#জীবন_সাথী💜
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
২১.
~
কফির মগটা হাতে নিয়ে আরাফের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনু।আজ আর দরজায় নক করতে ভুলবে না সে।সেদিন একবার নক না করে ঢুকে বেচারির মনটা ভীষণ অগুছালো হয়ে গিয়েছিল তাই আজ আর এই একই ভুল করবে না।তাই সে ছোট্ট করে দরজার মধ্যে দুটো টোকা দেয়।কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সারা শব্দ না আসায়;এবার সে দরজার মধ্যে একটু জোরে আওয়াজ করে বলে,
”স্যার আসব?”
ভেতর থেকে আরাফ স্বাভাবিক গলায় বলে,
”হুম আস।”
অনু ধীর পায়ে আরাফের রুমে প্রবেশ করে।আরাফ তখন বেডের সাথে হেলান দিয়ে বই পড়ছিলো;অনু কফির মগটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
”স্যার কফি”
আরাফ বইয়ের দিকেই চোখ রেখে বলে,
”হুম পাশে রেখে দাও।”
অনু কফির মগটা রেখে চলে আসতে নিলেই আরাফ মিহি কণ্ঠে ডেকে উঠে,
”অনু”
আরাফের মিহি কণ্ঠের ডাক শুনে থমকে যায় অনু।কেমন যেন এক অন্য রকম অনুভূতি আছে এই ডাকে।এর আগেও তো আরাফ কতবার অনু বলে ডেকেছে কিন্তু এমন অদ্ভুত ফিলিংস আগে কেন আসেনি তার।তবে আজ কেন এমন লাগছে!পেছন থেকে আরাফ আবারো ডেকে উঠে,
”অনু কথা ছিল তোমার সাথে!”
অনু এবার ফিরে তাকায়;তারপর হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে,
”কি কথা স্যার?”
আরাফ বেড থেকে উঠে অনুর কিছুটা কাছে এসে দাঁড়ায় তারপর তার চোখের উপর কোমল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
”আসলে আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই;তবে আজ না কাল।সময় আছে তো তোমার কাছে আমার কথা শুনার মতো?”
আরাফের কথায় অনু চিন্তায় পড়ে যায়;কি এমন কথা বলতে চায় আরাফ স্যার!অনু কিছু একটা ভেবে বলে,
”আচ্ছা স্যার।”
অনুর সম্মতিতে আরাফের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো যা খুব ভালোভাবেই অনুর চোখে দৃষ্টিগোচর হলো।আরাফের এই মৃদু হাসিটাও অনুর কাছে আজ ভীষণ ভালো লাগছে।অনু মুগ্ধ নয়নে একবার সেই হাসিটার দিকে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।
.
রাত ১১:০০টা,,
খাবার টেবিলে একসাথে সবাই খেতে বসেছে।না চাইতেও অনুর অবাধ্য চোখ গুলো বার বার আরাফের উপর পড়ছে।আগে তো এমন হতো না তবে এখন কেন সে আরাফের দিকে এভাবে তাকায়;নিকের কাজে নিজেই ভীষণ বিরক্ত সে।হালকা ব্লু কালারের একটা টি শার্ট পড়েছে আরাফ আর তার সাথে ব্লেক কালারের একটা টাওজার।সিলকী চুলগুলো কপালের উপর এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে।তার হালকা গোলাপি ঠোঁট গুলো খাবার চিবানোর তালে তালে নড়ে উঠছে।খাবার খাওয়ার মাঝখানেই মাঝে মাঝে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে হালকা হেসে আবার তার পি.এর সাথেও কথা বলছে।অনু এক লোকমা মুখে দিচ্ছে তো আবার আড় চোখে আরাফকে দেখছে।কেন জানে না আরাফকে এখন আর অনুর কাছে আগের মতো বিরক্ত লাগে না।হুম তবে আরাফের উপর ভীষণ অভিমান আছে তার।আরাফের জন্যই তো এক বছর সে তার বাবার কাছ থেকে দূরে ছিল;যদিও আরাফ জেনে বুঝে কিছু করেনি তা ও অনু আরাফকে এত সহজে ক্ষমা করবেনা।আগে তো এই ধলা বিলাইরকে একটা শাস্তি দিতে হবে তারপর মাফ করাকরি;কথাটা ভেবে মনে মনে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আবার খাবার খাওয়াই মনোযোগ দেয় অনু।
.
খাওয়া শেষে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায় অনু।এই সময়টা তার ভীষণ প্রিয়।এই অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশটা ভীষণ ভালো লাগে তার।আর ওই রাস্তার পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছটা সেটা তো অনুর কাছে একটা নেশার খোরাক।অদ্ভুত নয়নে ২ জোড়া চোখ গাছটাকে দেখে যাচ্ছে।এই ২ জোড়া চোখের দৃষ্টিই যেন গভীর।
আরাফের চোখের পাতায়ও আজ ঘুম নেয়।অনুদের বাসায় আসা পর থেকে সেও এই কৃষ্ণচূড়া গাছের মায়ায় পড়ে গেছে।তাই সে ও অনুর মতো প্রতি রাতে এই গাছের মাদকতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
.
ক্যান্টিনের মধ্যে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে রুমি।আর ঠিক সামনে বসে তিহা আর অনু তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তারা বুঝতে পারছে না যে এই রুমির আবার কি হলো!রুমি তো এমন মুখ ফুলিয়ে রাখার মেয়ে না।কিছু হলে তো চিল্লাচিল্লি করে পুরো মাথা গরম করে ফেলে এই মেয়ের এমন মুখ ফুলিয়ে বসে থাকাটা কিছুতেই স্বাভাবিক লাগছেনা অনু আর তিহার কাছে।নীরবতা ভেঙ্গে অনু বলে,
”এই রুমু সোনা তোমার আজ কি হয়েছে গো।এমন পাংকাশ মাছের মতো মুখ ফুলিয়ে বসে আছো কেন?”
অনুর কথা শুনে রাগে কটমট করে তার দিকে তাকায় রুমি।রুমির এমন চাহনি দেখে অনু দাঁত কেলিয়ে বলে,
”ও বাবা কি ভয়ানক চাহনি গো।আমার তো ভয়ের চোটে এক্ষনি হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।”
কথাটা বলে অনু বুকে হাত দিয়ে অসহায়ের মতো রুমির দিকে তাকায়।রুমি বুঝতে পারছে অনু যে তাকে নিয়ে মজা করছে তাও সে কিছু না বলে চুপচাপ মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।রুমিকে এখনো চুপচাপ বসে থাকতে দেখে অনু এবার একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,
”এই রুমু আসলে বলনা কি হয়েছে তোর?তুই তো এমন চুপচাপ থাকার মেয়ে না।হঠাৎ কি হলো বলতো যে এমন মুখে কুরু পেতে বসে আছিস?”
রুমি এখনো চুপ।তিহা এবার রেগে গিয়ে বলে,
”উফফ রুমি।বলবি তো কিছু!এমন করে হেবলা কান্তের মতো মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলে আমরা কি করে বুঝবো যে তোর কি হয়েছে।দয়া করে বল।”
রুমি এবার ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলে,
”আব্বু আম্মু আমার বিয়ে ঠিক করেছে”
রুমির কথা শুনে অনু আর তিহা একসাথে চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,
”কিইই..”
ওদের চিৎকারে আশেপাশে মানুষ গুলো একবার ওদের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে এখানে কি হচ্ছে।কিন্তু কিছু বুঝতে না পেরে সবাই আবার যার যার কাজে মনোযোগ দেয়।অনু আর তিহা তো এখনো বড় বড় চোখ করে রুমির দিকে তাকিয়ে আছে।যেন তারা বুঝতে পারছে না যে রুমি কি বলেছে।অনু অবাক হয়ে বলে,
”এসব কি বলছিস দোস্ত!তোর বিয়ে?কবে;কখন;কার সাথে?”
রুমি এবার চোখ পাকিয়ে অনুর দিকে তাকায়।অনুর তো চোখে মুখে কৌতূহল উপচে পড়ছে।রুমি আবার ও ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে,
”ওই যে আমার মামাতো ভাই ফাহাদ আছে না ওর সাথে।”
ফাহাদের কথা শুনে অনু আর তিহার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দিয়ে উঠলো।তিহা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
”ওয়াও দেটস গ্রেট।তোর ক্রাশের সাথেই তো তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে তাহলে এমন পেঁচার মতো মুখ করে বসে আছিস কেন?তোর জায়গায় আমি থাকলে তো এতক্ষনে খুশিতে নাগিন ডান্স দিতাম।”
তিহার কথা শুনে অনু বলে,
”ঠিকই তো।তিহা তো একদম ঠিক বলেছে;তুই না একবার ফাহাদ ভাইয়ের ছবি দেখিয়ে বলেছিলি এটা তোর ক্রাশ তাহলে এখন যখন তোর তার সাথেই বিয়ে ঠিক হয়ে থাকে তাহলে তুই খুশি হচ্ছিস না কেন?”
.
তিহা আর অনুর কথায় ভীষণ বিরক্ত রুমি।বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এসেছে তার।পানির বোতল থেকে এক ঢোক পানি খেয়ে সোজা হয়ে বসে রুমি।তারপর অনু আর তিহার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
”আমি তোদের কি বলেছি!বলেছি যে ফাহাদ ভাইয়া আমার ক্রাশ;কিন্তু আমি কি একবার বলেছি যে আমি ওই বেটার বউ হতে চাই!ক্রাশ খাইলেই যে বউ হইয়া গলায় ঝুইলা পড়তে হইবো এগ্লা তোদের কে কইছে।”
.
রুমির কথা শুনে অনু আর তিহা হতভম্ব।যেখানে মানুষ তার ক্রাশকে বিয়ে করার অন্য কত কিছু করে সেখানে এই মেয়ে এতো বড় একটা সুযোগ পেয়েও এটা হাত ছাড়া করছে।এই মেয়ের মাথায় নিশ্চই গন্ডগোল আছে।নয়তো দুদিন আগেও যে ফাহাদ ভাই ফাহাদ ভাই করে মাথা খেত সেই ফাহাদ ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও এ খুশি না।কথাগুলো ভেবে খুব বিরক্ত হয় অনু।অনু ব্রু জোড়া কুঁচকে বলে,
”তোর মতো এলিয়েনের দ্বারা সবই সম্ভব ।আচ্ছা এখন বলতো;বিয়েটাতে তোর সমস্যা কি?”
রুমি মুখ ফুলিয়ে বলে,
”আমি ওই কুমড়ো পটাশ নিরামিষটাকে বিয়ে করবো না।”
রুমির কথায় অনুর ব্রুযুগল আরো কিছুটা কুঞ্চিত হয়।রুমির কথার মানে সে বুঝতে না পেরে সে তাকে জিজ্ঞেস করে,
”মানে?কি বলছিস তুই?”
”আরে বাবা আমি ওই ফাহাদ ভাইয়ের কথা বলছি।ভাইরে ভাই এনার মতো এমন রস কস হীন মানুষ আমি আজ অবধি দেখিনি।বেটা খাটাশ একটা আজ অবধি কোনোদিন আমার দিকে ভালো করে তাকায়নি পর্যন্ত।কত যে শাড়ি পরে উনার সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করতাম শুধু একটু এটেনশন পাবো বলে কিন্তু বেটাতো একটা অন্ধ;চোখ তুলে তাকায়নি পর্যন্ত আমার দিকে।আর তুই বলছিস এই নিরামিষটারে বিয়ে করে আমি আমার জীবনটারেও নিরামিষ বানিয়ে ফেলি।জীবনেও না;”
রুমির কথায় অনু স্বাভাবিক গলায় বলে,
”দেখ রুমু ভাইয়া বোধ হয় এমনি।উনি মনে হয় উনার সমস্ত ভালোবাসা উনার বউয়ের জন্য জমিয়ে রেখেছে।তাই হয়তোবা বিয়ের আগে কোনো মেয়েকে পাত্তা দেয়নি।”
অনুর কথায় রুমি বিরক্তি নিয়ে বলে,
”হুম বলসে তোরে!বেশি বুঝস না।আমি খুব ভালো করে জানি ওই বেটা বিয়ের পরও আমাকে পাত্তা দিবে না।আমার অমন নিরামিষ মার্কা জামাই চায় না।আমার তো একটা রোমান্টিক জামাই লাগবে।যার সাথে সারাদিন রোমান্স করতে পারবো।”
দাঁত কেলিয়ে ভেটকাতে ভেটকাতে লাস্টের কথাটা বললো রুমি।আর এইদিকে অনু আর তিহা রুমির কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে সেটাই বুঝতে পারছেনা।অনু কিছু একটা ভেবে বলে,
”আচ্ছা ফাহাদ ভাইকে তো আমি আর তিহা সরাসরি দেখিনি।তুই বরং উনার সাথে আমাদের একবার দেখা করিয়ে দে।”
রুমি ব্রু কুঁচকে বলে,
”কেন দেখা করে কি করবি।”
তিহা অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
”বা রে আমাদের রুমু সোনাকে যে বিয়ে করছে তাকে আগে থেকে আমাদের চিনে রাখতে হবে না।আফটার অল আমাদের জিজু বলে কথা।তাই না অনু?”(অনুর দিকে তাকিয়ে)
অনুও হেসে বলে,
”হুম একদমই তাই।এখন রুমু বলতো কখন দেখা করাবি?”
ওদের কোথায় রুমি ব্রু কুঁচকে কিছু একটা ভেবে বলে,
”না তোদের সাথে দেখা করানো যাবে না।তোরা নিশ্চিত আমার নামে উল্টা পাল্টা কিছু বলবি;পরে আমাকে এর জন্য বাশ খেতে হবে।”
”আরে না রুমু আমরা তোর নামে কেন কিছু বলতে যাবো।আমরা জাস্ট একটু গল্প করবো।আমাদেরও তো জানতে হবে আমাদের জিজুটা কেমন!তাই না!তুই বরং এক কাজ কর আজকেই বাসায় গিয়ে ফাহাদ ভাইকে আমাদের কথা বলবি বুঝতে পেরেছিস?”
রুমি বিরক্তি নিয়ে বলে,
”তুই এমন ভাবে বলছিস মনে হয় ফাহাদ ভাই আমার বাসায় বসে আছে।”
”আরে বাসায় গিয়ে কল দিয়ে বলবি।আমরা কালই দেখা করবো উনার সাথে।আর এটাও বলে দিস আমাদের সাথে দেখা করতে আসার সময় অনেক চকলেট আর আইস-ক্রিম নিয়ে আসতে।”
.
অনুর কথা শুনে রুমি খুব বিরক্ত হচ্ছে।কিন্তু কিছু তো করার নেয়।বান্ধবী জাতটাই এমন সব ব্যাপারে যেমন তোমাকে পচাতে ওস্তাত তেমনি আবার বিপদে পড়লে সেই বান্ধবীর জন্য নিজের জান দিতেও প্রস্তুত।
রুমিকে চুপ থাকতে দেখে অনু বলে,
”কিরে ভাইয়াকে বলবি তো?”
রুমি ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে
”আচ্ছা ঠিক আছে।”
.
রুমির কথায় অনুর আর তিহার মুখে খুশির ঝিলিক দেখা দেয়।
.
ভার্সিটির বাইরে বড় আম গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আছে অনু।রোদ্রের তাপে এই গাছটার ছায়ায় নিচে দাঁড়িয়ে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে সে।এক দৃষ্টিতে রাস্তার ব্যাস্ত গাড়ি গুলোকে দেখছে।ভার্সিটির শেষে সবাই যার যার মতো বাড়ি ফিরছে।অনুও ফিরত তবে কোনো এক অজানা কারণে সে এখানে দাঁড়িয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করছে।অনু একবার ঘাড় ঘুরিয়ে ভার্সিটির গেটটার দিকে তাকালো।কিন্তু কাউকে বের হতে না দেখে মন খারাপ করে একটা খালি রিকশাকে ডাক দেয়।রিকশা আসার পর;অনু যেই মাত্র রিক্সায় উঠতে যাবে তখনি কেউ একজন পেছন থেকে অনুর হাত টেনে ধরে;অনু কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে পেছনে ফিরে দেখে আরাফ তার হাত টেনে ধরেছে।ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি।অনু অবাক হয়ে বলে,
”স্যার আপনি?”
এতক্ষন যাবৎ অনু আরাফের জন্যই অপেক্ষা করছিলো।কিন্তু এখন আরাফকে দেখে এমন একটা ভাব দেখাচ্ছে যেন সে ভীষণ অবাক হয়েছে।আসলে সে আরাফকে বুঝতে দিতে যায় না যে সে আরাফের জন্য এতক্ষন অপেক্ষা করছিলো।অনুর প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে আরাফ রিকশাওয়ালাকে বলে,
”মামা আপনি চলে যান।ও আমার সাথে যাবে।”
কথাটা বলে আরাফ অনুর হাত ধরে নিয়ে গিয়ে তার গাড়ির সামনে দাঁড় করায়।তারপর গাড়ির সামনের দরজাটা খুলে বলে,
”যাও ভেতরে গিয়ে বসো।”
অনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
”স্যার আপনি কি আপনার বাসায় গিয়েছিলেন?গাড়ি কোথ থেকে আসলো?”
”না আমি যাইনি ড্রাইভারকে বলে আনিয়েছি।”
আরাফের কথায় অনু ছোটো করে বলে,
”ওহ!”
”হুম এবার গাড়িতে গিয়ে বসো।”
অনু আর কিছু না ভেবে গাড়িতে উঠে বসে।অনু বসতেই আরাফও গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
.
অনুদের বাড়ির রাস্তা পার হতেই অনু বলে উঠে,
”স্যার আমাদের বাসার রাস্তা তো পার হয়ে যাচ্ছেন।”
আরাফ কিছু না বলে আপন মনে ড্রাইভিং করে যাচ্ছে।অনু একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরাফের দিকে তাকায়;বোঝার চেষ্টা করছে আরাফের মনে কি চলছে।অনু এবার বাইরে তাকিয়ে দেখে ডান দিকে একটা রাস্তা যেটা গ্রামের ভেতর দিয়ে গেছে আরাফ গাড়িটাকেও সেদিকে ঘুরিয়ে নেয়।অনু আবারো অবাক হয়ে বলে ,
”স্যার এটা তো গ্রামের রাস্তা।আমরা এই রাস্তা দিয়ে কোথায় যাচ্ছি?”
আরাফ এখনো কিছু বলছে না।অনুর তো এবার ভীষণ বিরক্ত লাগছে।এই ধলা বিলাই ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছে না।পরোক্ষনে আবার ভাবে;”স্যার যে আমাকে কি বলবে বলেছিলো;তাহলে কি সেটা বলার জন্যই আমাকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।আচ্ছা কি এমন বলবে যেটা বাসায় বলা যায় না অন্য কোথাও গিয়েই বলতে হবে!খুব ইম্পরট্যান্ট কিছু!’
অনুর ছোট্ট মাথাটা কিছুতেই এই জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারছে না।আরাফও কিছু বলছে না দেখে অনু বিরক্ত নিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টিপাত করে মনে মনে বলে,
”যেখানে মনে চায় নিয়ে যাক;আমার কি আমি বরং আরামসে পরিবেশটা এনজয় করি”
কথাটা বলে জানলার সাথে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
চলবে..
(আল্লাহকে ভয় করো;পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়)