#টিট_ফর_ট্যাট
#Alisha_Anjum
#বোনাস_পাঠ
ঝুম বৃষ্টিতে প্রকৃতি ভিজতে ব্যাস্ত। ঘরময় ঠান্ডা আমেজ। আমি নিশিযাপন করতে নীরবের বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছি। যাই হয়ে যাক আমার উদ্দেশ্য আজ নীরবকে ঘর হতে বাইরে পা-ই ফেলতে দেবো না। জেরিনের সম্মুখীন হতে দেওয়া যাবে না। শাশুড়ি মা বলেছেন আজ জেরিন থেকে যাবে। আমার ভয় আরো তরতর করে তীব্রতর হয়েছে। কেন থাকবে ওই মেয়ে?
— নীলিমা, ঘুমিয়ে গেছো?
অশান্ত মনের ছন্দহীন ভাবনার মাঝে নীরব ডেকে উঠলো। আমি ভাবনা ঠেলে সরিয়ে তার কথার প্রত্যুত্তর করলাম
— না।
— ওহ।
কথাটা বলেই নীরব দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নীরবতায় পার করলো মিনিট খানেক। তারপর মন বলে সে বহু ভাবনা চিন্তার করে বলল
— তুমি ভয় পেও না নীলিমা। আমি……. জেরিনের উপর আমার কোনো ফিলিংস নেই। দেখো, আমি যদি ওমনই হতাম তাহলে কি তোমাকে ডায়েরিটা দিতাম? আজ তোমাকে সব বলতাম? আমি কিন্তু কিছুই লুকোইনি। তুমি বিশ্বাস করো আমাকে। শুধু টেনশন নিয়ে অসুস্থ হইওনা তুমি।
আমার ডান হাতটা নীরবের বুকের উপর ছিল। সে আলতো করে হাতে হাত রেখে আশ্বাস, বিশ্বাস দিয়ে বলল আমায়। আমি নিশ্চুপ আছি। মনের ছটফট ভাব বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেলো। আমি তো তার থেকে লুকিয়েছি। আমার কি হৃদের কথা বলে দেওয়া উচিত? বিশ্বাস! বড় মূল্যবান জিনিস। একবার যদি চিড় ধরে তাহলে দাগ নিলীন হয় না। কিন্তু নীরব সব জানার পর কি মেনে নেবে গম্ভীর মুখে? নাকি আমায় ছেড়ে দেবে? পূর্বে আমার ভাসুরের সাথে সম্পর্ক ছিল এটা কি অনেক বড় নির্লজ্জ বিযয় না? মাত্র বারো দিনের বউকে কি স্বামী এতোটাই ভালোবেসে কাছে রেখে দেবে? হাজারও ভাবনা ঢেউ খেলছে মনে। ছটফট ভাব নিয়ে উঠে বসলাম। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় নীরবের ঘুমন্ত মুখ ধরা দেয় চোখে। আমি ঝট করে বিছানা থেকে নেমে করিডরে চলে এলাম। কি করবো আমি? তবে যাই করি নীরবকে আমি হারাতে রাজি নই।
— নীলিমা? এখন কেমন আছো?
ভাবনার মাঝে আচমকা অপরিচিত কন্ঠে আতকে উঠলাম আমি। ভাবনার তাল হারিয়ে পাশ ফিরে চাইলাম। বিশাল বেলকনির মাঝ বরাবর একটা লাইটের সাদা আলোয় ঈষৎ ধবধবে চারপাশ। দৃষ্টিতে খুব সুন্দর করেই ধরা দিলো আগন্তুকের মুখটা। আমি শুকনো মুখে জেরিনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম। কেমন রহস্য করে প্রশ্ন করেছে সে আমায়। আমার একটুও পছন্দ হচ্ছে না তাকে।
— হা হা এমন শুকনো কেন তোমার মুখ? ড্রইংরুমে বসে ছিলাম। তোমাকে দেখে এগিয়ে এলাম। নীরব কি করে?
নীরবের খবর শোনার আগ্রহ দেখে বুকের মাঝে দপ করে আগুন জ্বালে উঠলো আমার। বিরস মুখে একবার তাকে পরখ করে বললাম
— ঘুমায়।
— তুমি কিন্তু বেশ সুন্দরী নীলিমা। লম্বাও দেখি বেশ। হুম.. গায়ের রংও ধবধবে।
জেরিনের কথার পিঠে আমি অনড় দাড়িয়ে রইলাম গ্রিলে হাত রেখে। বুঝি তো আমি! তুচ্ছ করছে আমায়। সে যে অপরূপা। হাজার গুণ বেশি সুন্দর আমার থেকে।
— তোমার মনে আছে আমাকে?
এ প্রশ্নে এবার আমার কলিজা কেঁপে উঠলো। হুট করে চাইলাম পাশের রূপবতী মেয়েটার দিকে। পদ্মআঁখি, ছিমছাম গড়ন, সুন্দর নাক। হলদে ফর্সা মুখটায় খেলা করছে কিছু খর্ব চুল। বুকটা আমার জ্বলে পুড়ে যেন ভস্ম হয়ে যাচ্ছে। তার রূপে আমি হিংসায় পুড়ে যাচ্ছি। মুখটা অতি শীঘ্রই ফিরিয়ে নিলাম। নীরবের বউয়ের চেয়ে প্রাক্তন কেন বেশি সুন্দর হবে? আমার এলোপাতাড়ি ভাবনার মাঝেই আবার তার কন্ঠ
— আচ্ছা ঠিক আছে তুমি আমার সাথে কথা না বললে। আমিই বলি। তুমি জানো আমি নীরবের প্রেমিকা ছিলাম?
কথাটা বলে সরু চোখে তাকিয়ে রইল রূপবতী কালনাগিনী। আমি সাড়াশব্দ দিলাম না। আমার কিচ্ছু বলতে ইচ্ছে করছে না। সে আবার বলল
— এটা তো জানো তুমি হৃদের প্রেমিকা ছিলা?
জেরিনের কথায় আমি চমকে তাকালাম তার দিকে। টানাটানা চোখ দু’টোয় এবার ভেসে উঠেছে কুটিলতা। ঠোঁটে কুটিল হাসি। আমি শঙ্কিত গালায় বললাম
— মানে?
সে বুঝি আমার কথায় খুব আনন্দ খুঁজে নিলো। হাসলো খানিক। বলল
— বোঝোনি বাচ্চা মেয়ে? আমি আমার নীরবকে চাই। তাই এখন তোমার কি করা উচিত? বলে দিতে হবে?
আমি অবাক চোখে চাইলাম তার দিকে। মানে সে নীরবকে সব বলে দেবে? আমায় ফোর্স করছে নীরবকে ছাড়তে? বাধ্য করছে আমায়? আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারলাম না। সেই মান্ধাতার আমলের গেইম খেলতে চায় আমার সাথে? কিন্তু নীলিমা তো ভয়ে হাতে পায়ে পরার মেয়ে নয়। হ্যা আমার ভয় আছে যদি সে বলে দেয় এসব! কিন্তু তাই বলে এন্টিডোট এপ্লাই করবো না আমি? নিজের মনের ভয় মনেই লুকিয়ে মুখে ফুটিয়ে তুললাম তীক্ষ্ণতা। মুচকি হেসে তাকে বললাম
— যখন নীরব প্রমাণ চাইবে তখন কি করবেন?
— বাহ! বেশ বুদ্ধিমাতি তুমি। বয়স অল্প হলেও প্লেয়ার পাক্কা।
— আলহামদুলিল্লাহ।
গর্বের হাসি দিয়ে তাকে হেনস্তা করতে বলে উঠলাম। তার মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। আবার ক্ষণিক পরেই ঠান্ডা মেজাজের মেয়েটা হাতের ফোনটা উঁচু করে বলল
— এমন তিনটা ছবি আছে।
সে আমায় কাপল পিক দেখালো। এবার আমি সত্যিই ভেতরে বাইরে ঘাবড়ে গেলাম। সে আমার পরিস্থিতি দেখে বলল
— নাউ ইউর টার্ন। তুমি যেটা টানবে। নিজ হতে চলে যাবে? নাকি আমি এমন কয়েকটা ছবি খালা মণি আর নীরবকে দেখিয়ে চলে যাওয়াবো? তারা নিশ্চয়ই এমন নোংরা মেয়েকে ঘরে রাখবে না। যার আগে সম্পর্ক ছিল ভাসুরের সাথে।
ফিসফিস ধ্বনি তার। আমি এলোমেলো হয়ে গেলাম। আমার আর হৃদের একসাথে উঠা ছবি সে কোথায় পেলো? আমি এখন কি করবো? আমার নীরব? কলিজা যেন আমার তীক্ষ্ণ তীরের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে। আমি ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তড়িৎ বেগে হাত বাড়িয়ে দিলাম জেরিনের দিকে। খপ করে ধরে আছড়িয়ে সব চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইলাম। কিন্তু আমার যে কপাল ফিরলো না। সে ঝড়ের বেগে হাতটা টান দিয়ে নিলো। রাগে দুঃখে আমার চিৎকার করার ইচ্ছে হলো। ঠিক এমন সময় যেন একটু দয়া করলো আমার রব। এক চিলতে আলো এলো মনের কোণে। হঠাৎ হৃদ চলে এসেছে। সে পেছন থেকে খপ করে ধরে ফেলেছে জেরিনের হাত। আমি বুঝলাম না কেন হৃদের এহেন কর্ম। তবে তার চোখের রাগ বুঝতে কষ্ট হলে না আমার। নিজ হাতে ফেনটা নিয়ে সে জেরিনের উদ্দেশ্যে বলল
— তুই কিচ্ছু বলবি না কাউকে। তোর প্রমান আমি মুছে কেলবো।
চলবে…..
( ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। বোনাস পর্ব তাই ছোট 😁)