#জীবন_সাথী💜
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
২৬.
~
মুখ ফুলিয়ে আরাফের গাড়িতে বসে আছে অনু।আরাফ আড় চোখে একবার অনুকে দেখে গাড়ি স্টার্ট দেয়।অনুর নাম্বার দিয়ে লোকেশন ট্রেক করে আরাফ বুঝে যায় যে অনুরা হাতির ঝিল আছে।আরাফও সেখানে যায়;তারপর সেখান থেকে এক প্রকার জোর করে অনুকে নিয়ে তার গাড়িতে তুলে।আরাফের কর্মকান্ডে অনু তো একেবারে রেগে মেগে বোম্ব হয়ে আছে।আর তাদের দুজনকে দেখে রিহান,তিহা আর রুমি মুচকি মুচকি হাসছিলো।
.
গাড়িটা অনুদের বাসার সামনে এসে থামে।অনু গাড়ি থেকে নামতে গেলে আরাফ তার বাম হাতটা চেপে ধরে।আরাফ তার হাত ধরায় অনু চমকে উঠে আরাফের দিকে তাকায়।অনু তাকাতেই আরাফ কপাল কুঁচকে বলে,
”কোথায় যাচ্ছ?”
আরাফের প্রশ্নে অনুর আরো বেশি রাগ হচ্ছে;বাসার সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে তো সে কি বাসায় না গিয়ে মঙ্গল গ্রহে যাবে;অদ্ভুত প্রশ্ন!অনু তার রাগটাকে দমিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,
”বাসায় যাবো।”
”না আগে আমার কথা শুনবে তারপর!”
অনু ব্রু কুঁচকে বলে,
”কি কথা?”
আরাফ পেছনের সিট থেকে একটা শপিং ব্যাগ অনুর কোলের উপর রেখে বলে,
”নাও এটা খুলে দেখো?”
অনু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে বলে,
”কি আছে এতে?”
”খুলেই দেখো না কি আছে।”
.
অনু একবার আরাফের দিকে তাকিয়ে শপিং ব্যাগটা একটু আলগিয়ে দেখে এটার মধ্যে একটা শাড়ি রয়েছে।অনু বেশ অবাক হয়ে শাড়িটা ব্যাগটা থেকে বের করে।গাঢ় নীল রঙের শাড়িটা;নিচের দিকে কালো রঙের পার দেওয়া।শাড়িটা দেখেই অনুর মুখে আনমনেই হাসি ফুটে উঠে।ব্যাগের মধ্যে আরো একটা জিনিস আছে;অনু সেই পেকেটটা বের করে দেখে তাতে এক গুচ্ছ নীল চুরি।চুড়িগুলো দেখা মাত্র অনুর যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠে;সঙ্গে সঙ্গে সে পেকেট খুলে সব গুলো চুরি হাতে পড়ে নেয়।ভীষণ রকম দুর্বলতা কাজ করে অনুর চুরির উপর।অবশ্য সব মেয়েদেরই চুরি বলতেই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠে।অনু ও তার বিপরীত না।চুরি পেলে মহা খুশি সে।আরাফ অবাক চোখে অনুর সেই হাস্যজ্জল মুখটা দেখে যাচ্ছে।সামান্য কয়টা চুরিতেই মেয়েটা কত্ত খুশি।অনু বেশ কিছুক্ষন যাবৎ হাত নাড়িয়ে চাড়িয়ে চুরি গুলো দেখে হঠাৎ সে গম্ভীর হয়ে আরাফের দিকে তাকিয়ে বলে,
”এগুলো কার স্যার?”
অনুর প্রশ্নে আরাফ বিরক্তিকর চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,
”এতক্ষন যাবৎ এগুলো নিয়ে লাফালাফি করে এখন জিজ্ঞেস করছো এগুলো কার ?”
আরাফের কথা শুনে অনুর বেশ অস্বস্থি লাগছে।সত্যিই তো আরাফের পুরো কথা না শুনে অনুর এইভাবে লাফালাফি করা ঠিক হয়নি।এখন যদি আরাফ বলে এগুলো অন্য কারো জন্য এনেছে তাহলে তো সে অনেক লজ্জায় পড়ে যাবে।অনু অসহায় দৃষ্টিতে আরাফের দিকে তাকাতেই আরাফ বলে,
”এইভাবে তাকানোর কিছু নেয়।এগুলো তোমার জন্যই এনেছি।”
আরাফের কথা শুনে অনুর তো খুশির শেষ নেয়।আরাফ তার জন্য শাড়ি আর চুরি এনেছে;ভাবতেই পারছে না সে।অনুর খুশি যেন আর ধরে না।সে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
”সত্যি স্যার এগুলো আমার জন্য?”
আরাফ বাঁকা হেসে বলে,
”হুম তোমার জন্য।তবে এগুলো এমনি এমনি দেয়নি।এর পেছনে খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে।”
অনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
”কি কারণ স্যার।”
আরাফ তার সিটটার সাথে হেলান দিয়ে বসে।তারপর ঠোঁটের কোণে একটা বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে,
”তোমাকে এই শাড়ি আর চুরি পড়ে আমাকে প্রপোস করতে হবে।”
অনু বড় বড় চোখ করে আরাফের দিকে তাকিয়ে বলে,
”কি!!স্যার আপনি এইসব কি বলছেন?”
আরাফ এখনো খুব স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে।মুখে এখনো সেই বাঁকা হাসি ফুটে আছে।
”আজ তুমি আমার ক্লাস না করে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে গিয়েছো।তাও কোথায়;হাতির ঝিল।কি সাহস!আর কালকে তুমি আমাকে চিমটি দিয়েছো না;সেটার কথা ও তো পি.এ কে বলেনি।ভাবছি আজ পি.এ কে সবটা বলবো।কি বলো?”
অনুর হাসি খুশি মুখটা আরাফের এই শান্ত কণ্ঠের থ্রেট শুনে চুপসে যায়।সে ঠোঁট ফুলিয়ে আরাফকে বলে,
”স্যার সব কথার মাঝে বাবাকে টেনে না আনলে হয়না।”
”হুম আমিও তো চাই যে সব ব্যাপারে পি.একে টেনে আনতে।তুমি যদি গুড গার্লের মত আমার কথা শুনো তাহলে আমিও পি.এ কিছু বলবো না।আর এই এক বছর তুমি আমার সাথে কম বেয়াদবি করোনি।আর তুমি তো আগেও আমাকে প্রপোস করেছিলে।সেটাও পি.এ কে বলতে হবে।পি.এ জানুক তার মেয়ে তার অনুপস্থিতে কত কিছু করেছে।”
আরাফের কথা শুনে অনু কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,
”স্যার!”
অনুর মুখ দেখে আরাফের খুব হাসি পাচ্ছে।তবে এখন হাসলে ওর সব প্লেন পপার্ট হয়ে যাবে তাই সে কোনোরকম হাসিটা দমিয়ে বলে,
”এখানেই শেষনা।যদি তুমি চাও যে আমি পি.এ কে কিছু না বলি তাহলে তোমাকে আমার আরো একটা কথা শুনতে হবে আর সেটা হলো;তুমি নিজের মুখে পি.একে গিয়ে বলবে যে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও।”
আরাফের কথা শুনে এবার তো অনুর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।বলে কি স্যার সে তার বাবাকে গিয়ে বলবে যে;সে আরাফকে বিয়ে করতে চায়!!ও খোদা এই লোকটা তো দেখি আমাকে মেরে ছাড়বে।কথা গুলো ভাবতেই অনুর হঠাৎ মনে হলো;আরাফ তাকে বিয়ের কথা বলতে বলেছে তার মানে আরাফ তাকে বিয়ে করতে চায়!কথাটা ভেবেই অনুর ঠোঁট জোড়া হালকা প্রসারিত হয়।সে ভারী কণ্ঠে আরাফকে বলে,
”স্যার আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে চান।”
”আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই কি চাই না সেটা তোমার না জানলেও চলবে আগে আমি যা বলেছি তাই করো।আর আমার কথা না শুনলে আমি সত্যিই তোমার নামে পি.এর কাছে বিচার দিবো।তারপর সব শুনে পি.এ নিশ্চই তার মেয়েকে আদর করে বুকে টেনে নিবে না বরং আমার তো মনে হয় উনি অনেক কষ্ট পাবেন তার মেয়ের এমন ব্যবহারের কথা শুনে।”
আরাফের এমন শক্ত গলার কথা শুনে অনুর মনের উল্লাসটা ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে যায়।অনু মিনতির স্বরে বলে,
”প্লিজ স্যার বাবাকে কিছু বলবেন না।আমি আপনার কথা মতো না হয় এই শাড়ি চুরি পড়ে প্রপোস করলাম কিন্তু বাবাকে গিয়ে বিয়ের কথা বলা ইম্পসিবল।প্লিজ স্যার বুঝার চেষ্টা করুন।”
অনুর কথায় আরাফের মধ্যে কোনো ভাবগতিক হলো না।সে তার সিদ্ধান্তে অটুট।আরাফ স্বাভাবিক গলায় বলে,
”ঠিক আছে কাল তুমি আমায় এই শাড়ি চুরি পড়ে প্রপোস করবে।ঠিক যেভাবে একটা ছেলে একটা মেয়েকে করে;হাটু গেড়ে আমার সামনে বসে হাতে গোলাপ ফুল নিয়ে আমাকে প্রপোস করতে হবে।আর হ্যাঁ অবশ্যই সেই প্রপোসটা তোমার সেই বিচ্ছু ফ্রেন্ডদের সামনে করতে হবে।আর রইলো বিয়ের কথা সেটা ভাবার জন্য তোমাকে ২ দিন সময় দিলাম।এর মধ্যেই তোমাকে যা বলার বলতে হবে নয়তো আমিই পি.এ সব বলবো।আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছো।”
আরাফের সব কথা শুনে অনুর এই মুহূর্তে একটা গানের কথা মনে হচ্ছে;
”আমি ফাইসা গেছি;আমি ফাইসা গেছি
আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায়।”
.
অনুকে নিশ্চুপ দেখে আরাফ আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতরে চলে যায়।আর বেচারি অনু বসে বসে ভাবে;”ভেবেছিলাম ওই ধলা বিলাইরে আমি নাকানিচুবানি খাওয়াবো কিন্তু উল্টো তো ওই ধলা বিলাই আমাকে নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছে।এখন আমি কি করবো রব তুমি একটা উপায় দেখাও।”
উপরের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে অনু,তারপর সেও গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতরে যায়।
.
সারাটাদিন ভীষণ অস্থিরতায় কাটায় অনু।কালকে কি করে সে আরাফকে প্রপোস করবে;আর আরাফা কি সত্যিই সিরিয়াস হয়ে অনুকে সবটা বলেছে নাকি শুধুমাত্র অনুকে শাস্তি দেয়ার জন্য এতো কিছু করতে বলেছে তা কিছুতেই বুঝতে পারছে না সে।রাতের খাওয়া শেষে বিছানায় শুয়ে শুয়ে এসবই ভাবছে।আচ্ছা কাল যদি সে আরাফকে প্রপোস করে তাহলে কি আরাফও সেটা একসেপ্ট করে নিবে?কি জানি!!ভাবতে ভাবতে বিরক্ত হয়ে গেছে অনু।সাথে আরাফের উপরও ভীষণ রাগ হচ্ছে তার।এইভাবে তার মতো এত নিরহ বাচ্চাকে দিয়ে এত কিছু করানোর কোনো মানে হয়।কথা গুলো ভেবেই চোখ মুখ কুঁচকে আসে তার।তবে এই মুহুর্তে ভীষণ ঘুমও পাচ্ছে তার তাই আর কিছু না ভেবে সে উল্টো দিকে মুখ ফিরিরে ঘুমিয়ে পড়ে;
.
সকালে,,
আরাফের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছে অনু।কিন্তু আরাফকে দেখতেই পাচ্ছে না।হঠাৎ পেছন থেকে অনুর বাবা বলে উঠলো,
”কিরে মা এখানে কি করছিস?”
বাবার কথায় চমকে পেছনে ফিরে অনু।তারপর ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে,
”বাবা আরাফ স্যার কি রুমে নেয়?”
”না তো মা আরাফ তো আরো আগেই ভার্সিটিতে বেরিয়ে গেছে।”
আরাফ আজ ও তাকে না নিয়েই চলে গিয়েছে কথাটা ভাবতেই অনুর মনটা খারাপ হয়ে যায়।সে ছোট্ট করে বলে,
”ওহ আচ্ছা।”
কথাটা বলে অনু আর সেখানে না দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে আসে।তারপর কিছু একটা ভেবে আলমারি থেকে আরাফের দেওয়া শাড়ি আর চুরিটা বের করে;শাড়িটা নিজের শরীরের সাথে লাগিয়ে আয়নায় নিজেকে খুন মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে।তারপর কিছু একটা ভেবে সে তার রুমের দরজাটা আটকিয়ে শাড়িটা পড়তে আরাম্ভ করে।শাড়ি পড়া শেষে অনু হাতে সেই নীল চুরি গুলো পড়ে তারপর চোখের নিচে হালকা করে কাজল দেয়।তাপর পেছনের চুলগুলোতে একটা খোঁপা বেঁধে অবাক চোখে নিজেকে দেখতে থাকে অনু।কেন যেন আজ তার ভীষণ লজ্জা লজ্জা লাগছে।আচ্ছা তার এই সাজটা আরাফের পছন্দ হবে তো?নিজের মনে প্রশ্ন করে আবার নিজেই উত্তর দিয়ে বলে;হুম অবশ্যই হবে।আমাকে তো কম সুন্দর লাগছে না।উম্ম অনু তুই তো দেখছি নিজেকে নিজেই নজর লাগিয়ে দিচ্ছিস।মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ!এইটুকু বলেই অনু নিজের কর্মকান্ডের কথা ভেবে হাসতে আরাম্ভ করে।অনু দরজাটা খুলতে যাবে তখনি তার ফোনটা বেজে উঠে;অনু ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রিহান কল দিচ্ছে;অনু কলটা রিসিভ করতে ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে রিহান বলে উঠে,
”দোস্ত কই তুই?”
”আমি তো বাসায় কেন কি হয়েছে?তোর ভয়েসটা এমন শুনাচ্ছে কেন?সব ঠিক আছে তো?”
”না অনু কিচ্ছু ঠিক নেয়।আরাফ স্যার বিয়ে করতে যাচ্ছে।জানিস তুই?”
”কি!কি বলছিস তুই?মাথা কি খারাপ হয়ে গিয়েছে?”
”আরে আমি ঠিক বলছি মাত্রই স্যার কল দিলো স্যারের বিয়ের জন্য একজন সাক্ষী প্রয়োজন তাই আমাকে কাজী অফিসে যেতে বলেছে।আর আমি তা শুনে সাথে সাথেই তোকে কল দিলাম তুই জানিস কিনা।”
অনুর এখন কি বলা উচিত কিছুই বুঝতে পারছে না।আদৌ কি রিহানের কথা সত্যি কিনা সেটাও বুঝতে পারছে না সে।অনু নিজেকে শক্ত করে বলে,
”আচ্ছা আমাকেও নিয়ে চল।আমিও দেখি স্যার কাকে বিয়ে করছে।”
”আচ্ছা তুই তোর বাসার সামনে দাঁড়া আমি আসছি।”
এতটুকু বলে কল কেটে দেয় রিহান।আর অনু হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সত্যি কি আরাফ কাউকে বিয়ে করছে?কিন্তু কেন সে তো অনুকে ভালোবাসে তাহলে হুট্ করে এমন বিয়ের সিদ্ধান্ত কেন নিলো সে?অনুর মাথায় কিছুই ঢুকছে না।শুকনো গলায় কয়েকবার ঢুক গিলে বাসার বাইরে গিয়ে রিহানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে।
.
কাজী অফিসে ঢুকতেই থমকে যায় অনু।একপাশে চেয়ারে একটা অফহুয়াট কালারের পাঞ্জাবি পড়ে বসে আছে আরাফ আর তার ঠিক পাশের চেয়ারটায় লাল শাড়ি পড়ে বড় ঘোমটা টেনে একটা মেয়ে বসা।তার মানে সত্যিই স্যার বিয়ে করতে চলছে।কথাটা ভাবতেই আনমনেই অনুর গাল বেয়ে দু ফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ে।
চলবে..
(আল্লাহকে ভয় করো;পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়)
{গঠনমূলক কমেন্টের আশা করছি😊}