ছায়া হয়ে থাকবো পাশে part-13

0
1060

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে
part ঃ 13
Writer ঃ humayra khan

ডাক্তার ঃ আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তার জ্ঞান না ফিরলে সে হয়ত আজীবনের জন্য কোমায় চলে যেতে পারে।
তাই আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যাতে তার জ্ঞান ফিরে
এই চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই।।।
কথাটি বলে চলে যায় ডাক্তার।।।
সবাই ডাক্তারের কথা শুনে জোড়ে জোড়ে কান্না করতে থাকে
আর মিসেস সাবিনা ডাক্তারের মুখ থেকে নিজের ছেলের ব্যাপারে এমন কথা শুনে কোন ভাবেই সামলাতে পারেনা নিজেকে.। কান্না করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সে।।
তার চোখে মুখে পানির ছিটা দিলে হুস আসে তার।
জ্ঞান ফিরে আসলে মিসেস সাবিনা তার স্বামীকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।।।
কান্না জরিত কন্ঠে-
সাবিনাঃ ওগো শুনেছো ডাক্তার কি বলে গেল??
আহানের নাকি জ্ঞান না ফিরলে ও কোমায় চলে যাবে।ওর কিছু হলে যে আমি মরে যাব।। বাঁচতে পারব না আমার সোনার টুকরো ছেলেটাকে হারিয়ে।।
মিরাজ ঃ এই সব কথা বলোনা আহানের মা।।
আমাদের আহানের কিছুই হবেনা।
আল্লাহ আমাদের এতো বড় ক্ষতি করতে পারেনা।
তিনি নিশ্চয়ই আমাদের ছেলেকে সুস্থ করে তুলবেন।
সাবিনা ঃ যদি আমার ছেলেটার জ্ঞান না ফিরে। তাহলে যে আমি মরে যাব। নিজের ছেলেকে জ্যান্ত লাশ এর মত শুয়ে থাকতে দেখতে পারব না আমি ( কান্না করে)
চারু ঃ প্লিজ আন্টি এই সব কথা বলা বন্ধ করুন
ভাইয়ার কোন কিছুই হবেনা আমার বিশ্বাস।
অতি শ্রীর্ঘই তার জ্ঞান ফিরে আসবে।
চারুর কথা শুনে মিসেস সাবিনা চারুর দিক এ রাগি দৃশটিতে তাকায়।
নিজের স্বামীর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় সে।
চারুর কাছে গিয়ে আবারও চারুর গালে কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় ওনি।।
চারু মিসেস সাবিনা হাতে থাপ্পড় খেয়ে নিজের গালে হাত রেখে অসহায় দৃশটিতে তাকিয়ে থাকে তার দিক এ
সাবিনাঃ দোয়া কর আহানের যাতে জ্ঞান ফিরে আসে।
আর ও যদি সুস্থ হয়ে উঠে। ওর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজ হাতেই তোকে খুন করে মেরে ফেলব।
আস্ত রাখব না তোকে আমি।।
মিরাজঃ সাবিনা তুমি কিন্তু বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করছ।
সাবিনা ঃ আমি বাড়াবাড়ি করছি?।ওর কারনে যে আমার ছেলে জ্যান্ত লাশ এর মত শুয়ে আছে। সেটা দেখতে পারছ না তুমি।।।
চারু মিসেস সাবিনা কথা শুনে শুধুই কান্নাই করে যাচ্ছে কিছুই বলতে পারছেনা ও।
দিশাঃ উফ আজ যদি আহান ভাইয়া সুস্থ থাকতেন এসব কথা শুনতে হতনা চারুর। নিশ্চয়ই তিনি চারুকে রক্ষা করতেন মায়ের এইসব অঅত্যাচার থেকে।
প্লিজ ভাইয়া আপনি তাড়াতাড়ি করে সুস্থ হয়ে উঠুন
আপনি কোমায় চলে গেলে হয়ত মা নিজের হাতেই চারুকে শেষ করে দিবে না হয়ত ওকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে বাসা থেকে।।।( আনমনে)
আবিরঃ ওর কোন দোষ নেই মা।কেন বেচারিকে এই ভাবে মারধর করছ?? ও কি জানত নাকি এই সব কিছু হয়ে যাবে।
সাবিনাঃ ওর ওকালতি করা বন্ধ কর।
এত দিন বউ এর ওকালতি করতি এখন আবার ওর জন্য করছিস।
মায়ের মুখে এই সব কথা শুনে বেশ রাগ আসে আবির এর।
মাকে কিছু বলতে যাবে দিশা আবির এর হাত ধরে থামিয়ে দেয় ওকে।।।
আবিরকে এক সাইড নিয়ে যায় দিশা
আবিরঃ আমাকে এইভাবে থামালে কেন দিশা।
দেখছিলেনা কি সব বলছিল মা আমাকে
দিশাঃ আবির মা এখন অনেক কষ্টে তে আছেন।
তাই তোমার উচিত মায়ের কথায় কষ্ট না পাওয়া।
ভাইয়ার জ্ঞান ফিরলে দেখ সে তার ভুল বুঝতে পারবে।
এখন শুধু ভাইয়ার জ্ঞান ফিরার অপেক্ষা।
সাবিনাঃ কিরে বেহায়ার মত এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন। ধুর হ আমার চোখের সামনে থেকে।
পারলে পানিতে ডুবে মরে যা।আর আমাদের রেহাই দে।
সাবিনার বলা কথা গুলো শুনে চারুর সইতে না পেরে দৌড়ে চলে যায় হসপিটাল থেকে বের হয়ে।
মিরাজ ঃ আল্লাহ মেয়েটি এই ভাবে চলে গেল কেন।
কোন কিছু না আবার করে বসে সাবিনার কথা শুনে।
মিরাজ তাড়াতাড়ি করে দিশা আর আবির এর কাছে গিয়ে
মিরাজ ঃ দিশা….
আবিরঃ কি হল বাবা তুমি এমন হাঁপাচ্ছো কেন???
মিরাজ ঃ দিশা জলদি যাও। তুমার মা রাগের মাথায় অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছে চারুকে আর ও কোন কথা না বলেই চলে গেছে হসপিটাল থেকে বের হয়ে।
আমার কেন যেন ভয় করছে ওর এই ভাবে চলে যাওয়া দেখে।। দিশা তুমি তাড়াতাড়ি যাও ওর পিছনে।
ও বেশি দূরে যায়নি হয়ত

দিশা বেশ ভয় পেয়ে যায় মিরাজ সাহেব এর কথা শুনে।
ওই ও তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে পরে হসপিটাল থেকে।
দিশা অনেক খুজতে থাকে চারুকে কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছেনা ও।
হঠাৎ দিশা খেয়াল করল রাস্তার মাঝখানে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। মেয়েটির আরেকটু সামনে গিয়ে খেয়াল করল মেয়েটি আর কেউ নয় চারু।।
চারু এ-ই ভাবে রাস্তা মাঝখান দিয়ে দাড়িয়ে থাকায় বেশ বিরক্ত হচ্ছে গাড়ির ড্রাইভার রা। আর ক্রমাগত গাড়ির হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে কিন্তু চারুর যেন কোন হুস ই নেই।
পাথরের মতই দাঁড়িয়ে আছে ও।
দিশা তাড়াতাড়ি করে গিয়ে চারুকে রাস্তার মাঝ খান থেকে সরিয়ে আনে।।।
দিশাঃ কি করছিলে চারু।এখন যদি তোমার কিছু হয়ে যেত?? এই টা কোন ধরনের পাগলামি।???
চারু ঃ নিশ্চুপ।।।
দিশাঃ চারু ( চিৎকার দিয়ে)
চারু ঃ ভাবি আমি মরে যাব।বাচতে চাইনা আমি।।
সে কোমায় গেলে কোন ভাবেই আমি ক্ষমা করতে পারব না নিজেকে। তুমি কেন আমাকে নিয়ে আসলে ও খান থেকে।
কোন গাড়ির সাথে চাপা পরে মরে গেলে আমি কিছুটা শান্তি পেতাম
তাকে জ্যান্ত লাশ এর মত পরে থাকতে যে আমি কোন ভাবেই দেখতে পারব না ভাবি।
কোন ভাবেই না( কান্না করে)
দিশাঃ এখন যদি চারুকে আবারও হসপিটালে নিয়ে যাই তাহলে মা আবারও চারুকে কথা শুনিয়ে দিবে।
আর তার কথা শুনে যদি চারু আবারও কিছু করে বসে?? আনমনে
না না আমি এমন কোন কিছুই হতে দিবনা।
চারুকে হসপিটালে এখন নেওয়া টা মোটেও ঠিক হবেনা।। আমি বরং ওকে মা বাবার বাসায় নিয়ে যাই।
আনমনে।
দিশাঃ চারু চল বাসায় চল
চারু ঃ ভাবি কি বলছ ভাইয়ার এই অবস্থা আর তুমি বাসায় যাওয়া কথা বলছ
দিশাঃ উফ চারু যা বলছি শুনো।
তারপর দিশা চারুর হাত ধরে একটা রিকশা করে চলে যায় সেই খান থেকে।।।।
বাসায় পৌছাতে পৌছাতে এশার নামাজের আজান দিয়ে দেয়
দিশা আর চারু তাড়াতাড়ি করে নামাজ পরে আল্লাহর কাছে প্রাথনা করতে থাকে আহানের জন্য
হসপিটালে…………
ডাক্তার বের হলে……
মিরাজ ঃ ডাক্তার আমার ছেলের এখন কি অবস্থা??
জ্ঞান ফিরেছে আমার ছেলের??
ডাক্তার একটা হাসি দিয়ে-
হুম আল্লাহর রহমতে আর আপনাদের সকলের দোয়ায় জ্ঞান ফিরেছে আহানের।।
আপনারা একটু পর ওর সাথে দেখা করতে পারবেন।
কথাটি বলে চলে যায় ডাক্তার।
মিরাজ ঃ আবির সাবিনা শুনেছো ডাক্তার কি বলে গেল এখন? আহানের জ্ঞান ফিরেছে।।।
আমার ছেলে চোখ খুলেছে
আবিরঃ আমি তাড়াতাড়ি করে দিশাকে ফোন দিয়ে জানাই খুশির সংবাদ টা।
তারপর আবির দিশাকে ফোন দেয়।
মোনাজাত ধরে দিশা আর চারু আহানের জন্য কান্না করতে থাকে।।।
মোবাইল এ ফোন আসলে দিশা মোনাজাত শেষ করে ফোনটা রিসিভ করে।
আবিরঃ হ্যালো দিশা আহানের জ্ঞান ফিরেছে দিশা।
জ্ঞান ফিরেছে আমার ভাইয়ের ( খুশি হয়ে)
দিশাঃ সত্যি বলছ?? আবির ভাইয়ার জ্ঞান ফিরেছে??
দিশার কথা শুনে চারু খুশি হয়ে যায়।।
আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে নেয়।।
দিশা ফোনটা কেটে….
শুনলে চারু ভাইয়ার জ্ঞান ফিরেছে।
আল্লাহ আমাদের প্রাথনা কবুল করেছে চারু।।
চারু দিশার কথা শুনে ওকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
দিশাঃ এই মেয়ে পাগল নাকি তুমি? ভাইয়ার জ্ঞান ফিরেছে আর তুমি খুশি হওয়ার বদলে কান্না করছো বোকার মতো
চারু দিশার কথার উত্তর না দিয়ে কেদেই যাচ্ছে অনবরত
দিশাঃ কি হল চারু তুমি কাদছ কেন এখন তো ভাইয়া সুস্থ আছেন জ্ঞান ফিরেছে তার।
চারু ঃ ভাবি……..

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here