চলো রোদ্দুরে পর্ব-২৫

0
1827

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_25

শিশির ভেজা সকালে এক ঝাঁক রোদ এসে স্পর্শ করে গেল ভোর কে। ঘুম থেকে উঠেই দোয়া পাঠ করলো মেয়েটি। বেশ কিছু দিন যাবত নামাজ মিস হচ্ছে ওর। বিষয় টা যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো। চিন্তা আর মন খারাপের জন্য সৃষ্টিকর্তার থেকে দূরে সরে এসেছিলো। ভাবতেই কেমন গাঁ কাঁপুনি দিয়ে উঠে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নামাজের পাটি তে সেজদায় লুটিয়ে পরলো। আজ মন খুলে আল্লাহর কাছে চাইবে মেয়েটি।

নামাজ শেষে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। হাত পাঁয়ে সামান্য ব্যথা অনুভব হলো। বোধ হয় শোয়ার দোষে এমন হয়েছে। ঘড়ির কাঁটা ঢং ঢং করে জানান দিলো ছয় টা বাজে। এ সময় টা তে রাদ কে কল করার কথা। যদি ও রাদ রেগে আছে তবু ও কল করা প্রয়োজন বলে মনে হলো। ছেলেটি কে কল করতেই সেকেন্ডে রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে ব্যথিত শ্বাস শোনা যাচ্ছে। কাঁপা কন্ঠে মেয়েটি বলল
_কালকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি আমি। আসলে আমি একটু বেশিই বলেছিলাম।

_তোমার আবদার টা অনুচিত ছিলো না ভোর। অনুচিত ছিলো তোমার প্রতি আমার রাগ করা টা। আমি তোমাকে ঠিক করে বোঝাতে পারি নি।

_আমি আবারো বলছি আমি দুঃখিত।

_আচ্ছা ছাড়ো। কল করেছো খুশি হয়েছি। ভাবলাম কল করবে না তাই মনে মনে কল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। নাস্তার জন্য ডাক পরেছে?

_উহুহ।

ক্ষনকাল নীরবতা বিরাজমান। কেউ যেন কথা খুঁজে পাচ্ছে না রাদ বলল
_আজ কলেজ আছে তোমার?

_উহহু যাবো না।

_ কেন যাবে না। পরীক্ষার কথা মাথায় আছে তো?

_এইচ এচ সি পরীক্ষার এখনো বেশ অনেক গুলো মাস বাকি। এই তো কিছু দিন পূর্বে সেমিস্টার এক্সাম দিলাম।

_অনেক গুলো দিন পার হয়ে গেল তাই না?

_অনেক গুলো দিন নয় বরং মাস পেরিয়েছে। পুরো চৌদ্দ মাস।

কিছু টা হাসলো ছেলেটি। ভোরের স্বাভাবিক ব্যবহার ওর মনে স্বস্তি প্রদান করলো। তবে বিদেশে যাওয়ার কথা মনে হতেই ছেলেটির বুকে পাথর এসে দাঁড়ালো। ধীর কন্ঠে বলল
_আজ কে দেখা করবো আমরা। কিছুক্ষন আলাদা সময় পার করবো কেমন?

_আচ্ছা।

_একটা কথা বলবো?

_হ্যাঁ বলুন।

_যদি আমি না থাকি তুমি কি করবে?

_বুঝি নি।

কথা ঘোরাতে রাদ বলল
_আচ্ছা বাদ দাও। এখন শোনো আজ বিকালে এক সঙ্গে বের হচ্ছি আমরা। ডিনার শেষে হোস্টেলে ফিরবে।

_আচ্ছা।

ছেলেটি কল কেঁটে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। ভেতর থেকে চাঁপা গোঙানি এসে আষ্ঠে পৃষ্ঠে নিচ্ছে ওকে। জীবন বড় অদ্ভুত। শান্তি নামক অনুভূতি যেন হারাম হয়ে গেছে। সব কিছু পেয়ে ও যেন কিছুই নেই।

কড়া রোদ্দুরে খোলা মাঠে, এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে বসে আছে রাদ। ছেলে টার মনে বার বার একি প্রশ্ন উঁকি দেয় মানুষ কেন সিগারেট খায়? এতো ক্ষন সময় পার হওয়ার পর ও ছেলেটা সিগারেট খেতে পারলো না। প্যাকেট টা ছুঁড়ে ফেললো ডোবা তে। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে পার্কিং এ এলো। মাথা নিচু করে ছিলো রূপ। রাদ কে দেখেই কাছে আসলো। ছেলেটার চোখে লেগে আছে বিষন্নতা। রূপ বলল
_ভাই ভোর

ছেলেটির কথা পূর্ন হওয়ার পূর্বেই রাদ বলল
_পছন্দ করিস?

_হ্যাঁ।

_সব কিছুর জন্য সময়ের প্রয়োজন রূপ। এমনি তেই এক টা কান্ড করে ফেললি। কতো টা ভয় পেয়েছিলো ভোর?

_ট্রাস মি আমার কোনো বাজে ইনটেনশন ছিলো না।আমি শুধু ওর হাত টা ধরে আড়ালে নিয়ে গিয়েছিলাম।

ক্লান্তির নিশ্বাস টা ফেললো রাদ। রূপের বাহু তে হাত রেখে বলল
_প্রচন্ড সরল মেয়েটি। ওর উপর কতো টা ঝড় গেছে আমি বলে বোঝাতে পারবো না। একটা সুন্দর ভবিষ্যতের অপেক্ষায় রয়েছে মেয়েটি। তুই ওর থেকে দূরে থাকিস।

_কিন্তু ভাই আমার সাথে কি ওর সুন্দর ভবিষ্যত হবে না?

_বিষয় টা আরো দেড় বছর পূর্বে হলে হতো। তবে এখন সম্ভব নয়।

_গত কয়েক মাস আমি অনেক ভেবেছি। আমি পারছি না।

মাথা টা নিচু করে ফেললো রূপ। ছেলেটার বাহু থেকে হাত সরিয়ে রাদ বলল
_ভোর কে ভুলে যাহ রূপ। মেয়েটা এখনো জানে না তুই ই রনিতের ভাই। আর রূপ ই নুহাশ। তাই আমি চাই না কোনো ঝামেলা হোক।

রূপের দু চোখ থেকে এক ফোঁটা শীতল পানি নেমে গেল। রাদের ভেতর টা ও জ্বলছে। কিন্তু কি করার?
.

পুরো সন্ধ্যা টা রাদের সাথে কাঁটালো ভোর। মেয়েটির সাথে তেমন কোনো কথাই হলো না। শুধু পাশাপাশি হাঁটা চলাই হলো। অবশ্য এ নিয়ে ভোরের কোনো মাথা ব্যথা নেই। মেয়েটি হঠাৎ করেই হোঁচট খেল। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠতেই পেছনে তাকালো রাদ। ভোর কে বসে থাকতে দেখে ছুটে এলো। মেয়েটা আবারো পায়ে ব্যথা পেলো। রাদ বলল
_আমার হাতের সাহায্য উঠে দাঁড়াও।

রাদের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায় ভোর। তবে হাঁটতে পারছে না। চোখে কিছু টা ঘোলা ঘোলা অনুভব হয়। রাদ বলল
_কি যে করো না তুমি।

_দুঃখিত।

_আমি না থাকলে তখন কি হবে?

_কোথায় যাবেন আপনি?

_হায়ার এডুকেশন এর জন্য ফরেন যাচ্ছি।

_ওহ।

মেয়েটির মুখের সহজ সাবলীল ভাষা হজম হলো না রাদের। ভোরের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটির কোনো ধ্যান ধারনা নেই। রাদ ও কিছু বলল না।

ফোনের রিং হতেই চমকে উঠলো রাদ। এতো টা সময় সামনের দিকে স্থির দৃষ্টি পাত করেছিলো ওহ। রনিতের কল দেখে রিসিভ করলো। বলল
_হ্যাঁ রনিত বল।

_রূপ ভোর কে পছন্দ করে আগে কেন বলিস নি?

_ওর কথা ছাড় তো। ছোট মানুষ, তাছাড়া এটা স্বাভাবিক।

_একটু ও স্বাভাবিক নয়। আমি চাই না ওর জন্য মেয়েটা বিপদের সম্মুখীন হোক। আমি ভাবছি বিজনেস এর জন্য ওকে ফরেন পাঠাবো।

_একদম নয় রনিত। এই সামান্য কারনে ওর জীবনের সুখ শান্তি কেন ঢাকা পরবে?

_কিন্তু রাদ।

_পরে কথা বলছি। আপাততো তুই ওকে কিছু বলবি না।

ওপাশ থেকে ভারী নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলো রাদ। কল টা কেঁটে পাশে তাকালো। ভোর পাশে নেই। চার পাশে হন্তদন্ত হয়ে খুঁজতে লাগলো ছেলেটি। তীব্র থেকে তীব্র ব্যথা অনুভব হলো। তবে কি নিজের ভুলের কারনে মেয়েটি কে হারিয়ে ফেললো ওহ?

উপায় না পেয়ে রনিত কে কল করলো রাদ। পাগল প্রায় অবস্থা ছেলেটির। রনিত বলল
_লোকেশন ম্যাসেজ কর আমি এখনি আসছি।

_হুম।

ম্যাসেজে লোকেশন পাঠিয়ে দিলো রাদ। মাথা টা কেমন ফাঁকা লাগছে। চোখ টা ও অদ্ভুত ভাবে বিচলিত। মিনিট দশেকের মধ্য এসে পরলো রনিত। রাদের অবস্থা উদভ্রান্তের মতো। রাদ বলল
_মেয়েটাকে হারিয়ে ফেললাম আমি। ওকে রোদ্দুরে নেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে অন্ধকারে ফেলে দিলাম।

_শান্ত হ রাদ। আমাদের পুলিশের কাছে যেতে হবে।

ছেলেটার পা যেন থমকে আছে। হাত ধরে নিয়ে গেল রনিত। ড্রাইভ করার অবস্থা নেই ওর। রনিত ই ড্রাইভ করে কাছের পুলিশ স্টেশনে আসলো। নিয়ম অনুযায়ী চব্বিশ ঘন্টার পূর্বে মিসিং ডায়েরী লেখা হয় না। তবে ক্ষমতার জোড়ে তখনি সবাই কে খোঁজার জন্য ফোর্স করলো রাদ।
ঘর্মাক্ত মুখের রাগ দেখে রনিত নিজে ও ভ্যাবাচ্যাকা খেল। শান্ত শিষ্ট ছেলেটি আজ এতো টা বিচলিত?

রনিত কে রেখেই ছুটতে লাগলো রাদ। পাগল, উন্মাদ, লাগছে ছেলেটি কে। রনিত কোনো মতে নাগাল পেলো ছেলেটির। বাহু ঝাঁকিয়ে বলল
_পাগল হয়ে গেছিস তুই?

_ওকে খুঁজতে হবে রনিত। প্রচন্ড ভীতু ওহ।ওকে খুঁজতে হবে। নিশ্চয়ই মেয়ে টা ভয় পাচ্ছে এখন।

_শান্ত হ আগে। বস

রাদ কে টেনে বেঞ্চে বসিয়ে দিলো রনিত। পানি এগিয়ে দিলো তবে পানি খেলো না ওহ। রনিত বলল
_একটু মাথা টা ঠান্ডা কর।

_আমার সাথেই ছিলো ওহ।রনিত, মেয়েটা আমার সাথে ছিলো। হঠাৎ করেই কি করে উধাও হতে পারে?

আশে পাশে তাকিয়ে রনিত বুঝতে পারলো জায়গা টা সুবিধার নয়। রাদের প্রতি রাগ হচ্ছে খুব। এই অসময়ে এই স্থানে কেন এলো ওহ?
_রনিত।

হালকা আর্তনাদ করে উঠলো রাদ। ছেলেটির চোখে পানি তে টুই টুম্বর। তখনি ফোন করলো ইনায়া। ভোরের বিষয় টা জানতেই মেয়েটা আঁতকে উঠলো। রনিত চিন্তা করতে বারন করলো। রাদ এখনো মাথা নিচু করে বসে আছে। আকাশে পূর্ন চাঁদ। চারদিকে আলো তে ঝলমল করছে।
এই পূর্নিমার রাত টা যেন হয়ে পরেছে সব থেকে বেশি অন্ধকার। ভোর আর রাদের জীবনের কালো অধ্যায়। রোদ্দুরে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি যেন হয়ে উঠলো সেই নর্দমার পঁচা গলা ঘন কালো আঁধার।

**গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। রিচ নেই একদম।**

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here