জীবন মানে তুমি পর্ব:৭

জীবন মানে তুমি
লেখিকা:H.B.Irini Ori
পর্ব:৭
(২৭)
যদি কারোর সাথে অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা ঘটে যায়, তবে সেই মানুষেরা প্রচন্ড ভেঙে পরে।কারোর কল্পনাতেও ছিলোনা এমন কিছু হবে।যেটা কিছুক্ষণ আগে ঘটেছে সেটা কল্পনা করলেও সবার রুহ কেঁপে উঠছে।টানা একঘন্টা ধরে সবাই হাসপাতালের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।সবার একটাই ইচ্ছা ওর যেন কিছু না হয়
এর মধ্য মিসেস জামান আর নিন্দু হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন হাসপাতালে।মি.রায়হান আর মি.ফুয়াদও চলে এসেছেন।সবার চোখে পানি।মিসেস জামান মিসেস ইশানিকে বলে,
-“কী করবি বল,তোর মেয়ের জীবনকাল এই পর্যন্ত ছিলো।ভাগ্যের উপর কারো হাত নেই।কাঁদিস না।”
-“কিন্তু আপু আমি তো,”
-“আপা, বড় আপা ঠিকই বলছে,কেঁদে আর কী লাভ বলেন?এখন শুধু দোয়া করেন ওর জন্য।”
-“ঠিকই বলেছিস নিন্দু,এখন শুধু আবরারের জন্য দোয়া করতে হবে।ছেলেটার যেনো কিছু না হয়।”
মিসেস জামান ভ্রু কুচকে ইশানির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মারা তো ইয়ারাবী গেছে, তাহলে আবরারের কী হলো?”
মি.ফুয়াদ রেগে চিল্লিয়ে বলেন,
-“যখন থেকে হাসপাতালে এসেছেন উল্টো-পাল্টা কথা বলে যাচ্ছেন।কে বললো আমার মেয়ে মারা গেছে?এত ইচ্ছা কেন আমার মেয়ের মৃত্যু দেখার?”
-“বড় খালা, আপনি পাগলের মতো এসব কেন বলছেন?আপিপু তো ঠিক আছে।”
-“আমি তো শুনলাম অ্যাক্সিডেন্ট করছে?তাহলে কই ও।তোরা কানছিস তাই আমি ভাবলাম…”
-“আপনি একটু বেশিই ভাবেন?”-কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে ইমন বলে।
এর মধ্যে কেবিন থেকে একজন ডাক্তার বের হয়।ডাক্তার বললে ভুল হবে উনি ইমনের মেজো ভাই ইফাজ।ইমন ওর ভাইকে দেখে কাছে যেয়ে বলে,
-“ভাইয়া কেমন আছে ওরা।”
-“তুই নিজেই দেখেনে।”
কথাটা শুনার পর সবাই কেবিনে ঢুকে দেখে আবরার বেডের উপর পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে ফোন টিপছে।ওর মাথায় আর হাতে কিছুটা চোট লেগেছে।তার পাশের বেডে ইয়ারাবী ঘুমিয়ে আছে।ওর পায়ে আর হাতের কনুয়ে ব্যান্ডেজ করা।মিসেস রায়হান ছেলেকে দেখে বলে,
-“তোরা ঠিক আছিস তো?”
-“মম আস্তে,ইয়ারাবীকে নাইট্রোজিপাম দিয়ে ঘুম পারানো হয়েছে।বেশি কথা বললে উঠে যাবে।”
ওর মা ওর কথা শুনে মুচকি হাসে।মিসেস ইশানি যেয়ে মেয়ের মাথায় হাত রাখেন।আজ খুব কষ্ট হচ্ছে।যদিও সব সময় মুখে বলে তুই মরলে আমি বাঁচি কিন্তু তারপরও জন্মদাতা মা,নাড়ী ছেড়া ধন।আর একটুর জন্য হলে ইয়ারাবীর জান চলে যেতো।
ইয়ারাবী পরে যাওয়ার পর ওর পা মচকে যায় সঙ্গে আরো ইটের সাথেলেগে ওর পেটেও প্রচন্ড ব্যাথা পায়।আবরার গাড়িতে উঠতে যেয়ে ওর চোখ ইয়ারাবী দিকে যায়।হঠাৎ ট্রাকটা যখন প্রায় ওর কাছে চলে আসে আবরার যেয়ে টান দিয়ে ওকে অন্যপাশে ফেলে দেয়।ট্রাকটার কিছুটা ধাক্কা ওর লেগে যায়।
ইয়ারাবীকে আলাদা কেবিনে রাখতে চেয়েছিলো কিন্তু ইফাজ যে কেন এমন করলো তা কেউ বুঝতে পারেনা।অপরদিকে মিসেস জামানের ব্যাপারটা কেউ বুঝতে পারছেনা যে উনি কোথা থেকে এই সব শুনেছেন।কেউ তো ওনাদের কল দেয়নি।যেহেতু ইয়ারাবী ঘুমিয়ে আছে তাই কাউকে বেশি কথা বলতে নিষেধ করে।সবাই কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।আবরার ইয়ারাবীর শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আজ ও যদি সঠিক সময়ে খেয়াল না করতো তবে ইয়ারাবীকে জীবনের মতো হারাতো।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ও কাধে কারো হাতের স্পর্শ পায়।তাকিয়ে দেখে ইফাজ দাঁড়িয়ে আছে।
-“ইয়ারাবীর অনেক বড় একটা ক্ষতি হয়ে গেছেরে।”
-“কী?”
-“আগে থেকেই প্রবলেম ছিলো কিন্তু আজ যে আঘাত লেগেছে সেটা….আমি জানিনা তুই কীভাবে রিয়্যাক্ট করবি।মেয়েটার জীবনে কোনো দিন সুখ ছিলোনা।তবে নিজের কষ্টকে আড়ালে লুকিয়ে রাখতো।যদি বাসার কাউকে কথাটা বলতাম তো জানিনা ওনারা ইয়ারাবীর সাথে কী রিয়্যাক্ট করতো।”
-“কথা ঘুরিয়ে-প্যাচিয়ে না বলে সোজাসুজি বললে আমি খুশি হতাম।”
-“আবরার ইয়ারাবী কখনো মা হতে পারবেনা।”
-“হুয়াট?তুই মজা করছিস আমার সাথে।”
-“দেখ ইয়ারাবীর আগেই সমস্যা ছিলো,ওর ওই সময়টাই প্রচন্ড ব্যাথা হতো,যখন টেস্ট করায় জানা গেল ও মা হতে পারবে তবে সেটা মাত্র 50% চান্স ছিলো।সেটা তোকেও বলেছি।কিন্তু আজ আঘাতে ওর সব চেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে।ওর লাইফে খুব ঝুঁকি আছে।”
-“ট্রিটমেন্ট করলে তো ঠিক হয়ে যাবে।”
-“কিন্তু তোর ফ্যামিলি কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে বিষয়টা..”
-“তুই আমার ফ্যামিলিকে এই চিনলি।তুই চিন্তা করিস না,আমি আমার কথা ঠিক রাখবো।শোন ওর পরিবার বা ও যেন জানতে না পারে।”
কথাটা বলেই আবরার কিছু একটা ভাবতে থাকে।ইফাজ ওকে চিন্তা করতে দেখে বলে,
-“কী ভাবছিস তুই?”
-“ইফাজ তুই ঠিক বলেছিস কে বা কারা ইয়ারাবীকে মারতে চাই?কেননা ওর রোডে ওভাবে পরে যাওয়া আর ওই ট্রাকটা…..ইউ নো আমরা যখন ভার্সিটি থেকে মলে যায় তখনো ওই ট্রাকটাকে দেখেছি আর.”
-“আবরার সেটা আমিও জানি।আসলে কী জানিস আপন মানুষ যদি অবহেলা করে তবে পরের থেকে কী আসা করা যায়।”
-“ওনারা ওর সাথে এমন কেন করে জানিস?”
-“না,ওর ভিতরের ফ্যামিলির শুধু এগুলো আমি জানি,আর কেউ জানেনা।ও ঠিক সেভাবে বলেনা।নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে ফেলেছে।আসলে কী বলতো?যে মানুষগুলো অনেক বিশ্বাস করে ,ভালোবাসে,সহজে আপন করে নেয় সেই মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি আঘাত পায়।আর এই আঘাতগুলো সারতে অনেক সময় লাগে যেগুলো নিজের মানুষের মেহেরবানী,তাদের আঘাত।তাহলে তাদের গুরুত্বটা নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে হয়।আর সেটাই ইয়ারাবী করেছে।তাই সে এখন খারাপ হয়ে গেছে।তিন জিনিস কখনো ফিরে আসেনা।মুখ থেকে বের হওয়া এক একটা শব্দ,চলে যাওয়া সময় আর ভেঙে যাওয়া বিশ্বাস।”
আবরার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইয়ারাবীর হাতটা নিজের হাতে নিলো।মেয়েটা এমনিতেই ভিতরে থেকে ভেঙে আছে।আর যখন জানতে পারবে কথাটা তখন কী হবে ওর?একটা মেয়ের কাছে মা হওয়া যে কতটা খুশির ব্যাপার সেটা একমাত্র সেই অনুভব করতে পারে।
ওদেরকে রাতটুকু হাসপাতালে থাকতে হবে।বিশেষ করে ইয়ারাবীকে।যদি কোনো সমস্যা হয়,ইফাজ ইয়ারাবীকে নিজের বোনের মতো ভালোবাসে।নিজেদের বোন না থাকায় ইয়ারাবীকে সেই জায়গায় বসিয়েছে।তাই ও কোনো রিক্স নিতে চাইছেনা।আর ও ওর খালাদের খুব ভালো করে জানে। ওনারা তিলকে তাল বানাতে সব সময় প্রস্তুত থাকে।
(২৮)
রাতে হাসপাতালে ইফাজ ডিউটিতে আছে সাথে আবরারও তাই আর কাউকে এলাও করেনি।তবে মিসেস ইশানি চাইলে থাকতে পারতেন কিন্তু উনি সবার আগে বাসায় যেতে চাইলেন।তাই ইফাজ ও আর থাকতে কাউকে নিষেধ করলনা।কেননা যেখানে আপন মা থথাকতে চাইলোনা সেখানে অন্যকে আশা করা ঠিক না।আবরার সবাইকে কড়া করে বলেছে যাই হোক না কেন বিয়েটা যেনো পিছিয়ে না পরে।তাই রাত থেকে সবার বিয়ের আয়োজনে ব্যাস্ত।আসলে কেউ সত্যিটা জানেনা তাই।
এদিকে রাত ১০টার দিকে ইয়ারাবীর ঘুম ভাঙে।চোখ খুলেই প্রথমে আবরারকে দেখতে।ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো।ইয়ারাবী আস্তে করে উঠে বসে।আবরার ফোনটা কান থেকে রেখেই ঘুরে তাকিয়ে দেখে ইয়ারাবী বসে আছে।আবরার বেড থেকে নেমে ওর পাশে যেয়ে বসে,
-“উঠলে কেন?কিছু লাগলে ডাকতে পারতে?”
-“কেউ নেই এখানে,শুধু কী আপনি?”
কথাটা বলে ইয়ারাবী দরজার দিকে তাকাই।ও মনে করেছিলো কেউ না থাকলেও ওর মা থাকবে।আবরার বিষয়টা বুঝতে পেরে বলে,
-“আসলে ডাক্তার কাউকে এলাও করেনি যেহেতু তোমার ভাইয়া এখানে আছে।”
-“ওহ্,ভাইয়া কোথায়?”
-“ওটিতে আছে,কিছু খাবে তুমি?নিয়ে আসবো..”
-“না,আপনি ঠিক আছেন তো।আমার জন্য আজ আপনার এই অবস্থা,কতটা কেঁটে গেছে আপনার?নিঃশ্চয় সবাই খুব বকেছে তাইনা?”
-“না,কার এত সাহস বকবে।আর আমি তোমার জন্য নয় আমার জন্য করেছি।”
-“মানে?”
-“সময় হলে বুঝবে?”
-“ইয়া কেমন লাগছে এখন?”
দরজায় তাকিয়ে দেখে ইফাজ দাঁড়িয়ে আছে।ইয়ারাবী হেসে বলে,
-“আমি ঠিক আছি ভাইয়া।”
-“পেটে ব্যাথা করছে নাকী?একদম মিথ্যা বলবিনা।আপন মায়ের পেটের না হলেও তোর মিথ্যা সহজে ধরতে পারি।”
ইয়ারাবী চুপ করে থাকে।সবার কাছে মিথ্যা বললেও ইরাক আর ইফাজের কাছে মিথ্যা বলতে পারেনা।হয়তো কিছু কিছু সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের উর্ধ্বে। তাইতো এদের কাছে কিছু লোকানো মুশকিল।ইয়ারাবীর চুপ করা দেখে ইফাজ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-“নার্স একটুপর এসে মেডিসিন দিয়ে যাবে,খেয়ে নিস।আর কী খাবি বল আমি নিয়ে আসছি।”
-“কিছু খাবোনা।”
-“বাহ্,ভাইয়া এখন বোনকে পেয়ে হবু জামাইকে ভুলে গেলেন নাকী?”
-“আগে বোন তারপর জামাই,বুঝলে”
এর মধ্যে নার্স এসে ইয়ারাবীকে কিছু খাবার মেডিসিন দেয়।মেডিসিনের পরিমান বেশি দেখে ও ওর ভাইয়ের দিকে তাকাই।ইফাজ ইশারা করে কথা না বলে খেয়ে নিতে।ইয়ারাবীও কোনো প্রশ্ন করেনা।আবারার ওর বেডে বসে ফোন টিপছে,এদিকে ইফাজ ইয়ারাবীর এক হাত ধরে আরেক হাত দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে থাকে।ইয়ারাবীর এখন ঘুমের প্রয়োজন কিন্তু ওর চোখে ঘুম নেই।যতবার চোখ বন্ধ করছে দৃশ্যটা ওর সামনে ভেসে উঠছে।যদি আবরার না থাকতো তাহলে কী হতো ওর?
-“বাচ্চা,একটা কথা বলতো?”
-“কী?”
-“তুই রোডের মাঝখানে কীভাবে পরে গেলি?তোরাতে রোড থেকে দূরে ছিলি তাহলে?”
ইয়ারাবী প্রশ্নটা শুনে অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।ও জানে ইফাজ রেগে গেলো সব করতে পারে।আর ইরাক ওতো সোজা ক্রস ফায়ারে দিতে পারলে বাঁচে।ও জানে রাস্তায় কীভাবে পরেছে?আর কে ধাক্কা দিয়েছে সেটাও দেখেছি।কিন্তু ও চাইনা ওর জন্য আর কোনো অশান্তি হোক।ও কথাটা ঘুরানোর জন্য বলে,
-“ভাইয়া, ইয়াক ভাইয়া কবে আসবে?আমার বিয়েতে আসবেনা।”
-“এই একদম কথা ঘুরাবেনা।আগে আমার কথার উত্তর দে?তারপর বলবো।”
-“আরে মাথা ঘুরে পরে গেছিলাম তাই,পেসার লো ছিলো।বিশ্বাস না হলে ওনার কাছে শোনো?”
-“তোমাদের ভাই-বোনের মামলায় আমি বাদী হতে পারবোনা।এটা মাথা ঘুরা না অন্য কিছু ছিলো সেটা একমাত্র তুমি জানো।”
-“আরে, আপনিতো দেখছি খুব খারাপ।”
-“প্রথমদিনেই তো বলছিলাম আমি খুব খারাপ।”
-“তোরা থামবি,এখন দু’জনেই শুয়ে পরো।ইয়া প্লীজ শোনা ঘুমটা খুব দরকার তোর,নয়তো মেডিসিন দিবো নাকী?”
-“না না আমি তো ঘুমাচ্ছি।”
-“ওকে, তুই ঘুমালে তারপর আমি যাবো।”
ইয়ারাবী ইফাজের জেদ সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানে।তাই কোনো তর্ক না করে ঘুমানোর ট্রাই করে।
(২৯)
পরদিন সকালে মি.ফুয়াদ ডেকোরেশন চেক করছেন।আর একদিন বাদে গায়ে হঁলুদ,তারপর মেহেন্দী।যেহেতু ইয়ারাবীদের বাসা ডু-প্লেক্সের সেজন্য অনুষ্ঠান নিচের হলেই করা হবে।মিসেস ইশানি কাজ করেছেন আর বোনদের সাথে হেসে হেসে গল্প করছেন।মি.ফুয়াদ এসে বলে,
-“ইস্মাকে কল দিয়েছিলে?আমি ফোন করেছিলাম কিন্তু ওতো আমার সাথে কথাই বলেনা।”
-“ইফাজকে কল করছিলাম ,বললো ঘুমিয়ে আছে।”
-“ওহ্”
মিসেস নিকি কিছুটা হেসে বলে,
-“আরে দুলাভাই অতো চিন্তা করবেন নাতো,মেয়ে কী মারা যাচ্ছে নাকী।ঠিক আছে, ইফাজতো বলেছে কিছুক্ষণ পরে নিয়ে আসবে।”
-“ইশানি তোমার বোনকে আমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করে।যারা আমার মেয়ের মৃত্যু কামনা করে তাদের সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই।”
-“তুমি এমন কেন করছো?ওরা ভুল করে বলে…”
-“থামো তুমি..তোমার আশকারা পেয়ে এমন হয়েছে।”
-“কেমন আছিস ভাই?”
মি.ফুয়াদ পিছনে তাকিয়ে দেখে ওনার দুই ভাই মি.ফাতিন,মি.ফামাদ আর ওনার বোন ফাতেমা তাদের ফ্যামিলি নিয়ে আসছে।মি.ফুয়াদের দুই ভাই সম্পত্তির জন্য ওনাদের সাথে অনেকদিন ধরে ঝামেলা করছিলো।তাদের কথা তোর এত সম্পত্তি দিয়ে কী করবি?বেশিতো বড়টার নামেই করে রেখেছিস।তোর দু’মেয়ে।কিছু সম্পত্তি আমাদের দিয়েদে।তারপর থেকে কথা কাটাকাটি হয়ে যোগাযোগ বন্ধ।তাই উনি কিছুটা অবাক হয়ে যান।ফাতেমার মেয়ে তারা মিসেস ইশানির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“বড় মামি,আমার পিচ্চিটা কই? এত বড় হয়ে গেছে যে বিয়ে হবে।আমার তো ভাবতেই অবাক লাগছে।”
তারা প্লে-স্কুলে জব করে।ইয়ারাবীকে নিজের পুতুলের মতো আদর করে।ওর মাও ইয়ারাবীকে খুব ভালোবাসে।কিন্তু ওর চাচারা ইয়ারাবীকে একদম সহ্য করতে পারেনা।মিসেস ইশানি হেসে বলে,’
-“তারা ওতো বাসাই নেই সোনা,হসপিটালে।”
তারা কিছু বলার আগে মি.ফাতিন মানে ওর মেজো মামা বলে,
-“হাসপাতালে কী করছে?”
এর মধ্যে ইফাজ ইয়ারাবীকে বাসায় নিয়ে আসে।ওকে দেখে মিসেস নিকি আর কিছু বলেনা।টিকলি দৌঁড়ে যেয়ে ইয়ারাবীর রুমটা ঠিক করে দেয়।ইফাজ সোজা ইয়ারাবীকে রুমে দিয়ে আসে।কিছুক্ষণের মধ্যে অনুও ওদের বাসায় চলে আসে।ইফাজ কারোর সাথে কথা না বলে সোজা কিচেনে যেয়ে ইয়ারাবীর জন্য কিছু খাবার নিয়ে উপরে যায়।তারপর খাইয়ে দিয়ে মেডিসিনগুলো দিয়ে নিচে নেমে মি.ফুয়াদকে যেয়ে বলে,
-“খালু,ওর পেসার কিন্তু খুব লো হয়ে আছে।আমি ওকে মেডিসিন দিয়ে এসেছি কেউ যেনো ওকে বেশি বিরক্ত না করে।যে কয়েকদিন মেয়েটা এই বাড়িতে আছে যেনো শান্তিতে থাকতে পারে।আমার ইমার্জেন্সি আছে তাই যাচ্ছি পরে আবার আসবো।”
মি.ফুয়াদও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।তারা দৌঁড়ে ইয়ারাবীর কাছে চলে যায়।
আসতে আসতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে থাকে।ইয়ারাবী ওর রুমের মধ্যেই বসে আছে।কেননা ওর চাচাদের ওর দেখতে ইচ্ছা করেনা।ওনাদের মতো ওনার ছেলেগুলোও ওমন হয়েছে।কতটা যে নিচু মানসিকতা সম্পুর্ন ব্যাক্তি তা ওদের না দেখলে বুঝা যায়না।তাই বিকালের দিকে ও রুমে ওর ফুপির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।ওর ফুপি ফাতেমা খুব ভালো মহিলা।যেমন রুচিশীল কথাবার্তা তেমন ব্যাবহার।ওনাকে দেখলে সবাই অবাক হয়ে যাবে।ওনার হাজবেন্ডও বড়লোক হলেও কোনো অহংকার নেই।
মিসেস ফাতেমা ইয়ারাবীর চুলে হাত বুলিয়ে গল্প শুনাচ্ছে।তারা ইয়ারাবীর ডানহাতের নখগুলো কেটে দিচ্ছে।
-“স্টারপু কী করছো বলতো?এসব আমি নিজেও করতে পারবো?”
-“মা এটাকে চুপ করতে বলতো।বিড়াল ছানার মতো ম্যাও ম্যাও করেই যাচ্ছে।আমি আমার পুতুলের নখ কাটছি তোরনা।চুপ কর নয়তো থাপ্পর দিবো।”
-“তারা বকছিস কেন?এমনিতে অসুস্থ।”
-“দেখছো মনি,কীভাবে আমাকে বকা দিচ্ছে।কোথায় আদর করবে তা নয় সবাই শুধু বকে।”
-“পিচ্চি মারবো কিন্তু এবার।”
-“তোদের নিয়ে আর পারিনা।”
অন্যদিকে নিচে বসে ইয়ারাবীর চাচা আর খালারা কথা বলছে।কথায় কথায় ওর মেজো চাচী বলে,
-“বিপ্লব তোরা কেউ তো দেখলাম ইয়ারাবীর সাথে কথা বললিনা।তোরা ভাই হোস, তা ওর সাথে কথা বলছিস না কেন?”
-“মা আমাদের পাগলা কুকুরে কামড়াইনি।ওর ইরাক ভাই যদি জানে আমরা ওর আশেপাশেও গেছি ডাইরেক্ট ক্রস ফায়ারে দিবে।”
-“আরে ভাইরা বোনের সাথে মজা করতেই পারে।তা নিয়ে ইরাকের কেন অসুবিধা বুঝিনা বাপু”
ওর ছোট চাচা বলে,
-“আচ্চা,ইয়ারাবী হাসপাতালে কেন গেছিলো?”
মিসেস নিকি আশেপাশে তাকিয়ে সব বলেন শুধুমাত্র ধাক্কা দেওয়া কথাটা মিথ্যা বলে আর সাথে বারতি কিছু যোগ করে দেয়।সব শুনে ওর ছোট চাচী বলে,
-“ছিঃ ছিঃ কী অপয়া মেয়েরে বাবা।বিয়ের আগেই হবু বরের ক্ষতি হলো?”
-“তা বলেছিস ছোট ,ওযে একটা অলক্ষী মেয়ে মনে হচ্ছে?আর দেখলি কীভাবে খালাতো ভাইয়ের সাথে ঢালাঢালি করে এলো।লজ্জা নেই।”
-“ওর শ্বশুড়বাড়ির লোক জেনেশুনে এমন অপয়া মেয়েকে ঘরে তুলছে?কেমন মানুষ ওরা।”
-“কেননা ওনারা আপনাদের মতো নিচু মন-মানসিকতার লোক নয়।”
কথায় আওয়াজে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে আর্মির ড্রেসে ইরাক দাঁড়িয়ে আছে।চোখগুলো পুরো লাল হয়ে আছে,বোঝা যাচ্ছে কতটা রেগে আছে।ইফাজ কোনোমতে কন্ট্রল করে আছে।ওদের সাথে ওদের মা রশ্নি আর ওদের বাবাও আছে।রশ্নি নিকির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমাদের মেয়েকে নিয়ে বাজে কথা বলছে আর তুই সেটা হজম করছিস।”
ইরাক চিল্লিয়ে ওর মাকে বলে,
-“মা কুকুরের লেজ কোনোদিন সোজা হতে দেখেছো?এগুলো ইচ্ছা করছে…”
-“আহ্ ইরাক চিল্লাস না।”
ওদের চিল্লা-পাল্লাতে সবাই ছুটে আসে।মিসেস ইশানি ইরাককে দেখে বলেন,
-“আব্বু তুই চলে আসছিস…রেগে আছিস কেনো?কী হয়েছে?”
-“আপনাদের মেয়েকে নিয়ে যা নয় তাই বলে যাচ্ছে অথচ আপনাদের কোনো খেয়াল হচ্ছেনা।অবশ্য শুনবেন কীভাবে?কানে তো তুলো দিয়ে রেখেছেন।”
হলের সবার মধ্যে পিনপিন নীরবতা কাজ করছে।কারো সাহস হচ্ছেনা ইরাকের কথার উত্তর দেওয়ার।ওইদিকে ইরাকের আওয়াজ শুনে মি.ফাতিন আর ফামাদের চার ছেলেই দৌঁড় মেরে পলিয়েছে।ইয়ারাবীর একটু ঘুমের ঝুল এসেছিলো। কিন্তু ইরাকের কন্ঠস্বর শুনে ও ফুপির কোল থেকে মাথা উঠিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখে সত্যিই ইরাক এসেছে।ইয়ারাবীর খুশি দেখেকে।সিড়িতে দাঁড়িয়ে ভাইয়া বলে জোড়ে ডাক দেয়।ইরাক ওর দিকে তাকিয়ে হাসে।ও দৌঁড়ে নেমে এসে ইরাককে জড়িয়ে ধরে।কেননা এই পরিবারের মধ্যে শুধুমাত্র হাতেগুনা কয়েকটা মানুষকে ওর কাছে পায়।ওর ওভাবে আশা দেখে ইফাজ বলে,
-“পিচ্ছি পরে যেয়ে যদি আবার আঘাত পেতিস।”
-“পরিনিতো।ভাইয়া আমিতো ভেবেছিলাম তুমি আসবেনা বিয়েতে?”
-“আমার পিচ্চির বিয়ে আর আমি আসবোনা।এখন বলতো এসব কী করে হলো।ওই ট্রাক ড্রাইভারকে পেলে সোজা ক্রস ফায়ারে দিবো।”
-“না ইরাক ,আগে আমি ওকে সমুদ্রে চুবানি দিবো।কতবড় সাহস আমার মামনিকে মারতে চাইছিলো।”
-“খালু তোমরা আমার বিয়েতে এসেছো নাকী ওর ট্রাক আলাকে খুঁজতে।”
-“আবশ্যই মামনির বিয়েতে।সরি আর বলবোনা।”
ওদের আনন্দ দেখে মিসেস ইশানির চোখে পানি চলে আসে।কয়েকবছর আগে ঠিক এমনটাই হাসি-খুসি ছিলো মেয়েটা।কিন্তু নিজেদের দোষে ……. সবাই ঠিকই বলে বিশ্বাস করা ভালো তবে অন্ধবিশ্বাস ভালো নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here