জীবন সাথী💜 পর্ব-২০

0
1161

#জীবন_সাথী💜
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
২০.
~
আজ এক সপ্তাহ পর আরাফ আবার ভার্সিটিতে এসেছে।ইতিমধ্যে তাদের ঘটনাগুলো চারদিকে পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েছে;ইনফেক্ট মিডিয়াতে পর্যন্ত।কিন্তু আরাফের তাতে তেমন কিছু যায় আসে না।সে মেনে নিয়েছে তার ভাগ্যকে।যা হওয়ার তা তো হবেই অযথা এতো ভেবে কি লাভ।
.
কয়দিন ধরে অনুর মন মেজাজ ভালো নেয়।ভার্সিটিতে আসে ঠিকই কিন্তু কারো সাথে তেমন কোনো কথা বলে না।তিহা,রুমি আর রিহান অনেকবার তার মন খারাপের কারণ জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু অনু তো ওদের কিছু বলেইনি উল্টো ধমক দিয়েছে।তাই অনুর ধমকের ভয়ে এখন আর তারা কিছু জিজ্ঞেস করেনা।অনুর মন খারাপটা আরাফও খেয়াল করেছে।সেদিন কোর্ট থেকে ফেরার পর থেকেই অনু এমন চুপচাপ হয়ে আছে।আরাফের সাথেও এখন অবধি কোনো কথা বলেনি।হয়তোবা তার মনে ভীষণ অভিমান জমেছে।
.
”হুম অভিমান।অভিমান হবে না বল ওই আরাফ স্যার আমার বাবাকে ১ বছর তার কাছে আটকে রেখেছিলো।তাহলে তোরাই বল অভিমান না করে কি থাকা যায়।”
.
এইটুকু বলে আবার অনু মুখ ফুলিয়ে বসে।চোখে মুখে তার বিরক্ত ভাবটা স্পষ্ট।আজ প্রায় ১ সপ্তাহ পর অনু তার মন খারাপের কারণটা বলেছে।অনুর কথা শুনে তিহা আর রুমি একজন অন্য জনের মুখের দিকে তাকায়।তারপর দুজনেই অনুর হাতের উপর আলতো করে হাত রাখে।তারপর তিহা বলে,

”কিন্তু দোস্ত স্যার তো আর জানতো না যে আংকেল নিরপরাধ।স্যারের বাবা স্যারকে যা বলেছে স্যার ও তো তাই করেছে।এখানে স্যারের কি দোষ বল?”

তিহার কথায় ব্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায় অনু।তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
”কেন তার কি নিজের জ্ঞান বুদ্ধি নেয়।নিজেকি একটু খোঁজ খবর লাগিয়ে দেখতে পারলো না যে তার বাবার কথা কতটা সত্যি।মানছি প্রত্যেক ছেলে মেয়েই তার বাবাকে অন্ধের মতো বিলিভ করে কিন্তু আমার বাবা যখন বার বার বলছিলো যে উনি কিছু জানেন না তখন কি স্যারের একবার উচিত ছিল না যে ব্যাপারটা একবার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা তা না করে উনি ১টা বছর আমার বাবাকে আটকে রেখেছে।উনার এই ভুলের জন্যই তো আমার মাও কতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।আর তোরা বলছিস কিনা ওই লোকটার কোনো দোষ নেয়।”

”হুম তোর কথার ও যুক্তি আছে।তবে স্যারও তো উনার কৃতকর্মের জন্য কম গিলটি ফিল করছেন না।উনার কথাটাও একবার ভাব কতটা ধকল গিয়েছে উনার উপর দিয়ে এই কইদিনে।এতো কিছুর পরও কতটা স্ট্রং রেখেছে নিজেকে।দেখলে কেউ বলবে এই কয়দিন যে উনার উপর দিয়ে এতো ঝড় গিয়েছে।কিন্তু উনার মনে এই মুহূর্তই কি চলছে তা এক মাত্র আল্লাহই জানেন।আমরা বাইরে থেকে দেখলে কেউ কিছু বুঝতে পারবো না।উনার এখন ম্যান্টেলি অনেক সাপোর্ট প্রয়োজন।এমনিতেই ওনার মনে এতো কষ্ট তারউপর তুই যদি উনাকে এমন ইগনোর করিস তাহলেতো উনার আরো খারাপ লাগবে তাই না।”

তিহার কথায় অনু ব্রু উঁচিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
”তোর তো দেখছি আরাফ স্যারকে নিয়ে খুব চিন্তা।শোন তোর এতো আরাফ স্যারকে নিয়ে ভাবতে হবে না।তুই এটা ভাব যে রিহানকে তুই তোর মনের কথা কি করে বলবি।”

অনুর কথায় তিহা বিরক্তিভরা নিশ্বাস ফেলে বলে,
”উফফ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই এক কথায় বলিস কেন বলতো।আর কি কথা বলার কোনো টপিক পাসনা?”

”কেনরে তুই কি এখনো প্লেন করতে পারস নাই;কিভাবে রিহানকে প্রপোস করবি।তাড়াতাড়ি কইরা ফেল নারে দোস্ত।তারপর রিহান আর তোর দুজনের থেকেই ট্রিট নিমু।আহা কি আনন্দ!”

কথাটা বলে রুমি দাঁত কেলিয়ে হাসে।রুমির দাঁত কেলানো দেখে তিহা তো পারেনা ওর মাথার চুল ছিঁড়তে।তিহা রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
”কেন আমার কেন বলতে হবে।ওই রিহানের বাচ্চা রিহান কি বুঝে না আমি যে ওকে ভালোবাসি।অনু না বলেছে।সব কিছুই তো জানে তারপরও এমন একটা ভাব যেন সদ্য জন্ম নেয়া একটা বাচ্চা কিচ্ছু জানে না।শালা হারামি সব জেনে শুনে ইচ্ছে করে আমায় কষ্ট দেয়।”
.
কথাগুলো বলে রাগে ফুস ফুস করতে থাকে তিহা।তিহার চোখ মুখ দেখে অনু আর রুমি ফিক করে হেসে দেয়।ওদের হাসিতে যেন তিহার রাগ আরো দ্বিগুন হারে বেড়ে যায়।তিহা লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
”খুব মজা হচ্ছে তাই না।খুব মজা হচ্ছে।হুম করেন মজা আমারও সময় আসবে।হাড়ে হাড়ে শোধ তুলবো তখন।”

কথাটা বলেই বড় বড় পা ফেলে সেখান থেকে বেরিয়ে যায় সে।
.
সিঁড়ি ভেঙে তিন তালার উপর উঠছে,উদ্দেশ্য লাইব্রেরির দিকে। মনে মনে অনুর আর রুমির গুষ্টি উদ্ধার করছে।
”কতটা খারাপ এই পেত্নী গুলা।আমি রাগ করলাম কই এসে আমার রাগ ভাঙাবে তা না করে নিজেরা আরামসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।দিক তাতে আমার কি।আমিও কথা বলবো না হু!”

কথাগুলো ভেবেই তিনতলার একটা খালি রুমের পাশ দিয়ে যেতেই কেউ একজন তিহার মুখ চেপে তাকে রুমের ভেতর নিয়ে আসে।হুট করে এমন কিছু হবে তা তিহা ভাবেনি।তাই বেচারি ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।কেউ একজন তাকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে।তিহার চোখ এখনো বন্ধ।নিশ্বাস তার আটকে আসছে।ভয়ের চোটে চোখ খুলে সামনে থাকা মানুষটিকে দেখার সাহস পাচ্ছে না সে।শুধু মনে মনে ভাবছে;’কে এমন করলো।কে এভাবে তার মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছে।কি চাই সে?’
.
সামনে থাকা মানুষটি তিহার দিকে কিছুটা ঝুকে আসে।যাতে করে তার গরম নিশ্বাস তিহার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে।তিহার বুকের ধুকধুকানি বেড়ে গিয়েছে।ছোট্ট একটা ঢোক গিলে শুকনো গলাটা ভিজিয়ে নেয় সে।এবার সামনে থাকা মানুষটি তিহার কানের কাছে মুখ নিয়ে মিহি কণ্ঠে বলে,

”কি রে এতো ভয় পাচ্ছিস কেন?চোখ খোল।”

কারো পরিচিত কণ্ঠে বুকটা কেঁপে উঠে তিহার।সে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে তার সামনে রিহান দাঁড়ানো।ঠোঁটের কোণে একটা দুষ্ট হাসি ঝুলিয়ে এক দৃষ্টিতে সে তিহার দিকে তাকিয়ে আছে।রিহানকে তার এতো কাছে দেখে তিহা বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাকায়।তিহার তাকানোর স্টাইল দেখে রিহান ব্রু কুঁচকে বলে,

”এভাবে কি দেখছিস।এতো বড় বড় চোখ করে তাকালে চোখ গুলো তো বেরিয়ে আসবে।তখন সবাই কি বলবে বলতো!বলবে রিহানের বউ অন্ধ।সেটা কি ঠিক হবে বল?”

রিহানের কথা যেন তিহার মাথার উপর দিয়ে গেলো।এই ছেলে কি বলে না বলে তা তিহা কোনো কালেই বুঝে উঠতে পারেনা।তিহা কিছু একটা বলার চেষ্টা করে কিন্তু রিহান মুখ চেপে ধরে রাখায় তিহা বলতে না পেরে শুধু;’উম্ম!উম্ম !’ করে।রিহান বুঝতে পারে তিহা কিছু বলতে চাইছে তাই সে তিহার মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়।রিহান মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিতেই কয়েকটা বড় বড় শ্বাস নেয় তিহা।তারপর রিহানের দিকে তাকিয়ে সে রাগি কণ্ঠে বলে,
”এসবের মানে কি রিহান?”

”কিসের মানে?”

”এই যে আমাকে এভাবে আটকালি কেন?”

রিহান হালকা হেসে বলে,
”আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।”

তিহা ব্রু কুঁচকে বলে,
”তোর ইচ্ছে হয়েছে মানে?তোর যখন যা ইচ্ছে হবে তুই তখন তাই করবি নাকি?এতো সাহস তোকে কে দিয়েছে শুনি?”

রিহান দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,
”এই রিহান রায়হানকে কারো কাছ থেকে সাহস ধার নিতে হয়না।তার মনে এমনিতেই সাহস ভরপুর আছে।কিন্তু সাহস তো নেয় তোর।তাই তো নিজের মনের কথাটাও বলতে পারিস না।”

তিহা এবার কিছুটা চুপসে করে বলে,
”এতই যদি তোর মনে হয় আমার মনে সাহস নেয়।আমি আমার মনের কথা সাহস করে বলতে পারিনা।তাহলে তুই নিজ থেকে কেন বুঝে নিচ্ছিস না?নিজ থেকে বুঝে নিলেই তো পারিস সবটা।শুধু শুধু কষ্ট করে আমার মুখ থেকে কেন শুনতে চাইছিস?”

তিহার কথায় রিহান আবারো ওর দিকে কিছুটা ঝুকে পড়ে।রিহানের উত্তপ্ত নিশ্বাস তিহার মনের ভেতর অন্যরকম ঝড় তৈরী করে দিয়েছে।রিহানের চোখে মুখে আজ অন্য রকম এক মায়া প্রকাশ পাচ্ছে;যা এর আগে কখনো দেখিনি সে।তাহলে কি এই মায়াটা শুধুমাত্র তার জন্য।পলকহীন চোখে তিহা আর রিহান পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে।যেন চোখ দিয়েই তারা অনেক কথা বলে ফেলছে।হঠাৎ রিহান তার দৃষ্টি তিহার চোখের উপর থেকে সরিয়ে তার ঠোঁটের উপর ফেলে।তিহার গোলাপি ঠোঁট গুলো যেন এই মুহূর্তে রিহানকে খুব করে টানছে।তিহাও রিহানের দৃষ্টি অনুসরণ করে বুঝতে পারে যে রিহান তার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে।রিহানের এই দৃষ্টি স্বাভাবিক না।তার গাঢ় কালো চোখ গুলোতে আজ এক অন্য রকম মাদকতা দেখতে পাচ্ছে সে।তিহা বুঝতে পারছে আর বেশিক্ষন এভাবে থাকলে রিহান কোনো বড় ভুল করে ফেলবে।রিহানের সেই অদ্ভুত দৃষ্টি তারই প্রমান দিচ্ছে।তাই তিহা কিছু না ভেবেই রিহাকে জোরে একটা ধাক্কা দেয়।যার ফলে রিহান তার থেকে কিছুটা দূরে সরে যায়।তিহার ধাক্কায় রিহানের ঘোর কাটে।সে বুঝতে পারছে এতক্ষন সে ঘোরের মধ্যে ছিল।শুষ্ক ঠোঁট গুলো জিভ দিয়ে হালকা করে ভিজিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায় রিহান।আর তিহা হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রিহানের চলে যাওয়া দেখে।রিহানের হঠাৎ কি হলো বুঝতে পারেনা সে।তবে তার বুকের ধুকধুকানিটা এখনো রয়ে গেছে।সে মনে মনে একটু আগের কথা গুলো ভাবছে রিহানের এতটা কাছে আসা তিহার মনে আজ এক অন্য রকম অনুভুতির জন্ম দিয়েছে।তিহা চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নেয়।তারপর সে ও সেখান থেকে বেরিয়ে পরে।
.
ভার্সিটি শেষে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে অনু।কিন্তু বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো রিকশা না পেয়ে অনুর এবার ভীষণ রাগ হচ্ছে।’কি সমস্যা আজ এই রাস্তায় একটাও রিক্সা নেয় কেন?সব রিক্সাওয়ালারা কি এক সঙ্গে মঙ্গল গ্রহে গিয়েছে নাকি।যে একজনেরও দেখা মিলছে না।’সূর্যের এই কড়া রোদে দাঁড়িয়ে থেকে কথা গুলো ভাবছে সে।তখনি তার সামনে এসে একটা রিকশা থামে।রিক্সাটাকে দেখে অনুর মুখে হাসি ফুটে উঠে।তবে এই হাসিটা বেশিক্ষন স্থায়ী হয়নি।রিকশায় বসা মানুষটিকে দেখে অনুর মুখটা আবারো মলিন হয়ে যায়।অনু বিরক্তি নিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরায়।

”রিকশায় উঠো অনু।এইসময় এইদিকে তেমন কোনো রিকশা পাবে না।তাই এখানে দাঁড়িয়ে রোদে পোড়ার চেয়ে আমার সাথে চলো।আফটার অল একজায়গায়তো যাবো দুজন।”

অনু বিরক্তি নিয়ে বলে,
”না স্যার আপনি যান।আমি অন্য কোনো রিকশা নিয়ে চলে যেতে পারবো।”

অনুর কথায় আরাফ হালকা হেসে বলে,
”অনু আজ ভার্সিটি তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে তাই এই ভরদুপুরে তুমি কোনো রিকশা পাবে না।তাই এখানে অযথা দাঁড়িয়ে থেকে কি লাভ বলো?”

অনু কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিকশার মামা বলে,
”জ্বী আফা সবাই এখন খাইতে গেছে;আমার বাড়ি ও এইদিক দিয়া।মামা কইলো মামাও নাকি এইদিক দিয়াই যাইবো তাই ভাবলাম এক রাস্তায় যেহেতু তাই মামারে নামাই দিয়াই বাড়িত যামু।আপ্নেও আয়া পড়েন;নাইলে অনেকক্ষন আপ্নেরে রিকসার জন্য দাঁড়ায় থাকতে হইবো।”
.
অনু এবার কনফিউশনে পড়ে যায় কি করবে?যাবে কি যাবে না।এই মুহূর্তে যেমন এই রোদের মধ্যেও সে দাঁড়িয়ে থাকতে চাইছে না তেমনি সে এখন এক রিকশা দিয়ে আরাফের সাথে যেতেও চাইছে না।কি করে যাবে রিকশার সিট যে ছোট থাকে তাতে করে দুজন মানুষের শরীর একদম লেগে থাকে।এভাবে আরাফের সাথে বসে যেতে হবে ভাবতেই অনুর বেশ অস্বস্থি লাগছে।অনুকে চুপচাপ কিছু ভাবতে দেখে আরাফ তার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

”এই যে মেডাম!কি এতো ভাবছেন।আমি তো আর আপনাকে কিডনাপ করতে চাইছি না।তাহলে এতো কিসের চিন্তা আপনার?দয়া করে রিকশাতে উঠে পড়ুন।আমাদের নামিয়ে দিয়ে উনাকে ও তো উনার বাসায় যেতে হবে তাই না।শুধু শুধু আমাদের জন্য উনার লেইট হচ্ছে।”
অনু এবার কিছু একটা ভেবে রিকশায় উঠে পরে।
.
অনু আর আরাফের মাঝখানের দুরুত্ব দেখে মনে হচ্ছে এই ফাঁকে বেশ ভালো করেই একটা হাতির জায়গা হয়ে যাবে।ব্যাপারটা আরাফের কাছে বেশ বিরক্ত লাগছে।অনু এমন একটা ভাব দেখাচ্ছে যেন আরাফের সাথে হালকা করেও যদি তার শরীর লাগে তাহলে বোধ হয় তার শরীর পুড়ে যাবে।আরাফ কিছুক্ষন চুপ থেকে হালকা গলা ঝেড়ে বলে,
”অনু একটু চেপে বস।নয়তো হঠাৎ ব্রেক কষলে পরে যাবে।”

অনু অন্যদিকে ফিরে বলে,
”না স্যার।সমস্যা নেয় পরবো না।”
.
আরাফও আর কিছু না বলে সামনে ফিরে তাকায়।কিছুটা যাওয়ার পর রিক্সাটা একটা স্পিড ব্রেকার পার হতে যায়। তখনি অনু তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলেই আরাফ এক হাত দিয়ে পেছন থেকে তার কোমর জড়িয়ে ধরে তার খুব কাছে নিয়ে আসে।তার পর রাগি দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,
”খুব তো বলছিলে পরবো না।এক্ষনি তো না পরে গিয়ে বারোটা বাজতো।উফফ বুঝি না মেয়েদের এতো জেদ কোথ থেকে আসে।যদি এখন পরে যেতে না,তাহলে তুলতাম ও না এখানেই ফেলে রেখে চলে যেতাম।”
.
কথাটা বলে আমার সামনে দিকে ফিরে তাকায় আরাফ।আর অনু এখনো এক দৃষ্টিতে আরাফকে দেখে যাচ্ছে।তার হালকা বাদামি চোখ গুলো রাগের কারণে কিছুটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে।আরাফের গালের চাপ দাড়িতে যেন অনুর নজর আটকে যায়।ইশশ!কি কিউট দাড়িগুলো।অনুর ইচ্ছে করছে দাড়ি গুলোতে হালকা করে হাত বুলিয়ে দিতে।সূর্যের প্রগাঢ় আলোতে আরাফের ফর্সা গায়ের রংটা যেন আরো চকচক করছে।তার সাথে হাওয়ায় উড়ন্ত তার অগোছালো চুলগুলিকেও যেন আজ অনুর কাছে সব থেকে সুন্দর লাগছে।আরাফের পরনে সাদা শার্ট আর কালো পেন্টটা তার সৌন্দর্যতাটা কে যেন খুব নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।এই মানুষটা আসলেই অনেক সুন্দর।এখন অনু বুঝতে পারছে কেন এই আরাফ মোহাম্মদ ভার্সিটির মেয়েদের হার্ট থ্রোপ।তার এর ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য দিয়ে তিনি যে কাউকে নিমেষেই ঘায়েল করে দিতে পারবে।কথাগুলো ভাবতেই অনুর মনে কিছুটা হিংসে জন্মে।সে তো আরাফের মতো সুন্দর নয়।আরাফের একটু সৌন্দর্য কি আল্লাহ তাকে দিতে পারলো না।তাহলে হয়তোবা আরাফ তাকে একটু পছন্দ করতো।কথা গুলো ভেবেই নিজের উপরই ভীষণ অবাক হয় অনু।সে এসব কি ভাবছে।আরাফের পছন্দের পাত্রী হতে চায় সে।না না একটু বেশিই ভেবে ফেলছে সে।কথা গুলো ভেবে ছোটো একটা নিশ্বাস ফেলে তার কোমর থেকে আরাফের হাতটা সরিয়ে নিতে গেলে আরাফ আরো শক্ত করে অনুর কোমর জড়িয়ে ধরে।অনু এবার অবাক দৃষ্টিতে আরাফের দিকে তাকায়।কিন্তু আরাফের এতে কোনো হেলদোল নেয়;সে তো এক দৃষ্টিতে বাইরের প্রকতি দেখে যাচ্ছে।আর এইদিকে আরাফের ছোয়ায় অনুর সারা শরীরে অন্য রকম শিহরন দিয়ে যাচ্ছে।অস্বস্তিতে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে সে।আরাফ একবার আড় চোখে অনুকে দেখে বুঝতে পারে অনুর অস্বস্থিটা।তাই সে হালকা করে তার হাতটা পেছন থেকে সরিয়ে আনে।আরাফ হাত সরিয়ে নিতে অনু সস্থির নিশ্বাস ফেলে।তা দেখে মুচকি হাসে আরাফ।

চলবে…
(আল্লাহকে ভয় করো;পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়)
{আসসালামু আলাইকুম।আজ অনেক বড় করে দিয়েছি পর্বটা।তাই প্লিজ সকলে গঠনমূলক কমেন্ট করো ওকে 😊}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here