চলো রোদ্দুরে পর্ব-৪০

0
1930

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_40

একে অপরের দিকে তাকিয়ে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে দুই মানব। কিছুক্ষণ আগে ও যাঁরা ছিলো প্রান প্রিয় বন্ধু।এই মুহুর্তে তাঁরা হয়েছে একে অপরের শত্রু।
নাহিদ নিজের মাথা টা চেঁপে ধরে শান্ত হলো।হাত জোড় করে অনুনয় করে বলল
_স্যরি। প্রয়োজনে আমি আবার তোর পা ধরছি তবু ও তুই আমার বোন কে এক্সসেপ্ট কর ভাই।

_এটা কি ছেলে খেলা নাহিদ? একজন শিক্ষিত মানুষ আর পূর্ন ডাক্তার হয়ে এসব উচ্চারণ করছিস কি করে। এমন অন্যায় আমি আর এক মুহুর্ত ও টলারেট করবো না।

_দেখ ভাই আমি কথা দিচ্ছি ভোর এর কোনো অসুবিধা হবে না। যতো টাকা লাগবে, যা যা করা লাগবে সব কিছু আমি এনে দিবো। তুই শুধু আমার বোন কে এক্সসেপ্ট কর। মরে যাবে মেয়েটা।

_আমাকে মাফ কর নাহিদ। আমি ভোর কে ভালোবাসি। তাছাড়া ও আমার স্ত্রী। তুই কোন যুক্তি তে এমন কথা বলছিস?

_জানি না আমি জানি না। শুধু জানি নীলাশা তোকে ছাড়া বাঁচবে না।

_আমি ওর সাথে কথা বলবো। তুই প্লিজ এমন অরুচি দাবি করিস না। এমনি তে ও এতো গুলো দিন সকল কে মিথ্যে বলে সে যাই হোক এখন এমন কিছু করিস না যাঁর ফলে আমাদের বন্ধুত্ব সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে যায়।

নাহিদ চোখ বন্ধ করে রইলো। কিছুক্ষণ পূর্বে সমস্ত টা বলেছে রাদ কে। সাথে বোন এর জন্য পা অব্দি ধরেছে। রাদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কোনো ভাবেই ভোর কে ছাড়া সম্ভব নয়। নীলাশার ভালোবাসা কে অপমান করছে না ওহ।তবে আজ থেকে এগারো বছর পূর্বেই যদি নীলাশা ওর ভালোবাসা প্রকাশ করতো তাহলে গল্প টা অন্য রকম ও হতে পারতো।
কিন্তু এই মুহুর্তে একটা মেয়ের সাথে পূর্ণ ভাবে জড়িত ওহ।সব থেকে বড় কথা ভোর কে ভালোবাসে। হয়তো পৃথিবীর সমস্ত খাঁটি প্রেমিকের মতো নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসে।

নীলাশার নাম্বার টা ডায়াল করলো রাদ। মনে মনে অনেক কিছুই সাজিয়েছে। তবে কতো টা কার্যকর হবে জানা নেই ওর। কয়েক বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো ফোন। ওপাশ থেকে ভাঙা ব্যথিত একটি করুন কন্ঠ ভেসে আসলো। চমকালো রাদ, নীলাশা বলল
_হ্যালো, কে?

রাদ নির্বাক। নীলাশা আবার বলল
_কথা বলছেন না কেন।

_হ্যালো নীলাশা আমি

_রাদ, আমার প্রিয় ডাক্তার সাহেব। আপনি কল করেছেন আমায়। আমি বিশ্বাস ই করতে পারছি না। আপনি, আপনি কেমন আছেন।দা ভাই বকে নি তো আপনাকে? আপনি এখন কি করছেন।

নাহিদ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে। রাদ এর ভেতর টা কেমন জ্বালা পোড়া করছে। নীলিশার ভালোবাসা এতো টা প্রখর তা ভাবতে ও পারে নি ওহ। নীলাশা কন্ঠ না শুনতে পেয়ে বলল
_এই যে মিস্টার ডাক্তার সাহেব কথা বলছেন না কেন। রাগ করেছেন?

রাদ এর হাত থেকে ফোন টা পরে গেল। নীলাশা এখনো বক বক করছে। রাদের চোখে পানি চিক চিক করছে।সাথে বুক টা ধক করে উঠলো। ভোরের মতো নীলাশা ও ডাক্তার সাহেব বলে সম্বোধন করছে। চট করে ফোন টা তুললো। নীলাশার কন্ঠ অস্বাভাবিক। যেন কোনো বাচ্চা কথা বলছে। রাদ বা হাতের সাহায্যে বুকে হাত বুলালো। বলল
_আমাকে খুব ভালোবাসো নীলাশা?

_খুব ভালোবাসি, সত্যিই খুব ভালোবাসি।

_একটা কথা বলি রাখবে?

_কি কথা?

_এভাবে পাগলামি করো না। তুমি ই বলো আমি তো বিবাহিত, এই বিষয় টা যদি আরো এগারো বছর আগে আমাকে জানাতে তাহলে আমি মেনে নিতাম। তবে এখন সম্ভব নয়।

ওপাশ থেকে মৃদু গোঙানির শব্দ শোনা গেল। রাদ ব্যস্ত হয়ে বলল
_এই নীলাশা, আমার কথা টা শোনো এভাবে কেঁদো না প্লিজ। তাহলে আমার নিজেকে দোষী মনে হবে।

নাক টেনে উত্তর করলো নীলাশা
_আমার সাথেই কেন এমন হলো?

_ভাগ্য আমাদের এক সাথে করতে চায় নি নীলাশা। মন খারাপ করো না। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করো। কি করবে তো?

_হু।

স্বস্তি পেল রাদ। কল টা কেঁটে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ভালোবাসা এতো দগ্ধ দেয় কেন? নীলাশার ভালোবাসা টা ওকে ভাবাচ্ছে। তবে নীলাশার জন্য নয় বরং ভোর কে হারিয়ে ফেলার ভয়ে। কোনো কিছুর বিনিময়ে এই সত্য কে বদলাবে না রাদ। যে মেয়েটার হাত ধরে নিয়ে এসেছে রোদ্দুরে সেই মেয়ে টা কে কালো আঁধারে ছুঁড়ে ফেলতে পারে না ওহ। কিছুতেই এ কার্য সম্ভব নয়।
.

প্রচন্ড আহত মন নিয়ে এই মধ্য রাত্রি তেই ছুটে এসেছে রাদ। সারাদিন পর আজ যেন একটু বেশিই ক্লান্ত ছিলো রাদ।তাই তো সন্ধ্যা তেই ডিনার করে নিয়েছিলো। ঘুম টা ও যেন আজ জোড়ালো ছিলো। অধিক চিন্তায় খুব বাজে স্বপ্ন দেখেছে।সেই থেকে মরিয়া হয়ে ভোর কে ফোন করলো। তাঁতে ও শান্তি হলো না। তখনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরেছে। সেই আগের মতোই হোস্টলের পেছনে গাড়ি রেখে পাঁচিল টপকে ভেতরে প্রবেশ করলো। সামনেই দারোয়ান, তাঁর হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে বলল
_আমার বউ টা রে দেখে আসি চাচা। আপনি আমাকে সাহায্য করুন।

লোক টি মুখ টিপে হাসলেন। রাদ কে চিনতে অসুবিধা হয় নি ওনার। বেশ কিছু বছর পূর্বে বহু বার এভাবে আসতো রাদ। আর একি কথা বলতো।একদম ই বদল ঘটে নি ছেলে টার।

আশে পাশে তাকিয়ে উপরে উঠে গেল রাদ। তবে এবার উঠতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তিন তলায় উঠে হাঁপিয়ে উঠলো ছেলে টি। কয়েক মুহুর্ত জিরিয়ে আবার উঠতে লাগলো।ভাগ্যিস খোলা বারান্দা না হলে উপরে উঠা মুশকিল হয়ে যেতো। প্রায় আধ ঘন্টা পর ভোরের ব্যলকনিতে পৌছাতে সক্ষম হলো। কয়েক বার দম নিয়ে দরজায় আঘাত করলো। ভোর চমকে উঠে বলল
_কে?

_আমি।

ফট করেই দরজা টা খুলে গেল। ভোর অবাক কন্ঠ বলল
_আপনি এতো উপরে

_হুসস কোনো কথা নয়।

রুমে প্রবেশ করে দরজা লক করে দিলো। কিছু বোঝার পূর্বেই আচমকাই মেয়ে টা কে জড়িয়ে ধরলো। ছেলেটার হাত পা কেমন ঠান্ডা হয়ে গেছে। বিদঘুটে তিমিরের মাঝে ও রাদের বিচলিত দৃষ্টি অনুভব হলো ভোরের। এক হাতের সাহায্যে পিঠে হাত বুলিয়ে বলল
_আপনি এমন করছেন কেন?

_আমার ভয় হচ্ছে।

_কিসের ভয়?

_হারানোর।

_আজব তো এই রাত দুপুরে এমন করে কেউ। আপনি অসুস্থ দের মতো করছেন। এখন অনেক হয়েছে বাসায় ফিরে যান।

_ফিরবো না।

_কেন?

_তুমি আমার সাথে যাবে।

_কি বলছেন কি? আমি তো আগেই বলেছি আমি এখন যাবো না।

_এখন সিদ্ধান্ত চেঞ্জ।আমি বলেছি তুমি আমার সাথে যাবে।

_এমন টা হয় না ডাক্তার সাহেব।

নিজেকে রাদের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কথা টা বললো ভোর। রাদ যেন ক্ষুধার্ত বাঘের মতো তেঁতে উঠলো। ভোরের বাহু তে শক্ত করে চেপে ধরে বলল
_তুমি যাবে আমার সাথে।

_যাবো না।

_তুই কেন বুঝিস না তোকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। তোকে কত বার বলতে হবে তোর কিছু হলে মরে যাবো আমি। কেন বুঝতে চাস না আমার ভালোবাসা।

ভোর অবাক হয়ে তাকালো। রাদ ওকে তুই বলে সমোন্ধন করছে। তারউপর চোখ দুটো কেমন বিবর্ণ বিষাদ নির্দেশনা করছে। আঁতকে উঠলো ভোর। রাদের সুচালো স্পর্শ ওর ওষ্ঠাধর নিজের করে নিয়েছে। চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে। রাদের এমন অবস্থা দেখে ভোরের ভীষন কান্না পাচ্ছে। ছেলে টার শার্ট খামচে ধরলো ওহ। ভোর কে বুকের মধ্য চেপে ধরে রাদ বলল
_খুব ভালোবাসি, তোমায় ছাড়া আমার চলবে না। চাঁদ যেমন অন্ধকার ছাড়া উঠে না ঠিক তেমনি তুমি বিহীন আমি ও উঠবো না। তুমি বিহীন এতো আলো আমার সইবে না ভোর সইবে না। রোদ্দুর যদি আঁধার কে প্রতিনিধিত্ব করে তবে চাই না আমার রোদ্দুর। আমি তুমি নামক আঁধারেই ডুবে থাকতে চাই। সময় হলে না হয় এক সাথে যাবো রোদ্দুরে। তবু ও তোমায় ছাড়বো না।

এতো সুখে মেয়েটার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। রাদ ওকে কতো টা ভালোবাসে তা কল্পনার বাহিরে ছিলো।জানালা দিয়ে ফুর ফুর করে বাতাস বইছে। চাঁদের হালকা আলো তে রুম টা অদ্ভুত লাগছে। তাঁর ই মাঝে একে অপরের মাঝে ডুবে আছে বৈধ দুই প্রেমিক প্রেমিকা যুগল।এর থেকে সুন্দর আর কিই বা হতে পারে?

**অতি দ্রুত গল্প শেষ হবে। গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি। পরবর্তী গল্প #অভিমানী_সে। আশা করি সকলের ভালোবাসা এমনি থাকবে।**

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here