জীবন মানে তুমি পর্ব:৪

জীবন মানে তুমি
লেখিকা:H.B.Irini Ori
পর্ব:৪
(১৪)
সময় কারোর জন্য অপেক্ষা করেনা।সময়ের স্রোত যে কখন কোন দিক দিয়ে বয়ে যায় কেউ বুঝতে পারেনা।বিশেষ করে ব্যাস্ত সময়টা খুব দ্রত পেরিয়ে যায়।দিন, সপ্তাহ, মাস কীভাবে পার হয়ে যায় টের পাওয়া যায়না।দেখতে দেখতে একটা মাস পেরিয়ে যায়।এই একমাসের মধ্যে ইয়ারাবীর পরিবারের পরিবর্ত তেমন একটা দেখা না গেলেও আগের মতো তেমন খুত খুত জিনিসটা নেই।এই দিকে আবরার ইয়ারাবীর দিকে বিশেষ খেয়াল রেখেছে।ইয়ারাবীরতো রোজকার রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে আবরারের সাথে তিনবেলা কথা বলা।ইয়ারাবীরও আবরারের কেয়ারগুলো অনেক ভালো লাগে।মানুষ বলে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা শুরু হয়,ওর ক্ষেত্রেও তেমন হয়েছে।কিন্তু ও যে ভালোবাসতে খুব ভয় পায়।এই কারনে সবসময় ভালোলাগাকে ইগনোর করে গেছে।
আজ শুক্রবার,ইয়ারাবীর ভার্সিটি বন্ধ।তাই ভোর বেলা মিষ্টি রোদের সাথে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে এক কাপ কফির মজা নিচ্ছে।হেমন্তকে বিদায় জানিয়ে শীতের আগমনের বার্তা চলছে।তাই চারিদিকে হালকা হালকা শীতের আমেজ বইছে।এই সময়ের সকালটা উপভোগ করার মজায় আলাদা।ঠিক এমন সময় ইয়ারাবীর রুমে ওর ছোট খালা আসে।ইয়ারাবীর এখন পছন্দ নয় কেউ ওর রুমে বিনা অনুমতি নিয়ে আসুক।ওর ছোট খালা এসে ওর ঘরের জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করছে।ইয়ারাবী রুমে এসে কফির মগটা টেবিলে রেখে বলে,
-“আপনার কী কিছু লাগবে?এভাবে কেউ বিনা অনুমতিতে আমার জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করুক সেটা আমার একদমই পছন্দ নয়।”
-“কেন?তোর রুমে এমন কী আছে যে অনুমতি নিতে হবে?”
-“কী আছে আর কী নেই সেটা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার।আমার পার্সটা জায়গায় রাখলেই খুশি হবো।”
-“আজকাল দেখছি মুখে খুব বুলি ফুটেছে।আগেতো কথাই বলতি না আর এখন।বাবারে বাবা আমার মেয়ে এমন করে কথা বললে তো ওর গলায় পা দিয়ে মেরেই ফেলতাম।”
ইয়ারাবী এখন একটা তাসছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
-“একটা প্রবাদ বাক্য জানেন তো খালা,যেমন কুকুর ঠিক তেমন মুগুর।”
ওর খালা এবার রাগে ফোসফোস করতে করতে বলে,
-“ওই তুই আমাকে কুকুর বললি,তোর এত সাহস।”
-“আপনারা যে কাজগুলো করেছেন সেটা কুকুড়ের সাথে তুলনা করলেও তাদের অপমান করা হবে।”
-“দ্বারা আজ তোর একদিন কী আমার একদিন।যতবড় মুখ নই ততবড় কথা।”
কথাটা বলেই ওর খালা মিসেস ইশানিকে চিল্লিয়ে ডাকতে ডাকতে রুম থেকে বের হন।ইয়ারাবী ওর খালার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।সত্য কথা এমন এক জিনিস যা সহজে সবাই হজম করতে পারেনা।ওর খালা নিকিও এমন।যতই খারাপ কাজ করুক না কেন প্রতিবাদ কেউ করতে পারবেনা।প্রতিবাদ করলেই খারাপ হয়ে যাবে।
মিসেস নিকির চিৎকার শুনে ইয়ারাবীর মা কিচেন থেকে বের হয়ে আসেন।আজ বন্ধেরদিন থাকায় সবাই বাড়িতেই ছিলো।এদিকে ইয়ারাবী চিৎকার শুনে কানে হেডফোন লাগিয়ে ছাদে চলে যায়।
-“কীরে নিকি কী হয়েছে?এভাবে চিল্লাচ্ছিস কেন?”
-“আপু তোর মেয়ে আমাকে কুকুর বলেছে।”
এবার ইয়ারাবীর খালু নাহিদ বলে,
-“দুলাভাই আপনার মেয়ের সাহস কী করে হয় আমার স্ত্রীকে কুকুড় বলার।ডাকেন আপনার মেয়েকে,এর বিহিত যদি না করেন আমি কিন্তু লঙ্কা-কান্ড বাধিয়ে ছাড়বো।”
মি.ফুয়াদ এবার চিল্লিয়ে বলে,
-“থামবে তুমি।আর নিকি তুমি সকালবেলা ওর ঘরে কেন গিয়েছিলে?তুমি জানোনা ওর ঘরে কেউ যাক এটা ওর পছন্দ না।”
-“বাহ্ দুলাভাই ,এখন নিজের মেয়ে পক্ষে কথা বলছেন।”
-“আমি কারো পক্ষেই কথা বলছিনা।ও তোমাকে কুকুর তো আর এমনি বলেনি।নিঃশ্চয় কিছু হয়েছে,প্রথম থেকে বলো কী হয়েছে।ইয়ামিলা আম্মু যাও তো, ইস্মাকে ডেকে নিয়ে আসো।”
ইয়ামিলা দৌঁড়ে ওর আপুকে ডাকতে যায়।ইয়ারাবী নিচে এসে দেখে ওর খালা নিজের সাফাই দিচ্ছে আর এমন এমন কথা বলছে যা ও বলেই নি।ইয়ারাবী সবটা শুনে সোফায় আরাম করে বসে।এবার মি.ফুয়াদ ইয়ারাবীকে বলে,
-“এসব কী ইস্মা?তুই তোর খালার সাথে এমন ব্যাবহার কী করে করতে পারলি।”
-“দুলাভাই তিন-চারটা চড়-থাপ্পর মারেন একদম সোজা হয়ে যাবে।”
-“কেন খা..লা,আমি কী ব্যাকা হয়ে বসে আছি নাকী?”
মিসেস ইশানি সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই একটা চড় মারেন।ইয়ারাবী চড়টা খেয়ে মিটমিট করে হাসতে থাকেন।মিসেসে ইশানি রাগটা কন্ট্রোল করতেনা পেরে আরেকটা চড় মেরে বলেন,
-“তুই একটা অমানুষ হয়ে জন্মেছিস নাকী?আমি বুঝতে পারিনা তুই আমার মেয়ে কীভাবে হলি?তোর সাহস কী করে হয় নিকিকে কুকুর বলার।”
-“আমি তো তোমার বোনকে কুকুর বলিনি।আমি তো বলেছি যেমন কুকুর তেমন মুগুর।”
এবার ওর খালা ন্যাকা কান্না করতে করতে বলেন,
-“দেখেছিস আপু,তোর সামনেই আমাকে কুকুর বলছে।কী শিক্ষা দিয়েছিস মেয়েকে,এমন মেয়েকে বাঁচিয়ে না রেখে মেরে ফেলায় ভালো।আমি তোর জায়গায় হলে বটি দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলতাম।”
-“অনেকক্ষণ ধরে দেখছি আপনারা যা নয় তাই বলছেন।আর আম্মু কেমন মহিলা তুমি কী হয়েছে তা না শুনেই গায়ে হাত তোলা তোমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।”
ইয়ারাবী কথা শেষ হওয়ার আগেই ওর মা ওকে চড় মেরে দেয়।চড়ের মাত্রা এতটাই জোরে ছিলো ওর টেবিলের উপর পরে যায়।আরেকটা থাপ্পর মারতে যেয়ে দেখেন কেউ ওনার হাত ধরে রেখেছে।ব্যাক্তিটাকে দেখার জন্য পিছন ঘুরে উনি চমকে যান।কেননা ব্যাক্তিটা আর কেউ নয় ওনার হবু জামাতা আবরার ছিলো।তার থেকেও বড় কথা আবরারকে এখন অনেকটা হিংস্র লাগছে,ওর হালকা সবুজ চোখগুলো খুবই ভয়ানাক দেখাচ্ছে।অতিরিক্ত ফর্সার কারনে রাগে ওর রগগুলো ফুলে উঠেছে।
ইয়ারাবী সারা-শব্দ না পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে আবরার আর মেঘ দাঁড়িয়ে আছে।বলেনা অতিরিক্ত অবাক হলে মানুষ স্তব্দ হয়ে যায়,বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে।ইয়ারাবীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।নিজের পরিবারের এই রুপটাকে আবরার দেখে ফেলবে সেটা ও কখনও কামনা করেনি।বাড়ির সবাই খুব চুপ হয়ে আছে।আবরার উনার হাত ছেড়ে দিয়ে ইয়ারাবীকে উঠিয়ে দেখে ওর মুখের বামপাশটা লাল হয়ে আছে।আবরারের মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা।এখন সে বুঝতে পেরেছে সেদিনের দাগটা কীসের ছিলো।ইয়ারাবী আবরারকে দেখে মাথা নিচে করে নেয়।
মি.ফুয়াদ একটু হাসার চেষ্টা করে বলেন,
-“আবরার তুমি এখানে?না মানে এই টাইমে…”
-“এসে বুঝি খুব ডিস্টার্ব করে ফেললাম।”-অনেকটা গম্ভীর কন্ঠে কথাটা বলে।
মিসেস ইশানি বলে,
-“না ম্ মানে তুমি আসবে এতে ডিস্টার্ব হবে কেন?এটা তো তোমারও বাড়ি।”
-“হ্যাঁ,ঠিকই বলেছেন।আর আঙ্কেল কাল রাতে বাবা ফোন করে বলেছিলো,আমার দাদু এসেছে ইন্ডিয়া থেকে।অসুস্থতার জন্য ইনগেজমেন্টে আসতে পারিনি তাই উনি ওকে দেখতে চান।”
মি.ফুয়াদের কথাটা মনে পরতেই কিছুটা লজ্জা পান।আসলে ওনার শালীর এমন কান্ডে উনি ভুলেই গেছিলেন।।নয়তো সকাল সকাল এমন কান্ডটা হতো না।
আবরার ইয়ারাবীকে ওর রুমে নিয়ে যায় সাথে মেঘও আসে।টিকলি পিছু পিছু আসলেও রুমে ঢুকতে সাহস পায়না।যেখানে আপন বোনের কোনো মায়া থাকেনা সেখানে খালাতোবোন আপু বলতে পাগল।শুনতে খুব অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি।ইয়ামিলার যে টানটা নেই সেটা টিকলির আছে।ও মাঝে মাঝে তো এটাও বলে,”আপু আমাদের হিন্দুদের মতো যদি সাতটা জন্ম হতো তাহলে আমি আপনার বোন হয়ে জন্মাতে চাইতাম।”
আবরার খেয়াল করে দেখে এতো মার খাওয়ার পরও ইয়ারাবীর চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পরছেনা,আর না কান্না করছে।মেঘ টিকলিকে ইশারা করে ভিতরে আসতে বলে।
-“টিকলি তোমাদের ফাস্টএইড বক্সটা কোথায় একটু দিবে।”
-“আপুর কাবার্ডে আছে।”
-“বের করো,লাগবে।”
টিকলি ইয়ারাবীর দিকে তাকাই।ইয়ারাবী মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ওই আমার এসব কিছুই লাগবেনা,তুই বসে থাক।টিকলি মিনাকে যেয়ে বল নাস্তা দিতে।”
আবরার টিকলির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ওর কথা না শুনে আগে বক্সটা দাও।”
-“আবরার প্লীজ কিছুই তো হয়নি।তাছাড়া মায়েরাতো সন্তানদের মারতেই পারে।আপনি আর মেঘ এমন করছেন যেন আমার কোনো এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
-“তুমি চুপচাপ থাকবে।নিঃশ্চয় ভুলে যেওনা আমি একজন ডাক্তার।আমাকে রাগিয়ে নিওনা”
টিকলি বক্সটা দেওয়ার সাথে সাথে আবরার একটা জেল বের করে ইয়ারাবীর মুখের বামপাশে লাগিয়ে দেয়।এতবছর পরে এই প্রথম অনু ছাড়া কেউ ওর যত্ন করে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।ওর হাতের ছোঁয়ায় হাজারো ভালোবাসা আছে।কিন্তু সেটা অনুভব করতে চাইছেনা ও।নয়তো যে দুর্বল হয়ে পরবে।তারপর ইয়ারাবীকে রেডি করে নিচে নেমে আসে।মিসেস ইশানি ওদের দেখে বলে,
-“আবরার ব্রেকফাস্ট করে তারপর যেও।”
-“আন্টি কিছু মনে করবেন না।আসলে আপনাদের কাহিনি দেখে এখানে ব্রেকফাস্ট করার ইচ্ছাটা অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে।”
-“আরে বাবা তুমি এমন করছো কেন?মেয়ে ভুল করেছে মা মেরেছে ,এখানে এভাবে রিয়্যাক্ট করার কোনো কারন তো নেই।”-পাশ থেকে ওর ছোট আন্টি কথাটা বলে উঠে।
মেঘ এবার ওনার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-“লাইক, সিরিয়াসলি!তো এমন কী করেছে ইয়ারাবী যে গায়ে পর্যন্ত হাত তুলতে হলো।”
-“ও আমার স্ত্রীকে মানে ওর খালাকে কুকুর বলেছে।”
-“নিঃশ্চয় এমন কাজ করেছে তাই বলেছে।তাছাড়া আপনি কেমন মহিলা সেটা একটু হলেও আমরা জানি।তাই প্লীজ সাফাই দিতে আসবেননা।”
মেঘের কথা শুনে ইয়ারাবীর বাবা-মা ওনার বোনের দিকে তাকাই।মিসেস নিকি কিছুনা বলে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকেন।উনি জানেন এখন যদি উনি কিছু বলেন তবে ওনার কু-কীর্তি ফাঁস হয়ে যাবে।তাই এখন উনি চুপ থাকাকে শ্রেয় ধরে নিয়েছেন।
(১৫)
এক মাস অপেক্ষার পর মিসেস জামানের জন্য সেই অনাকাঙ্ক্ষিত দিন চলেই এলো।ব্রেকফাস্ট করেই উনি নিন্দুকে সাথে নিয়ে চলে গেলেন সেই ফকিরের কাছে।সকালবেলা গোবিন্দ নামের সেই লোকটা ফোন করে বলে ওনাকে যেতে।উনি আবার এসব জায়গায় একা যেতে রিস্ক মনে করেন তাই নিন্দুকে আজ সাথে নিলেন।
ঢাকা থেকে অনেকটা দূরে নদী পেরিয়ে ঘাটে পৌঁছে দেখলেন গোবিন্দ নামের সেই লোকটা উনাদের জন্য আগে থেকেই অপেক্ষা করছে।লোকটা নিজের পান খাওয়া দাঁতগুলো বের করে ওনাদের দেখে হেসে দিয়ে বলে,
-“আহেন ম্যাডাম,মুই আপনাগোর জন্যো অপেক্ষা করতাছি।”
মিসেস জামান ওনার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“যার কাছে যাবো ওনার নাম কী?আর থাকে কোথায়?”
-“জ্ব্যা,ওনার নাম কুদ্দুস,এই গ্রাম থেহে কিছুটা দূরে আর কী?চলেন একটা ভ্যান লইয়া গেলে হইবো।”
ওনারা আর কোনো কথা না বারিয়ে একটা ভ্যান ঠিক করে রওনা দেন।আধাঘন্টা মতো সময় পেরিয়ে একটা কাঁচা-পাঁকা ভেঙে যাওয়া বাড়ির সামনে দাঁড়ান।পরিবেশটা খুবই নোংরা।ওনার এমন পরিবেশে এসে কিছুটা ঘৃনা হতে লাগলো।তারপরও নাকে কাপড় চাপা দিয়ে লোকটার সাথে ওনারা ভিতরে ঢুকলো।
রুমটা প্রায় অন্ধকার।মাটির উপর কাঠে কিছু আগুন জ্বলছে।চারপাশে বিভিন্ন পুতুল পরে আছে।মাটিতে কিছু নকশা আঁকা।একটা রোগা পাতলা বেটে মতো লোক রুমে প্রবেশ করলো।পরনে তার ছিড়া একটা পান্জাবি,ময়লা লুঙ্গি, গলায় অনেকগুলো তাবিজ ঝুলানো।লোকটা এসে ওনাদের সামনে বসে সমস্যার কথা জানতে চাইলো।মিসেস জামান সবটা খুলে বললেন।আর এটাও বললেন প্রয়োজন হলে ইয়ারাবী মারা যাক তবুও যেন ওনার মেয়ে আবরারকে পায়।লোকটা সব শুনে বলে,
-“মনে হচ্ছে ইয়ারাবী নামের মেয়েটার উপর আপনাদের অনেক রাগ।”
মিসেস নিন্দু পাশ থেকে বলেন,
-“হবে নাই বা কেন?এই মেয়ে যেন সর্বগুণে সম্পুর্ন। ওর জন্য আজ পর্যন্ত আমাদের ছেলেমেয়েরা কোথাও নাম করতে পারেনি।”
-“আপনারা কী শুধু বিয়ের জন্য ওকে তাবিজ করেছিলেন নাকী আগেও করেছেন।দেখুন আমাকে কিছু না বললে আমি কিন্তু করতে পারবোনা।”
মিসেস জামান বলেন,
-“ইয়ারাবী যখন কলেজে উঠে তখন থেকে চেষ্টা করেছি রাস্তা থেকে সরানোর জন্য।কিন্তু কিছুই হয়না ওর,বুঝতে পারিনা কেন?এখন আপনিই ভরসা।”
-“বুঝলাম তাহলে শোনেন,আজকের মধ্যে আমাকে ওই মেয়ের মাথার চুল,কাপড়ের অংশ,ব্যবহার করা এমন জিনিস আর একটা ওর ছবি এনে দিতে হবে।আমি ঠিক যা যা বলবো তাই করতে হবে।”
-“ছবি আছে আমার কাছে।”
এই বলে মিসেস জামান ব্যাগ থেকে একটা ছবি বের করে দেন,যেটা এক বছর আছে ভার্সিটির ফাংশনে আদিবার সাথে তুলেছিলো।তবে উনি একটা ভুল করলেন,লোকটা ওনাকে বলেছিলো শুধু ইয়ারাবীর ছবি লাগবে।কিন্তু ওনির নিজের মেয়ের ছবিও দিয়ে দিলেন।আর লোকটাও খেয়াল না করে রেখে দিলো।তারপর ওনারা ওখান থেকে বের হয়ে নৌকায় উঠে বসলেন।
-“আপা,ছবি নাই দিলাম কিন্তু চুল কোথায় পাবেন আর কাপড়ের অংশ।ব্যাবহার করা জিনিস এসব নিতে তো ওদের বাড়িতে যেতে হবে আজ।”
-“হামম এখান থেকে সোজা ওদের বাড়িতে যাবো।আচ্ছা নিন্দু কাজটা কী ঠিক হচ্ছে?না মানে যদি আদিবার কোনো ক্ষতি হয়।”
-“আপা আপনি কী পাগল হলেন নাকী, আদিবার কী হবে?আপনিতো ইয়ারাবীর জন্য করছেন।এসব চিন্তা বাদ দেনতো।”
কথা বলতে বলতে ওনারা নদী পার হয়ে,ইয়ারাবীদের বাসার উদ্দেশ্য গেলেন।
(১৬)
-“নাতবৌ তো একদম হিরার টুকরো দেখছি।বুঝলে দাদুভাই তোমার দিদা যদি না থাকতো তবে আমি একে বিয়ে করে নিতাম।”
-“ওই কী বললে চৌধুরী,বৌমা আজ এই বুড়োর খাওয়া বন্ধ।বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরেছে ওনার।”
-“দেখো তুমি যাই বলোনা কেন?আমি রাস্তায় বের হলে এখনো মেয়েরা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।”
-“আচ্ছা,তোমাকে ছোট গিন্নি বললে কী রাগ করবে তুমি?”
-“একদম না দাদু।আপনি গুরুজন, আদর করে যেটা ডাকবেন সেটাতে খুশি হবো।”
এদের কথোপকথন শুনে মি.রায়হান বললেন,
-“দেখলে বাবা তোমাকে বলেছিলাম,মেয়ে একদম লক্ষী। ”
এর মধ্যে আবরার দিদা বললেন,
-“আচ্ছা বৌমনি, তুমি কি রান্না করতে পারো?”
কথাটা শোনার সাথে সাথে ইয়ারাবী মাথা নিচু করে ফেলে।আসলে ওর বাবা-মা যাই করুক না কেন দুই মেয়েকে দিয়ে কোনোদিন রান্না করিয়েছেন বলে মনে হয়না।ওর চুপ থাকতে দেখে ওর দিদা হো হো করে হেসে বলে,
-“আরে বাবা,রান্না পারোনা এটা কোনো ব্যাপার হলো।এখন তো তোমাদের সেই ইউটিউবের যুগ।এটা ভেবোনা যে রান্না পারোনা বলে কথা শুনাবো।তুমি জানো তোমার হবু শ্বাশুরিও আগে রান্না পারতোনা।লবনের জায়গায় চিনি দিয়ে দিতো,গুড়া মরিচের জায়গায় হলুদ।”
মিসেস.রায়হান রাগে গজগজ করতে করতে বললেন,
-“আম্মা এমনটা আপনি বলতে পারলেন,এটা ভুলে যাবেন না আমি কিছু করতে না পারলেও পায়েস ঠিকই করতে পারতাম।আর আপনিও সেই পায়েসের দিওয়ানা ছিলেন।”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ,বুঝছি পায়েস খাওয়ায়ে উদ্ধার করছো মোরে।”
আবরার উপর থেকে নামতে নামতে বলে,
-“কী নিয়ে ঝগড়া করছে আপনাদের বৌ মি.চৌধুরীরা।”
-“কী আবার সেই আগের কাহিনি নিয়ে?যেটা বৌ-শ্বাশুড়ি এক জায়গায় হলে চালু হয়ে যায়।আবার একে আপরকে ছাড়া থাকতেই পারেনা।”
এই মাঝে মিসেস রায়হান ইয়ারাবীর মুখের বামপাশটাই খেয়াল করলেন।এতক্ষণ ইয়ারাবী ওড়না দিয়ে কভার করে রেখেছিলো তাই দেখতে পারেনি।কিন্তু এখন ওড়না পরে যাওয়াতে বুঝা যাচ্ছে।আজ ইয়ারাবী একটা হলুদ কালারের লং গাউন পড়েছে।শ্যামলা হলেও কালারটা মানিয়েছে ভালো।মিসেস রায়হান ইয়ারাবীর মুখে হাত রেখে বলেন,
-“মা তোর মুখে কী হয়েছে?”
ইয়ারাবী কথাটা শোনার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলোনা।এতক্ষণ ওর খেয়াল হলো ওর মাথায় ওড়না নেয়।ইয়ারাবী কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছেনা।সামনে আবরার আর মেঘ বসে আছে।হঠাৎ মেঘ বলে উঠে,
-“আমি মেরেছি তাই।”
-“তুই মেরেছিস মানে?”
-“আর বলোনা বড় আম্মাজান,আপনার বৌমার গালে গুলুমুলু একটা মশা বসেছিলো,তাই আমিও সুযোগ বুঝে মশা নিধোনের কাজ করেছি।”
-“তাই বলে এতো জোরে মারবি।কতটা দাগ বসে গেছে।হ্যাঁরে তোদের ভাই-বোনদের কোনোদিন কান্ড-জ্ঞান হবেনা।”
ইয়ারাবী মেঘের কথা শুনে অবাক,আর আবরার সে তো ওর দিদার পাশে বসে আপেল খাচ্ছে আর ওর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।এর মধ্য আবরার বোন জারবা ওকে নিয়ে উপরে গেলো।ইয়ারাবী চুপচাপ বসে আছে আর জারবা সেতো নিজের মতো বকবক করেই যাচ্ছে।একটা সময় ইয়ারাবী এমন ছিলো।কাছের কোনো মানুষ তার সাথে থাকলে কথা বলে মাথা ধরিয়ে দিতো।কিন্তু এখন আর…সময় সত্যিই সব কিছু বদলে দেয়।কাছের মানুষগুলো দূরে সরে যায়।ইয়ারাবী এখন এটাই ভাবে,”ওর ফ্যামিলি ওকে কত অবহেলা করে,ও যদি মারা যায় তাহলে কী ওরা কাঁদবে।”নিজেই এটা ভেবে নিজেই হাসতে থাকে।কতটা গাধা,ও যদি মারা যায় তাহলে তো সবাই ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।বেঁচে যাবে সবাই,সাথে ও নিজেই।
ইকরা এসে সবাইকে লান্চ করার জন্য ডাকে।জারবাতো কথাটা শুনেই দৌঁড়।ইয়ারাবী যেই বেড়তে যাবে আবরার এসে ওকে আটকে দেয়।আর বলে,
-“আজ কী হয়েছিলো একটু বলবে?”
-“তেমন কিছুনা, কথা কাটাকাটি হয়েছিলো। আমার ও মাথা ঠিক ছিলোনা উল্টো-পাল্টা বলে ফেলেছি।”
আবরার কিছুনা বলে হেসে ওর মাথায় ওড়নাটা ঠিক করে দিয়ে নিচে চলে আসে।আবরারের কথা আর কাজে খুব অবাক হয় ইয়ারাবী।সবাই খেতে বসেছে।আবরারের মা,ভাবী আর দাদু-দিদা একটার পর একটা ওর প্লেটে খাবার দিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু ও কিছুই খেতে পারছেনা।আসলে অনেক দিন ধরে খাবারের অনিয়ম করলে নাড়ি মরে যায়।তাই ফলস্বরুপ ইয়ারাবী কিছুই খেতে পারছেনা।তাও জোড় করে দু’তিন গাল খেয়ে উঠে পড়লো।
আসার সময় ইয়ারাবী মেঘের রুমে যেয়ে দেখে কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে।ইয়ারাবীকে দেখে সাথে সাথে ফোন কেঁটে দেয়।
-“কীরে কার সাথে কথা বলছিলি?”
-“হি হি হি,কার সাথে বলবো।ফ্রেন্ডের সাথে বলছিলাম।”
-“দেখ দোস্ত তোরে আমি খুব ভালো করে চিনি।সুতরাং আমার সাথে মিথ্যা বলতে আসবিনা।”
-“কী জ্বালা,আচ্ছা শোন ভাইয়াদের বলিসনা।আমাদের সাথে ওই যে হিয়া পড়েনা ওর সাথে।বুঝতেই তো পারছিস।”
ইয়ারাবী কিছু বলার আগে আবরার রুমে এসে বলে,
-“দেবর-ভাবীর কীসের কথা হচ্ছে?”
-“তেমন কিছুনা,ইয়ারাবীর সাথে কালকের কাজটা নিয়ে কথা বলছিলাম।”
-“ওই বাদর, এটা তোর ভাবী হয়।”
-“আমার বয়েই গেছে ওরে ভাবী বলতে, এমনিতেও দেখো ও আমার দু’তিন বছরের ছোট হবেই।”
-“জীবনে মানুষ হবিনা।ইয়ারাবী আমি নিচে যাচ্ছি তুমি আসো।আমার আমার ল্যাবে যেতে হবে।”
ইয়ারাবী মাথা নাড়াই।
-“থ্যাংকস, সেই সময় আন্টির কাছে আমার হয়ে কথা বলার জন্য।”
-“ইয়া তুই কিন্তু স্মার্ট মেয়ে, নিজেই কিন্তু এসব এনজিও, ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত আছিস তাহলে তুই কেন সকালে কিছু বললিনা।সবটাই কিন্তু আমরা দেখেছি।”
-“মিথ্যার বিস্তার যখন এতটাই ছড়িয়ে যায় তখন এক টুকরো সত্যকে কেউ যাচাই করতে আসেনা।অন্ধবিশ্বাস অনেকটা কঠিন জিনিস।তুই জানিস এখন যদি আমি মারা যায় তাহলে অনেকের হাসির কারন হয়ে দাঁড়াবো।আর আমি অনেক আগেই মায়া কাঁটাতে শিখে গেছি তাই, এই জীবনের মোহতে আর পরিনা।”
-“তুই যে মাঝে মাঝে কী বলিস কিছুই বুঝতে পারিনা।”
-“আচ্ছা অনেক দেরী হয়ে গেছে,কাল দেখা হবে। আসি,আল্লাহ হাফেজ।”
ইয়ারাবী চলে যেতেই মেঘের মনে পরে সেই প্রথম দিনের কথা।তখন ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছিলো।কোনো এক কারনে ইয়ারাবী এক সপ্তাহ পর গিয়েছিলো।প্রথমে ক্লাসরুম চিনতে না পারাই ও মেঘের কাছে ভাইয়া ঢেকে সাহায্য চেয়েছিলো।মেঘ অনেক সামাজিক কাজের সাথে যুক্ত।আর যখন জানতে পারে তখন ও আর অনু মেঘের মাধ্যমে এসব কাজে ঢোকে।অল্প সময়ে হলেও অনেকটা জায়গা করে নিয়েছে।মেয়েটাকে অনেক ভালো লাগতো মেঘের তবে বোন হিসাবে।ক্লাসে বা পরীক্ষায় যখন সাহায্য লাগে তখন ওর কাছ থেকেই হেল্প নেয়।
আসলে মানুষের বাইরের রুপ দেখে ভিতরটা চেনার উপায় খুব কম।আগে ইয়ারাবী অনেক ছন্ন-ছাড়া কথা বলতো।সেগুলোর মানে তখন না বুঝলেও আজ বুঝতে পারছে,ওর কথাগুলোর মানে কী।
(১৭)
ইয়ারাবী বাসায় ঢুকে দেখে ওর বড় খালা আর মামী বসে কথা বলছে।ওর মামী ওকে দেখে বলে,
-“কোথায় গেলিছি ইয়ারাবী,সেই কখন থেকে তোর জন্য বসে আছি?”
ইয়ারাবী সিড়িতে দাঁড়িয়ে ফোন টিপতে টিপতে বলে,
-“কেন আমি কী কোনো সেলিব্রেটি যে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন।আর আমি কোথায় ছিলাম সেটা এই বাড়ির মানুষ খুব ভালো করেই জানে।”
ওর মামী কিছু বলার আগেই ওনার ছেলে শুভকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেন।শুভ এসে ওর মাকে দেখেও না দেখার ভান করে ইয়ারাবীককে যেয়ে জড়িয়ে ধরে।ইয়ারাবী ওর কাজে হেসে দেয়।শুভর পিছনে তাকিয়ে দেখে নিলয়ও দাঁড়িয়ে আছে।ইয়ারাবী নিজের চশমা ঠিক করে বলে,
-“কী ব্যাপার দুই বাদর আমার বাড়িতে।”
-“আপু আমরা আপনাকে খুব মিস করছিলাম।বোঝেন তো কত ভালোবাসি আপনাকে।”
শুভ নিলয়কে দেখে মিসেস নিন্দু বলেন,
-“তোরা যে এখানে আসবি তা আমাকে তো বলিসনি।”
শুভ ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“বলার প্রয়োজন মনে করিনি তাই বলিনি।তুমিও তো কত কিছু করে বেড়াও কই তাতো আমাদের বলোনি।”
ইয়ারাবী ওর দুই মামাতো ভাইকে নিয়ে উপরে চলে আসে।বলতে গেলে এরা দুই জন ইয়ারাবী বলতে পাগল।আর ইয়ারাবীও আপন ভাইদের নজরে এদের দেখে।ইয়ারাবী ফ্রেস হয়ে বসতেও পারলোনা ওমনি শুভ এসে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।নিলয় এক পাশে বসে ফ্রি-ফায়ার খেলতে থাকে।হঠাৎ শুভ বলে উঠে,
-“আচ্ছা আপু,বোনেরা ভাইদের প্রেম করতে দেয় কিন্তু ভাইরা বোনেদের প্রেম করতে দেয়না কেন?”
ইয়ারাবী হেসে বলে,
-“কারন বোনেরা জানে ভালোবাসা মানে আর ভাইরা জানে কিছু ছেলেদের উদ্দেশ্য ।এবার বল হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?”
-“না এমনি,আসলে আজকাল অনেক দেখি তো তাই।আপু জানেন আপনাকে হাসলে খুব ভালোলাগে।দেখেন ছবিগুলো কত সুন্দর কিন্তু এখন কেমন যেনো মনে হয় আপনাকে”-পাশ থেকে নিলয় কথাটা বলে উঠে
হঠাৎ ওর মামী আর বড় খালা ওর রুমে প্রবেশ করে।সাথে ওর মা ইশানিও আছে।ও দেখেও না দেখার ভান করে।হঠাৎ ওর বড় খালা বলে,
-“ইয়ারাবী,তোর ওই যে একটা গাউন আছেনা মাল্টি কালারের ওইটা একটু দেতো।তোর আপুর ওই ড্রেসটা খুব ভালোলাগে। তাই ভাবলাম ওমন ড্রেস এবার ওকে কিনে দিবো।”
-“ওইটাতো অনুকে দিয়েছি,আর আনা হয়নি।”
-“ও তাহলে অন্য একটা গাউন দে ,তোর সব ড্রেসই খুব সুন্দর।”
এর ভিতর ওর মামী যেয়ে ওর মাথায় যেই হাত দিতে যাবে ওমনি ও হাত ধরে ফেলে আর বলে,
-“আমার চুলে কেউ হাত লাগাবে সেটা আমার পছন্দ না।আর খালা আপুতো গাউন পরে না।আর না পছন্দ করে।”
-“না মানে আসলে বলছিলো এবার কিনবে তাই ভাবলাম তোর মতো কিনে দিবো।তোর ডিজাইনগুলা খুব সুন্দর।”
-“মার্কেটে যান পেয়ে যাবেন।”
-“আরে বাহ্ ইয়ারাবী তোর এই ইনগেজমেন্ট আংটিটা আসলেই খুব সুন্দর।ভাবছি তোর ভাগনির বার্থডেতে এমন একটা আন্টি দিবো।তুই কী একটু দিবি।আমি দোকানদারকে দেখিয়ে তারপর তোকে ব্যাক দিবো।”
ইয়ারাবীর কেমন একটা লাগছে এদের কথা শুনে।ওই দিকে শুভ বারবার ইশারায় নিষেধ করছে দিতে।পাশ থেকে মিসেস ইশানি বলে,
-“নিন্দু ওটা হিরার আংটি,তাছাড়া ওর শ্বশুড় বাড়ির থেকে খুলতে নিষেধ করছে।”
-“আরে আপা ওরা কীভাবে জানবে এটা খুলা হয়েছে।আপনি চিন্তা করবেননা কাল সকালেই ফেরত দিবো।”
এই বলে ইয়ারাবীর হাতের আংটিটা খুলতে যাবে ওমনি ইয়ারাবী মিসেস নিন্দুকে ধাক্কা দেয়।তারপর বলে,
-“বলছিনা এগুলো খুলতে পারবোনা,তারপরও কেন এমন করছেন?এদেখেন আমার রাগ উঠাবেন না।”
-“আম্মু সমস্যা কী তোমার,আপু বলছে খোলা যাবেনা তারপরও এমন করো কেন?আর তাছায়া নীরার জন্মদিন দু মাস পর। ও বাচ্চা মানুষ ওকে কেন আংটি দিবে।”
মিসেস জামান সবকিছু সামলাতে বলেন,
-“ইশানি তোর মেয়ের একটা ড্রেস দে।এমন কেন করিস?কাপড়ের কী অভাব আছে তোর মেয়ের।”
ইশানি কাবার্ড খুলে একটা নেভি-ব্লু কালারের গাউন ওনার হাতে দেয়।উনি নিজেও জানেন না উনি কী ভুল কাজ করতে যাচ্ছেন।নিজের হাতে নিজের মেয়ের চরম সর্বনাস করতে যাচ্ছেন।
পরিবার এমন একটা জায়গা যেখানে সবাই নিরাপদ থাকে,একটা শান্তির ঠিকানা খুঁজে পায়।কিন্তু যদি এমন পরিবারেই শত্রু লুকিয়ে থাকে তাহলে বাইরের শত্রুর কীসের দরকার।সত্যিই কী এবার মিসেস জামান ইয়ারাবীর কোনো ক্ষতি করবেন?তাহলে ইয়ারাবীর সুখ শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেলো।ইয়ারাবীতো তেমন ক্ষতি করেনি তবে ওর জীবনের সাথে এমন কেন হচ্ছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here