#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ১২
____________
আশেপাশে অসংখ্য কবর। সারি সারি কবরের অনেকটা দেখে পুরোনো মনে হচ্ছে। চার, পাঁচ বছরের মতো হবে বোধহয়। আশেপাশে কেবল বিশাল লম্বা লম্বা গাছ। গাছের বেড়াজালে আটকানো এই জঙ্গল থেকে বাইরে দৃষ্টি যাওয়া একেবারে অসম্ভব, দুষ্কর। শুধু দেখা যাচ্ছে কাক ভোরের ঝাপসা অন্ধকারের মতো ঘোলাটে কালো পরিবেশ এবং সারি সারি গাছ। আশেপাশেই অনেক পোকা মাকড় ডাকছে। কয়েকটা পাখিও ডাকছে। পাখির ডাক গুলো ভয়ংকর। শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। যেন মৃত্যুর বাণী শোনাচ্ছে কানে কানে। মৃত্যু! হ্যাঁ, মিতুলের মাথায় কেবল একটা শব্দই ঘুরছে এখন। সেটা হলো, ‘মৃত্যু’। এত দ্রুত মৃত্যুর নিকটে এসে পৌঁছে যাবে ভাবতে পারেনি ও। মিতুল বিশাল লম্বা, মোটা আকৃতির একটা গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসা। বসা বললে ভুল হবে। বসা নয়, বসতে বাধ্য! একটা মোটা দড়ি দিয়ে ওর শরীর গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। এই দড়ির বাঁধন ছিঁড়ে এখান থেকে ছুটে পালানো একটা দুঃস্বপ্নের মতো।
মিতুলের গায়ের মেজেন্ডা কালারের টপসটা ধুলোয় মাখামাখি। স্কার্টেরও একই অবস্থা। মুখের অসংখ্য জায়গা লালবর্ণ ধারণ করেছে রক্তে। ঠোঁটের কোণের রক্ত বাঁধ না মেনে গড়িয়ে পড়েছে। একেকটা শ্বাস টেনে তুলতেও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ওর। শরীর অসহ্য যন্ত্রনায় অসাড় হওয়ার মতো। মাথাটা শূন্য, ভীষণ শূন্য! হিতাহিত কোনো চিন্তা এখন মাথায় ঘোরার মতো নয়। শুকনো পাতার উপর দিয়ে হেঁটে আসার মড়মড়ানি শব্দ মিতুলকে জানান দিলো এই পৃথিবীতে ওর সময় খুব অল্প। খুব খুব অল্প! মিতুলের চোখ থেকে উষ্ণ গরম অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। মাথা তুলে সামনে তাকালো।
সমাধি ক্ষেত্রের মাঝের ফাঁকা সমতল জমিন ধরে একজন এগিয়ে আসছে। গায়ের কালো পোশাকে সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা। ফর্সা মুখটা দেখা যাচ্ছে শুধু। হাতে ধরে আছে ধারালো ছুরি। ছুরিটা দেখে মিতুলের হৃদয় কাঁপতে লাগলো। এটা যেই সেই কাঁপন নয়, মৃত্যুর কাঁপন!
মিতুল দুই চোখ বন্ধ করে ফেললো। ক্ষণিকের ভিতরেই খুললো আবার।
মানুষটি নিকটে এসে গেছে। মিতুলের সামনে দুই পায়ে ভর করে বসলো সে। মিতুলের ভীত, অসহায় মুখখানি দেখছে। মিতুলও তাকিয়ে রইল মানুষটির মুখের দিকে। বড্ড অচেনা এই মুখ, বড্ড! ও তো এই মুখ চেনে না। ও চিনতো এক হাস্যজ্জ্বল যুবক মুখ। কিন্তু কোথায় সেই মুখ? সেই মুখ তো দেখতে পাচ্ছে না এখন। এ যে বড্ড অপরিচিত মুখ। ভয়ংকর এক মুখ। দুই চোখ যেন প্রাণহীন। ওই চোখে কোনো মায়া নেই। আছে কেবল নির্মমতা। মিতুলের ভাবতে খুব কষ্ট হয় যে এই প্রাণহীন, নির্মমতা ঘেরা চোখ জোড়া জোহানের। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে এটা ভাবতে। বুকটা ঘৃণায় ভরে যাচ্ছে। মিতুল খুব করে এই নির্মম বাদামি চোখ জোড়ার জোহানকে বলতে চাইছে,
‘প্লিজ জোহান। প্লিজ আমাকে মেরো না! আমি কানাডা ছেড়ে আজকেই চলে যাব। কারো কাছে কিচ্ছু বলবো না। আর কোনোদিন তোমাদের আশেপাশেও আসবো না। প্লিজ, ছেড়ে দাও আমায়। প্লিজ…’
কিন্তু মিতুলের মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। ও কেবল অসহায়, ভয়ার্ত মুখ নিয়ে জোহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
মিতুলের এই রকম চেহারা দেখে জোহান হাসছে। কী ভয়ংকর সেই হাসি! রক্ত হিম হয়ে যায়। ওর ঠোঁট হাসছে ঠিকই, কিন্তু ওর চোখ দুটো সেই প্রাণহীন। না এই হাসির দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না! মিতুল চোখ নামিয়ে ফেললো।
এর মাঝেই জোহানের শীতল কণ্ঠ ভেসে এলো,
“কী দরকার ছিল এই জঙ্গলের ব্যাপারে নাক গলানোর? কানাডা ঘুরতে এসেছো, কানাডা ঘুরেই চলে যেতে। আমার এই অন্ধকার রাজ্যের ব্যাপারে নাক গলানো একেবারে উচিত হয়নি তোমার। একেবারেই নয়। ভুল করেছ তুমি, চরম ভুল…”
মিতুল কাঁদো গলায় ফরিয়াদ করে বলে উঠলো,
“ক্ষমা করো আমায়। ক্ষমা করে দাও আমায় জোহান। আমি জানতাম না এখানে ঠিক কী আছে। যদি জানতাম, তাহলে জীবনেও আসতাম না। আমাকে মাফ করো। কথা দিচ্ছি, কাউকে কিচ্ছু বলবো না। ক্ষমা করে দাও আমাকে। তোমার পায়ে পড়ছি!”
“উহু, নো। কোনো ক্ষমা পাবে না তুমি। যারা যারা আমার এই জঙ্গলে পা রেখেছে, তাদের সবার একটাই শাস্তি হয়েছে। সেটা শুধু, মৃত্যু!”
“আমি মরে গেলে আমার মা, বাবা, ভাইয়েরা খুব কাঁদবে জোহান। আমার বড়ো ভাইটা তো কাঁদতে কাঁদতে আধমরা হয়ে যাবে। দয়া করো। মেরো না আমায়।”
জোহান মিতুলের চোখের পানি মুছে দিলো। মিতুলের মাথায় এক হাত রেখে অসহায় কণ্ঠে বললো,
“আই অ্যাম স্যরি মিতুল। আই হ্যাভ নো ওয়ে। তোমাকে বাঁচিয়ে রেখে আমি নিজের মৃত্যুর পথ এভাবে খুলে রাখতে পারি না। এটাকে তুমি মৃত্যু ভেবো না। মনে করো আমার জীবন বাঁচিয়ে রাখতে, তুমি তোমার জীবন উৎসর্গ করেছো। ওদিকটায় দেখো…”
জোহান হাত দিয়ে সমাধি ক্ষেত্রের এক দিক দেখিয়ে বললো,
“এরা সবাই তোমার মতো আমার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে। তুমি চিন্তা করো না। এদের খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছিলাম আমি। তোমায় সেই কষ্টটা দেবো না। ছুরিটা একেবারে ঠিক তোমার হৃদপিণ্ড বরাবর আক্রমন করবে। তুমি খুব সহজেই মারা যাবে। খুব বেশি কষ্ট হবে না। বিশ্বাস করো আমায়। আমি এ বিষয়ে খুবই দক্ষ। এতগুলো প্রাণ নিজ হাতে ধ্বংস করেছি আমি। খুব বেশি কষ্ট হবে না তোমার। ট্রাস্ট মি!”
মিতুলের চোখ থেকে অনর্গল অশ্রু ধারা ঝরতে লাগলো। অসহায় গলায় ডেকে উঠলো,
“জোহান…”
“আই অ্যাম স্যরি। রিয়েলি স্যরি। আমি মারতে চাইনি তোমাকে। কিন্তু তুমি নিজ থেকেই নিজের মৃত্যুর দুয়ারে এসে কড়া নেড়েছো। আমি উপায়হীন। তোমাকে মারা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। স্যরি…”
বলতে বলতে জোহান ছুরি উঠালো মিতুলকে আঘাত করার জন্য। মিতুল দুই চোখ খিঁচে ধরে, জীবনের সব থেকে বড়ো আত্মচিৎকার করলো,
“না…”
সমগ্র জঙ্গল কেঁপে উঠলো মিতুলের আত্মচিৎকারে।
আর সেই আত্মচিৎকার এতটাই বিকট ছিল যে, মিতুলের ঘুমকেও নাড়িয়ে দিলো সেই চিৎকার। মিতুল ধরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। বুক দ্রুত ওঠা নামা করছে। নিশ্বাস পড়ছে ভারী এবং ঘন। শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার। মস্তিষ্কে অসহ্য যন্ত্রনার উপলব্ধি।
কী… কী দেখলো এই মাত্র? কী ছিল এটা?
মিতুল আশেপাশে একবার সতর্ক দৃষ্টি বুলালো। কোথায় জঙ্গল? কোথায় জোহান? এ তো ওর বেড রুম। স্বপ্ন ছিল? কোনো ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখেছে ও? মিতুল বুকের উপর দু হাত রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। যাক বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছে এবারের মতো। ওটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিল! আল্লাহ অনেক রহমত তোমার!
মিতুল কেঁদে দিলো।
জঙ্গলের দৃশ্যটা ভেসে উঠছে চোখে। আহ! কী ভয়াবহ ছিল!
ধীরে ধীরে মিতুলের কান্না থামলো। ধাতস্থ হতে সময় লাগলো। কিন্তু মাথায় নতুন চিন্তার উদ্ভাবন ঘটলো। কী মানে ছিল ওই স্বপ্নের?
মিতুলের চোখে স্বপ্নের জোহানের সেই ভয়ংকর মুখ, হাসি ভেসে উঠছে। আবার সেই সাথে বাস্তবের জোহানের বাচ্চা বাচ্চা হাসি মুখও ভেসে উঠছে। মিতুল নিজেকে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করে বিড়বিড় করে একবার বললো,
‘মিতুল, এটা কেবলই দুঃস্বপ্ন ছিল। বাস্তবের জোহান আর স্বপ্নের ওই হিংস্র জোহান এক নয়।’
______________
মিতুল ফ্রেশ-ট্রেশ হয়ে নিচে নামলো। মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে। ওই জঙ্গল নিয়ে ভাবতে ভাবতে এখন এমন ভয়াবহ দুঃস্বপ্নও দেখতে শুরু করেছে। আর মাথার অবস্থাও কাহিল! এই বাড়িতে থাকতেও কেমন ভয় করছে এখন। খুব বড়ো একটা গড়বড় আছে ওই জঙ্গলে! জানে না ঠিক স্বপ্নের মতো এমন কিছু আছে কি না, তবে কিছু একটা আছে সে বিষয়ে ও নিশ্চিত। আর সেসবের পিছনে কি সত্যিই জোহান আছে? কোন কেস? যদি মার্ডার কেস হয় তাহলে তো…
মিতুল ভাবতে পারলো না আর। মস্তিষ্কে অধিক চাপ পড়ছে। না, এই জঙ্গল নিয়ে এখন ভাববে না একদম। পরক্ষণেই আবার মনে হলো, ঠিক কী আছে ওই জঙ্গলে?
মিতুল এসব ভাবতে ভাবতেই লনে চলে এলো সকালের মুক্ত বাতাস গায়ে জড়াতে। প্রথমেই ওর চোখ পড়লো লনের চেরি ব্লসম ট্রি গুলোর উপর। গাছে এখনও অনেক চেরি ব্লসম আছে। খুব ধীরে ধীরে ঝরছে ফুল গুলো। মনে হচ্ছে পুরো বসন্ত জুড়েই নিজেদের বিচরণ রাখতে চাইছে। মিতুলের হঠাৎ ভ্যাঙ্কুভারের কথা মনে পড়লো। রেশমী আন্টি বলেছিলেন বারবিকিউ পার্টির পরে ভ্যাঙ্কুভার নিয়ে যাবেন। মিতুলের ইচ্ছা করছে এখনই একটা প্লেন ধরে ভ্যাঙ্কুভার চলে যায়। ভ্যাঙ্কুভারের চেরি ব্লসমের রাজ্যে হারায় বহু দিনের জন্য। কিন্তু বলা যতটা সহজ, করা ততটাই কঠিন। বললেই তো আর এক দৌঁড়ে ভ্যাঙ্কুভার চলে যাওয়া যায় না।
মিতুলের মনটা আকুপাকু করছে ভ্যাঙ্কুভার যাওয়ার জন্য। মিতুল গাছের ছায়ায় থাকা ইজি চেয়ারের দিকে এগিয়ে গেল। মাঝের চেয়ারটায় বসলো। সাথে এখন মেহরিন থাকলে ভালো হতো। মেহরিন হলো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। এই বেস্ট ফ্রেন্ডের জন্যই ও মা, আব্বুর সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে ঢাকা ছেড়ে রাজশাহী ভর্তি হয়েছে। ইশ, এখন যদি সাথে মেহরিন থাকতো তাহলে কতই না ভালো হতো। দুই বান্ধবী একসাথে কানাডা ঘুরে বেড়াতো। শপিং করতো, রেস্টুরেন্টে গিয়ে এক সাথে খেতো। কার্লকে নিয়ে কথা হতো দুজনের মাঝে সারাদিন। কতই না ভালো হতো।
ইতোমধ্যে মেহরিনকে কার্লের ব্যাপারে সব বলে দিয়েছে। মেহরিন কার্লের ছবি দেখতে চেয়েছে।
মিতুল ভাবছে আজকে কার্লের রেস্টুরেন্টে গিয়ে, কার্লের অগোচরে একটা ছবি তুলবে। মেহরিনকেও পাঠানো হবে, আবার যখন তখন কার্লকে মনে পড়লে নিজেও দেখতে পারবে।
লনে জোহানের আগমন মিতুলের ফুরফুরা মনটাকে হঠাৎ কালো রঙে ছেয়ে দিলো। মিতুলের মনে পড়লো, স্বপ্নের কথা। এই জোহান ওকে কীভাবে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছিল! যদিও করতে পারেনি। তার আগেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু করতে তো নিয়েছিল!
জোহান লনের এদিক ওদিক ঘুরঘুর করলো কিছুক্ষণ। তারপর চলে গেল।
খানিক ক্ষণ বাদে মিতুলের মোবাইলে জোহানের থেকে একটা ম্যাসেজ এলো।
‘কী ভেবেছিলে তুমি, তোমার সাথে কথা বলতে আমি লনে গিয়েছিলাম? মোটেই না। তোমার ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল। আজকে একটা কথাও বলবো না আমি তোমার সাথে। কিন্তু তুমি আমাকে এমন ভাবে দেখছিলে কেন? আমি তো লক্ষ্য করেছি, তুমি আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে একটানা। আড় চোখে আমাকে দেখছিলে কেন? আমি তো বলেছিলাম আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা আমি একদম পছন্দ করি না। কি বলিনি? শোনো, আর কখনো ওভাবে তাকিয়ে থাকবে না আমার দিকে। বুঝেছো? আর আজকে কোনো কথাও বলতে আসবে না আমার সাথে।’
জোহানের ম্যাসেজ পড়ে মিতুল থ হয়ে গেল। কখন আড় চোখে জোহানের দিকে তাকালো ও? তাও না কি আবার একটানা! যে সময় জোহান এসেছিল, সে সময় একবার একটু দেখে আর তো তাকায়ইনি জোহানের দিকে। ও তো মেহরিনের সাথে চ্যাটিং করছিল। কীসব বলছে এই জোহান?
মিতুল দ্রুত টাইপ করলো,
‘কখন তাকালাম আমি তোমার দিকে? কখন একটানা তাকিয়ে থাকলাম? কখন? নিজেকে কি ওয়ার্ল্ড হ্যান্ডসাম মনে করো তুমি? যে তোমার দিকে মানুষের তাকিয়ে থাকতে হবে?’
ম্যাসেজ সেন্ড করে দিলো মিতুল।
জোহানের থেকে এর প্রতিউত্তরে কোনো ম্যাসেজ এলো না। খানিকটা পর স্বয়ং জোহান নিজেই এসে হাজির হলো। এসেই গলায় বেশ জোর দিয়ে বললো,
“কোন সাহসে তুমি আমার সৌন্দর্য নিয়ে প্রশ্ন তোলো? কোন সাহসে? তুমি জানো কত মেয়ে আমার জন্য পাগল? দিনে দুই, তিনশ মেয়ের প্রপোজাল আসে আমার কাছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারি না আমি মেয়েদের জ্বালাতনে। দেখেছ আমাকে কখনো রাস্তা দিয়ে হাঁটতে? আমি হাঁটি না। আমি রাস্তা দিয়ে কখনও পায়ে হেঁটে কোথাও যেতে পারি না। সব সময় আমাকে কার ইউজ করতে হয়। মাঝে মধ্যে যখন ক্লাবে যাই, মেয়েরা তখন চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে আমাকে। আমার তখন পালিয়ে আসতে হয় ক্লাব থেকে। এত এত মেয়ে আমাকে প্রোপজ করে যে, কাকে রেখে কার সাথে ডেট করবো সেটাই ভেবে উঠতে পারি না আমি। আর তুমি আমার সৌন্দর্য নিয়ে প্রশ্ন তোলো?”
মিতুল হা হয়ে জোহানের কথা গিলছিল। একটা মানুষ কীভাবে এমন বানোয়াট কথা বলতে পারে? মিতুল বললো,
“তোমার জন্য যদি এত মেয়েই পাগল থাকে, তাহলে একটা পাগলের কারখানা তৈরি করলেই পারো। তাহলে এত ভোগান্তি হবে না তোমার। যে যে মেয়ে পাগল হবে তোমার জন্য, সেই মেয়েগুলোকে এনে ওই কারখানায় রাখবে। তারপর একটা একটা করে সিরিয়াল দিয়ে প্রেম করবে। দেখবে কোনো ভোগান্তিই হবে না।”
জোহান মিতুলের কথার বিদ্রূপটা বুঝতে পারলো। মাথা নাড়িয়ে বললো,
“হ্যাঁ, সেটাই করবো আমি। একটা পাগলের কারখানাই তৈরি করবো। আর আমার সেই কারখানার প্রথম মেম্বার হবে―তুমি!”
জোহান মিতুলের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশন করলো।
(চলবে)