চলো রোদ্দুরে পর্ব-১৭

0
1894

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_17

‘ আপনার কথা অনুযায়ী যদি প্রেমিক প্রেমিকা যুগল মধ্য রাতে একটিভ থাকে তবে আপনি কোন কারনে একটিভ ডাক্তার সাহেব? ‘

ম্যাসেজ টা পড়ে রাদ এর গালে কমলা রঙের আভা ফুটে উঠলো। লজ্জা লাগছে ছেলে টার। ভোর যে এভাবে প্রতি উত্তর করবে তা ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি। যদি একটু ও আঁচ করতে পারতো তবে এমন অযাচিত প্রশ্ন কখনোই করতো না। স্ক্রিনে ভোরের নাম টা ঝল মল করছে। মেয়েটা কল করলো কেন?
_হ্যালো

_অনলাইন কেন?

_না মানে।

রাদ তুতলে যাচ্ছে। ভোরের ঠোঁটে সুচালো হাসি। ছেলে টা কে বিব্রত করতে বেশ ভালোই লাগছে। গলা টা খ্যাক করে কেশে বলল
_গার্লফ্রেন্ড আছে?

_হ্যাঁ?

_সত্যি?

_আরে ধ্যাত আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে।

_যাবেই তো।চোর ধরা পরলে গুলিয়েই যায়।

_এই মেয়ে আমাকে সন্দেহ করছো তুমি?

_অবশ্যই না।

ফিক করে হেসে ফেলে রাদ। ভোরের দুষ্টুমি তে ভরপুর সংলাপ ইনজয় করছে বেশ। অনেক ক্ষন সময় নিয়ে কথা বলে দুজনে। কারোই যেন কথার ঝুলি শেষ হচ্ছে না। ঘড়ির কাঁটা ঢং ঢং করে জানান দেয় 1 টা বেজে গেছে। আধ ঘন্টা কথা হয়ে গেল অথচ দুজনের কেউ আঁচ ই করতে পারলো না। হাই তুলে ভোর। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল
_ঘুম পাচ্ছে খুব।

_আচ্ছা ঘুমাও। কাল কে কলেজ যাবে তো?

_হ্যাঁ নোট কালেক্ট করতে হবে। পরশু আবার এক্সাম আছে।

_হুম রেস্ট নাও। সকাল সকাল পিক করে নিবো।

_আচ্ছা।

কলেজে প্রবেশ করতেই কানে সরু শব্দ ভেসে আছে। দাঁত কেলিয়ে হাসছে নুহাশ। বিরক্তি তে দু ভ্রু বেঁকে যায়। একদম ই সহ্য হয় না ছেলে টা কে। কিছু টা অদ্ভুত ই বটে। হাতে পায়েই বেড়েছেছয় ফিট। মাথার ঘিলু বলতে কিচ্ছু নেই।

_এই যে সুইট গার্ল। তোমার মাথায় কি ঐ টা?

নুহাশের কথা অনুসরণ করে মাথায় হাত দেয় ভোর। সঙ্গে সঙ্গে হেসে লুটোপুটি খায় নুহাশ। ভোরের মেজাজ চরে যায়। এই প্রথম রগরগা কন্ঠে বলল
_ আপনার সমস্যা টা কি? দেখুন সেই প্রথম দিন থেকে জালাচ্ছেন। অসহ্য লাগে আপনাকে। এমন অসভ্য দের মতো আচারন করাই কি আপনার কাজ?

_কে? কোথায়, কার কথা বলছো?

ঘুরে ঘুরে কথা টা বলে নুহাশ। যেন আকাশ থেকে পরেছে ওহ। কাছে এসে পথ আগলে দাঁড়ায়। রাগে কটমট করতে থাকে ভোর। তাঁতে ও যেন নুহাশের হাসি পায়। কাঁধের ব্যাগ টা খুলে নিয়ে নুহাশের বাহু তে বারি দিয়ে পথ আগায় ভোর।এমন টা আশা করে নি ওহ। তাই কয়েক সেকেন্ড তব্ধা খেয়ে থাকে। পরিশেষে যখন বিষয় টা মাথায় খেলে যায় তখনি বুকের বা পাশে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে বলে
_প্রচন্ড লাগলো, তবে বাহু তে নয় হৃদয়ে লেগেছে সুইট গার্ল।

_তোর মাথায় লাগলো না কেন?

বির বির করে কথা টা বলে ভোর। সামনে কারো সাথে ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে যায়।
মাথা উঁচু করে তাকাতেই মাথা টা কেমন ভন ভন করে। এটা কে? অধ্যক্ষ, সহ অধ্যক্ষ নাকি ম্যাথ এর প্রফেসর? সব গুলিয়ে যাচ্ছে কেমন।
.

নিজাম আর রেবা দুজনে বকা ঝকা করছেন রূপ কে। ছেলেটা আস্ত এক রাম ছাগল। বকা খেয়ে ও হেসে চলেছে ছেলেটা। তাঁতে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন রেবা। হাতে ঝাড়ু নিয়ে বলেন
_আজ তোর শিক্ষা হয়েই যাবে।

_এটা ঠিক হচ্ছে না মম। ঝাড়ু পেটা করা হয় ভূতে ধরলে। আমি তো একদম সুস্থ সবল।

রেবা আসতেই ছুটে চলে যায় রূপ। গার্ডেনে এসে নিজের ঝোঁক সামলাতে না পেরে সোজা পরে রাদ এর উপরে। কিছু টা মুভির হট সিন এর মতোই। যেন হিরো হিরোইন রোমান্টিক সিন করে চলেছে। তবে পার্থক্য একটাই যাঁর উপরে পরেছে সে ছেলে। দাঁতে দাঁত চেপে রাদ বলল
_শালা এখনো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবি? নাকি গে রোগে ধরেছে তোকে।

_নো ব্রো, একদম ই নয়। আসলে মিস্টেক হয়ে গেছে।

রাদ এর উপর থেকে উঠে যায় রূপ। পেন্টের মাটি ঝারতে ঝারতে রাদ বলল
_ছিই একদম নোংরা হয়ে গেছি। হাইজিনিং এর প্রতি কোনো খেয়াল ই নেই দেখছি। হারামি কোথাকার নে ধর।

রূপ এর হাতে ফুলের ঝুলি তুলে দেয় রাদ। অর্কিড সহ সাত রকমের প্রসাধনী ফুল। হাজার খানেক কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করে রূপ
_এগুলো কি করবো ব্রো?

_তোর মাথায় দে। গে কোথাকার।

থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে থাকে রূপ। মৃদু স্বরে বির বির করে বলে
_ডাক্তার ভাই দের নিয়ে যতো প্যারা।

ডয়িং রুমে আসতেই হাসির রোল পরে যায়। সচরাচর রাদ এর এমন রূপ দেখা যায় না। ময়লা কাপড়ে দারুন লাগছে ওকে। আর কারো কাছে না লাগলে ও সুপ্তির কাছে তো এমনি লাগছে। ছোট থেকে বালু মাটির উপর ঝোঁক মেয়েটার। সবাই কে বালু তে মাখা মাখি করালে ও রাদ কে করতে পারে নি কখনোই। আজ যেন ষোলো কলা পূর্ন হলো। হাঁটু তে হাত দিয়ে বসে পরে সুপ্তি।বিদ্রূপ করে বলে
_যাহ লাগছে তোকে একদম বাঁদর দের রাজকুমার।

_বাঁদরামি বন্ধ কর সুপ্তি। মার খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে?

_কে মারবে তুই? আরে তুই তো বাঁদর কুমার।

আবারো হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেতে থাকে ওহ। রেগে যায় রাদ। সুপ্তির চুলের গাছি ধরে টেনে নিয়ে আসে গার্ডেনে। ফুল গুলো নিয়ে বিপাকে পরেছে রূপ। গালে হাত দিয়ে ভাবছে। তখনি কেউ একজন ওর উপরে এসে পরে। আর সেটা হলো সুপ্তি। গগন কাঁপিয়ে হাসতে থাকে রাদ। রাগে গজগজ করে সুপ্তি। এক মুঠো কাঁদা মাটি ছুঁড়ে মারে রাদ এর দিকে। তবে নিশানা মিস্টেক হয়ে কাঁদা মাটি লাগে পাশে থাকা রনিত এর উপর। ছুট লাগায় রাদ। এখন ওর গন্তব্য বাথরুমের সাওয়ার এ। সুপ্তি ও পিছু নেয়। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রনিত আর রূপ। দুই ভাই ই ভুক্ত ভুগি। কাঁদায় মাখা মাখি খাচ্ছে। হায়রে কার প্রতিশোধ কার ঘাড়ে পরে।

ঠান্ডা লেগে গেছে রাদ এর। দুপুরে দীপ্তি কাঁদা মাটি খাইয়ে দিয়েছে ওকে। সেই থেকে দুই ঘন্টা পানির মধ্যে ছিলো। আর বার বার ব্রাশ করেছে। ভেতর থেকে নারি ভুরি উল্টে আসতে চায়। সুপ্তি নিজে ও অনুতপ্ত। রাদের বাহু তে স্পর্শ করে বলল
_স্যরি দোস্ত।

_ছুবি না আমায়।

কথা টা বেশ জোড়েই বলে যাঁর কারনে কষ্ট পায় সুপ্তি। মাথা টা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ট্রেরেস এ এসে চোখে পানি ফেলতে থাকে।

_কাজ টা ঠিক হলো না রাদ।

মাথা চেপে আছে রাদ। প্রচন্ড মাথা ব্যথা হচ্ছে। রনিত এর কথায় সচকিত হয়। মৃদু স্বরে বলে
_কোথায় ওহ?

_ট্রেরেস এ।

_ওকে আমি দেখছি।

দরজার কাছে আসতেই দু খানা হাঁচি দেয় রাদ। চরম ঠান্ডা লেগে গেছে। শীতের মাঝে যা তা অবস্থা হলো। নাক টেনে ট্রেরেস এ আসে। সুপ্তি তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। চোখ জলে টুইটুম্বর।
_স্যরি।

নিস্তব্ধ ট্রেরেস এ স্যরি কথা টা ঝমঝমে শব্দ তুলে। পেছন ঘুরে তাকায় সুপ্তি।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। হিচকি তুলে কাঁদে ওহ।বলে
_ আম স্যরি। আমি আসলে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করেছি।

নাক টানে আবার বলে
_আমি কখনো আর এমন টা করবো না।

হেসে ফেলে রাদ। আলগোছে সুপ্তি কে জড়িয়ে ধরে। সুপ্তি যেন আরো আবেগী হয়ে পরে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাদ কে। কাঁদতে থাকে সর্বশক্তি দিয়ে। ফিচেল গলায় রাদ বলে
_একদম কাঁদবি না। তুই তো জানিস তোকে আমি কতো ভালোবাসি। আমার সব থেকে দুষ্টু বান্ধবী তুই।

_স্যরি রে দোস্ত।

_উহহু বন্ধুত্বে কোনো স্যরি নেই।

এবার পূর্ন দৃষ্টি তে তাকায় সুপ্তি। মাথায় একটা আইডিয়া আসে। রাদের কলার চেপে বলে
_মেয়েটা কে ছিলো বল।

_আবার মেয়ে?

দুষ্টু হাসে সুপ্তি। পুরোই ধোঁকা বাজ মেয়েটা। উপায় না পেয়ে সুপ্তি কে নিয়ে বসে অতীত এর ঘটনা শোনাতে।

পার্সেল এসেছে তবে কে পাঠালো এই পার্সেল। রাদ? কিছু টা চিন্তা গ্রস্ত হয়, রাদ ছাড়া কে পাঠাতে পারে ওর জন্য গিফ্ট?
প্যাকেট টা খোলে, টকটকে লাল রঙের শাড়ি। সাথে এক গাছি চুড়ি। একটা ছোট্ট চিরকুট যেটা তে লেখা আছে ‘ সুইট গার্ল ‘
বুকের ভেতর ধক করে উঠে। পার্সেল টা নুহাশ পাঠিয়েছে?

_কি হয়েছে ভোর? তোমার কন্ঠ টা এমন শোনাচ্ছে কেন?

_ভালো লাগছে না ডাক্তার সাহেব। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।

এবার সিরিয়াস হয় রাদ। সেই কখন থেকে রাদ কে কল করে চলেছিলো ভোর। নাম্বার টা সুইচ অফ ছিলো। মাঝ রাতে অন হয় নাম্বার ঠিক তখনি কল করে ভোর। আর গলার স্বর কিছু টা ভয়ার্ত।
_এই মেয়ে কোনো অসুবিধা হচ্ছে তোমার? কেউ কিছু বলেছে।

_উহহু।

_তবে

_আমার ভালো লাগছে না।

_হোস্টলে থাকতে খারাপ লাগছে তোমার?

এবার কেঁদে দেয় ভোর। ফোনের ওপাশ থেকে রাদ বলে
_কাঁদছো কেন তুমি?

_বললাম তো ভালো লাগছে না। আপনি আমাকে নিয়ে যান কোথাও। আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।

কল কেঁটে যায়। রাদের দু চোখ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। ভোর হঠাৎ করে এমন করছে কেন?

**পার্সোনাল ফোন নেই আমার। সেই কারনে একেক সময় একেক জনের ফোনে আইডি লক ইন করি। একবার আম্মুর একবার ছোট ভাই বোনের। সেই কারনেই ফেসবুক থেকে আইডি লক করে দিয়েছে। সাথে কিছু অসাধু মানুষ দের কার্যক্রম ও রয়েছে। কাল সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল অব্দি চেষ্টা করেছি অনেক। ফেসবুকে একটি আইডি পেলে ও অন্য আইডি তথা প্রথম আইডি টা পাচ্ছি না। এই চিন্তার সাথে পড়াশোনার চিন্তা। রেজাল্ট নিয়ে কতো টা ভেজাল পোহাচ্ছি বলে বোঝানো যাবে না। সবাই দোয়া করবেন। জে এস সি রেজাল্ট এড হওয়া তে A + আসবে না। অন্তত A যেন আসে আর একটা ভালো পয়েন্ট হয় দোয়া করবেন। জানি না আবার কবে গল্প দিবো। তবে চেষ্টা করবো দ্রুত দেওয়ার।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here