জীবনের গল্প পর্ব:-০৮

0
334

__________জীবনের গল্প__________
লেখক: ShoheL Rana
____________পর্ব:-০৮____________
কয়েকদিন ধরে মনি আর সামনে আসে না রাজের। বীথির সাথে পড়ার টেবিলেও বসে না। আলাদা রুমে পড়তে বসে। স্কুলে যাওয়ার সময়ও রাজের আড়ালে লুকিয়ে যায়। তবে আড়াল থেকে সব লক্ষ করে সে রাজের। ভালোবাসে তো খুব।
স্কুলের সেই বাংলা ম্যাডামকে মনি হিংসে করে, একদম দেখতে পারে না সে ম্যাডামকে। কারণ রাজ ঐ ম্যাডামের দিকে তাকায় বলে। তেমনি আরও কয়েকটা মেয়েকে সে হিংসে করে যারা রাজের দিকে তাকায়। মনি তার ফুফাতো বোন জেনে অনেক মেয়ে আবার তাকে দিয়ে রাজের কাছে চিঠি লিখে পাঠায়। কিন্তু মনি তা রাজকে না দিয়ে নিজে পড়ে, আর জ্বলতে থাকে নিজে নিজে। সব রাগ গিয়ে পড়ে প্রাণহীন চিঠিটার উপর। টুকরো টুকরো করে সে ছিড়ে ফেলে চিঠি। কেউ কেউ বীথিকে দিয়েও চিঠি পাঠায়, ওগুলোরও খোঁজ রাখে মনি। বীথির কাছ থেকে নিয়ে সে ওগুলোরও একই অবস্থা করে। তারপর মেয়েগুলোর উদ্দেশ্যে মনে মনে যত গালি পারে সব উজাড় করে দেয়। পরে যখন মেয়েগুলো জিজ্ঞেস করে রাজের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে। তখন সে মিথ্যে করে বলে রাজের এসব ব্যাপারে আগ্রহ নেই। তখন মেয়েগুলোর মন অমাবস্যার চাঁদের মতো হয়ে যায়। আর মনির মনটা খুশিতে নেচে উঠে। আড়ালে মৃদু হাসি ফুটে উঠে ঠোঁটের কোণে।
.
.
একদিন স্কুল শেষে এক মেয়েকে রাজের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখা যায়। আড়াল থেকে মনি তা দেখে আর নিজে নিজে জ্বলে। বীথিকে ডেকে সে বলে,
-দেখ বীথি, নাইনের মেয়েটা রাজের সাথে কীভাবে কথা বলছে?’
-চল তো…’ হাত ধরে টানলো বীথি।
-তুই যা…’ হাত ছাড়িয়ে নিলো মনি। রাজের সামনে যাবে না সে। বীথি গিয়ে রাজকে নিয়ে এলো মেয়েটার পাশ থেকে। আর মনি রাজের আড়ালে লুকিয়ে গেল ঐ মেয়েটার পাশে। সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েটার সর্বাঙ্গ দেখে নিলো। এই মুহূর্তে ঝগড়া করতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। ঝগড়া করে মেয়েটার মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সিনিয়র আপু বলে কিছুই করতে পারছে না সে। আপুটা মনিকে জিজ্ঞেস করলো,
-কী ব্যাপার মনি, কিছু বলবে?’
ওর কণ্ঠ শুনে মনির রাগ আরও বেড়ে গেল। মনে মনে ওর চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে মনি বললো,
-আপু, তোমার রুচি দেখে অবাক হচ্ছি।
-কেন?
-কত সুন্দর মেয়ে তুমি, তুমি চাইলে কত সুন্দর ছেলের সাথে প্রেম করতে পারবা, আর তুমি কি না রাজ ভাইয়ের পেছনে পেছনে ঘুরো?
-রাজও তো খুব সুন্দর ছেলে।
-আপু, আপু, আপু, হয়ছে আর বলো না। ওর সাথে বড় হয়ে আসছি আমি, বুঝছো? ওকে আমি চিনি। সুন্দর হলে কী হবে? জানো সে কত পঁচা?
-কেন? কী করেছে সে?
-আরে ঠিকমতো গোসলসুদ্ধ করে না। দশ-বারোদিন পর পর একবার গোসল করে, তাও সবাই বকাবকি করলে। হাত না ধুয়ে ভাত খাই সে। ওয়াক! ভাবতে পারো তুমি? জানো, রাতে ও ঘুমালে কীভাবে নাক ডাকে? বলি, এতো ছোট ছেলে তুই, তোর কি এখন নাক ডাকার বয়স হয়ছে? হুহ, বাবুর বড়দের মতো নাক ডেকে ঘুমাতে হবে। তার নাক ডাকার শব্দে কেউ ঘুমাতে পারে না। জানো একবার কী হয়েছে…’
মনিকে আর কিছু বলতে দিলো না মেয়েটা। বাধা দিয়ে বললো,
-থাক আর বলতে হবে না। একটা ছেলে এত পঁচা হয় কী করে? ছিঃ।’ অপেক্ষা করলো না আর মেয়েটা। হনহন করে চলে গেল। আর মনি তখন ফিক করে হেসে উঠলো। মেয়েটার অবস্থা দেখে ভারি মজা হচ্ছে তার। বইগুলোকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, যেন রাজকে জড়িয়ে ধরেছে সে। তারপর ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলো ঘরের দিকে।
.
.
রাতে মনি একা একা তার রুমে পড়তে বসেছিল। তখন রাজের কণ্ঠ শুনে পড়া থামালো। রাজের খিদে লেগেছিল তাই বড় মামির কাছে খাবার চাইছে। বড় মামির কণ্ঠ শোনা গেল একটু পর,
-ধর খেতে বস…’
একটু পর আবারও বড় মামির কণ্ঠ শোনা গেল। রাজকে ধমক দিয়ে বড় মামি বলছে,
-এসব কী? হাত না ধুয়ে খেতে বসেছিস কেন?’
বড় মামির কথাটা শুনে মনি কিছুটা চমকে উঠলো। রাজ কী বলে শোনার জন্য আগ্রহ বেড়ে গেলে তার। পড়া রেখে সে দরজায় পিঠ ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। রাজকে চিৎকার করে বলতে শোনা গেল,
-এখন থেকে আমি এভাবেই খাবো, হাত না ধুয়ে।
-ছিঃ পঁচা কাজ কোথা শিখেছিস?
-নিজে নিজে শিখেছি। আরও অনেক পঁচা কাজ করবো, গোসল করবো না দশ-বারোদিন। রাতে নাক ডেকে ডেকে ঘুমাবো। কেউ কিছু বলতে পারবা না।’
রাজের কথাগুলো শুনে মনির খুব আনন্দ হচ্ছে। হাসতে হাসতে সে দরজার সাথে লেগে গেল। বড় মামিকে এবার নানির কাছে রাজের ব্যাপারে অভিযোগ করতে শোনা গেল,
-আপনার নাতির মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কীসব পঁচা কাজ করছে দেখুন।
-কী রে, কী করেছিস?’ নানির প্রশ্ন।
-কিছু করিনি। যা করেছে তোমার আদরের নাতনি মনি করেছে। ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো।’ চিৎকার করে বলতে শোনা গেল রাজকে। নিজের নামে অভিযোগ শুনে মনি তাড়াতাড়ি হাসি থামিয়ে ভালো মেয়ের মতো পড়তে বসলো। একটু পট নানি এসে দরজায় ঠোকা দিয়ে বললো,
-মনি দরজা খুল…’
মনি উঠে দরজা খুলে এমন ভান করলো যেন কিছুই করেনি সে, কিছুই জানে না সে। নানি তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-কী রে, রাজকে কী করেছিস তুই?’
অবাক হওয়ার ভান করে মনি বললো,
-আমি আবার কী করবো? যাও তো ডিস্টার্ব করো না নানি। আমি পড়ছি।’ বলেই নানিকে বের করে দিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে দিলো।
-বুঝি না আজকালকার ছেলেমেয়ের কাণ্ড।’ বলতে বলতে নানি চলে গেল। মনি আবারও দরজায় পিঠ ঠেসিয়ে মুখে হাত চেপে হেসে উঠলো। কিছুক্ষণ পর দরজায় আবারও ঠোকা লাগলো।
-কে?’ জিজ্ঞেস করলো মনি।
-দরজা খুল…’ রাজের কণ্ঠ শোনা গেল।
-কী বলবি বল…’ দরজা না খুলেই বললো মনি। দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে রাজ রাগ দেখিয়ে প্রশ্ন করলো,
-আমি হাত না ধুয়ে ভাত খাই?’
মনি চুপ করে রইলো। এখন সে আরও বেশি মজা পাচ্ছে রাজকে রাগতে দেখে। রাজ আবারও গর্জে উঠলো,
-চুপ করে আছিস কেন? বল? আমি দশ-বারোদিন গোসল করি না? রাতে নাক ডেকে ঘুমায়?’
মনি এবারও চুপ করে রইলো। মুখে হাসিটা লেগেই ছিল তার। রাজ কিছুক্ষণ দরজার ওপাশে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে কোনো উত্তর না পেয়ে গজরাতে গজরাতে চলে গেল….
.
(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here