তিতির পাখির বাসা পর্ব-১২

0
490

#তিতির_পাখির_বাসা(পর্ব-১২)
#জয়া_চক্রবর্তী

‘কিরে তিতির তুই এখানে?’উচ্ছ্বাসে ফেটে পরলো তুহিন।
তুহিন তিতিরের কলেজের এক সিনিয়র।কলেজের চেন্নাই ট্যুরে ওরা একসাথেই ছিলো।

কলেজে পড়াকালীন কখনো তুহিনের সাথে কথা বলেছে বলে তিতিরের মনে পরছেনা।তবে অনেকবারই ওরা মুখোমুখি হয়েছে।কখনো কলেজ ক্যান্টিনে,কখনো বা লাইব্রেরি, কখনো বা বাস স্ট্যান্ডে।
তুহিনের মুগ্ধ চাউনি চোখ এড়ায় নি তিতিরের।

তিতির সৌজন্যের দেঁতোহাসি মুখে টেনে এনে বললো, ‘হানিমুনে এসেছি আমরা।’
বলেই আর না দাঁড়িয়ে হনহন করে এগিয়ে গেলো রাস্তা ধরে।

কলেজের প্রথম দিন থেকেই মেয়েটাকে মনে ধরেছিলো তুহিনের।কিন্তু সাহস করে আর মনের কথাটা বলে উঠতে পারেনি।

ভেবেছিলো চাকরী বাকরী জোগাড় করে একেবারেই বিয়ের প্রপোজাল দেবে।
তুহিন এখনো চাকরী পেলোনা,অথচ তিতির বিয়ে করে একেবারে হানিমুনে এসে পরলো।

মেজাজটা বিগড়ে গেলো তুহিনের।
চন্ডীগড়ে ওর একটা ইন্টারভিউ ছিলো।সেটা দিয়ে এই দিন দুই হলো ও একা একাই মানালি এসেছে।

কি দরকার ছিলো,আবার দেখা হওয়ার!বুকের ভিতরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেলো তুহিনের।
আচ্ছা তিতির হানিমুনে এসেছে বললো,কিন্তু একা কেন?ওর হাবিকে তো সঙ্গে দেখলাম না।কথাটা মাথায় আসতেই তুহিন পা চালিয়ে তিতিরের সামনে চলে গেলো।

আজ প্রকৃতির কোলে এসে তুহিনের মধ্যে কোন জড়তা নেই।
তিতিরের কাছে সরাসরিভাবে জানতে চাইলো,’তোর হাবি কোথায়?কোন হোটেলে উঠেছিস তোরা?’

তিতির মিথ্যে সাজিয়ে গুজিয়ে বলতে পারেনা,তাই সে চেষ্টায় না গিয়ে বললো,’ওকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলেই বেড়িয়েছি।তবে হোটেলের নামটা এখন মনে পড়ছে না আমার।’

তুহিন অবাক,বলে কি মেয়েটা!
বললো,’ সেকিরে ফিরবি কি করে তাহলে?’তিতির হেসে বললো,’ফিরে যাব,চাপ নিও না’।

তুহিন বললো,’আরে আমার তো একটা দায়িত্ব আছে,আমি তো আর অচেনা জায়গায় তোকে এইভাবে একা ছেড়ে দিতে পারিনা’।একটু থেমে আবার বললো,’তুই মনে করে বল,হোটেলের আশেপাশে কোন দোকানের নাম মনে আছে কিনা?’

তিতির বিরক্ত, কে দিয়েছে তুহিনদাকে দায়িত্ব?তুহিনদার এই আগ বাড়িয়ে আদিখ্যেতা দেখানোটা তিতির একেবারেই পছন্দ করছে না।

এই প্রথম সুদর্শন সাথে নেই বলে তিতিরের খারাপ লাগলো।
ও বুঝতে পারে,ওই শান্ত শিষ্ট মানুষ টি সত্যিই তিতিরকে কেয়ার করে,ভালোবাসে।

এই যে তিতির হারিয়ে যাচ্ছে, সেটা তো এই জোরেই যে সুদর্শন ওকে ঠিক খুঁজে নেবে।

তিতির তুহিনের কথার উত্তর না দিয়েই নিজের মতো হাঁটতে থাকলো।দেখতে দেখতে আর একটা মন্দিরের চূড়া দেখা যাচ্ছে।সম্ভবত ওটা মানু মন্দির।

সুদর্শনের মুখে শুনেছিলো,মানালির আশেপাশেই দেখবার মতো অনেক জায়গা আছে,যেগুলো হেঁটে হেঁটেই কভার করা যায়।

‘আচ্ছা তিতির তোর মনে আছে,প্রথম দিন কলেজে তুই কোন ড্রেস পরে এসেছিলিস?’তুহিনের আচমকা প্রশ্নে অবাক তিতির।
বিরক্তিটা আড়াল করে ছদ্ম হাসি টেনে বললো,’না’।
‘তুই পরেছিলিস ব্ল্যাক টপ আর ডিপ ব্লু-জিন্স।’
তিতির হেসে বললো,’হবে হয়তো’।

‘জানিস সেদিন থেকেই শুরু।তারপর প্রতিদিন তোকে অন্ততপক্ষে একবার না দেখলে মন ভরতোনা।’
তিতির দাঁড়িয়ে বললো,’আমি একা যেতে চাই তুহিনদা,প্লিজ লিভ মি’।

তিতিরের কথাটা ভ্রুক্ষেপ না করে তুহিন বলতে লাগলো,’প্রতিদিন কলেজ থেকে বেড়িয়েই পাপড়ি চাট কিনতিস,নিজে যত না খেতিস তার চাইতে বিলোতিস বেশী’।

‘আমি কি শুনতে চেয়েছি এসব তুহিনদা?কেন তুমি সঙ্গে আসছো বলোতো?’তিতিরের কথায় তুহিন ছোট্ট করে হেসে বললো,’আজ না বললে যে আর বলবার সুযোগ টাই পাবোনা।’

তুহিন বলতে থাকলো,’আমি পাস করে বেড়িয়েও কলেজে আসতাম শুধু তোর জন্য।চাকরীর পরীক্ষা দিতাম বা দিচ্ছি সেটাও শুধু তোকে বিয়ে করবো বলেই।’

‘এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তুহিনদা’ কথাটা বলেই তিতির দ্রুত এগিয়ে যেতে চাইলো।
‘বাড়াবাড়ির কি দেখলি তিতির?শুধু বলতে চাই ভালোবাসি,ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি’…

‘যদি কখনো মনে হয় আমার ভালোবাসা নির্ভেজাল, চলে আসিস আমার কাছে।আমি তোর জন্য অপেক্ষা করবো’।কথাটা বলে তুহিন মৃদু হাসলো।

ছেলেটা কি তিতিরের পূর্ব পরিচিত?না সুন্দরী মেয়ে দেখে যেচে কথা বলে যাচ্ছে।সুদর্শনের মনে হলো এবার তিতিরের কাছে ওর যাওয়া উচিৎ।পা চালিয়ে তিতিরদের যখন ঠিক পেছনে তখন সুদর্শন শুনতে পেলো,’অপেক্ষা কোরনা তুহিনদা।আমার হাবি আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে আর আমিও ওকে’।

সুদর্শন ঠিক শুনলো তো!

‘আমিও না হয় দূর থেকেই ভালোবাসলাম তোকে,কি জানিস পাগলী সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো বিনিময়ে কিছু চায়না’।কথাটা বলে তুহিন বিষাদ মিশ্রিত হাসি হাসলো।

সুদর্শন আবার ইচ্ছে করেই পিছিয়ে পরলো।সুদর্শনের মনে হলো,

প্রতিপদেই হাহাকার-ব্যাকুলতা,
প্রতিপদেই প্রতিবন্ধকতা।
প্রতিপদেই ভাঙা-গড়ার আয়োজন,
আবার প্রতিপদেই অবিচল প্রতীক্ষা।
তবু এক ঝাঁক মলয় বাতাস,
উড়িয়ে দেয় মন খারাপের আঁচল।
অবগুণ্ঠন মুক্ত করে,
প্রাতঃ স্নাত আর্দ্র সিক্ত মুখ।
মুছিয়ে দেয় অভিমান,
মুছিয়ে দেয় ক্লান্ত অশ্রুধারা।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here