চলো রোদ্দুরে পর্ব-৩৯

0
1837

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_39

বেশ অনেক গুলো দিন পেরিয়ে গেল নাহিদের সাথে যোগাযোগ নেই সুপ্তির। মেয়েটা বারং বার বললো জাপান গিয়ে ফোন দিতে তবে নাহিদ যেন ভুলেই গেছে।মন টা ভীষন ভাবে ক্ষত। রাদ আর ভোর কে আসতে বলেছিলো সুপ্তি। তাঁদের ও খবর নেই। কিচেনে গিয়ে নুডলস এর বাটি নিয়ে নুডলস খেতে লাগলো। ডোর বেল বাজতেই নুডলস রেখে গেল দরজার কাছে। সুপ্তি কে জড়িয়ে ধরলো ভোর। মেয়েটার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে সুপ্তির। ছোট বোনের চোখেই দেখে। রাদ এর হাতে কয়েক টা এন্টিক শো পিচ।ভ্রু নাঁচিয়ে সুপ্তি বলল
_এই জিনিসের জন্য এতো টা লেট করলি?

_হ্যাঁ রে কথাকলি। তুই সেদিন হা হয়ে তাকিয়ে ছিলি, তাই ভাবলাম এগুলোই গিফ্ট করে দেই।

_হয়েছে, হয়েছে এবার ভেতরে আসুন।

কাউচে বসতে বসতে রাদ বলল
_এতো জরুরি তলব কেন?

_নাহিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। সোশ্যাল সাইটে ও নেই।

_আচ্ছা আমি দেখছি আঙ্কেল কে ফোন করে।

_ধ্যাত ওনার ফোন ও বন্ধ।

একটু চিন্তিত হলো রাদ। গ্রামে নেটওয়ার্ক ছিলো না। এই কয়েক টা দিন সেখানেই ছিলো ওরা। তাই কারো সাথেই কথা বলা হয় নি।ভোর কিছু একটা ভেবে বলল
_আমার মনে হয় ভাইয়া কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। সেদিন তো আমাদের সাথে তেমন কথা ও বললো না।

_ওহ একটু এমনি। তবে আমার এখন ভয় হচ্ছে।

_আচ্ছা চিন্তা করিস না। আমি দেখছি, আমার কাছে আঙ্কেল এর ম্যানেজার এর নাম্বার থাকার কথা। বাসায় গিয়ে জানাচ্ছি।

_আচ্ছা। যোগাযোগ হলে বলবি আমাকে যেন কল করে।

_হুম বলবো। তুই রেস্ট নে।

মলিন মুখে উঠে দাঁড়ালো সুপ্তি। ভেতর টা কেমন করছে। নাহিদের কিছু হলো না তো?

স্প্যানিশ রমনী টি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নাহিদের দিকে। ছোট বেলার বন্ধু হলে ও নাহিদের সাথে প্রণয়নের সম্পর্ক ছিলো ওর। তবে বিশেষ কারনে সে সম্পর্ক টা ভেঙে যায়।
অবশ্য নাহিদের সাথে অনেক মেয়ের রিলেশন ছিলো।কোনো রিলেশন কেই সিরিয়াসলি নেয় নি ছেলেটা। সিগার এর গন্ধে পুরো পরিবেশ টা কেমন অদ্ভুত লাগছে। জেসিকার মনে কিছু টা ভয় চেপেছে। নাহিদ প্রচন্ড রাগি ছেলে। তবু ও জেসিকা বলল
_সিগার খাওয়া কি খুব প্রয়োজন?

_অপ্রয়োজনে কিছু করতে আমার ভালো লাগে এটা তো তোমার অজানা নয় জেসি।

মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো জেসিকা। নাহিদ ওকে বার বার আঘাত করে।
ব্রেকআপ এর পর জেসিকা বলেছিলো এর পর থেকে ওকে কখনো যেন জেসি বলে সমোন্ধন না করে। তবে সবর্দাই জেসি বলে সম্বোধন করে নাহিদ। সিগার টা ফেলে পা দিয়ে পিষতে পিষতে নাহিদ বলল
_জীবনে কখনো ভালোবাসতে নেই। এই ভালোবাসা গুলো খুব যন্ত্রণার হয়।

বাংলা ভাষা ব্যবহারে কিছুই বুঝতে পারলো না জেসিকা। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। নাহিদ কিছু টা এগিয়ে এসে জেসিকার কপালে চুমু দিলো। মেয়েটার চোখে পানি এসে গেছে। নাহিদ ইংরেজি তে বলল
_তুমি বলেছিলে আমি যেন এমন কারো প্রেমে পরি যে কখনোই আমার হবে না।

_রাগের মাথায় বলেছিলাম নাহিদ।

_সে কথা ফলে গেছে জেসি। অন্য দের কষ্ট দিয়েছি কি না জানা নেই তবে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।তাই সৃষ্টিকর্তা আমায় কষ্ট দিবেন বলে স্থির করেছেন।

_তুমি তাঁকে সত্যি টা বলছো না কেন?

_উপায় নেই। মিথ্যে বলতে বলতে এতো টাই পঁচে গেছি যে কেউ আমার সঙ্গ দিবে না।

_শেষ চেষ্টা তো করতেই পারো।

মলিন হাসলো নাহিদ। প্রতিশ্রুতি গুলো চোখের সামনে ভেসে চলেছে। এক দিকে নীলাশা অন্য দিকে সুপ্তির ভালোবাসা।
.

ভাঙা গলায় কেঁদে চলেছে সুপ্তি। ভোর কে এক হাতে কাছে টেনে নিয়ে রাদ বলল
_অদ্ভুত পাগলি মেয়েটা। নাহিদ কে যেন নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসে।

_হ্যাঁ। আচ্ছা ডাক্তার সাহেব আপু কে একান্ত সময় কাঁটাতে দিন। ভাইয়ার সাথে কথা বলে মন হালকা করুক।

_আচ্ছা চলো।

সুপ্তি কে কিছু না বলেই চলে গেল ওরা। মন টা এতোক্ষনে স্থির হলো। নাহিদ কে আচ্ছা কে পেটাতে ইচ্ছে হয় রাদের। এই ফোন হারিয়ে ফেলে তো এই সিম কার্ড।

রামিসা আর ইফতিহার কোনো বিশেষ আলোচনায় বসেছেন। কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত দেখাচ্ছে ওনাদের। তবে ভোর আর রাদ কে দেখে স্বাভাবিক হলেন।
রাদের সিক্সথ সেন্স বলছে ওনারা কিছু লুকানোর চেষ্টা করছেন। রামিসা এগিয়ে এসে ভোর কে জড়িয়ে ধরলো। বলল
_মেয়েটা কতো দিন পর বাসায় এলো।

_স্যরি আম্মু। আসলে আমরা একটু বেশিই লেট করে ফেলেছি।

_হ্যাঁ তা ঠিক।আমার ছেলে টা বড্ড অধৈর্য হয়ে পরেছে।

_কিছু বললে মম?

_শশুর বাড়ি থেকে ঘুরে এসে মাঝের একটি দিন যে রিসোর্ট এ কাঁটিয়ে এসেছো সেটা জানি না ভেবেছে?

রাদ কেবলি মাথা চুলকোলো। তবে ভোর ভীষন লজ্জায় পরেছে। ইফতিহার স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন
_বুঝলে ভোর তোমার আম্মুর সাথে একটি মজার ঘটনা রয়েছে আমার।

_এই না। এসব কথা ছেলে মেয়ে দের কাছে বলতে লজ্জা করবে না তোমার?

_লজ্জার কি আছে বলো তো।

_তুমি বলবে না।

_আমি বলবোই।

_দেখো তুমি কিন্তু বেশি বেশি করছো।

_বেশি বেশি না, তুমি যে তখন আমার উপর

ইফতিহারের মুখ চেপে ধরলেন রামিসা। রাদ আর ভোর খলবিলিয়ে হাসতে লাগলো। ওনাদের দুজনের আচারন দেখলে মনে হয় এই তো কিছু দিন পূর্বেই মধুচন্দ্রিমা সম্পূর্ন করেছেন।
_তোমরা তোমাদের মধুচন্দ্রিমার বিশেষ কথা বলতে থাকো আমি আমার বউ কে নিয়ে পালালাম।

_এই রাদ শোনো

কে শোনো কার কথা। ইফতিহারের দিকে রাগি দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলেন রামিসা।কি একটা অবস্থা ছেলে মেয়েদের কাছে নিজের মধুচন্দ্রিমার ঘটনা শোনাবে।

ভোরের মাথা টা বুকে চেপে ধরে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে রাদ। আকাশে অর্ধ চাঁদ। পাশেই বিশাল দিঘি। শতেক খানেক পদ্ম ফুটে আছে বা তার ও বেশি। দোলনায় শুয়ে রাদের বুকে আঁকি বুকি করে চলেছে ভোর। মাঝে মাঝে ছেলেটার আঙুল নিয়ে খেলছে। এরি মাঝে রাদ বলে উঠলো
_আমাদের ছোট্ট একটা সদস্য প্রয়োজন।ছোট ছোট হাত পা নিয়ে খেলবো আমি। জানো আজকাল রনিত কে দেখলে আমার প্রচন্ড হিংসে হয়। মনে হয় আমাকে ও কেউ পাপা , পাপা বলে ডাকুক।

_আর আমার বুঝি ইচ্ছে করে না?

_একটা বাবু নিবো তাহলে?

রাদের ভারী দৃষ্টি। ভোর এবার চোখ মেলে তাকালো। ছেলেটার মসৃন গালে হাত বুলিয়ে বলল
_এখন তো মোটামুটি ফ্রি টাইম। আমাদের ছোট্ট একটা সদস্য নেওয়াই যায়।

ফট করেই মেয়েটার কপালে চুমু এঁকে দিলো রাদ। ভোর শুকনো হাসলো।
তবে অধিক খুশি হতে পারছে না মেয়েটা। বার বার কেমন ভয় হচ্ছে। রাদ ধীরে ধীরে ওর চুলে আঙুল গলিয়ে দিলো। পদ্ম দিঘির ধারেই আজকের রাত কাঁটিয়ে দিবে ওরা। বড্ড সুন্দর এ জলাধার। হালকা চাঁদের আলোয় যা আরো মোহনীয় হয়ে গেছে।

নীলিশা যেন পরিনত হয়েছে উন্মাদ মানবী তে। ওয়াইন এর নেশা টা আগে থেকে থাকলে ও এখন যেন তা দ্বিগুণ বেড়েছে। নাহিদের চোখ চিক চিক করছে।ওর এখনো মনে আছে বহু বছর পূর্বে দেওয়া কথা টা। চোখ বন্ধ করলেই সে দৃশ্য দেখতে পায় ওহ। নীলাশার কিশোরী মন যখন রাদ কে পেতে চায় তখন নাহিদ হেসে বলেছিল ‘ তোর দা ভাই এনে দিবে রাদ কে।’ নীলাশা সেদিন পচন্ড খুশি হয়েছিলো।
উত্তেজনায় কেঁদে উঠেছিলো। সে কান্না ছিলো বড় সুখের। তবে আজকের জল যে বড় দুঃখের।

_এই দা ভাই রাদ কে এনে দিবি তো তুই? বল না এনে দিবি। আমি পাবো তো ওকে? বলছিস না কেন?

_দিবো বনু। তুই প্লিজ শান্ত হ।

_আমার সব থেকে ভালো ভাই ও পারে নি রাদের খবর রাখতে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে দা ভাই।তুমি পারলে না, পারলে না তুমি।

নীলাশা থামলো। আরেকটু ওয়াইন ঢেলে নিয়ে আবার উল্টো পাল্টা কথা শুরু করলো। মেয়েটার পাগলামি নাহিদ কে হাজার সুচের খোঁচার মতো ব্যথিত করে চলেছে। মন কে স্থির রেখে নীলাশার মাথায় হাত বুলিয়ে ঝাপসা চোখে বলল
_আজ ই ফিরে যাচ্ছি আমি। আর রাদ কে বোঝানোর চেষ্টা করবো।

_যদি না বুঝে?

_উল্টো পথ অবলম্বন করবো।

_আমার রাদের কিছু হবে না তো?

_না হবে না।

নীলাশা নাহিদের হাত টা চেপে ধরে বসে রইলো। সামনেই রয়েছে রাদের ছবি। গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলানো পূর্ণ ডাক্তার। ঠোঁট টা হালকা প্রসারিত করে নীলাশা বলল
_আমার ডাক্তার সাহেব।

বিস্ফোরিত চোখে তাকালো নাহিদ। বুক টা ভীষন যন্ত্রণা দিচ্ছে। ভোর ওহ তো রাদ কে ডাক্তার সাহেব বলে সম্বোধন করে।

***অগোছালো পর্বের জন্য দুঃখিত।***

পরবর্তী গল্প #অভিমানী_সে

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here