#টিট_ফর_ট্যাট
#Alisha_Anjum
#বোনাস_পাঠ
চোখের সম্মুখে হৃদ ছটফটে মন নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। করুনা মনে জেগে উঠলেও ঠেলে সরিয়ে দিলাম। সে জানুক টিট ফর ট্যাট। সে পুড়ুক, ছাই হোক তার অন্তর। দুটো মানব মানবির বুকে তীব্র জ্বালা হোক। এই ভয়ংকর জ্বালা থেকে রেহাই না পাক জেরিনও। তাদের বিদায় দিয়ে আমি আর নীরব হাঁটতে শুরু করলাম। জানি না নীরবের মনে কি। তবে আমার মনে এখন ঘোরাঘুরির জোয়ার উঠেছে। দুজনে পাশাপাশি চলছি। নীরব শক্ত করে আমার হাতটা ধরে আছে। আমার এই মুহূর্তে নিজেকে ভীষণ সুখী মেয়ে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি কারো খুব ভালোবাসার স্ত্রী। এই যে সে হাতটা ধরেছে। মনে এক অদ্ভুত আন্দোলন উঠেছে। শান্তির বহর নেমেছে। মনের আনাচে কানাচে রটিয়ে যাচ্ছে ‘এই হাতে হাত রাাখলে নিজেকে পরিপূর্ণ লাগে’।
— কোথায় যাবো এখন আমরা?
চলতি পথে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম আমি। নীরব মুখ না ফিরিয়ে সচেতন গতিতে ভীর ঠেলে হাঁটতে হাঁটতে বলল
— দোকানে। পানির বোতলের জন্য।
— একটা কথা বলি?
— অনুমতি দেওয়া হলো না।
আমি নীরবের কথায় হেসে উঠলাম। দুষ্টু হেসে বললাম
— অনুমতি না দিলেও বলবো।
— শাস্তি হবে।
— কি শাস্তি শুনি?
— তুলতুলের আম্মুকে ওয়ান পিস চুমু দিতে হবে তুলতুলের বাবার সুন্দর ঠোঁটে।
নীরবের সহজসরল কন্ঠ। আমি খুক খুক করে কাশি দিয়ে উঠলাম। এই নিমিত্তে যন্ত্রের মতো বলে উঠলাম
— আমি টক খাবো।
কথাটা বলার সাথে সাথে নীরব থমকে দিলো হাঁটার গতি। তড়িৎ বেগে মুখ ফেরালো আমার পানে। ইয়া বড় বড় চোখ করে বলল
— কেমনে সম্ভব? একদিন পরই কেউ টক খেতে চায়? বউ আমার এত্তো ফার্স্ট? ওমাইগড!
নীরবের কথায় আমার চোখে মুখে রাগ জমে গেলো। লোকটা দিন দিন অসভ্যর চরম পর্যায়ে যাচ্ছে। মুখ কুচকে তাকে অবলীলায় বললাম
— আপনি মাত্রাতিরিক্ত অসভ্য।
সে আমার কথা হাসতে হাসতে উড়িয়ে দিলো। পুনরায় হাঁটতে লাগলো আমার হাত টেনে। পৌঁছালো একটা দোকানে। দুটো মাস্ক নিলো। আমি তো মাস্ক দেখেই হাশফাশ করতে লাগলাম। অসম্ভব। আমি মাস্ক পরে থাকতে পারি না। আমি পরবো না। নীরব দোকান থেকে বেরিয়ে পাশের একটা খোলা দোকানে অগ্রসর হলো। দোকানির সাথে কথা বলতে বলতে মাস্ক দুটো আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। আমি উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছি। সাংঘতিক করোনার মধ্যেও নীলিমা মাস্ক পরার নাম করে থুতনিতে রেখে দিয়েছে। যখনই পুলিশ নজরে এসেছে অতি ভদ্র সেজে তড়িঘড়ি করে নাকের উপর টেনে দিয়েছি মাস্ক।
— নীলিমা, টক খাবে? কবেকার কে জানে? স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
নীরবের কথায় মাস্ক থেকে নজর সরিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে চাইলাম তার দিকে। কি হচ্ছে এসব? বউয়ের কাছে ডাক্তার সাজা হচ্ছে? আমি ইতিউতি করে খুঁজে নিলাম একটা তেঁতুলের চাটনি। খপ করে একটা প্যাকেট ছিড়ে নিয়ে বললাম
— আমি আপনার কি হই?
নীরব বেশ অবাক আমার কান্ডে। হতবুদ্ধির মতো তাকিয়ে বলল
— বউ
— তো? আপনি কেন আমার সাথে ডাক্তারি ভাব দেখাচ্ছেন? আমি আপনার বউ বাট আপনার পেশেন্ট নই।
— পুরুষজাতি ঘরের বাইরে যতোই লাফালাফি ফালাফালি করুক ভাই বউয়ের কাছে বিলাই হয়া যায়।
অচেনা কন্ঠে আমি চমকে উঠলাম। নীরবও অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। দুজনেই হুটোপুটি খেয়ে চাইলাম সম্মুখে। চাচা বয়সী দোকানদার অত্যন্ত মায়াময় হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি লজ্জা পেয়ে মুখ নত করে ফেললাম। ইশ! উনি কিভাবে শুনলো আমার কথা?
.
— নীলিমা, মাস্ক পরো? করোনা ওমিক্রন বেড়ে গেছে।
নীরবের শাসনের সুর। আমি তোয়াক্কা করছি না। তখন থেকেই হাঁটছে আর বলছে। আমি শুনেও না শোনার ভানে। আয়েশ করে নিজের মতো চাটনি খাচ্ছি। মীরব আবার বলে উঠলো
— এই বউ তুলে কিন্তু আছার মারবো। কথা শোনো। একজন ডাক্তারের বউ হয়ে তুমি এভাবে রাস্তায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলতে পারো না।
আমি হাঁটার গতি রোধ করলাম। বিরক্ত নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম
— শুনুন? আমি ডাক্তারের বউ, কোনো পুলিশের না। তাই আইন নিয়ে আমার এতো মাথা ব্যাথা নেই। তাছাড়া আমি মাস্ক পরে থাকতে পারি না। দম আটকে আসে।
কথাটা বলে গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে নজর ফেরালাম। নীরব মুখে মাস্ক দিয়ে তীর্যক চোখে চেয়ে আছে আমার দিকে। আমার হুট করে কিছু একটা মনে হয়ে ঝরের বেগে তার নিকট চলে গেলাম। চোখের সানগ্লাসটা টান দিয়ে খুলে নিলাম। মাস্কটাও টেনে খুলে দিলাম। আমার হঠাৎ পাগলামিতে নীরব ভরকে গেলো। বাকরুদ্ধ হয়ে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। আমি ঠোঁটের চাটনিটা তার মুখে গুঁজে দিলাম। হাত আমার তার মাস্ক আর মুখোশে বন্দী।
— আপনার কোনো মাস্ক টাস্ক পড়া যাবে না। সানগ্লাস তো মোটেই না। ভয়ংকর সুন্দর লাগে। রাস্তার জোয়ান বুড়িরা ঢকঢক করে গিলে খায় আপনাকে।
কথাটা বলে শনশন করে হাঁটা দিলাম নীরবের আগেই। কিন্তু এবার আরো একটা চিন্তা এসে সামনে দাড়িয়ে গেলো। ঠোঁট তো ভয়ংকরের চেয়েও ভয়ংকর সুন্দর। এটার জন্য তো সবাই আরো বেশি করে তাকিয়ে থাকবে। আশ্চর্য! এখন উপায়? ভাবনার মাঝেই পেছন ঘুরে তাকালাম। মাস্ক পরার অনুমতিটা দেওয়া যায়। পেছন ঘুরে যেই না নীরবের দিকে নজর করলাম সঙ্গে সঙ্গে মেজাজ আমার ফুলেফেঁপে উঠলো। এক বৃদ্ধ দাদি দাড়িয়ে আছে নীরবের পাশে। মুখে তার কি আনন্দের হাসি! নীরব মাথায় এক হাত রেখে মুচকি হাসছে। আমি তড়িঘড়ি করে এগিয়ে গেলাম। রহস্য কি রে ভাই?
— কি সুন্দর তুমি? আমার নাতির জন্য এমনই একখান রসগোল্লার মতো জামাই খুঁজতেছি। তোমার বাড়ি কই পোলা? তোমার মায়ের নাম্বার দেও।
বৃদ্ধ মহিলাটার বাক-বাকুম সুর। আমি যেন জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেলাম। বুকের মাঝে তুমুল ঝড় উঠলো। কেমন এক বিষাক্ত ঈর্ষাময় সুর মনে ছড়িয়ে গেলো। নীরব হাসি হাসি মুখে তাকালো আমার দিকে। কি অসভ্য! বিয়ে ধরছে বলে হাসতে হবে? আমি এক শক্ত চাহনি তার দিকে নিক্ষেপ পরে উল্টো পথে হাঁটা দিলাম। ভীষণ রাগ হচ্ছে। ভীষণ, ভীষণ ভীষণ! রাগে ঠাস করে মাটিতে শুয়ে পরতে ইচ্ছে করছে। আপুর ছোট বাচ্চাটার মতো ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে নীরবের ঠোঁটটা উধাও করে দিতে। শাশুড়ি মা কি খেয়ে ওকে জন্ম দিয়েছিল? এতো সুন্দর ঠোঁট কিভাবে হলো?
চলবে…..
( সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। এই শুভেচ্ছা জানানো জন্যই আরেকটা পর্ব তড়িঘড়ি করে লেখা। আমি কি ঈদের সালামি হিসেবে এই গল্পটা পড়া সকল পাঠকের একটা শব্দ হলেও মন্তব্য আশা করতে পারি?)