জোনাকিরা ভীড় করেছে পর্ব ৩

0
961

#জোনাকিরা ভীড় করেছে
#সিফাতী সাদিকা সিতু
#পর্ব-৩

৮.
মেঘলা পড়া শেষ করে রান্না ঘরে আসলো। আজ তার কলেজ নেই তাই দুপুরের রান্নাটা, তাকেই করতে হবে।রান্নাঘরে আসতেই মোমেনা বেগম তাকে জেঁকে ধরলেন।

হ্যাঁ রে,কাল যে ছেলেটাকে বাড়িতে আনছিস, ওটা তোর মায়ের বান্ধবীর ছেলেটা না,যার কাছে তুই প্রাইভেট পড়তি?

মেঘলা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।

তোর সাথে এখনো এতো খাতির ক্যান?

মেমেনার কথার ধরনটা কানে লাগলো মেঘলার।ঠোঁট চেপে সহ্য করে নিলো।বললো,মাকে দেখতে এসেছিল।

তা আসুক। তোর কি দরকার ছিল ছেলেটার বাইকে আসার?এলাকার মানুষজন খারাপ ভাবতে পারে তা তোর মনে ছিলো না?আমি কিন্তু তোকে বলে রাখলাম মেঘলা,তোর জন্য আমার মনিরার জায়গা খারাপ হলে আমি কিন্তু বাপু ছেড়ে কথা বলবো না।বুঝে,শুনে চলিস।

মেঘলা চোখের পানি কোনোরকমে আঁটকে বললো, ঠিক আছে, মামি।

দুপুরের রান্নাটা হলে একটু ফ্রুট কাস্টার্ড বানাস তো।বাবু খেতে চেয়েছে। তুই নাকি ভালো পারিস।

মেঘলা নিরবে মাথা নাড়লো। মোমেনা বেগম চলে গেলে চোখের কোণে আঁটকে থাকা পানিটুকু মুছে নিলো।কাঁদবে না সে, মামি তো বরাবরই এমন। যেখানে চোখে পানির সামান্য মূল্যটুকুও নেই সেখানে শুধু, শুধু কেঁদে কি হবে?নিজের লড়াইটা তো একাই লড়ছে সে,সেখানে বৃথা চোখের জল ফেলবে কেন?

সবাই ড্রয়িংরুমে বসে চা খাচ্ছে। প্রতিদিন পরিবারের সাথে বসে এভাবে বিকেলের সময়টুকু কাটাতে পারেন না আনোয়ার চৌধুরী। আজ ছুটির দিন তাই এই সুযোগ হাত ছাড়া করেন না।মেঘলা ভেতরে ঢুকে অপ্রস্তুত হয়ে গেল সবাইকে দেখে। আমরিন উঠে গিয়ে মেঘলাকে টেনে আনলো।আদিব মেঘলাকে দেখার পর থেকে মাথা নামিয়ে নিয়েছে।

দিলারা বেগম অবাক হয়ে বললেন,তুমি মোমেনার ভাগনি, না?

জ্বী আন্টি।

ওমা,তুমি তো কখনো আসোই না।আমরিন ওকে বসতে দে। তোমার মামিকে বলেছি একবার তোমায় নিয়ে আসতে।তোমার মামাতো বোনটা তো আসে মাঝে,মাঝে তোমার মামির সাথে।

আমরিন জবাবে শুধু, হাসলো।

নাহার বেগম বললেন,আপা তোমরা যখন চট্টগ্রামে ছিলে তখন একদিন এসেছিলো সে।

ওমা তাই নাকি,ভালো করেছ!

আমি বই নিতে ডেকেছিলাম আপুকে।
আমরিন একবার আদিবের দিকে তাকিয়ে বললো।

আনোয়ার, দিলারা সহ সবাই হা করে তাকালো আমরিনের দিকে।দিলারা কোনমতে বললেন,কিসের বই নিতে ডেকেছিলি তুই?

ভাইয়ার একটা উপন্যাসের বই।

সবার কথাটা হজম হলো না।কারণ, আদিব কখনো তার বই কাউকে দিতে পারে এটা তাদের ভাবনায় ছিলো না।অন্যদিকে সবার চাহনিতে আদিবের নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। যেন সে খুব বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছে।আমরিনকে পটাপট চড় মারতে ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে।

মেঘলা কিছু বুঝতে পারছে না।সে হাতের বক্সটা এগিয়ে দিলো আমরিনের দিকে।বললো,তোমার জন্য একটু কাস্টার্ড এনেছি।তুমি তো পছন্দ করো।সেদিন আমায় নুডলস বানিয়ে খাইয়েছিলে, তাই আজ আমি নিয়ে এলাম তোমার জন্য।

সবাই আরেকদফা অবাক হলো।আনোয়ার ফিসফিসিয়ে বললো,দিলারা কি বলছে এই মেয়েটা?

দিলারা বেগম অপ্রস্তুত হয়ে বললেন,আমরিন তো কাস্টার্ড খায় না, মা!ও তো ছুঁয়েও দেখে না।কাস্টার্ড তো আদিব খুব পছন্দ করে!

মেঘলা লজ্জায় পরে গেল,কিন্তু আমরিন যে আমায় বললো ও পছন্দ করে।

আমরিন ঝটপট বলে উঠলো, আমি ভাইয়ার কথাই বলেছিলাম তুমি হয়ত ভুল শুনেছ।তুমি আমার জন্য এনেছ, আমি খুব খুশি হয়েছি।ভাইয়াকে বলবো সবটা খেয়ে নিতে।

আমরিনের কথায় আদিবের কাশি উঠে গেল।দিলারা দ্রুত এসে পানি খাওয়ালো আদিবকে।আমরিন ঠোঁট টিপে হাসলো।

তুমি আজ বই নেবে না, আপু?

নাহ্ মানে, আজও নেব?

হ্যাঁ,কেন নেবে,না। আসো তুমি, সেদিনের মতো নিজেই গিয়ে নিয়ে এসো।
আমরিন প্রায় ঠেলে নিয়ে গেল মেঘলাকে আদিবের লাইব্রেরীতে।

আদিবের প্রচন্ড হাসফাস লাগছে।আমরিন তাকে এভাবে বারবার ফাঁসিয়ে দিয়ে মজা নিচ্ছে আর সে কিছু বলতে পারছে না। মেঘলা চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আদিব তার ঘরে আসলো।লাইব্রেরীর দিকে কিছুক্ষণ করুন চোখে তাকিয়ে রইলো। আবার ভাবলো তার সবকিছু তো মেঘলারও।একদিন তো মেঘলাও এই লাইব্রেরীর মালকিন হবে।অবশ্য মালিকের বউ হিসেবে মেঘলার আগেই লাইব্রেরীতে আসাটা মেনে নিতেই হবে।শুয়ে পরার আগে দরজার দিকে একবার তাকাতেই চমকে উঠলো। সবাই দরজায় এসে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। সকলের চোখে, মুখে কৌতুক স্পষ্ট। আদিব জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সবাই এক যোগে হাত পেতে বলে উঠলো, আমাদেরকেও একটা বই দাও!

পিছন থেকে পাখিও হাত বাড়িয়ে বললো,ভাইজান আরেও একখ্যান বই দেন।
সবাই এক যোগে হেসে উঠলো পাখির কথায়।এই ফাঁকে আদিব দ্রুত লাইব্রেরী রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।বলতে গেলে লজ্জা পাওয়ার হাত থেকে পালিয়ে বাঁচলো।

৯.
বাইরে রোদের প্রখরতা। আদিব যথারীতিতে মেঘলার কলেজের সামনে এসে দাঁড়ালো।আজ আদিবকে অবাক করে দিয়ে মেঘলা ছুটির হওয়ার সাথে,সাথেই বের হলো।কিছু বুঝে ওঠার আগে মেঘলা সোজা এসে দাঁড়ালো তার সামনে।আদিবের ঘাম বেড়ে গেল,গলা শুকিয়ে কাট হয়ে গেল।

মেঘলা ব্যাগ থেকে টাকা বের করে আদিবের সামনে বাড়িয়ে ধরে বললো,”আপনাকে কতবার বলেছি না,আমায় কখনো দয়া দেখাতে আসবেন না?”

আদিব এক পলক মেঘলার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলে।ইশ! এমন শীতল দৃষ্টিতে তো সে জমে যাবে!অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,দয়া দেখাইনি,তোমায় ঋণ দিয়েছি।সময় আসলে না হয় শোধ করে দিও।ভয় পেও না,সুদ চাইবো না,আসলটা দিলেই হবে।

সময়টা এখুনি,নিন আপনার টাকা।মেঘলা বাইকের ওপর টাকা রাখলো।যেতে গিয়ে ফিরে এসে পানির বোতল বের করে আদিবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,আমরিনকে মিথ্যা বলতে শেখাবেন না।

আদিব, মেঘলার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। এক ঢোকে পানিটুকু শেষ করলো।
বিড়বিড়িয়ে বললো,”অর্ধেকটা বুঝলে,পুরোটা কেন বুঝলে না।আঘাত দিলে অল্প কেন,সবটুকুই দাও।”

বাড়ি ফিরে মেঘলার ছবিটা বের করে খুব করে শাসালো সে।এ্যাই মেয়ে,বড্ড বার বেড়েছে তাই না?ছুড়ে ফেলে দিয়েছি তোমার টাকা।কিন্তু আবার কুড়িয়ে নিয়েছি,কেউ আমার প্রিয়তমার কষ্টের উর্পাজন নিক তা আমি চাইনা।তুমি কি ভেবেছ,আমি ভয় পাই তোমায়?কাছে পেলে হাত,পা ভেঙে রেখে দেব!

কলিংবেল বাজলে আনাফ দরজা খুলে দিলো।আমরিনকে দেখে অবাক হয়ে বললো,খুকি, তুই হঠাৎ আমাদের বাসায়?

আমরিন চোখ,মুখ,কপাল সব এক সাথে কুঁচকে একটু চিল্লিয়ে বললো,আনাফ ভাই তুমি সরে দাঁড়াও, তোমার গা থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছে!

আনাফ তার চোখ জোড়া বড় করে তাকিয়ে রইলো আমরিনের দিকে।

উফফ,সরছে না কেন তুমি।আমার বমি পাচ্ছে। তোমার গায়ে বমি করে দিলে আমায় কিছু বলতে পারবে না কিন্তু।

আনাফ প্রায় গর্জে উঠলো,তুই কিন্তু এবার আমার মহা পরাক্রমশালী চড় খাবি।উল্টা- পাল্টা কথা বলছিস কেন?

আমরিনের মাঝে কোনো ভাবান্তর হলো না।বরং সে মুখে হাত চেপে বমির ভাব করলো যেন, এখুনি সে ভাসিয়ে দেবে বমি করে।আনাফ প্রায় লাফিয়ে সরে গেল দরজার সামন থেকে।

“ফুপি,ও ফুপি কোথায় তুমি?তোমার জানবাচ্চা এসে গেছে।”

আমরিন ভেতরে চলে গেল।

অন্যদিকে আনাফ কিছুক্ষণ স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের ঘরে আসলো।বারবার নিজের টিশার্ট শুকনো।দশমিনিটের মধ্যে আলমারি থেকে অন্য একটা টির্শাট বের করে পরলো।পছন্দের পারফিউম ভুস,ভুস করে মেখে সে বের হলো,উদ্দেশ্য মায়ের ঘর।আমরিন এখন সেখানেই আছে।মায়ের ঘরে ঢুকে দেখলো, আমরিন তার মায়ের কোলে শুয়ে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাচ্ছে।

আনোয়ারা ছেলেকে দেখে বললেন, কিরে বাইরে যাচ্ছিস নাকি?

নাহ তো, মা।

বাসায় থাক।বিকেলে আদিব আসবে।

ফুপি, তুমি কোনো বাজে গন্ধ পাচ্ছো?

কই, নাতো!কেন তুই পাচ্ছিস?

হ্যাঁ ফুপি,মনে হয় কেউ ডাস্টবিনে গড়াগড়ি করে এসেছে!

আনাফ ঝটকা মেরে আমরিনকে মায়ের কোল থেকে উঠালো,তুই আমাদের বাসায় এসেছিস কেন?

আনোয়ারা ধমক দিলেন,আনাফ!তুই আমার জানবাচ্চাটাকে এভাবে বলছিস কেন?ও আসবে না তো, কে আসবে?

সেই তো।আমি ফুপির বাসায় এসেছি তোমার নয়।তুমি এখানে কি করছো?মেয়েদের গল্পের মাঝে ছেলেদের থাকতে নেই,ঘরে যাও,আমরিন যেন আদেশ করলো আনাফকে।

আনাফ বাঁকা হেসে বললো,তুই তো খুকি,মেয়ে হলি কবে?

আমরিন সাথে, সাথে তার নাক চেপে ধরলো।উমম,কি গন্ধ ফুপি?আমার বমি আসছে।

আনাফ চট করে সরে দাঁড়ালো। আমরিনের দিকে রাগী দৃষ্টি ছুড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

আমরিন হাসতে,হাসতে আনোয়ারাকে জড়িয়ে ধরে বললো,তোমার ছেলেটা এতো বোকা কেন, ফুপি?

আদিব এসেছে আমরিনকে নিতে।আনোয়ারা যত্ন করে নাস্তা খাওয়াচ্ছেন ওদের।

আব্বা,তোরা দুজনে আজ থেকে যা না।

না ফুপি,আমরিনের পরিক্ষা সামনে।ওর পড়াশোনার ক্ষতি হবে।তুমি চলো আমাদের সাথে।

আমি আর আনাফ সময় পেলেই তো যাই। তোরাই তো কেউ আসিস না।তোর মাকে কত করে বললাম,একটা সপ্তাহ থেকে যেতে,শুনলোই না।আসবেই বা কেমন করে, তোদের বাপটা যে সবসময় লেজের মতো পেছনে লেগে থাকে!

ফুপির কথায় দুইভাই বোন হেসে উঠলো। আনাফ একটু আগে উঠে গেছে ওর ফোন আসায়।

আনোয়ারা বললেন,আমি একটু চা টা আনাফকে দিয়ে আসি,ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

আমরিন চট করে উঠে দাড়িয়ে বললো,আমায় দাও ফুপি,আমি দিয়ে আসি।

আনোয়ারা বেগম হেসে বললেন,আচ্ছা যা।

আনাফ কথা শেষ করে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখলো আমরিন এক হাতে নাক চেপে ধরে অন্যহাত দিয়ে চায়ের কাপ এগিয়ে আছে।নাকি সুরে বললো,তাড়াতাড়ি চা টা নেও, এত গন্ধে আমি মরেই যাবো।

কথা শেষ হওয়ার সাথে, সাথেই আনাফ জড়িয়ে ধরলো আমরিনকে।স্থীর হয়ে গেল আমরিন,হাত থেকে চায়ের কাপ পরে গেল।আনাফ জড়িয়ে ধরে হিসহিসিয়ে বললো,আমি ডাস্টবিনে গড়াগড়ি করে এসেছি না,এখন তুই মাখামাখি কর।গন্ধে মরে যা,একদম মরে যা।

১০.
মেঘলা মাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছে।ডাক্তার তিনটা টেস্ট দিয়েছে।সবগুলো করাতে বেশ নাকাল হতে হলো।এখন রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ডাক্তারকে দেখিয়ে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হবে।মাহিমের জন্য বেশ চিন্তা হচ্ছে।দাঁড়িয়ে থেকে পা ব্যাথা করছে।মাকে তাও বসিয়ে রাখতে পেরেছে এই অনেক।

হঠাৎ মেঘলাকে অবাক করে দিয়ে আদিব তাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল।দশমিনিটের মধ্যে রিপোর্ট গুলো মেঘলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল।মেঘলা খুব বেশি অবাক হলো না।এটা যেন হওয়ার ছিলো।তার জীবনে সমস্ত কঠিন কাজ গুলো সহজ করে দেয়ার অধিকারটা আদিব নিজেই নিয়ে নিয়েছে।তাড়াতাড়ি রিপোর্ট পাওয়ায় ডাক্তার দেখানো সহজ হয়ে গেল।মাকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে দেখলো আদিব বাইকে বসে আছে।মেঘলার সামনে একটা সিএনজি এসে দাঁড়ালো। মেঘলা জানে আদিব ঠিক করেছে।মাকে নিয়ে উঠে বসলো।আদিব ততোক্ষণে চলে গেছে।মেঘলাকে মাকে চেপে ধরে বসলো।সন্ধ্যার শহর বেশ লাগছে দেখতে। নানারকম ইলেকট্রিক লাইটের আলোয় ভরা চার পাশ।ঠিক যেন তার জীবনের মতো।সে যতই অন্ধকার করে রাখতে চায় আদিব ততই আলোকিত করে দেয়।দূর থেকে এভাবে পাশে থেকে যাচ্ছে ছায়ার মতো।প্রতিদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে তার চোখ ভিজে ওঠে।আদিবের এই ভালবাসার মূল্য সে কখনো দিতে পারবে না।সে কথা আদিবকে বোঝাতে চায় বারবার।কিন্তু আদিব যেন বুঝতে নারাজ।মেঘলা কখনোই যোগ্য হতে পারে না এই মানুষটার,কখনোই না।বাস্তবতার কঠিন পথ গুলো যে জানা হয়ে গেছে তার।মৃদুমন্দ বাতাস এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে তার খোলা চুল গুলোকে।ব্যস্ত রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে ভাবছে সে।আদিবর প্রবল ভালবাসার ঘূর্ণিপাকে পড়ে সে নিজের অস্তিত্ব ভুলো যেতে চায় না।মানুষটাকে কখনো তার জন্য সমাজের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে চায় না।যে মানুষটার চোখে এখন ভালবাসা দেখছে, সেই মানুষটার চোখে কোনদিন নিজের বোঝা গুলো চাপিয়ে বিরক্তি দেখতে পারবে না।আদিব যতই তার দায়িত্ব গুলো নিজের কাঁধে তুলে নিতে চায় না কেন, মেঘলা তো জানে একটা সময়ের পর দায়িত্ব গুলো ভারী বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

আদিব মাহিমকে রাস্তার পাশে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে আসলো।রাস্তার পাশের ছোট,ছোট সাদা পাথর কুড়াচ্ছে।আদিবের বুক কেমন কেঁপে উঠলো।মা,বোন যে বাড়িতে নেই সেই ব্যাপারটা ছেলেটা কাউকে বোঝাতে পারছে না।এতো অন্ধকারে এসে একা বসে আছে।মোমেনার বেগমের ওপর খুব রাগ হলো তার।এগিয়ে এসে মাহিমকে তুললো।মাহিম, আদিবকে দেখে হেসে দিলো।হাতের ইশারায়,মুখে উু,উু শব্দ করে বোঝাতে চাইলো তার মায়ের কথা,বোনের কথা।আদিব ওকে নিয়ে হেটে এসে বাইকের সামনে ওঠালো।ইশারায় বোঝালো মেঘলার কাছে নিয়ে যাচ্ছে।

মাহিমের ব্যাপারে সে মেঘলার সাথে কথা বলবে।এরকম চাইল্ডদের অন্যরকম পরিবেশ প্রয়োজন। হয়ত মেঘলাও জানে,বোঝে কিন্তু নিরুপায়।

চলবে..

(সবার কেমন লাগলো জানিয়ে যাবেন তাহলে পরের পর্ব লেখার আগ্রহ বাড়ে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here