ভার্সিটির মাঠে সবার সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনু.তার অপরাধ সে এই ভার্সিটির লেকচারার আর সব মেয়েদের হার্ট থ্রোপ মি.আরাফ মোহাম্মদ স্যারকে প্রপোস করেছে তাও এমনি এমনি না বন্ধুদের ডেয়ার এর চাপে.অনু ভেবেছিলো ডেয়ার কমপ্লিট করার পর স্যারকে সবটা বুঝিয়ে বলবে .কিন্তু আরাফ কিছু শোনার আগেই রেগে এক্কেবারে বোম হয়ে যায়.আর যার ফলে অনুর এখন এই অবস্থা.অনুর এই মুহূর্তে তার বন্ধু নামক অপদার্থ গুলাকে খুঁজছে.কিন্তু কাউকেই আশে পাশে দেখছে না .রাগে তার শরীর রি রি করছে .সে মনে মনে ভাবছে ,
”কত বড় মাপের খবিস হলে মানুষ নিজের বেস্টিকে এমন বিপদের মধ্যে রেখে হাওয়া হয়ে যায়.ওই কুত্তি দুইটাকে খালি একবার পেয়ে নেই ওই চায়ের দোকানের টাকলা মামার সাথে এদের বিয়ে দিবো যাতে বিয়ে পর ওই টাকলার মাথায় তবলা বাজাতে পারে.শালা হারামি এদের জন্য আমি এইভাবে ফেঁসে গেছি.কি দরকার ছিল এমন ফালতু মার্কা একটা ডেয়ার দেয়ার .আর আমিও বা কেন এই ডেয়ার মানতে গেলাম.আল্লাহ ওই খাটাস স্যারটা না জানি আমাকে টিসি দিয়ে ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়.তাহলেতে আমার আম্মু আমাকে ডিরেক্ট কোরবানি করে ফেলবে.শয়তান স্যার আমার পুরো কথাটায় শুনলো না .হু কি একটা ভাব যেন উনার প্রেমে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি.বুঝিনা এই ধলা বিলায়ের উপর কেন মেয়েরা এতো ক্রাশ খায়.আমি ওই ধলা চামড়ার উপর ক্রাশ খাওয়ার মতো মেয়ে না.হুম যত্ত সব আজাইরা ভাব .”
কথা গুলো ভাবতেই অনুর চোখ সামনে যায়।সে তাকিয়ে দেখে আরাফ আর তাদের ভার্সিটির প্রিন্সিপাল স্যার ওর দিকেই আসছে ওদেরকে দেখা মাত্রই অনুর গলা শুকিয়ে যায় .সে মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে আরাম্ব করে ,
”হে আল্লাহ এই বারের মতো বাঁচিয়ে দাও .আর জীবনেও কোনো ডেয়ার গেইম খেলবো না প্রমিস .প্লিজ আল্লাহ .প্লিজ!”
মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে অনু .আরাফ আর প্রিসিপাল স্যার ও ধীরে ধীরে অনুর দিকে এগোচ্ছে .অনু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে মনে মনে বলে,
”এই বুঝি টিসিটা আমার হাডে ধরিয়ে দিয়ে বলবে কাল থেকে তোমাকে যেন আর এই ভার্সিটিতে না দেখি.”
অনু চোখ বন্ধ করা অবস্থায় টের পাই উনারা তার পাশ কেটে এগিয়ে গেছে.বিস্ময় নিয়ে চোখ খুলতেই প্রিন্সিপাল স্যার কিছুটা পথ গিয়ে একবার পেছনে ফেরে অনুর সামনে এসে দাঁড়ায়.তারপর অনুকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে ,
”কি ব্যাপার তুমি এখানে এইভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
অনু মনে মনে বলে ,
”দাঁড়িয়ে আছি কি আর স্বাদে আপনার গুণধর ছেলেই তো আমাকে এই শাস্তি দিয়েছে.”
কথা গুলো ভেবে অনু বোকার মতো হাসি দিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগে আরাফ বলে উঠে ,
”বাবা ওকে আমি পানিশমেন্ট দিয়েছি. আসলে ও আমার সাথে একটু বেয়াদবি করেছিল তারই শাস্তি স্বরূপ সে এখন কান ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছে.”
ছেলের কথা শুনে বাবা বলে ,
”গুরুতর কিছু করেছে কি?করে থাকলে বলো আমি স্টেপ নিবো”
স্টেপ নেয়ার কথা শুনে অনুর মুখটা আরো শুকিয়ে গেলো সে এবার নির্ঘাত কেঁদে দিবে.অনুর এই কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে আরাফের ভীষণ হাসি পাচ্ছে .আরাফ কোনোরকমে গাসি আটকিয়ে তার বাবাকে বলে ,
”না বাবা তেমন কিছু না.আমিই হেন্ডেল করে নিতে পারবো.আর এমনিতেও ও ওর ভুল বুঝতে পেরে আমাকে সরি বলেছে.তাই আর এটা নিয়ে এত ঝামেলা করার দরকার নেয়.”
আরাফের বাবা আরাফের দিকে তাকিয়ে বললো ,
”ঠিক আছে তোমার ছাত্রী তুমিই বুঝে নাও”
আরাফ তার বাবার কথা শুনে মিনমিন করে বললো
”শুধু ছাত্রী না পাত্রী ও”
আরাফ কিছু মিনমিন করে বলেছে সেটা বুঝতে পেরে অনু আরাফের দিকে ব্রু কুঁচকে তাকালে আরাফ অনুকে চোখ মারে.অনু তো পুরো শকট.আরাফ তাকে চোখ মেরেছে কিন্তু কেন.স্যারের মাথায় কি অন্য কিছু চলছে.কিন্তু সেটা কি তাই বুঝতে পারছে না সে .অনু আবারো একবার আরাফের দিকে তাকাতেই আরাফ বলে ,
”আপাদত তোমার শাস্তি মওকুফ করা হলো.এখন যাও গিয়ে ক্লাস করো”
অনু একবার বিরক্ত ভরা চোখে আরাফের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে আসে.
‘
অনু এই মুহূর্তে তার দুটো হারামি বন্ধুকে খুঁজছে .
”কই লুকিয়েছে এইগুলা.একবার পাই শুধু তাহলে তোদের একদিন কি আমার যত দিন লাগে.”
সে খুঁজতে খুঁজতে কেন্টিনে যায়.সেখানে গিয়ে দেখে কেন্টিনের একদম কোনায় ঘাপটি মেরে বসে দুজনে কি যেন বলা বলি করছে .অনু ধীর পায়ে তাদের দিকে এগিয়ে যায় যাতে করে তাদের মধ্যে কথোপকথন গুলো সে শুনতে পারে.
”দোস্ত আজকে আর আমাদের রেহাই নেয়.অনু নির্ঘাত আমাদেরকে খুন করবে ”(চোখে মুখে ভয় নিয়ে তিহা কথাটা বলে)
তিহার কথাটা শুনে পাশ থেকে রুমি দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বলে ,
”দোস্ত একবারে মেরে ফেললে তো বেঁচে যেতাম.কিন্তু অনু তো আমাদের কষ্ট দিয়ে দিয়ে মারবে.বেচারি আজ যা রেগে আছে না.আমাদের আজকেই এই পৃথিবীতে শেষ দিন.শোন আমার হতে হতে না হওয়া জামাইকে বলে দিস যেন আমি মরলে আরেকটা বিয়ে করে ফেলে.”
রুমির কথাটা শুনে তিহা চোখ মুখ শক্ত করে বলে ,
”ওই হারামি মরবি কি তুই একা!আমাকে কি অনু ছেড়ে দিবে.তোর জন্য হয়েছে সব কিছু.কি দরকার ছিল এমন একটা ডেয়ার দেয়ার!তোর জন্য আজ অনুর এই অবস্থা তার সাথে নিজে তো মরলি মরলি আমারেও সাথে নিয়ে মরলি।”
রুমি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে ,
”আমি কি জানতাম নাকি আমি বলবো আর অনুও এই ডেয়ার কমপ্লিট করতে রাজি হয়ে যাবে.”
রুমি যে হাতের নখ কাটছিলো তিহা সেই হাত ঠাস করে মুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো ,
”কেন তুই জানিস না অনু কোনো ডেয়ারেই হারতে রাজি না .যেকোনো মূল্যে সে সব ডেয়ার কমপ্লিট করে.যত্ত সব আবাল মার্কা কথা বার্তা.এখন এটা ভাব কি করে অনুকে বুঝাবি”
রুমি আবার ডান হাতটা আবার মুখে দিয়ে বলে ,
”হুম ভাবছি .তুইও ভাব”
এতোক্ষন পেছন থেকে দাঁড়িয়ে ওদের সব কথায় শুনেছে অনু.ওদের এমন ভয় পাওয়া দেখে অনুর বেশ হাসি পাচ্ছে.অনু মনে মনে ভাবলো.
”এখন হাসা যাবে না .আগে ওদের ভয়ের সুযোগ নিয়ে নেই.তারপর অন্য কিছু”
কথাটা ভেবেই অনু ওদের দুজনের মাথায় একসাথে চাটি মারে.সঙ্গে সঙ্গে দুজন ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়ায়.অনুকে দেখে দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা ঢোক গিলে একসাথে বলে উঠে .
”অনু তুই”
অনু মুখে বিরক্তি ভাব এনে বলে ,
”হুম আমি তো.তোরা কি চেয়েছিলি নাকি আমি আরো কিছুক্ষন ওভাবেই কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকি?”
তিহা আর রুমা দুজনেই একসাথে বলে উঠে ,
”না না দোস্ত এইসব কি বলিস বলতো.তুই আমাদের দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বান্ধবী তোর কষ্টটা কি আমরা দেখতে পারি বল .তাইতো আমরা দুজন প্লেন করছিলাম কিভাবে আরাফ স্যারকে বলে তোর পানিশমেন্টটা কেন্সেল করা যায়. ”
অনু দুহাত বুকের উপর ভাজ করে ব্রু উঁচিয়ে বলে ,
”ওহ আচ্ছা তাই.”
তিহা আর রুমি বোকার মতো হাসি দিয়ে একসাথে বলে উঠে ,
”হুম”
ওরা যেই না হুম বলেছে .অমনি অনু ওদের কান মলা দিয়ে ধরে বলে ,
”আমাকে কি তোদের ২ বছরের বাচ্চা মনে হয় যে আমাকে যা বুঝাবি আমিও তাই বুঝবো .তোরা এতক্ষন এখানে কি কি কথা বলেছিস তা সব কিছুই আমি শুনেছি.তাই খবরদার যদি মিথ্যে বলেছিস .এমনিতেই আমার মাথা ভীষণ গরম .তোদের এই ফাউল মার্কা ডেয়ার রাখতে গিয়ে আজ আমার মান সম্মান সব প্লাস্টিক বানিয়ে ফেলেছি .জানিস আমাকে এইভাবে দেখে সব স্টুডেন্টরা হাসা হাসি করছিলো.ইশ কি লজ্জা .মনে হচ্ছিলো পায়ের নিচের মাটিটা দুভাগ হয়ে যাক আর আমি এর মধ্যে ঢুকে যাই. কিন্তু এইসব কিছুর মধ্যে তো তোদের কোনো খবরই নেয়.বিন্দাস এখানে বসে বসে গল্প করছিস.ছি তোদের লজ্জায় মরে যাওয়া উচিত .”
অনুর কথায় রুমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে ,
”সরি রে দোস্ত আমরা জানতাম না যে ব্যাপারটা এতটা সিরিয়াস হয়ে যাবে.আমরা ভেবেছিলাম তুই ডেয়ার কমপ্লিট করার পর আমি আর তিহা গিয়ে স্যারকে বলবো যে এটা একটা ডেয়ার ছিল .কিন্তু স্যার কিছু শোনার আগেই এতটা রেগে যায় যে আমরা ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসি.তোকে একা রেখে আসার জন্য সরি রে.প্লিজ মাফ করে দে.আর কানটাও ছেড়ে দে ভীষণ লাগছে”.
অনু উঁচু গলায় বলে ,
”লাগুক.ইচ্ছে তো করছে তোদের কান গুলা ছিড়ে ফেলি.যত সব হারামির দল.বন্ধু নামের কলঙ্ক তোরা.তোদের তো কচু গাছের সাথে ফাঁসি দিয়ে মরার দরকার”
অনুর কথায় রুমি অবাক হয়ে বলে ,
”আচ্ছা দোস্ত কচু গাছের সাথে ফাঁসি দেয়া যায়”
অনু রেগে গিয়ে বলে ,
”হুম যায়. আমি যখন বলেছি তখন যায়. তোর এত বিশ্লেষন করতে হবে না.”
তিহা রুমিকে গুতা দিয়ে চুপ করতে বলে নিজে বলে .
”দোস্ত বলছি যে তুই চাইলে আমাদের যেকোনো শাস্তি দিতে পারিস আমরা মাথা পেতে নিবো.কিন্তু তাও তুই আমাদের উপর রাগ করে থাকিস না প্লিজ.”
অনু ভেবে বলে ,
”শাস্তি তাই না.হুম আজ থেকে ১ সপ্তাহ তোরা দুজন আমার কথা মতো চলবি.আর এটাই হলো তোদের শাস্তি.বুঝতে পেরেছিস”
দুজনেই একসাথে বলে,
”হুম .বুঝেছি.এবার আমাদের কানটা ছাড়.”
অনু ওদের কান ছেড়ে একটা চেয়ার টেনে বসে তারপর ওদের দিকে ঘুরে বলে,
”যা এবার আমার জন্য দু কাপ কফি নিয়ে আয়।”
তিহা আর রুমি একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলে ,
”যাচ্ছি”
তারা সেখান থেকে যেতেই অনু মনে মনে হেসে বলে ,
”সবে তো শুরু হলো তোদের শাস্তি.তোদেরকে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর মুখ্যম সুযোগটা হাত ছাড়া করা যাবে না.দেখোই না আমার জানেমানরা আগে আগে আরো কত কিছু করাই।আর ওই ধলা বিলাইটারেও আমি দেইখা নিমু.হনুমান একটা.হুম” ।
চলবে ,,,
#জীবন_সাথী💜
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
১.
(আল্লাহকে ভয় করো .পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়)
(গঠনমূলক কমেন্ট কমেন্টের আশা করছি)