাদ। চোখ যায় ভোরের আইডি তে। এতো রাতে ভোর কে একটিভ দেখে কল করার ইচ্ছে হয়। তবে কেন যেন ফোনে নাম্বার ডায়াল
করে ও কল করে না। খুব যত্ন নিয়ে দুটো লাইন ম্যাসেজ লিখে
‘ রাত জেগে নিশাচর হওয়া ভালো, তবে অধিক রাত জাগা ভালো না। বারো টার পর ফোন ধরা তো একদম ই উচিত নয়। ‘
ম্যাসেজ টা পাঠিয়ে আবারো লিখে
‘ সাধারনত মাঝ রাতে ফেসবুকে একটিভ থাকে প্রেমিক প্রেমিকা যুগল। তুমি ঠিক কোন কারনে একটিভ আছো ভোর? ‘
আমার গল্প সংক্রান্ত সকল তথ্য পেতে জয়েন করুন
Fatema’s story discussion
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে