জীবন সাথী💜 পর্ব-৬

0
1215

#জীবন_সাথী💜
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
৬.
~
জানলার ধারে দাঁড়িয়ে স্থির দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে আরাফ।মাথায় এখন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তার;কেন তার বাবা তাকে মিথ্যে বললো?কেন বলেনি এই লোকটাই তার পি.এ;
ছোট্ট বেলার আরাফের সব থেকে প্রিয় মানুষটাই ছিল এই পি.এ।পারভেজ আহমেদের নামকে সংক্ষেপ করে তাকে পি.এ ডাকতো আরাফ।ভীষণ ভালোবাসতো আরাফ পি.এ কে।আর পারভেজ আহমেদেরও চোখের মনি ছিল আরাফ।কিন্তু আরাফের বাবার জন্য তাদের মধ্যে সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছিলো।
কিছুক্ষন এইভাবে জানলার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে আরাফ পারভেজ সাহেবের কাছে গিয়ে তার সামনে হাটু ভাঁজ করে বসে;তারপর পারভেজ সাহেবের হাঁটুতে তার দু হাত রেখে ভেজা গলায় বলে ,
”আমি জানি না পি.এ আমি কি করে তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো!আদৌ আমি ক্ষমার পাওয়ার যোগ্য কিনা তাও আমার জানা নেই!বাবা কেন এমন করলো বলোতো?বাবা কেন আমাকে আগে বলেনি যে তুমি আমার পি.এ!সেই ৮ বছর বয়সে তোমাকে হারিয়েছিলাম তারপর আর কখনো দেখেনি।বাবা আমার কাছ থেকে তোমার সব ছবিও নিয়ে নিয়েছিল;তাই তোমার ফেইসটাও আমি ভুলে গিয়েছিলাম;এরজন্য আজ যখন এত বছর পর তোমাকে দেখলাম তোমাকে চিনতেই পারিনি;না জেনে না বুঝে তোমাকে এতটা কষ্ট দিয়েছি।যে মানুষটা আমাকে এতোটা ভালোবেসেছে তাকে কি করে আমি এত কষ্ট দিতে পারলাম বলোতো?”

কথা গুলো বলে আরাফ মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে;আরাফের বিষন্নতায় পারভেজ সাহেবও খুব কষ্ট পাচ্ছে।তিনি আরাফের মাথায় হাত রেখে বলে ,
”তোর কোনো দোষ নেয় বাবা।তুই বা কি করতি বল তুই তো শুধু তোর বাবাকে বিশ্বাসই করেছিলি।আর তোর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এমনি করতো ।তোর তিল তিল করা কষ্টের ফল ছিল তোর ওই প্রজেক্ট গুলো।দিন রাত খেটে তুই সেগুলো করেছিস;এখন যদি হুট করে সেগুলো উধাও হয়ে যায় তাহলে কারই বা মাথা ঠিক থাকবে বল।তুই তোর জায়গায় ঠিকি আছিস বাবা।কিন্তু আমি তো ভাবছি অন্য কথা যে, আনোয়ার কেন তোকে দিয়ে এসব করিয়েছে?কি চাই ও?”

কথাগুলো ভাবতেই কপালে ভাঁজ পরে পারভেজ সাহেবের।আরাফ তখন মাথা তুলে তাকে প্রশ্ন করে ,
”তুমি আমায় ক্ষমা করে দিয়েছো তো পি.এ?আমি জানি আমি যা করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য;তুমি চাইলে আমাকে যা খুশি শাস্তি দিতে পারো আমি মাথা পেতে নিবো;কিন্তু আমাকে তবু ক্ষমা করে দাও।”

আরাফের চোখে মুখে অনুশোচনার মেঘ জমতে দেখে পারভেজ সাহেবের মনও গলে যায়;আর সব চেয়ে বড় কথা হলো আরাফ না বুঝে তাকে কষ্ট দিয়েছে আর এখন যখন সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে তখন সে অনুতপ্ত;তাই এখন তাকে ক্ষমা করে দেয়ায় উচিত;কারণ যেখানে ভুল করে ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তার বান্দার ভুল ক্ষমা করে দেয় সেখানে আল্লাহর বান্দা হয়ে একটা মানুষ কেন তা পারবে না।

পারভেজ সাহেব কথা গুলো ভেবে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে হাসলেন তারপর আরাফের গালে হাত রেখে বললেন ,
”আমি তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি আরাফ।যেখানে তুই তোর ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়েছিস সেখানে আমি ক্ষমা না করে কিভাবে থাকতে পারি বল।ক্ষমা করা মহৎ গুন;ক্ষমা চাইলে যেমন কেউ ছোট হয়ে যায় না তেমনি ক্ষমা করলেও কেউ ছোট হয়ে যায় না বরং এই দুই ধরণের ব্যক্তিকেই আল্লাহ পছন্দ করেন।তাই তুই যে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছিস আমি তাতেই খুশি।”

পি.এর কথা শুনে আরাফ খুশিতে তাকে জড়িয়ে ধরে।তারপর খুশি খুশি গলায় বলে,
”আমি আজই তোমাকে তোমার পরিবারের কাছে নিয়ে যাবো পি.এ।আর তোমাকে কোনো কষ্ট পেতে হবে না।তুমি আবার স্বাভাবিক একটা জীবন পাবে।আর আমি সত্যিই দুঃখিত তোমার জীবন থেকে ১টা বছর এইভাবে কেড়ে নেয়ার জন্য।সাথে তোমার পরিবারও নিশ্চয় খুব কষ্ট পেয়েছে তোমার জন্য?সব কিছু আমার জন্য হয়েছে।আমি যদি বাবার কথায় অন্ধ বিশ্বাস না করে নিজেও একটু খোঁজ খবর নিতাম তাহলেই হতো।আমার জন্য আন্টিকে আর তোমার মেয়ে সেও নিশ্চয় খুব কষ্ট পেয়েছে।”

আরাফের কথায় পারভেজ সাহেবের চোখেও পানি চলে আসে।সত্যি তিনিও জানেন না তার চলে যাওয়ার পর তার পরিবারের কি অবস্থা তার স্ত্রী তার মেয়ে কেমন অবস্থায় আছে কে জানে।তিনি আরাফকে কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন ,
”আমাকে আমার পরিবারের কাছে তাড়াতাড়ি নিয়ে চল আরাফ।আমি কত দিন তাদের দেখি না।আমার মেয়েটাকে কতদিন বুকে জড়িয়ে আদর করি না;আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে চল বাবা।”

আরাফ পারভেজ সাহেবকে ছেড়ে দিয়ে বলে ,
”হে পি.এ তোমাকে আজই তোমার পরিবারের কাছে নিয়ে যাবো।”

কথাটা বলে মুচকি হেসে আবার জিজ্ঞেস করে
”আচ্ছা তো পি.এ তোমার প্রিন্সেসের নাম কি?”

পারভেজ আহমেদ হালকা হেসে বলে ,
”অ..
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই আরাফের ফোনটা বেজে উঠে।ফোনের স্ক্রিনে বাবা নামটা দেখতেই আরাফের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।সে কলটা কেটে ফোনটা কিছুটা দূরে বিছানার উপর ছুড়ে মারে।তারপর পারভেজ সাহেবের দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে বলে ,
”পি.এ তুমি কিছুক্ষন অপেক্ষা করো আমি আসছি।এসে তোমাকে তোমার পরিবারের কাছে নিয়ে যাবো।”

পি.এ চিন্তিত মুখে বললো,
”তাড়াতাড়ি ফিরিস বাবা।”

আরাফ আচ্ছা বলে বেরিয়ে গেলো।পারভেজ সাহেব আজ ভীষণ খুশি সে তার পরিবারকে আবার দেখতে পাবে।ভেবেছিলো আর হয়তোবা তাদের দেখা পাবে না এখানেই পচে মরতে হবে তাকে;কিন্তু আল্লাহ সব সময় তার বান্দার পাশে থাকেন।তিনি ঠিক তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।পারভেজ সাহেব উপর দিকে তাকিয়ে মুখে তৃপ্তি ভরা হাসি নিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন।
.
রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে রান্না করছিলো অনু।তখনি তার ফোনটা বেজে উঠে।সে ফোনটা কানে নিয়ে কাঁধ দিয়ে সেটা চেপে ধরে কড়াইয়ে ডিম ভাজতে ভাজতে বলে ,
”হে তিহা বল?”

তিহা কিছুক্ষন চুপ থেকে আমতা আমতা করে বলে ,
”তুই আজকে ভার্সিটিতে আসবি ?”

অনু ডিমের কড়াইটা চুলা থেকে নামাতে নামাতে বলে ,
”নারে আজ ভালো লাগছে না।ভার্সিটিতে যাবো না আজ।তোরা যাবি?”

তিহা বললো ,
”রুমি আজ দাওয়াতে যাবে তাই আসবে না আর আমি তোদের ছাড়া একা গিয়ে কি করবো!”

চুলায় চা পানি বসাতে বসাতে অনু বললো,
”ওহ আচ্ছা।”

তিহা আবার কিছুক্ষন চুপ থেকে আমতা আমতা করে বলে ,
”আজ কি রিহানকে দেখতে যাবি?”

অনু বলে,
”হুম যাবো দুপুরের দিকে;খাবার নিয়ে।”

অনুর কথা শুনে তিহা খুশি খুশি গলায় বলে ,
”আচ্ছা আমিও যাবো!”

অনু স্বাভাবিক ভাবেই বললো ,
”আচ্ছা ঠিক আছে।আমরা একসাথে যাবো।”

তিহাও হাসি মুখে ওকে বলে কলটা কেটে দেয়।কল কাটতেই অনু আবার তার রান্নার কাজে মনোযোগ দেয়।
.
সকাল গড়িয়ে দুপুর চলে এলো।পারভেজ সাহেবের বেশ অস্থির অস্থির লাগছে।বার বার সে দরজার দিকে তাকাচ্ছে যে আরাফ আসলো কিনা!কিন্তু আরাফ আসছে না দেখে উনার অস্থিরতা যেন বেড়েই চলছে।তখনি দরজা ঠেলে আরাফ রুমে আসে।আরাফকে দেখেই পারভেজ সাহেবের মুখে হাসি ফুটে উঠে;আরাফ পারভেজ সাহেবের দিকে এগিয়ে এসে তার হাতে একটা পেকেট ধরিয়ে দিয়ে বলে ,
”পি.এ এখানে একটা শার্ট আর পেন্ট আছে।এটা পরে নাও;তারপর আমরা তোমার বাসার উদ্দশ্যে রওনা দিবো।”

পারভেজ সাহেবও খুশি হয়ে জামা গুলো নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায়।তারপর আরাফের আনা শার্ট পেন্ট পরে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আসে।আরাফ পারভেজ সাহেবকে দেখে একটা চিরুনি বের করে তার চুল দাড়ি আঁচড়িয়ে দিয়ে বলে ,
”চলো এবার তাহলে যাওয়া যাক।”

দুজনেই বেরিয়ে পড়লো পারভেজ সাহেবের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

চলবে..
(আল্লাহকে ভয় করো.পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়)
{পর্ব ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত😥}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here