#জীবন_সাথী💜
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
২৩.
~
সকালে রোদের কোমল আলোটা চোখে পড়তেই ধীরে ধীরে চোখ খুলে অনু।আস্থে আস্থে উঠে বসে সে;মাথাটা কেমন ভার ভার লাগছে।সেই যে কাল সন্ধ্যায় ঘুমিয়েছে এতক্ষনে তার ঘুম ভাঙলো।রাতে খাবারের জন্য রাহেলা বেগম অনেক ডেকে গিয়েছে কিন্তু অনুর ঘুমের কাছে উনার সমস্ত ডাকই হেরে গিয়েছে।অনু বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়;সূর্যের ঝলমল আলোতে কৃষ্ণচূড়ার গাছের ফুল গুলোও জ্বলজ্বল করছে।সেই ফুলগুলোর দিকে একমনে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবে অনু;সাথে সাথে তার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি একটা হাসি ফুটে উঠে।তারপর অনু প্রাণ ভরে একটা নিশ্বাস নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।
.
”কিরে মা কাল রাতে কত ডাকলাম খাওয়ার জন্য তুই তো উঠলিই না।”
খাবার টেবিলে বসে পারভেজ সাহেব অনুকে বললো।অনু হালকা হেসে জবাব দিলো,
”আসলে বাবা আমি এমন গভীর ঘুমে ছিলাম যে আমাকে যে কেউ ডাকছে সেটাই আমি টের পাইনি।তো উঠবো কি করে বলো!”
”হুম বুঝেছি ঘুম পাগলী মেয়ে আমার।”
বাবার কথায় অনু হালকা হাসলো।তারপর একবার আড় চোখে আরাফের দিকে তাকালো।ভার্সিটিতে যাবে বলে একেবারে রেডি হয়ে খেতে বসেছে।পরনে অ্যাশ কালারের শার্টটা আরাফের সৌন্দর্যতার সাথে একেবারে মিশে গিয়েছে।ইশ!এমন একটা হালকা রঙেও যে কারোর সৌন্দর্য এতো নিখুঁত ভাবে ফুটে উঠে তা অনুর জানা ছিল না।অনুর কাছে এখন এই অ্যাশ কালারটাকে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর রং মনে হচ্ছে।এই মানুষটা এত কেন সুন্দর।অনুর ইচ্ছে করছে আরাফের পরিপাটি করা চুলগুলো এলোমেলো করে দিতে।আরাফের শার্টের সামনের দুটো বোতাম খোলা থাকায় আরাফের বুকের খানিকটা পশম দেখা যাচ্ছে।এটা দেখা মাত্র কেন জানি অনুর রাগ হলো।এইভাবে ভার্সিটির যাওয়ার কি আছে।এমনি তো মেয়েরা আরাফের জন্য হাপিত্যেশ করে মারা যাচ্ছে তার উপর এভাবে বোতাম খুলে গেলে তো মেয়েরা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে।আর ওই যে উনার পশম গুলা উঁকি ঝুঁকি মারছে এই গুলো অন্য কোনো মেয়ে হা করে দেখবে তা কোনোভাবে চায় না অনু।অনুর তো এখন ইচ্ছে করছে আরাফের শার্টের সব গুলো বোতাম লাগিয়ে দিতে একেবারে কলারেরটা সহ;তারপর আরাফের ওই সিল্কি চুলগুলোতে ভালো মতো সরিষার তেল দিয়ে মাঝখানে একটা সিঁথি তুলে মাথা আঁচড়িয়ে দিতে।অনু মনে মনে ভাবে আচ্ছা এমন ভাবে ভার্সিটিতে গেলে কেউ আর তখন স্যারের দিকে তাকাবে না।কারণ স্যারকে তো তখন একেবারে কেরামতের মতো লাগবে।কথাটা ভাবতেই অনু হাসতে আরাম্ভ করে;কিন্তু খাওয়ার মাঝখানে অনুর এমন বোকা মার্কা হাসি দেখে সবাই ফ্যালফ্যাল চোখে তার দিকে তাকায়।সবার এমন চাহনি দেখে অনু হাসি বন্ধ করে একদম স্ট্যাচু হয়ে যায়।তারপর আবার দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিয়ে নিজের খাওয়াই মনোযোগ দেয়।বাকিরাও কেউ কিছু না বলে যার যার মতো খাওয়া শুরু করে।
.
.
”অনু এই অনু শোননা তোর সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।”
রিহানের ডাকে পেছনে ফিরে তাকায় অনু।মাত্রই ভার্সিটির গেটে পেরিয়ে ভেতরে এসেছে অনু।আরাফই নিয়ে এসেছে।অনুকে গেইটের সামনে নামিয়ে দিয়ে আরাফ আরাফের কেবিনে চলে যায়।রিহানের ডাকে অনু দাঁড়িয়ে পরে।তারপর স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,
”কি বলবি বল।”
রিহান অনুর সামনে এসে দাঁড়ায় তারপর একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে,
”অনু আমি তিহাকে ভালোবাসি।”
রিহানের কথায় অনু বড় বড় চোখ করে রিহানের দিকে তাকায়।যেন রিহানের কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তার।কি করে বিশ্বাস হবে কয়দিন আগেও যে ছেলে অনুর পিছে এভাবে ঘুরঘুর করতো সে এত তাড়াতাড়ি বদলে যাবে ভাবেনি অনু।তবে মনে মনে এটা ভেবে খুশি যে রিহান তিহার ভলোবাসাটা বুঝেছে।অনু ঠোঁটের কোণে একটু হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে ,
”সিরিয়াসলি!”
রিহান হেসে বলে,
”হুম।”
”আচ্ছা কিভাবে তিহার ভালোবাসা ফীল করলি শুনি!আমি যেদিন বলেছিলাম সেদিন তো আমাকে অনেক কিছু বলেছিলি;তো এখন বুঝেছিস তো তিহা তোকে কতটা ভালোবাসে!”
অনুর কথার প্রতিউত্তরে রিহান ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর অনুর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
”চল তোকে আজ কিছু কথা বলবো ।”
অনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
”কি কথা?”
”আগে ক্যান্টিনে চল তারপর বলছি।”
”কিন্তু ক্লাস আছে তো এখন আর তিহা আর রুমিও নিশ্চই আমার জন্য ক্লাসে অপেক্ষা করছে।”
অনুর কথায় রিহান বিরক্ত হয়ে বলে,
”উফফ!!একদিন ক্লাস না করলে কিচ্ছু হবে না।তোর এই ক্লাসের চেয়ে আমার কথা বেশি ইম্পরট্যান্ট।বুঝতে পেরেছিস এখন চল”
কথাটা বলে রিহান অনুর হাত ধরে টেনে ক্যান্টিনের দিকে নিয়ে যায়।অনু বুঝতে পারছে না রিহান কি বলবে।তবে এইটুকু বুঝেছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু না হলে এভাবে বলতো না।তাই অনুও আর কিছু না বলে রিহানের সাথে ক্যান্টিনের ভেতর গিয়ে একটা খালি টেবিলের সামনে বসে পরে,
”হুম তো বল।কি বলবি?”
আরাফ আর রিহান মুখোমুখি বসা।রিহান চেয়ারের সাথে হালকা হেলান দিয়ে বসে;তারপর তার ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে হালকা হেসে বলে,
”তুই কি জানিস তিহা যে আমাকে ভালোবাসে এই কথাটা আমি আরো আগেই জানতাম।তখন তুই ও জানতি না কিন্তু আমি ঠিকই জেনে গিয়েছিলাম।”
আরাফের কথায় অনু বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
”মানে?তুই আগে থেকেই কি করে জানলি?”
রিহান এবার স্বাভাবিক গলায় বলে,
”ওর ডাইয়েরই পড়ে।একবার তিহার বেঞ্চের নিচ থেকে আমি একটা ডায়েরি পেয়েছিলাম;সেটা অনেক দিন আগে প্রায় ৮ কি ৯ মাস হবে।হয়তোবা ব্যাগ থেকে কিছু বের করতে গিয়ে ভুলবশত এটা নিচে পড়ে যায়।ডায়েরির উপর তিহার নামটা দেখে খুব অবাক হলাম।এই মেয়েটাও ডায়েরি লিখে;ভাবলাম হয়তোবা যে কথাগুলো ও আমাদের বলতে পারে না সেই কথা গুলোই ডায়েরিতে লিখে রাখে।কিছু একটা ভেবে তখন ডাইরিটা খুললাম।প্রথম প্রায় অনেক গুলা পাতায় খালি।কিছু লেখা নেয়;তারপর আরো বেশ কয়েকটা পাতা যাওয়ার পর সেই হলদেটে পাতাটার উপর ভালোবাসি রিহান লেখাটা আমার চোখের উপর জ্বলজ্বল করে উঠলো।লেখাটা দেখা মাত্র কিছুক্ষন আমি স্তম্ভিত ছিলাম।আদৌ আমি ঠিক কি ভুল দেখছিলাম বুঝতে পারছি না।কিছু বুঝতে না পেরে আমি তার পরের পাতাগুলো উল্টালাম।সেখান থেকেই শুরু হলো আমাকে নিয়ে লেখা।কেউ যে তার আবেগ অনুভূতিগুলো ডাইরির পাতায় এতো নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে তা আমি তিহার ডাইরিটা না দেখলে বুঝতে পারতাম না।ও আমাকে কখন থেকে পছন্দ করতে শুরু করে;কখন ওর মনে আমার প্রতি ভালোবাসার জন্ম নেয় তা সব কিছুই ও সেই ডাইরিতে লিখে রেখেছে।আমি ডাইরির যতটা পাতা পড়ছিলাম ততই অবাক হচ্ছিলাম।তিহা যে আমাতে এতো ডুবে থাকে তা ওই ডাইরিটা পড়েই বুঝে ছিলাম।এই গম্ভীর মেয়েটার মনেও যে আমার প্রতি এত ভালোবাসা জমানো তা সত্যিই ওই ডাইরিটা না পড়লে বুঝতামই না।তখন কেন জানি আমার কাছে সব কিছু অন্য রকম লাগছিলো।সেই অন্যরকম ফিলিংসটা ধীরে ধীরে ওর প্রতি ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে।আর ওই ডাইরিটা এখনো আমার কাছে আছে।খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছি;সময় সুযোগ মতো ওকে ফিরিয়ে দিবো।”
রিহানের কথা শেষ হতে অনু ঢোক গিলে।মনে হচ্ছে এতক্ষন রিহান যা বলেছে অনু বসে বসে সবটা গলাধঃকরণ করেছে।অনু ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলে,
”ভাইরে ভাই এতো কাহিনী। আর আমরা কেউ কিছু জানতামই না।আচ্ছা তো একটা কথা বল তুই যদি এটা এত আগে থেকে জানতি যে তিহা তোকে ভালোবাসে তাহলে তুই তারপরেও কেন আমার পেছনে পড়ে থাকতি?”
রিহানের চোখে মুখে এখন অন্যরকম উৎসাহ প্রকাশ পায়;রিহান এবার সোজা হয়ে বসে বলে,
”তার দুইটা কারণ।প্রথমটা হলো তিহার মনে আমার প্রতি ভালোবাসাটা পাকাপোক্ত করা।কারণ তিহা যত আমাকে তোর পিছে ঘুরঘুর করতে দেখবে;তিহার মনে আমাকে হারানোর ভয়টাও তত গভীর হবে আর তখন ওর মনে আমার প্রতি ভালোবাসাটাও আরো প্রগাঢ় হবে।কারণ আমি বিশ্বাস করি মানুষ সেই মানুষটাকে হারানোর ভয় পায়;যাকে সে সব থেকে বেশি ভালোবাসে।এবার দ্বিতীয় কারণটা বলি।তবে দ্বিতীয় কারণটা শুনার আগে তুই চেয়ারের হাতলটা শক্ত করে ধরে বস।কারণ বলা তো যায় না শুনার পর যদি তুই চেয়ার সহ উল্টিয়ে পড়ে যাস।”
রিহানের কথা শুনে অনু ব্রু কুঁচকে বলে,
‘কি এমন কথা শুনি যেটা শুনার পর আমাকে একদম চেয়ার থেকেই পড়ে যেতে হবে!”
রিহান ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলে,
”এক্ষনি বুঝতে পারবি।আচ্ছা তো মেডাম আপনি কি জানেন আমাদের ভার্সিটির সব থেকে ড্যাশিং হেন্ডসাম চার্মফুল ছেলে দ্যা ওয়ান এন্ড অনলি আরাফ মোহাম্মদ স্যার আপনাকে ভালোবাসে?”
রিহানের কথায় অনু এতো বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাকায় মনে হচ্ছে তার চোখ গুলো এক্ষনি কোটর থেকে বেরিয়ে পরবে।পরক্ষনেই অনু চোখ মুখ শক্ত করে রিহানকে বলে,
”তোর কি মাথা খারাপ কি বলছিস এসব ?”
রিহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
”যেটা সত্যি সেটাই বলছি।আমি যেহেতো একটা ছেলে তাই অন্য কোন ছেলে তোর দিকে কোন নজরে তাকায় তা আমি বেশ বুঝতে পারি।সেই প্রথম দিন দেখেই আরাফ স্যার তোর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো তা স্যারের চাহনি দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম।তারপর কবে ১০০ পার্সেন্ট সিউর হলাম জানিস যেদিন স্যার কিছু লোক পাঠায় আমাকে ভয় দেখানোর জন্য।আমাকে যারা মেরেছিলো তারা যে স্যারের লোক সেটা আমি প্রথমে বুঝে যায়।আর স্যার ওদের পাঠিয়েছিল আমাকে শুধু একটু ধমকিয়ে ছেড়ে দেয়ার জন্য কিন্তু আমিই ইচ্ছে করে ওদের সাথে মারপিট করি।অবশ্য সেটারও একটা কারণ আছে।সেটা পরে বলছি।আগে বলি ওই লোকগুলো যে স্যার পাঠিয়েছে সেটা কি করে বললাম।তো সেদিন যে আমি তোকে সিঁড়ির সামনে পথ আটকিয়ে যে কথা গুলো বলি সেই সব গুলোই শুধু মাত্র স্যারকে শুনানোর জন্য বলি।আমি আগে থেকে দেখছিলাম স্যার এদিক দিয়ে আসছে;তাই ইচ্ছে করে স্যারকে শুনিয়ে শুনিয়ে তোকে ওই কথা গুলো বলেছিলাম শুধু মাত্র স্যারের রিএকশনটা দেখার জন্য;স্যার যে তোকে ভালোবাসে সেটা সিউর হওয়ার জন্য।আর আমার সেই আইডিয়াটা কাজও করে।স্যার যে তোকে ভালোবাসে এটা আমি ১০০ এ ২০০ পার্সেন্ট সিউর।আর এখন কথা হলো আমি তাহলে সেদিন ইচ্ছে করে কেন মার খেতে গেলাম।আসলে আমি ভেবেছিলাম তিহা আমাকে অসুস্থ জর্জরিত হয়ে হসপিটালে পরে থাকতে দেখে দুঃখে কষ্টে সে তার ভালোবাসার কথাটা আমাকে বলে দিবে।কিন্তু তোর ওই পেত্নী বান্ধবীটার জন্য আমি হুদাই কেলানিটা খেলাম কোনো লাভ হয়নি।এতো কষ্ট করেও ওর মুখ থেকে কিছুই বলাতে পারিনি।তাই ওকে রাগানোর জন্য ইচ্ছে করে ওর সামনে তোর সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলি।আর এই হলো পুরো ঘটনা। তো এবার বুঝলি তো পুরো ব্যাপারটা?”
.
অনু ব্রু কুঁচকে রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখে মুখে তার অবাধ বিস্ময়।রিহানের বলা কথা গুলোকে তার ব্রেন এখন বিশ্লেষন করছে।বেশ কিছুক্ষন নীরবতা কাটিয়ে অনু বলে,
”তোর পুরো কথায় আমার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে।কিছুই বুঝেনি আমি।”
অনুর কথা শুনে রিহানের এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে।’সারারাত রামায়ণ পরে সকালে উঠে জিজ্ঞেস করে সীতা কার বাপ’ অনুর অবস্থাটাও এখন সেই টাইপ।রিহান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
”কেন বুঝতে পারিসনি?আমি কি জাপানি ভাষায় কথা বলছিলাম এতক্ষন,যে বুঝতে পারিসনি।আমি বলেছি যে আরাফ স্যার তোকে ভালোবাসে;আর আমি ভালোবাসি তিহাকে।”
”কিহহহহ!!!”
পেছন থেকে কারো চিৎকারে পেছন ফিরে তাকায় অনু আর রিহান।পেছনে তাকিয়ে দেখে তিহা আর রুমি বড় বড় চোখ করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।তিহাকে দেখা মাত্রই রিহান বলে উঠে,
”যা শুনে নিলো সব।”
রুমি আর তিহা দৌড়ে এসে দুটো চেয়ার টেনে তাদের দুপাশে বসে পরে।তারপর অবাক চোখে একবার রিহানকে আর অনুকে দেখে বলে,
”কি বলছিলি তোরা?”
”বলছিলাম যে আরাফ স্যার অনুকে ভালোবাসে আর আমি তিহাকে ভালোবাসি।”
রিহানের এমন সোজাসাপ্টা কথা শুনে তিহা আর রুমি অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যায়।তিহা তো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা ।বার বার ওর কানে বাজছে আমি তিহাকে ভালোবাসি। রুমি এবার ঘাড় ঘুরিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে বলে ,
”অনু বান্ধবী এসব কি?রিহান এসব কি বলে?আসলেই আরাফ স্যার তোকে লাভ করে?”
অনু ক্ষেপে গিয়ে বলে,
”হুম তোর কানে তো শুধু এটাই গেছে;রিহান যে আরো একটা কথা বলছে সেটা তো শুনিসনি।”
অনুর কথায় রুমি দাঁত কেলিয়ে বলে,
”না সেটাও শুনেছি রিহান যে তিহাকে ভালোবাসে।আহা সব দিকে তো দেখি ভালোবাসার ছড়াছড়ি।তিহা আর রিহান মিলে হয় তিহান;অনু আর আরাফ মিলে হয় অনুরাফ;উফফ দেখিছিস দোস্ত তোদের কাপল নেইম গুলা কি সুন্দর মিলেছে।”
”হুম।রুমি আর ফাহাদ হয় রুহাদ এটাও সুন্দর মিলেছে।”
দাঁত চেপে বলে উঠে অনু।অনুর কথা শুনে রুমি ব্রু কুঁচকে বলে ,
”না অতটা মিলেনি।আচ্ছা এসব বাদ দিয়ে আসল কথা বল।তোর আর আরাফ স্যারের মধ্যে কি চলছে।”
রুমির কথা শুনে অনু রাগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিহান বলে উঠে ,
”আরে রুমু আমাদের আরাফ স্যার অনুকে ভালোবাসে কিন্তু এই কথা তো অনু কোনো ভাবেই বিলিভ করছে না।”
”কিন্তু তুই কি করে বুঝলি?”
ব্রু কুঁচকে বলে তিহা।
”তুই যে আমাকে ভালোবাসিস সেটা যেভাবে বুঝছি এটাও ঠিক সেভাবেই বুঝেছি।”
রিহানের কথায় তিহা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।অনু ক্ষুব্দ দৃষ্টিতে তিন জনের দিকে তাকিয়ে বলে,
”দেখ তোরা ভুল ভাবছিস।আরাফ স্যার কোন দুঃখে আমাকে ভালোবাসতে যাবে।দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পড়ছে;যে উনি আমার প্রেমে পড়বে।আমি জানি উনি আমাকে ভালবাসে না।তাই এসব আজাইরাকথা বলা বন্ধ কর।”
এইটুকু বলে থেমে যায় অনু;তারপর কিছু একটা ভাবে সে তার প্রতিফলন তার চোখে মুখে খুশির আভা দেখা যায়।তবে সে সেটা ইগনোর করে তাদের উদ্দেশ্য করে বলে,
”প্রথম ক্লাসটা মিস গেছে এই রিহানের সব ফালতু কথা শুনে আর এখন এখানে বসে থাকলে পরের ক্লাসটা ও মিস যাবে।আমি ক্লাসে গেলাম তোরাও আয়।”
কথাটা বলে অনু সেখান থেকে চলে যায়।অনু চলে যেতেই তিহা বলে উঠে,
”ইশ আজ যদি অনুর জায়গায় আমি থাকতাম তাহলে আমি তো খুশিতে আত্মহত্যা করতাম।”
”তারপর আমি তোকে কবর থেকে তুলে এনে ইচ্ছে মতো থাপড়াইতাম।”
রিহানের রাগি কণ্ঠের কথা শুনে তিহা চুপসে যায়।পরক্ষনেই সে যখন ভাবে রিহানও তাকে ভালোবাসে তখন সে আলতো চোখে একবার রিহানের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে রুমিকে নিয়ে ক্লাসের উদ্দেশে চলে আসে।রিহানও তাদের পেছন পেছন ক্লাসে যায়।
.
চলবে..
(আল্লাহকে ভয় করো;পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়)
{আসসালামু আলাইকুম!গল্পটা কেমন লাগছে তোমাদের?ভালো খারাপ যেমনি লাগে সেটা কমেন্টে জানিও।আর আমার ভুল ত্রুটি গুলিও ধরিয়ে দিও।ধন্যবাদ😊}