জীবন সাথী💜 পর্ব-২৭

0
994

#জীবন_সাথী💜
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
২৭.
~
আরাফকে এইভাবে দেখে অনু যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।চোখ থেকে তার অনবরত পানি পড়ে যাচ্ছে।শেষে কিনা আরাফ স্যার তাকে ঠকিয়েছে।অনু যেন এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে অনু তার চোখের পানি মুছে ধীর পায়ে আরাফের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।তার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে কি ভয়ানক রেগে আছে।অনু নিজের রাগটা আর কন্ট্রোল করতে না পেরে আরাফের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে আরাফকে চেয়ার থেকে দাঁড় করায়।তারপর সে চিৎকার করে বলতে থাকে ,

”কেন স্যার?কেন করলেন এমন?যদি অন্য একটা মেয়েকেই বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল তাহলে আমাকে কেন ভালোবাসার কথা বলেছিলেন?আপনি কি ভেবেছেন সেদিন যে ওই বিলের সামনে দাঁড়িয়ে আপনি বলেছিলেন যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন সেটা আমি বুঝতে পারেনি!ভুল ভেবেছেন আপনি; আমি বুঝতে পেরেছিলাম;তারপর কাল ও তো আপনি বলেছেন এই শাড়ি আর চুরি পড়ে আপনাকে প্রপোস করতে;আর বাবাকেও আমাদের বিয়ের কথা বলতে।আমি তো এসেছি দেখুন আপনার দেওয়া এই নীল শাড়ি আর চুরি পড়ে।আপনার জন্য সেজেছিও।আর আপনি কিনা এইখানে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করছেন।কেন আরাফ স্যার?কেন?”
.
এইটুকু বলে অনু কান্নায় ভেঙে পড়ে ।আরাফের কলার ছেড়ে দিয়ে তার থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে দেয়াল ঘেসে নিচে বসে পড়ে অনু।তার চোখের পানি অনবরত বয়েই চলছে।অনুর এমন অবস্থা দেখে রিহানও বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অনু যে আরাফকে এতটা ভালোবাসে সেটা তার ধারণা ছিলনা।কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও যার মধ্যে বিন্দুমাত্র ভাবান্তর হলো না সে হলো আরাফ।সে খুব শান্ত দৃষ্টিতে অনুকে দেখে যাচ্ছে।যেন সে আগে থেকেই জানতো এমন কিছু হবে।আরাফ ধীর পায়ে এসে অনুর সামনে বসলো।অনু তখনও হাঁটুতে মুখ গুঁজে কেঁদে চলছে।আরাফ আলতো করে অনুর মাথায় হাত বুলালে অনু মাথা তুলে তার দিকে ক্ষুব্দ দৃষ্টিতে তাকায়।কিন্তু আরাফের দৃষ্টি এখনো খুব শান্ত।অনু দাঁতে দাঁত চেপে বলে ,
”কি ব্যাপার এখন কি আসছেন আমাকে শান্তনা দিতে।”

কথাটা বলে অনু তার মাথার উপর থেকে আরাফের হাতটা এক ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দেয়।তারপর আবার সে রাগি কণ্ঠে বলে,
”এখনো আমার সামনে বসে আছেন কেন?যান তাড়াতাড়ি বিয়ে করুন।আমার বউ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।তাড়াতাড়ি যান।”
.
অনুর কথা শেষ হতেই আরাফ উঠে দাঁড়ায়।অনু এখনো ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে।আরাফ সেই মেয়েটার চেয়ারের সামনে দাঁড়াতেই সেই মেয়েটা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।তারপর মাথা থেকে ঘোমটাটা ফেলে আরাফকে বলে,
”স্যার আমার কাজ তো হয়ে গেছে।এবার আমার টাকাটা দিয়ে দিন আমি এখান থেকে চলে যায়।”

মেয়েটার কথা শুনে অনু তার দৃষ্টি সুচের মতো তীক্ষ্ণ করে মেয়েটার দিকে তাকায়।মেয়েটার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না সে।কিন্তু আরাফ সেই মেয়েটার কথা মতো তাকে কিছু টাকা দিয়ে দিলো।মেয়েটাও টাকা পেয়ে খুশি হয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো।অনুর তো সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।অনু এবার উঠে আরাফের সামনে এসে দাঁড়ায়।তারপর তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
”এসব কি স্যার?মেয়েটা আপনার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে গেলো কেন?”

অনুর কথায় আরাফ এক গাল হাসলো।আরাফের হাসিতে তার গালে ভাঁজ পড়ে;অনু মুগ্ধ দৃষ্টিতে আরাফের গালের দিকে তাকিয়ে আছে।অসম্ভব সুন্দর লাগে তার কাছে আরাফের এই গালে ভাঁজ পড়া হাসিটা।কিন্তু এই মুহূর্তে সে এই হাসির সৌন্দর্যে ডুবতে চায় না তাই সে নিজেকে আবার শক্ত করে বলে,
”কি হলো স্যার;আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হাসছেন কেন?”

এতক্ষন ধরে কান্না করার দরুন অনুর চোখের কাজলটা চোখের আশেপাশে লেপ্টে গিয়েছে।আরাফ তা দেখে মুচকি হেসে অনুর কাছে গিয়ে তার সেই লেপ্টে যাওয়া কাজলটা মুছে দেয়।তারপর অনুকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়।আরাফের কোনো কাজই অনু বুঝতে পারছে না।অনুর এবার ভীষণ বিরক্ত লাগছে।তখন থেকে অনু এতো প্রশ্ন করে যাচ্ছে অথচ আরাফ কিছুই বলছে না।চায়ছেটা কি এই লোকটা?আরাফকে এখনো নিশ্চুপ দেখে অনু এখন একটু জোরেই চিৎকার করে বলে,
”কি হলো স্যার?আপনি কিছু বলছেন না কেন?কি হচ্ছে এইসব?কিছুই তো বুঝতে পারছি না।চুপ করে না থেকে বলুন প্লিজ।”

”এইসব কিছুই অভিনয় ছিল।শুধুমাত্র আমার প্রতি তোমার দুর্বলতাটা দেখার জন্য।আর তুমিও সেটা প্রমান করে দিলে যে তুমি আমার প্রতি কতটা দুর্বল।”

কথাটা বলে আবারো এক গাল হাসলো আরাফ।অনুর এবার চোখ মুখ কুঁচকে আসে।তার মানে এই সব কিছু আরাফের অভিনয় ছিল।এইভাবে তাকে বোকা বানিয়েছে।অনু এবার রাগি দৃষ্টিতে রিহানের দিকে তাকায়।তাপর শক্ত গলায় বলে,
”রিহাইন্না!!তুই জানতি সব কিছু।ইচ্ছে করে আমাকে বোকা বানিয়েছিস।”

রিহান তো বেকুব বনে গেলো কারণ সেও জানতো না কিছু।রিহান অসহায়ের মতো মুখ করে বলে,
”দোস্ত আমি সত্যিই কিছু জানতাম না।”

রিহানের কথা শুনে অনু আবারো রাগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরাফ বলে,
”ওকে কিছু বলে লাভ নেয় অনু।সত্যিই ও কিছু জানতো না।যা করার আমি করেছি।আর যা হওয়ার তা তো হয়ে গিয়েছে।আমার প্রতি তোমার ফিলিংসটা বুঝতে পেরেছি।এবার নাও আমাকে প্রপোস করো।”

”জীবনেও না।এত কিছুর পরও আপনি ভাবলেন কি করে যে আমি আপনাকে আপনার কথা মতো প্রপোস করবো।”

অনুর রাগি গলার কথা শুনে মুচকি হাসে আরাফ।তারপর পাঞ্জাবির পকেট থেকে কিছু একটা বের করে অনুর সামনে হাটু গেড়ে বসে পরে;তারপর সে কোমল কণ্ঠে বলে উঠে,
”অনু তুমি কি আমার #জীবন_সাথী হবে?হবে কি আমার সারাজীবনের সঙ্গী?”
.
কথাটা বলে আরাফ অনুর দিকে একটা রিং এগিয়ে দেয়।অনু তো পুরো থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে।আদৌ কি এমন কিছু তার সাথে ঘটছে নাকি পুরোটাই তার স্বপ্ন কিছুই বুঝতে পারছে না সে।তার নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠছে।মনের মধ্যে আজ এক অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করছে।এতক্ষন যাবৎ আরাফের প্রতি যত রাগ অভিমান ছিল তা এক মিনিটেই ভেনিস হয়ে গিয়েছে।আরাফের চোখে মুখে অনুর প্রতি ভালোবাসা উপচে পড়ছে।সে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে অনুর সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে..

চলবে..
(আল্লাহকে ভয় করো;পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়)

{আসসালামু আলাইকুম।আজকের পর্বটা অনেক অগুছালো হয়েছে।আসলে ঈদের জন্য অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।তাই গল্প লেখার সময়ই পাচ্ছি না;তাও একটু সময় বের করে লিখেছি তাই বেশি ভালো লিখতে পারেনি তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত😥।ঈদ মোবারক সবাইকে❤}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here