# ছায়াকরী
# পর্বঃ৩৬
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
নুয়ায়াম তটস্থ চোখে তাকাল। দেখল, মেঝেতে পড়ে আছে ছায়াকরী। ব্যগ্রতা সাথে তার কাছে ছুটে গেল। ছায়াকরীকে হাতের তালুতে উঠিয়ে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। ছায়াকরীর শুভ্র পাখা রঞ্জিত। বিচলিত হলো নুয়ায়াম। জেহেন চাপা স্বরে তোভিয়াকে বলল—
“নুয়ায়ামকে নিয়ে এখান থেকে যাও।”
তোভিয়া কৌতূহলী চোখে চেয়ে বলল—
“কেন?”
“যেতে বলেছি আমি। তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পাবে।”
তোভিয়া দ্বিরূক্তি করল না। নুয়ায়াম সাবধানে হাত বুলাতে লাগল ছায়াকরীর কোমল পালকের ওপর। আরামবোধ করছে ছায়াকরী। নিজ স্বরে ডেকে উঠল সে। তার নীল চোখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে জেহেন। সে কিছু বোঝার চেষ্টা করছে। তোভিয়া মিঠে গলায় বলল—
“ভাইয়া, ছায়াকরী ব্যথা পেয়েছে। ওকে দাওয়া লাগিয়ে দাও।”
নুয়ায়াম সম্মতিসূচক মাথা নাড়াল। কিন্তু পরক্ষণেই তার দৃষ্টি গেল রাদিয়াতের দিকে। রাদিয়াত তখন জেহেনের এক হাত ধরে তার মাথা গুঁজে রেখেছে সেখানে। রাদিয়াত খুব সাবধানে নিজের এক চোখ দিয়ে নুয়ায়ামকে দেখছে। ছেলেটার জন্য কখনো তার মনে মায়া জন্মায়নি। কেন জন্মায়নি তা আজও অজানা রাদিয়াতের। নুয়ায়ামকে দেখলেই নিজের স্বামীর মৃত মুখটা ভেসে ওঠে তার চোখের সামনে। নুয়ায়াম যখন ‘আম্মিজান’ বলে ডাকে, রাদিয়াতের তখন নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হয়। যত যাই হোক, নুয়ায়াম যখন জানবে যাকে সে মা বলে জানে আসলে সে তার কেউ নয় তখন কতটা কষ্ট অনুভূত হবে তার! যদি এমন হয়, নুয়ায়ামের জন্মদাত্রী বেঁচে নেই, তাহলে?
রাদিয়াত আর ভাবতে পারে না। সে তার অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। নুয়ায়াম জানে, জেহেনকে অনেকটা পছন্দ করে রাদিয়াত। তাই আর কিছু ভাবল না সে। একরাশ বুক ভরা কষ্ট নিয়ে মায়ের দিক থেকে চোখ ফেরায় সে। জেহেনের দিকে তাকিয়ে বলল—
“আম্মিজানকে দেখো।”
জেহেন চোখের পলক ফেলে ধনাত্মক অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। নুয়ায়াম কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দরজার কাছে পৌঁছাতেই থমকে যায়। চোখ বন্ধ করতেই তার চোখের সামনে কিছু একটা ভেসে ওঠে। তোভিয়া তাড়া দিয়ে বলল—
“ভাইয়া! কী হয়েছে?”
নুয়ায়াম সহজ গলায় বলল–
“কিছু না।”
সে চোখ খুলে পেছন ফিরে রাদিয়াতের পুরো কক্ষে চোখ বুলালো। ফের কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়াই বেরিয়ে গেল। তার পিছু নিল তোভিয়া। জেহেন মুক্ত শ্বাস ফেলল। অনুতপ্ত গলায় বলল—
“আমি দুঃখিত আম্মি। নুয়ায়াম এসময় এখানে উপস্থিত হবে, আমি উপলব্ধি করতে পারিনি। ”
রাদিয়াত কথা বললেন না। জেহেন বিনীত ভঙ্গিতে আসন পেতে মেঝেতে বসল। রাদিয়াত পা নামিয়ে মেঝেতে রাখলেন। জেহেনের দিকে প্রগাঢ় মমতা ছুড়ে দিয়ে বললেন—
“এতে তোমার কোনো দোষ নেই।”
জেহেনের মুখে হাত ছোঁয়ালেন রাদিয়াত। সেই হাত নিজের আঁজলাতে নিয়ে উলটো করল জেহেন। রাদিয়াতের হাতের উলটো পাশ নিজের দুই চোখে ছুঁইয়ে বলল—
” আম্মি, আপনি চিন্তিত হবেন না। আমি সতর্ক থাকব। পূর্বের চেয়ে অধিক সতর্ক হবো।”
রাদিয়াত মুচকি হেসে বললেন—
“জানি আমি। তুমিই পারবে এই মহলকে ওই কালো শক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে।”
“আপনি ভরসা রাখুন। কিন্তু নুয়ায়াম! ওকে অনুভব করার শক্তি আমি পাই না। ”
“কারণ, ও তোমাদের সবার থেকে বেশি ক্ষমতাশালী। ওর জন্যই এতকিছু।”
জেহেন ক্লান্ত শ্বাস ফেলে বলল—
“ওরা যদি ওকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেই এসেছে, তাহলে এত বছর অপেক্ষা করছে কেন?”
রাদিয়াত ভাবুক চোখে তাকিয়ে বললেন—
“হয়তো সময়ের অপেক্ষা। নুয়ায়াম এই মহলে আসার পর থেকেই সব শুরু হয়েছে। তোভিয়ার বাবাকে কারা মে/রেছে? ওদের মধ্যেই কেউ।”
জেহেন গাঢ় গলায় বলল—
“ওরা আমাদের ক্ষতি করতে আসেনি আম্মি। ওরা শুধু নুয়ায়ামকে রক্ষা করতে এসেছে। আপনার মনে আছে তো, ছোটোবেলা থেকেই নুয়ায়ামের সাথে দুর্ঘটনা ঘটছে!”
রাদিয়াত মলিন গলায় বললেন—
“জানি। সেদিন জারফাজের সাথে আমি মেহেককে দেখেছিলাম। কিন্তু যখন তার মৃ/তদেহ পাওয়া গিয়েছিল, তখন সেখানে সাফিজা আর…।”
“আর একটা নেকড়ে ছিল?”
রাদিয়াত বিস্মিত গলায় বললেন—
“তুমি তাকে দেখেছ?”
“হ্যাঁ, আজই দেখেছি। মহলে প্রবেশের সময় আমি ছায়াকরীকে বাগানের দিকে যেতে দেখেছিলাম। ভাবতে পারিনি, সেখানে আরও কেউ আছে।”
“তাকে আমিও দেখেছি। সে সাফিজার সাথেই ছিল। কিন্তু মহলে প্রবেশ করত না। মহলের আশেপাশে ঘোরাফেরা করত। তার দুটো রূপই আমি দেখেছি। সেদিন জারফাজের মৃ/তদেহের পাশে ওই নেকড়ে ছিল। ”
“তারা কাকাকে হ/ত্যা করতে পারে না। যদি নুয়ায়ামকে রক্ষা করার জন্য তাদের আগমন ঘটে থাকে, তাহলে নুয়ায়ামকে হ/ত্যার প্রচেষ্টা যারা করছে তারাও তো এই মহলে আছে। কারা তারা?”
রাদিয়াত চিন্তানিমগ্ন দৃষ্টিতে বললেন—
“বেগমরাণি? মেহেক? তেহজীব?….”
“তারা কেন নুয়ায়ামকে আ/ঘা/ত করতে চাইবে? ”
“জানি না। ”
জেহেন চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। তারপর বলল—
“হতে পারে, অসম্ভব নয়।”
“তাহলে জোহায়ের?”
“আপনি বাবাকে সন্দেহ করছেন?”
“আমি তা বলছি না জেহেন। আমি সেদিন মেহেককে জারফাজের সাথে দেখেছি। তারপর যা ঘটেছে তা তুমি জানো। তোমাকে সেদিন ওই র/ক্ত মাখা দেখে আমি সত্যিই ভেবে নিয়েছিলাম….। কিন্তু বাবা বলেছেন, তুমি তার সাথে ছিলে।”
“আমি কাকাকে হ/ত্যা করিনি আম্মি।”
“জানি আমি।”
“আপনি সাফিজাকে প্রশ্ন কেন করেননি?”
“কী করে করতাম? তারপর তো সব এলোমেলো হয়ে গেল।”
জেহেন গাঢ় শ্বাস ফেলে রাদিয়াতের হাতে চুমু খেয়ে বলল–
“আপনি চিন্তিত হবেন না, আম্মি। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
তিনি জেহেনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন—
“বিশ্বাস করি।”
“কেন?”
“বাবা তোমাকে বিশ্বাস করেন। তোমার জন্য তিনি চিন্তিত ছিলেন। শেষবার যখন তার সাথে আমার কথা হয়, তিনি আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলেন। ওই লকেট তোমাকে দিতে বলেছিলেন। আর….।”
জেহেন চোখ বন্ধ করে ফেলল। কিছু শোনার চেষ্টা করল। না, সে কোনো শব্দ তরঙ্গ পেল না। চোখ খুলে বলল—
“হুম, বুঝতে পেরেছি। আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর বাবার কাছে আছে। কেন আমি এমন তা আমাকে জানতে হবে।”
“ওরা তোমাকে কিছু বলেনি?”
“না।”
চট করে জেহেনের গলদেশে চোখ পড়ল রাদিয়াতের। সে উদ্বিগ্ন গলায় বলল—
“এখানে কী হয়েছে?”
জেহেন লজ্জামিশ্রিত হেসে বলল—
“আপনার মেয়ে করেছে। ভীষণ রাগ তার আমার প্রতি। সত্য লুকিয়েছি তাই।”
“পাগল মেয়ে!”
জেহেন মুচকি হেসে ছোট্ট শ্বাস ফেলে। রাদিয়াত বললেন—
“ওই লকেট কোথায়?”
“তোভিয়ার কাছে।”
“ওটা তো বাবা তোমার জন্য দিয়েছেন!”
“আমার চেয়ে তোভিয়ার প্রয়োজন বেশি তা।”
“ওকে দেখে রেখো।”
“ছায়া হয়ে থাকব আপনার পদ্মকুমারীর।”
রাদিয়াত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন—
“কী করবে এখন তুমি?”
“অনেক কিছু।”
জেহেন উঠে দাঁড়াল। বলল—
“কেউ বন্ধু নয় আমাদের। আমাকে পশুতে যারা পরিণত করেছে তারাও সাধারণ কেউ নয়।”
রাদিয়াত চিবুক উঁচু করে ঝোঁক গলায় বললেন—
“ছায়াকরী…।”
“আরওয়া ওর নাম।”
“আরওয়া?”
“হ্যাঁ।”
“আরওয়া সাফিজার মেয়ে। ও নিশ্চয় সব জানে। ওরা সবাই মিলিত।”
“হয়তো। ”
“তুমি পারবে তো?”
জেহেনের মানসলোকে চটপট করে দৃশ্যমান হলো আরইয়াজের বলা প্রতিটি বাক্য। জেহেনের কোনো ক্ষতি তারা করবে না। আর জেহেন জন্ম থেকেই পশু নয়। তাকে এ রূপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা জন্ম থেকেই রূপান্তর মানব। তারা তার থেকেও অধিক ক্ষমতাবান!
জেহেন নরম গলায় বলল—
“আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়।”
“ওরা তোমাকে সাহায্য করবে?”
“হুম, করবে। আরওয়ার সাহায্য আমার প্রয়োজন। আমি একা ওদের বিরুদ্ধে লড়তে পারব না। আমার শক্তি আর ক্ষমতা দুটোই সীমাবদ্ধ। তবুও আমি এই মায়ার জাল ছিন্ন করব। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
“জয়ী হও। মিথ্যের বিনাশ ঘটুক, সত্যের জয় হোক।”
,
,
,
করিডরে পৌঁছাতেই জেহেনকে জড়িয়ে ধরে তোভিয়া। জেহেন ভ্রূকুঞ্চন করে সন্ধানী গলায় বলল—
“কী হয়েছে?”
তোভিয়া রাগের সাথে অভিমান মিশিয়ে বলল—
“আপনি ভাইয়াকে কিছু বললেন না কেন?”
তোভিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে জেহেন। কিন্তু তার দৃষ্টি নিচে। অনিতা ছোটো ছোটো পায়ে বেগমরাণির কক্ষের দিক থেকে নিজের কক্ষের দিকে যাচ্ছে। জেহেন সেদিকে তাকিয়ে বলল—
“সময় হলে বলব। তোমাকে ভাবতে হবে না।”
“তো কে ভাববে?”
জেহেন দৃষ্টি ফিরিয়ে তোভিয়াকে দেখে। সরল গলায় বলল—
“নুয়ায়াম কোথায়?”
“ভাইয়া তার কক্ষে।”
“তুমি এখান কেন?”
“সেই সাপ….।”
জেহেন অদ্ভুত কান্ড করে বসে। তোভিয়ার পলক পড়ার পূর্বেই তার ওষ্ঠাধরে গাঢ় চুম্বন করে। রুদ্ধশ্বাসে তাকিয়ে থাকে তোভিয়া। চমকিত গলায় শ্লেষ মিশিয়ে বলল—
“এইটুকুই? এর চেয়ে বেশি কিছু হয় না আপনার দ্বারা।”
জেহেনের অটল চাহনি তখন নিচে দাঁড়ানো তেহজীবের দিকে। দোতলার করিডরে জেহেন আর তোভিয়াকে দেখে থমকে যায় তেহজীব। তার দৃষ্টি বুঝতে পেরেই অকস্মাৎ এই ঘটনা ঘটায় জেহেন। তেহজীব নিচ থেকে জেহেনের এহেন কাজ দেখে ক্ষুব্ধ হয়।
জেহেন বক্র হাসে। তোভিয়ার হাত শক্ত করে ধরে নরম স্বরে বলল—
“হবে। এসো আমার সাথে।”
নিজেদের কক্ষের দিকে পা চালায় দুইজন। তেহজীবের শিরায় বহমান লহু ফুটতে শুরু করল। তার গলার রগ ফুলে উঠেছে। চোখের চাহনি স্থির হলেও কাঁপছে চোখের পাল্লা। ক্রোধে, রোষে নিষ্পেষিত তেহজীব একাগ্রচিত্তে অনড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেন্টার টেবিলে থাকা ফুলদানির দিকে। কয়েক সেকেন্ড ব্যয়িত হতেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে সিরামিকের ফুলদানিটি বিক্ষিপ্ত হয় চারদিকে। অনিতা নিজের কক্ষ থেকে তা দেখে থম মেরে যায়। ফুলদানি থেকে বেশ কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে তেহজীব।
,
,
,
নুয়ায়ামের হাতের শিরাগুলো ফুলে উঠেছে। তার উন্মুক্ত, প্রশস্ত বুকের বিভিন্ন জায়গায় লাল দাগ স্পষ্টত হচ্ছে, যা অনেকটা শিরার মতো হলেও বেশ পুরু । কিন্তু তা রক্তিম। কোনো সাধারণ মানুষের শরীরের চামড়া ছাড়িয়ে নিলে তার শরীরটা যেমন দেখা যায় ঠিক তেমন দেখাচ্ছে নুয়ায়ামকে এখন। নুয়ায়াম আতঙ্কিত চোখে আয়নায় নিজেকে দেখছে। কিন্তু আজ সে ভয়ে বিচলিত নয়। নিজের সাথে ঘটা প্রতিটি ঘটনার যোগসূত্র খুঁজছে সে। কিছু সময় পর রক্তাক্ত আবহ কাটিয়ে সেখানে মসৃন চামড়ার প্রলেপ দেখা গেল। সেই সাথে লাল শিরাগুলো। মনে হচ্ছে অসংখ্য সূতানালী সাপ নুয়ায়ামের চামড়ার ভেতর দিয়ে তার সমস্ত বুক জুড়ে বিচরণ করছে! ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলো সব। নুয়ায়াম তার হাতের শিরাগুলো দেখেছে। সেগুলোর রং সাধারণ মানুষের মতো নয়। লাল রঙের। নুয়ায়াম তার চোখের রঙের পরিবর্তন দেখতে পেল। আ/গুন জ্বলছে তার চোখে। আচানক তার মনে হলো হাতের তালুতে কিছু একটা হচ্ছে। নুয়ায়াম অতি সন্তর্পণে হাত উঠিয়ে নিজের চোখের সামনে ধরে। তার সাদা হাতের তালু মুহূর্তেই জ্বলন্ত কয়লার মতো হয়ে গেল। জ্বলজ্বল করছে তা। নুয়ায়াম ভীতগ্রস্ত! সে তড়িৎ বেগে হাত ঝাড়া দিলো। যেন তার হাত থেকে এই দৃশ্য মিলিয়ে যায়। কিন্তু অদ্ভুত কিছু ঘটল। হাত ঝাড়া দিতেই তার হাতের তালু ফুড়ে বিরিয়ে এলো আগুনের গোলক। তা গিয়ে পড়ল কাঠের তৈরি ছোট্ট টেবিলে। দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করল টেবিলটি। নুয়ায়াম হতভম্ব। কিয়ৎপলেই ছোটো টেবিলটি পুড়ে কয়লায় রূপান্তরিত হলো। ঝড়ের কারণে দরজা জানালা সব বন্ধ। ধোঁয়াতে আচ্ছন্ন হয়ে গেল পুরো কক্ষ।
চলবে,,