চেরি ব্লসমের সাথে এক সন্ধ্যা পর্ব: ২৪

0
1371

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২৪
____________

কালকের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে মিতুলের। জোহানের বলা শেষ কথাগুলো মনে পড়ছে ওর।
‘আমার গিটার কোথায় সিস? মম নিয়ে গেছে আবার? মম আমার সাথে এমন করে কেন? মমকে নিষেধ করো আমার সাথে এমন করতে! আমার সাথে এমন করা উচিত নয় তার!’

কাল রাত থেকেই জোহানের কথাগুলো মিতুলের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। জোহানের কথা দ্বারা তো বোঝায় যে রেশমী আন্টি এর আগে জোহানের গিটার নিয়েছিল। কিন্তু ওর গিটার কেন নেবে রেশমী আন্টি? আর, মমকে আমার সাথে এরকম করতে নিষেধ করো, এ কথার মানে কী ছিল? আগে জানতো মানুষ মদ খেলে গোপন সত্যি কথা বলে ফেলে। কিন্তু জোহান কীসব বললো? প্রথমে শোনালো ‘জো’র কাহিনী। আর শেষ সময় শোনালো এসব। যার কোনো মানেই বুঝলো না ও। কী ছিল এসবের মানে?

রুমের দরজায় ঠক ঠক করে করাঘাতের শব্দ হতেই, মিতুল ওর ভাবনা স্থগিত করে দরজা খুললো গিয়ে।
দরজা খুলতেই জোহানের মুখখানা ভেসে উঠেছে। মিতুলকে দেখে জোহানের ভ্রু কুঁচকে গেল।
“তুমি এখনও ব্রাশ করোনি?”

“আমি ব্রাশ না করলে তোমার কী সমস্যা? এখানে এসেছো কেন? তোমার হ্যাংওভার কেটে গেছে?”

জোহান মিতুলের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললো,
“তোমাকে খুবই ইন্টারেস্টিং একটা জিনিস দেখাতে নিয়ে যাব আমি।”

জোহানের কথা শুনে মিতুলের মন খুশিতে গদগদ হয়ে গেল।
“কী ইন্টারেস্টিং জিনিস দেখাতে নিয়ে যাবে?”

“সেটা গেলেই দেখতে পাবে।”
বলে জোহান দরজা ত্যাগ করলো।
___________

মিতুল বেশ কৌতূহল নিয়ে বের হয়েছিল জোহানের সাথে। জোহান ওকে ইন্টারেস্টিং জিনিস দেখাতে নিয়ে যাবে বলে মনে মনে খুবই উৎফুল্ল ছিল। কিন্তু জোহান ওকে যেখানে নিয়ে এলো, তা দেখে ও অবাক। ওর উৎফুল্লতা নিমিষে চুপসে গেল।
হাসপাতালের সামনে গাড়ি থামিয়েছে জোহান। মিতুল গাড়িতে বসেই হাসপাতালের আশপাশটা দেখছে। এখানে নিয়ে এলো কেন জোহান? ইন্টারেস্টিং জিনিস দেখাবে বলে এখানে নিয়ে আসার মানে কী? মিতুল নিজের বিস্ময় চেপে রাখতে পারলো না। জিজ্ঞেস করেই ফেললো,
“হাসপাতালে নিয়ে এলে কেন আমাকে?”

জোহান ওর প্রশ্নের উত্তর দিলো না। সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে গেল। মিতুলও নামলো।
জোহান এগিয়ে গিয়ে গাড়ির পিছনের দরজা খুললো। ছোট্ট একটা ফলের ঝুড়ি বের করলো সেখান থেকে। ফলের সাথে আবার ফুলও আছে। মিতুল তো গাড়িতে বসে একেবারেই খেয়াল করেনি ঝুড়িটা। ফল নিয়ে হাসপাতালে এসেছে কেন? কোনো রোগীকে দেখতে এসেছে না কি? এই হাসপাতালে ওর কোন পরিচিত রোগী আছে?

“চলো।” জোহান হসপিটালে ঢোকার জন্য ইশারা করলো।
মিতুল চুপচাপ জোহানের সাথে হেঁটে চললো। হাসপাতালে নিয়ে আসার রহস্য এখনও বুঝলো না ও।
জোহানের সাথে একটা রুমে এসে ঢুকলো মিতুল। প্রথমেই চোখ চলে গেল বেডের দিকে।
দেখতে পেল এক যুবক ছেলে শুয়ে আছে বেডে। হাতে ব্যান্ডেজ। মাথায় ব্যান্ডেজ। মুখের কয়েক জায়গা প্লাস্টারে ঢাকা।

জোহান এগিয়ে গেল ছেলেটির দিকে। হাতের ঝুঁড়িটা বেডের পাশের টেবিলে রেখে, ছেলেটির বাহুতে কয়েকটি চাপড় মেরে হাসি হাসি মুখে বললো,
“হেই স্যানডি, হোয়াট’স আপ?”

ছেলেটার মুখ রাগে কঠিন হয়ে উঠলো। রাগী মুখে এক টুকরো হাসি ফোঁটানোর চেষ্টা করে জোর দিয়ে বললো,
“ইয়াহ, আই অ্যাম ফাইন!”

জোহান হঠাৎ ছেলেটার দিকে ঝুঁকে পড়লো। ছেলেটার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“এখনও এই কথা বলবি? কালকের মারে কি এনার্জি ছিল না তেমন?”
কথাটা বলে মুখে ফিচেল হাসি ফোঁটায় জোহান। তারপর আবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
জোহানের কথা শুনে ছেলেটার মুখ যেন আগের থেকে আরও বেশি কঠিন হয়ে উঠলো।

মিতুল ভ্রু কুঁচকে ব্যাপারটা দেখছে। কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না! কী বললো জোহান ছেলেটাকে?
ছেলেটাকে কেমন চেনা চেনা লাগছে মিতুলের। কোথায় যেন দেখেছে। কিন্তু কোথায়? মিতুলের ভাবতে একটু বেগ পেতে হলো। কিন্তু মনে পড়লো কোথায় দেখেছে ছেলেটাকে। ছেলেটাকে চিনতে পেরে বিস্ময়ে মিতুল হতবাক হয়ে গেল। এ তো সেই ছেলে। জোহানকে মারধর করা চারটে ছেলের মধ্যে একটা!

ছেলেটা জোহানের দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো,
“ডোন্ট ও্যআরি। এর সব কিছুই দশ গুণ বেশি বোনাস দেবো তোকে। জাস্ট ওয়েট।”

ছেলেটার কথা শুনে মিতুলের চক্ষু আতঙ্কে বড়ো হয়ে গেল। মানে কী ছেলেটার কথার? দশ গুণ বেশি মানে? ছেলেটার এভাবে আহত হওয়ার কারণ কি তাহলে জোহান? জোহান মেরেছে ছেলেটাকে এভাবে? মিতুল আতঙ্কগ্রস্ত চোখ দুটো জোহানের উপর নিক্ষেপ করলো। জোহানকে মোটেও বিচলিত দেখালো না। মুখে হাসি। জোহান বললো,
“সে তো তোদের দিতেই হবে বোনাস। না হলে তো নিজেদের মান হারাবি। চিন্তা করিস না। আমি সবকিছুর জন্যই প্রিপেয়ার থাকবো।”

জোহান ছেলেটার দিকে তাকিয়ে চুমু দেওয়ার ন্যায় ঠোঁটের আকৃতি করলো। তারপর প্রশস্ত হেসে ঝুঁড়ি থেকে একটা আপেল উঠিয়ে বললো,
“তোর জন্য টাটকা ফল নিয়ে এসেছি। খা। খেয়ে শক্তি বানা। দশ গুণ বেশি বোনাস দেওয়ার জন্য তো শক্তি জোগাতে হবে গায়ে। তাই না?”

জোহান আপেলটা ঝুড়িতে রেখে মিতুলকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“মিতুল, লেট’স গো!”

মিতুল দরজা থেকে কয়েক পা ভিতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে ছিল। এর বেশি সামনে এগোয়নি আর। জোহান মিতুলের কাছাকাছি চলে এলে, ছেলেটা হঠাৎ কেমন বাঁকা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“হু ইজ শি? ইওর গার্লফ্রেন্ড?”

ছেলেটার কথা শুনে মিতুল হকচকিয়ে গেল। ফট করে বলতে ইচ্ছা করছিল যে, ও জোহানের গার্লফ্রেন্ড নয়। কিন্তু জোহানের জন্য আবার ধৈর্য ধরলো। ওর ধারণা ছিল জোহান নিজে ছেলেটার ভুল ভাঙ্গিয়ে দেবে। কিন্তু জোহান তা করলো না। যা করলো তা ছিল ওর জন্য অগাধ বিস্ময়পূর্ণ। জোহান ওর এক হাত ধরে টান দিয়ে ওকে নিজের কাছে এনে ফেললো। নিজের সাথে দাঁড় করিয়ে এক হাত দিয়ে ওকে আগলে ধরে বললো,
“ইয়াহ, শি ইজ মাই গার্লফ্রেন্ড। কেন? হিংসা হচ্ছে?”

মিতুল ভীত, বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে জোহানের মুখের দিকে। এসব কী বললো জোহান?

জোহানের কথা শুনে ছেলেটা কেমন হেসে চোখ সরিয়ে ফেললো।
জোহানও একটু হেসে মিতুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সুইটহার্ট, লেট’স গো!”

জোহানের কথা শুনে মিতুলের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে উঠলো। সুইটহার্ট?

মিতুল হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পথে একটা কথাও বলেনি জোহানকে। ভিতরে ভিতরে রাগে ফুলেছে শুধু। প্রথম মুখ খুললো জোহান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে হাসপাতাল সীমানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর।

“গার্লফ্রেন্ড? কে পারমিশন দিয়েছে তোমাকে আমাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বলার? এত্ত বড়ো মিথ্যুক তুমি! আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড? আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড হই? তোমার কি আর কাউকে চোখে পড়ে না? পৃথিবীতে এত মেয়ে থাকতে আমাকে কেন নিজের গার্লফ্রেন্ড বললে? হ্যাঁ? জবাব দাও। আমাকে দেখতে কি তোমার গার্লফ্রেন্ডের মতো লাগে?”

“বেশি বকবক করো না। তোমাকে যে আমার গার্লফ্রেন্ড বলেছি, সেটা তোমার সাত জনমের ভাগ্য। হোক সেটা মিথ্যা।”

“ওরে, কী আমার মানুষটা! সে আমাকে গার্লফ্রেন্ড বললে না কি আমার সাত জন্মের ভাগ্য খুলে যাবে! নিজেকে কী মনে করো তুমি? প্রিন্স চার্মিং?”

“তার থেকে বেশি কিছু।”

মিতুলের মাথায় তাৎক্ষণিক অগ্নিদাহ বয়ে গেল।
“দেখো, আমার খারাপ মেজাজটা আরও বেশি খারাপ বানিয়ে দিয়ো না। এর ফল ভালো হবে না।”

“কী করবে তাহলে? নিজের ওই চোখ দিয়েই খুন করবে আমায়?”

“পারলে তাই করতাম।”

“..’পারলে’ বলছো কেন? পারোই তো তুমি। নিজের ওই চোখ দিয়েই বার বার খুন করো আমাকে।”
জোহান কথাগুলো বলে মিতুলের দিকে তাকালো। দেখলো মিতুল ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।

“হেই তুলতুল, এমন করে তাকিও না। যদি আমি সত্যি সত্যিই খুন হয়ে যাই, তাহলে পৃথিবীর কোনো ডক্টর আর আমাকে বাঁচিয়ে তুলতে পারবে না। মৃত জোহানের সকল দায়ভার নিতে হবে তোমার। এই দায়ভার তুমি তোমার সারা জীবনেও আর কাটিয়ে উঠতে পারবে না। মৃত জোহানকে নিয়েই তোমার চলতে হবে সারাজীবন। কিছুতেই আর এই জোহানকে তাড়াতে পারবে না নিজের জীবন থেকে।” বলেই আবার সামনে তাকালো জোহান।

জোহানের কথা শুনে মিতুল কেন যেন খুব শান্ত হয়ে গেল। জোহানের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারেনি ও। তবুও জোহানের কথাগুলো শান্ত করে দিলো ওকে। নিঃশেষ করে দিলো ওর রাগকে। মিতুল খানিক চুপ থেকে বললো,
“তুমি যে ছেলেটাকে মেরেছো, এরপর আবার ওরা পাল্টা আক্রমণ করবে না তোমার উপর?”

“পাল্টা আক্রমণ করবে না আবার! দেখলে না কী বললো? দশ গুন বেশি বোনাস পাবো আমি। মানে ওকে যা মেরেছি, তার থেকে দশ গুন বেশি। ওর তো শুধু একটা হাত ভেঙ্গেছি। আমার তো ভাঙ্গা হবে দুটো হাত। সাথে দুই পা। শরীরের আরও কী কী যে ভাঙ্গা হবে তা তো আমার নিজেরই ধারণার বাইরে।”

“তোমার ভয় করে না এমন মারামারি?”

“ভয়? ভয় কীসের? জীবনে এ রকম একটা দুটো ভাঙ্গা ভাঙ্গির গল্প না থাকলে সেটা আবার কোনো জীবন হলো?”

“তোমাদের মাঝে এরকম মারামারির সম্পর্ক হওয়ার কারণ কী?”

“সে অনেক কাহিনী। এরকম ভাবে বলা যায় না। আমার এই কাহিনী আমি শুধু তাকেই শোনাবো, যে শুধু আর শুধুই আমার। তোমাকে কেন শোনাবো? তুমি কি আমার তেমন কোনো মানুষ?”

জোহানের কথায় মিতুল থমকে গেল। বুকের ভিতরটা অকারণেই ঢিপঢিপ শুরু করলো। জোহানের কথাটা কানে বাজছে।
‘তুমি কি আমার তেমন কোনো মানুষ?’

মিতুল ভাবনায় পড়ে গেল। কেমন মানুষ ও জোহানের?

______________

রুম ঝাপসা অন্ধকার। টিম টিম করে ড্রিম লাইট জ্বলছে। বাড়ির সবাই এখন ঘুমে আচ্ছন্ন। মিতুলের চোখ কেবল লেগে এসেছিল ঘুমে। এর মাঝেই আবার ফোন বেজে ওঠার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
মিতুল বালিশের পাশ হাতড়ে মোবাইলটা খুঁজে বের করলো। চোখ না মেলেই আন্দাজের উপর ফোন রিসিভ করে, ঘুম ঘুম কণ্ঠে বললো,
“হ্যালো!”

“হেই তুলতুল! ঘুমাচ্ছ তুমি?”

“হু স্পিকিং?” ঘুম ঘুম কণ্ঠেই বললো।

“আমাকে চিনছো না তুমি? এটা আমি। জো।”

“জো? জোহান?”

“হ্যাঁ। ঘুম ছাড়ো। তাড়াতাড়ি হলরুমে এসো।”

জোহানের কথা শুনে মিতুলের ঘুম চলে গেল।
“হলরুমে আসবো কেন?”

“সাইক্লিং করবো আমি। তুমি থাকবে আমার সাথে।”

“এই গভীর রাতে সাইক্লিং করবে তুমি?”

“গভীর রাত কোথায়? এটা তো কেবল ঘুমের প্রথম ভাগের সময়। তাড়াতাড়ি এসো।”
জোহান কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলো।

মিতুল জোহানের এমন আচরণে খুব বিরক্ত। জোহান কী পেয়েছে ওকে? এই মাঝরাতে ফোন দিয়ে বলছে সাইক্লিং করবে? বললেই কি যেতে হবে না কি ওর? মিতুল যাবে না যাবে না করেও আবার যাওয়ার মনস্থির করলো। একটা সোয়েটার চাপিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

হলরুমে ড্রিম লাইট জ্বলছে। সবকিছুই ঝাপসা। মিতুল সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে গেল। জোহানকে দেখতে পাচ্ছে না কোথাও। আশ্চর্য তো! নিজে আসতে বলে নিজেই এখন উধাও? মিতুলের মেজাজ ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কেন আসতে গেল এখানে? কী দরকার ছিল এখানে আসার? এই জোহান তো কখনোই…

“হেই তুলতুল!” পিছন থেকে একটা ফিসফিসে কণ্ঠ কানে আসতেই মিতুল প্রায় লাফিয়ে উঠলো। জান বেরিয়ে গিয়েছিল ক্ষণিকের জন্য ওর। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো, জোহান মুখ চেপে হাসছে। ওর সাথে এমন করে মজা করলো জোহান? মিতুলের রাগ হলো। রেগে গিয়ে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো জোহানের বুকে। জোহান ‘আহ’ করে একটু শব্দ করে ঘুষি মারা জায়গাটায় হাত বুলাতে লাগলো। মিতুলকে ভ্রু নাচিয়ে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“কী? ভয় পেয়েছিলে?”

“না। খুব মজা পেয়েছিলাম।”
জোহান মিতুলের কথার তেজটা বুঝতে পারলো।
জোহান হঠাৎ নিজের একটা হাত বাড়িয়ে দিলো মিতুলের দিকে।

মিতুল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“কী?”

“হাত ধরো।”

“কেন?”

“সিঁড়ি থেকে পড়ে যেতে পারো।”

“তোমাকে কেউ বলেছে যে আমি পড়ে যাব? অগ্রিম কথা বলো কেন?”

জোহান নিজের হাত গুটিয়ে নিয়ে বললো,
“তাহলে আমার পিছন পিছন এসো।”
বলে জোহান ধীরে ধীরে পা ফেলে নামলো।
মিতুল নামলো ওর পিছন পিছন। সদর দরজা দিয়ে বের হলো না ওরা। ব্যাক ডোর থেকে বের হয়ে গার্ডেন ঘুরে গ্যারেজে এলো। গ্যারেজের এক পাশে একটা সাইকেল রাখা। জোহান সাইকেলটা ড্রাইভ ওয়েতে নিয়ে এলো। মিতুলকে পিছনে উঠে বসতে বললো। মিতুল সাইকেলে উঠে জোহানের কাঁধে এক হাত রেখে বসলো।
জোহান সাই করে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে। মুক্ত রাস্তা, আর মুক্ত রাতের হাওয়া! মিতুল বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো।
চলে এলো অনেক দূর। জোহানের সাথে আজকে বের না হলে একদম ভুল হয়ে যেত। শান্ত রাতের এডমন্টনকে দেখা হতো না ওর। আরও একটু সামনে এগোলেই মিতুলের চোখে পড়লো রাস্তার পাশে কিছু লাল রঙের ফুল। ফুলগুলোর কাছাকাছি আসতেই মিতুল এক হাত বাড়িয়ে একটা ফুল তুলে নিলো। ফুল তোলা হাতটা নিয়ে গিয়ে জোহানের বুকের বাম পাশের পকেটে ঢুকিয়ে দিলো ফুলটা।
সঙ্গে সঙ্গেই থেমে গেল চলন্ত সাইকেলটা। পিছন ফিরে তাকালো জোহান। জোহানের চোখে চোখ পড়তেই মিতুল ঘাবড়ে গেল। জানতে চাইলো,
“কী?”

জোহান কিছু বললো না। মিতুলের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বললো,
“বোকা মেয়ে!”

“কী?” অবুঝ প্রশ্ন করলো মিতুল।

জোহান সামনে তাকিয়ে আবারও সাইকেল চালু করলো। জোরে একটা শ্বাস ফেলে কিছুটা উচ্চঃস্বরেই বললো,
“একটা বোকা মেয়ে এই নির্জন রাতে আমার হৃদয় বরাবর ফুল গুঁজে দিয়েছিল, বাড়িয়ে দিয়েছিল আমার হৃদস্পন্দন। এটা কখনো ভুলবো না আমি। এই মুহূর্ত ভোলা সম্ভব নয়।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here