চেরি ব্লসমের সাথে এক সন্ধ্যা পর্ব: ২৩

0
938

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২৩
____________

অচেনা মিষ্টি সুরে একটা পাখি ডাকছে। পাখিটা মিতুলের রুমের জানালার বাইরে বসে আছে। মিতুল গ্লাস উইন্ডো খুলে দিতেই, পাখিটা ডানা মেলে উড়ে গেল। মিতুলের কাছে বেশ লাগলো ব্যাপারটা। উইন্ডো খুলে দেওয়ায় সকালের সোনালী রোদের আভা জানালার পর্দা ভেদ করে রুমে ঢুকে খানিক জায়গায় নিজেদের বিস্তার ঘটিয়েছে। মিতুল জানালার পর্দা এক পাশে গুটিয়ে রাখলো। ওর ঘুম ভেঙ্গেছে মাত্র কিছুক্ষণ আগে। এরই মাঝে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। কালকে রাতের ফ্লাইটেই এডমন্টন ফিরেছে ওরা। আর সেই সাথে ফেলে এসেছে ভ্যাঙ্কুভারে ওর প্রিয় চেরি ব্লসমের রাজ্য। মিতুল লনের চেরি ব্লসম ট্রিগুলোর দিকে তাকালো। এই কদিনে যেন অনেক ফুল ঝরে পড়েছে। গাছের মাথাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। যদিও এখনও অনেক ফুলই আছে গাছে। তবে আগের মতো নেই। মিতুল জানালার দ্বার ছেড়ে ক্লোজেটের সামনে এসে দাঁড়ালো। ব্রেকফাস্ট সারার পরপরই কার্লের রেস্টুরেন্টে যাবে কার্লের সাথে দেখা করতে।
মিতুল ক্লোজেট খুললো। প্রথমেই চোখ চলে গেল লাল লেহেঙ্গার দিকে। এটা জোহান কিনে দিয়েছিল। পাঞ্জাবি বাজার থেকে।
মিতুল লেহেঙ্গার পাশে থাকা খয়েরি রঙের একটা টপস উঠিয়ে নিলো। সাথে নিলো একটা খয়েরি স্কার্ফ এবং সোয়েটার। কালো জিন্স পরবে সাথে। মিতুল সব কিছু এনে বিছানার উপর রাখলো। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেল ব্রেকফাস্টের জন্য।

প্রথমে এলো কিচেনে। ক্যামিলা সাধারণত কিচেনেই থাকবে এই সময়। মিতুল ক্যামিলাকে ‘গুড মর্নিং’ জানালো। ক্যামিলাও হাসি মুখে গুড মর্নিং জানায়। ক্যামিলা আঙ্গুর আর আপেলের জুস বানাচ্ছে।
মিতুল জুস বানালো হলে ওর ব্রেকফাস্ট দিতে বললো ডাইনিং রুমে। ক্যামিলা বললো,
“কোথাও যাচ্ছ নাকি? আজকে হঠাৎ ব্রেকফাস্টের জন্য এত তাগিদ!”

ক্যামিলা কীভাবে যে ধরে ফেললো মিতুল জানে না। মিতুল বললো,
“হুম। আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম না? ওই যে কার্ল নাম? ওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।”

কার্লের নাম শুনে ক্যামিলা যেন খুশি হয়নি। কেমন গম্ভীর দেখালো তার মুখ। তবুও জোরপূর্বক একটু হেসে বললো,
“জোহান ঘুম থেকে উঠেছে?”

“ও উঠেছে কি না আমি জানবো কী করে? দেখিনি কোথাও।”

“তাহলে সম্ভবত ঘুমাচ্ছে। তুমি ডাইনিংএ যাও।”

মিতুল ডাইনিং রুমে চলে এলো। জায়িনকে বসা দেখে একটু হকচকিয়ে গেল। ভেবেছিল এত তাড়াতাড়ি বোধহয় কেউ ব্রেকফাস্ট করবে না, কেবল ও ছাড়া। কিন্তু না, জায়িনও আছে।
ভ্যাঙ্কুভার থেকে ফিরে জায়িনের সাথে ওর এই প্রথম দেখা। জায়িন মোবাইল ঘাটছিল। ও আসায় একটু চোখ তুলে তাকিয়ে আবারও মোবাইলে ডুব দিয়েছে। মিতুল জায়িনের সামনের চেয়ারটায় বসলো। ও জায়িনের সরু নাকটা দেখছে। কী অহংকার ওই নাকে! পৃথিবীর সকল অহংকারই যেন জায়িনের এই নাকে বসত গড়েছে। সরু নাকের অহংকারী ব্যক্তি!
মিতুল জায়িনের নাকের দিকে তাকিয়ে ছিল, এর মাঝে জায়িন তাকালো ওর দিকে।
মিতুল ঘাবড়ে গেল। অপ্রস্তুত ভাবে চোখ নামিয়ে ফেললো। নামিয়ে ফেলা চোখ তুলে আর সামনে তাকালো না। প্রথম চোখ ওঠালো জায়িনের কথা শুনে।
জায়িন বললো,
“ভ্যাঙ্কুভার ট্রিপ কেমন ছিল?”

মিতুল হেসে বললো,
“খুব ভালো ছিল। এই বসন্তে ভ্যাঙ্কুভার ট্রিপ খারাপ হবে এ তো হতেই পারে না। দারুণ ছিল। পার্কগুলো তো অপূর্ব। আর চেরি ব্লসমে ঘেরা রাস্তাগুলোর কথা কী আর বলবো…”

জায়িন একটু হাসলো। মিতুল ভালো করে তাকিয়ে দেখলো। হাসলে কিন্তু ভীষণ সুন্দরই দেখতে লাগে জায়িনকে। কিন্তু অহংকারীটার মুখে হাসি দেখা যায় না বললেই চলে। হাসলে কি আর নিজের অহংকার ধরে রাখতে পারবে?

“এরপর কোথায় ঘুরতে যাবে?”

“আগে এই এডমন্টন শহরটা ভালো করে ঘুরে নিই। তারপর অন্য জায়গায় ঘুরতে যাব আবার।”

“ভালো বুদ্ধি।”

মিতুল একটু থমকে গেল। জায়িন কি ওর প্রশংসা করলো? না কি কোনো ভাবে অপমান করলো?

_______________

জোহানের ঘুম ভাঙলো দুপুরের দিকে। এখনও শান্তিমতো ঘুম হয়নি ওর। ঘুম এখনও যেন অসম্পূর্ণ। জোহান অসম্পূর্ণ ঘুম নিয়েই রুম থেকে বের হলো। চোখে এখনও রাজ্যের ঘুম। গায়ের গেঞ্জির জায়গায় জায়গায় ভাঁজ। বাদামি চুলগুলো এলোমেলো, উস্কোখুস্কো। এক প্রকার চোখ বুজে বুজেই সিঁড়ি পার হয়ে হলরুমে নামলো।

রেশমী হলরুমে বসে ছিলেন। জোহানকে দেখেই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এলো তার। সে বিরক্ত ঝরা কণ্ঠেই বললো,
“উশৃঙ্খল ছেলে! ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে পারো না? শুধরাবে কবে তুমি?”

মমের কথা জোহানের কানে এলো। কিন্তু গায়ে না মাখার ভাণ করে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
দরজা অতিক্রম করে লনে নেমে কয়েক পা হেঁটে এসে, রোদ্দুর জড়ানো ঘাসের উপর শুয়ে পড়লো ধপাস করে।

নিজের চোখের সামনে জোহানকে পড়তে দেখে মিতুলের হৃদয় ছ‍্যাত করে উঠলো। গেটের কাছেই পা দুটো থমকে গেল ওর। কী হলো জোহানের? অজ্ঞান হয়ে গেল না কি? মিতুল ছুটে এলো জোহানের কাছে।
“এই জোহান, কী হয়েছে তোমার?”

জোহান কোনো সাড়া শব্দ করলো না।
মিতুলের সত্যিই ভয় লাগছে। জোহান শ্বাস নিচ্ছে কি না দেখার জন্য, মিতুল জোহানের নাকের কাছে দুই আঙ্গুল নিয়ে গেল চেক করার জন্য। অসাবধানতাবশত আঙ্গুল লেগে গেল একটু জোহানের নাকে। অমনি জোহান মিতুলের হাতটা ছিটকিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো। চোখ বুজেই বিরক্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,
“আহ! ডিস্টার্ব করছো কেন? এখানে এসে একটু শান্তিমতো শুয়েছি, তাও কি তোমার সহ্য হচ্ছে না? আমার সুখ কি তোমার দুই চোক্ষের বিষ?”

“ওহ…তার মানে তুমি নিজ থেকে এখানে শুয়েছো? আমি তো ভেবেছিলাম অজ্ঞান-টজ্ঞান হয়ে গেছো! কিন্তু তুমি এত জায়গা থাকতে এখানে এসে শুয়েছো কেন?”

জোহান চোখ বুজে বুজেই কথা বললো,
“ভিটামিন। রোদের ভিটামিন জড়াচ্ছি গায়ে। জানো না যে সকালের রোদে ভিটামিন থাকে?”

জোহানের কথা শুনে তাজ্জ্বব বনে গেল মিতুল। এখন কি সকাল? এখন তো দুপুর! মিতুল বললো,
“সকালের রোদে ভিটামিন থাকে বৈ কি। কিন্তু দুপুরের রোদে থাকে না। দুপুরের রোদে যা থাকে, তা হলো উত্তাপ। এই উত্তাপ তোমার চেহারার বারোটা বাজিয়ে দেবে। নিজের এত রূপবতী মুখটা ঢেকে নিচ্ছ না কেন?”
বলে মিতুল নিজের গলা থেকে স্কার্ফটা খুলে জোহানের মুখে দিয়ে দিলো। তারপর যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। কিন্তু যেতে পারলো না।
জোহান মিতুলের এক পা টেনে ধরেছে। মিতুল একটুর জন্য পড়লো না।

জোহান মুখের উপর থেকে স্কার্ফ সরিয়ে মিতুলের দিকে তাকালো। মিতুলের মুখে মেকআপ। ঠোঁটে গাঢ় খয়েরি লিপস্টিক। আইলেশের জন্য চোখের পাঁপড়ি ঘন দেখাচ্ছে। জোহান মিতুলকে এক ঝলক দেখেই বুঝে গেল মিতুল এই মাত্র বাইরে থেকে এসেছে।

মিতুল জোহানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
“হোয়াট?”

“কোথায় গিয়েছিলে?”

“কোথায় গিয়েছিলাম সেটা তোমাকে কেন বলবো? কে তুমি আমার?”
বলে মিতুল পা বাড়ালো। জোহান ওর পা টেনে ধরলো আবারও। মিতুল এবারও পড়তে পড়তে পড়লো না। কিন্তু ক্ষেপে গেল এবার।
“আরে, পা টেনে ধরছো কেন বার বার? এখানে পড়ে আমার কোমর ভেঙ্গে যাক সেটা চাইছো তুমি?”

“কার্লের কাছে গিয়েছিলে, তাই না?”

মিতুল হকচকিয়ে গেল। আশ্চর্য তো! কার্লের কাছে গিয়েছিল তা জোহান জানে কীভাবে?
মিতুল কথাটা অস্বীকার করে বললো,
“কার্লের কাছে যাব কেন আমি? যাওয়ার জায়গার অভাব পড়েছে না কি এডমন্টনে?”

জোহান কিছু বললো না। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে মিথ্যুক মিতুলকে দেখে চোখ বুজলো আবার। মিতুলের স্কার্ফটা আবার মুখের উপর দিয়ে বললো,
“গেট লস্ট!”

“তো তোমার কি ধারণা আমি দাঁড়িয়ে থাকবো এখানে?”
মিতুল দাপটের সাথে হেঁটে ঘরে চলে গেল।

জোহান মনে মনে শ্লেষাত্মক হেসে বললো,
“মিথ্যাবাদী মেয়ে!”
_____________

রাত এগারোটা।
কেউ একজন বাড়ির প্রবেশ দরজা ধাক্কাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন ডাকাত পড়েছে দরজায়।
হলরুমে বসে মনের সুখে নখ কাটছিল মিতুল। কিন্তু দরজা ধাক্কাতে থাকা অভদ্র মানুষটির জন্য ওর নখ কাটার বারোটা বাজলো। মিতুল নেইল কাটারটি রেখে দ্রুত দরজা খুলতে গেল।
দরজা খুলতেই বাজে একটা গন্ধ এসে নাকে ধাক্কা দিলো। সেই সাথে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি হেলে পড়লো মিতুলের গায়ে।
মিতুল আকস্মিক এমন ঘটনায় ভড়কে গেল। মানুষটাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। মানুষটা মিতুলের ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল ছিটকে। মিতুল এতক্ষণ মানুষটার মুখ দেখার সুযোগ পায়নি। এখন দেখলো। জোহান!

জোহান নিজের কোমরে হাত দিয়ে ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে বললো,
“মাই ওয়েস্ট…আহ্…মাই ওয়েস্ট!”

ভয়ে মিতুলের গলা শুকিয়ে গেল। কোমর কি ভেঙ্গে গেছে জোহানের? মিতুল দৌঁড়ে এলো জোহানের কাছে। ব্যস্ত হয়ে বললো,
“আর ইউ ও কে?”

জোহান পিট পিট করে চোখ মেলে তাকালো মিতুলের দিকে। জোহানের থেকে এখনও সেই গন্ধটা আসছে। মিতুল জানে এই গন্ধ কীসের। এই গন্ধর সাথে পরিচিত ও। জোহানের মাধ্যমেই। এই গন্ধ মদের। ইশ, আবারও মদ খেয়েছে জোহান?

জোহান বেশি পরিমাণ পান করেছে বলে প্রায় অর্ধ মাতাল। ওর চোখে মিতুলের চেহারাটা ধরা দিচ্ছে না ঠিক ঠাক ভাবে। অনেক দেখে অবশেষে কোনোরকম বুঝলো ওর সামনে মিতুল বসে আছে।
জোহান মিতুলের দিকে অঙ্গুলি করে জড়ানো কণ্ঠে বললো,
“ইউ তুলতুল! ইউ হার্ট মি?”

মিতুল কী করবে বুঝতে পারছে না। একটা মাতালের সাথে কী রকম আচরণ করা উচিত ওর? মিতুল বলে উঠলো,
“তুমি আবারও মদ খেয়েছো? তুমি এত নেশাখোর কেন বলো তো?”

“তুমিও খেতে চাও? ড্রিংকস করবে তুমি আমার সাথে? চলো, প্রতিযোগিতা করা যাক। দেখি কে বেশি ড্রিংকে পারদর্শী। তুলতুল না কি জোহান? চলো, শুরু করি।”

“তুমি নিজে তো খারাপ আছোই, এখন অন্য মানুষকেও খারাপ বানাতে চাও? কেন আমি তোমার সাথে মদ গিলবো? আমার মা, বাবা কি আমাকে কানাডা পাঠিয়েছে তোমার মতো নেশাখোর বানানোর জন্য?”

“হেই তুলতুল! কথা ঠিক করে বলো। আমি নেশাখোর নই। আমি হলাম সিঙ্গার। সিঙ্গার জোহান আহমেদ ওরফে জো। ‘জো’র মানে বুঝেছো তো? জো হলো জোহানের শর্ট ফর্ম। সবাই আমাকে ভালোবেসে জো বলে ডাকে। তুমিও ডাকো। কল মি ‘জো’।”

“মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে আছো, আবোল তাবোল বকছো, আবার বলছো তুমি নেশাখোর নও?
কে ডাকে? কে ডাকে তোমাকে জো বলে? আমি তো কখনো শুনিনি কাউকে জো বলে ডাকতে। আমি কেন ডাকবো?”

“তুলতুল, তুমি আমাকে সন্দেহ করো? আমাকে তোমার মিথ্যাবাদী মনে হয়? তোমার ডাউট আছে কেউ আমাকে আসলেই জো বলে ডাকে কি না? এই জো কে তো তুমি কিছুতেই মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে পারবে না তুলতুল। আমাকে যে সত্যিই জো বলে ডাকা হয়, সে প্রমাণ আমি দেবো। জাস্ট ওয়েট।”
কথাগুলো বলে, এ পকেট ও পকেট হাতড়ে নিজের মোবাইল বের করলো জোহান। অগোছালো আঙ্গুলের স্পর্শে কতক্ষণ মোবাইলটাকে টিপলো। তারপর মোবাইলটা কানে ধরলো। কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলে উঠলো,
“হেই জেমস, কল মি ‘জো’। জোরে আমাকে জো বলে ডাক। যাতে আশেপাশের সবাই শুনতে পারে। আমাকে জো ডেকে ডেকে দশটি সেনটেন্স বল। যেমন- হেই জো, তুমি ঘুম থেকে উঠেছো? জো, তুমি কি ব্রেকফাস্ট করোনি? এমন করে বল।”

জোহান জেমসকে আদেশ দিয়ে কান থেকে মোবাইল সরিয়ে এনে মিতুলের উদ্দেশ্যে বললো,
“তোমার জন্য এখন লাউড বাড়িয়ে দেবো আমি। শোনো ও এখন জো বলে ডাকবে আমাকে।”
বলেই জোহান লাউড স্পিকারে দিলো ফোন।

মিতুল শুনতে পেল জেমস বলছে,
“জো, জো, আমার কথা শোন। সোজা নিজের রুমে চলে যা। সময় নিয়ে হালকা গরম পানির লম্বা একটা শাওয়ার নে। তারপর গ্রীন টি পান কর। এরপর সুন্দর একটা ঘুম। হ্যাংওভার কেটে গেলে আবার কথা হবে তোর সাথে। আমি এখন ব্যস্ত। সারাদের এখানে আছি। আজকে ওর ফ্যামিলির সাথে ডিনার। রাখছি। কথা হবে পরে।”

জেমস ফোন রাখতেই জোহান বললো,
“দেখলে তো তুলতুল, আমাকে জো বলে ডেকেছে। আমি তোমার মতো মিথ্যাবাদী নই। সত্যি কথা বলি আমি।”

মিতুলের একটু রাগ হলো। বললো,
“আমি মিথ্যাবাদী হলাম কীভাবে? কী মিথ্যা কথা বলেছি আমি?”

“নিজেই নিজের হিসাব খুলে বসো। সব পেয়ে যাবে।”

মিতুলের রাগ চড়াও হলো আরও।
“বাজে বকো না জোহান। মাতাল হয়ে যা তা বললেই কি আমি মেনে নেবো? তুমি মাতাল হয়ে আমাকে মিথ্যাবাদী বললেই আমি মিথ্যাবাদী হয়ে যাব না। তুমি কিন্তু…”
হঠাৎ করে লিভিং রুমে চোখ পড়তেই থেমে গেল মিতুল। কখন থেকে ক্যামিলা ওখানে দাঁড়িয়ে আছে জানা নেই ওর। মিতুল বললো,
“ক্যামিলা, ওকে নিয়ে ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখো কতক্ষণ। তাহলেই দেখবে ওর সকল হ্যাংওভার কেটে গেছে।”

ক্যামিলা একটু হাসলো। তার বেশ ভালোই লাগে জোহান মিতুলের এমন খুনশুটি।

ক্যামিলার কথা কানে আসতেই জোহান একটা উল্টি দিয়ে দরজার দিকে মুখ করলো। দেখতে পাচ্ছে এখন ক্যামিলাকে। জোহান একটু উচ্চঃস্বরে বলার চেষ্টা করলো,
“সিস, তোমাকে বলেছিলাম না তুলতুল একটা সাংঘাতিক মেয়ে? দেখো ওর দিকে। কেমন হার্ট করে কথা বলে আমাকে। তুমি ওকে নিষেধ করো। ওকে বলে দাও আমার…”
পুরো কথা শেষ না করেই থেমে গেল জোহান। একেবারে চুপ হয়ে গেল।

মিতুল চোখ পিট পিট করে তাকাচ্ছে জোহানের দিকে। কী বলে দিতে বলছে জোহান?

ক্যামিলা হাতের কফির মগ দুটো টি টেবিলে রেখে, জোহানের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,
“কী হলো জোহান? থামলে কেন? বলো। বলো, আমি কী বলে দেবো মিতুলকে? বলছো না কেন? বলে দাও।”

জোহান ও বিষয়ে মুখ খুললো না আর। দুই পাশে মাথা নাড়িয়ে বললো,
“নাথিং।”

ক্যামিলা জোহানের কাছে এগিয়ে এসে বললো,
“চলো। তোমাকে তোমার রুমে নিয়ে যাই।”

জোহান আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বললো,
“এটাই তো আমার রুম।”
তারপর হলরুমের সোফা দেখিয়ে বললো,
“ওই তো আমার রুমের কাউচ। আমি তো ওখানেই ঘুমাই।”

মিতুল জোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। জোহান কী বলছে এসব?

জোহান এদিক ওদিক তাকিয়ে কী যেন খুঁজলো। তারপর বললো,
“কিন্তু আমার গিটার? আমার গিটার কোথায় সিস? মম নিয়ে গেছে আবার? মম আমার সাথে এমন করে কেন? মমকে নিষেধ করো আমার সাথে এমন করতে! আমার সাথে এমন করা উচিত নয় তার!”

জোহান এ পর্যন্ত বলেই থেমে গেল। আর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না ওর।
ক্যামিলা দেখলো জোহানের চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ছে। ক্যামিলা ডাকলো জোহানকে।
কিন্তু না, আর কোনো সাড়া পাওয়া গেল না জোহানের।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here